কবিত্বের নির্বচনে

আমি একজন কবি: আমি আমার মস্তিষ্কে
কিছু ধাক্কা অনুভব করি, সদাফুটন্ত সেইসব ধাক্কা; কখনওবা, তা-ও নয়।
নানান ধারণার স্বর্গীয়, কখনওবা নারকীয় স্পন্দন হয় সেখানে, আর হতেই থাকে।
আমি আমার মনের মধ্যে হিমশীতল নক্ষত্রের মতো জ্বলন্ত
কিছু ছবি বা দৃশ্য অনুভব করি।
আমার হৃদয়টা কখনও দানব হয়ে ওঠে, আগ্নেয়গিরির উত্তাপ বেরোয় সেখান থেকে।
আমি আকাশে চড়ি, ডুবি অতল গহ্বরেও,
সমুদ্রের গর্জন কিংবা অশান্ত ঝড়, দুইয়ের মধ্যেই আমি থেকেছি বহু বহুবার।


আমি একজন কবি: আমার আত্মা
পৃথিবীর এক-একটা কারাগার থেকে অনায়াসেই পালিয়ে যায়,
এবং অন্যান্য স্থানে এবং অন্যান্য পৃথিবীতে
তার দম্ভী প্রশস্ত ডানাটি ছড়িয়ে দেয়;
প্রাসাদে বজ্রপাত হলে সেখান থেকে আলো পান করে নেয়,
এমনও কিছু কক্ষপথ ঘুরে আসে, যেখানে কোনও নভোযান কখনও পৌঁছয়নি;
এবং, নানান অনুষঙ্গে ও পরিদৃশ্যে
অনুপ্রবেশ কিংবা ভ্রমণ করে।


আমি একজন কবি: মানুষের গুঞ্জন ও গুজব আমি সহ্য করি,
আমার ভেতরের বেহালাটা কখন কী সুরে বেজে ওঠে,
তা না জেনে কিংবা অর্ধেকটা জেনে আমাকে ওরা বুঝতে থাকে অবিরতই।
কবরের কালো পৃথিবীতে আমি কেঁদে দেখলাম,
নদীর ঢেউয়ের তালে বেতালে আমি ভেসে দেখলাম,
আবার, যুদ্ধে আর ঝড়ে কাবু হয়ে না হয়ে দেখলাম,
...আর বুঝলাম,
বস্তুত, প্রেম ও দেশ---এই দুই আমায় বাঁচিয়ে রাখে,
মানুষের হৃদয় আমার কবিতাকে বাঁচিয়ে রাখে,
আমার ধর্ম, মানবিকতা ও কিছু জাদু আমার স্বাচ্ছন্দ্যকে বাঁচিয়ে রাখে।


আমি একজন কবি: আমি আমার মস্তিষ্কে
কিছু ধাক্কা অনুভব করি, সদাফুটন্ত সেইসব ধাক্কা; কখনওবা, তা-ও নয়।
আমি কবি, কেননা আমি মানুষকে মানুষের চোখে দেখতে শিখে নিয়েছি।