কবিতার মতো সত্য: ১২

২১১. যে মেয়ে বাবা-মা বাদে আর কিছু বোঝে না,
সে-ও একদিন ওঁদের ছেড়ে থাকতে বাধ্য হয়।
এর নামই সংসার।




২১২. ভালোবাসো, জানি।
শান্তি সরাও, জানো না।
শান্তি চাই, জানি।
ভালোবাসা সরাই, জানো না।




কেবল শান্তি পেলেই
ভালোবাসতে পারি।
কেবল অশান্তি দিয়েই
ভালোবাসতে পারো।




এর নামই দূরত্ব।




২১৩. ভালোবাসি,
বলতে পারি না!




নম্বর আছে,
ফোন করতে পারি না।




ভালোবাসো না,
মানতে পারি না।




২১৪. সবাই ভাবে,
আমি কতই-না সুখে আছি!




আহা, ওরা যদি জানত,
তোমার মতন একটা মানুষের
প্রেমে পড়ে বসে আছি!




২১৫. সত্যিকারের স্বপ্ন তো তা-ই,
যা বাস্তবতা থেকে
অনেক দূরে!




সত্যিকারের বাস্তবতা তো তা-ই,
যা স্বপ্নকে টানে
অনেক কাছে!




২১৬. যদি আমি তোমাকে
চুমু খেলে তা
শাস্তির মতন লাগে,
তবে তুমিও আমাকে
শাস্তি দাও,
আমি হাসিমুখে তা
ঠোঁট পেতে নেব!




২১৭. যত বার
তুমি
এদিকে তাকাও,
তত বারই
তোমার চোখে
আমার
এক বার করে
জন্ম হয়!




২১৮. : তোমার সত্য?
: না না, সবারই! এসো তবে আমার সঙ্গে, আজ তোমাকে সত্য দেখাই!
: বুঝেছি এবার! এ সত্য তোমারই, নিজের কাছেই রাখো!




২১৯. তোমার হাতের
সাতাশটা হাড়,
অন্তত তিরিশটা পেশি,
প্রায় দু-হাজার স্নায়ুকোষ,
আঙুলের পাঁচটা ডগা
...মিলেও
আমাকে একটাও মেসেজ
পাঠাতে পারে না!




ওসব তবে কী কাজে লাগে?
কী করো তুমি ওসব দিয়ে?




২২০. কেউ কেউ চুপ
বলার কিছু নেই বলে।
কেউ কেউ চুপ
শোনার কেউ নেই বলে।




আর যাদের
বলার কথাও আছে,
শোনার মানুষও আছে,
ওদের বেশিরভাগই
চুপ হয়ে গেছে
অনেক দিন আগেই!




২২১. সেদিন তোমায়
ফিরিয়ে দিয়ে
যে পাপ করেছি,
আজ বেঁচেই আছি
প্রতিদিনই
তার শাস্তি পেতে!




আমি এখন যেমন আছি,
তার চাইতে অনেক সহজ
বেঁচে না থাকা।




তোমার চোখের জলে
সেদিনই
আমার আয়ুর হিসেব
লেখা হয়েছে।




বিধাতার মন
বুঝিনি তখন।




আজ খুব চাইলেও
মরতে পারি না।
জীবনে আজ
নতুন যা যা হিসেব আছে,
সে হিসেবেই
আমার প্রাপ্য হিসেব
বাঁধা পড়েছে!




কেউ বাঁচে
পুরস্কার যা পাবার কথা,
একদিন তা পাবে বলে।
আমার মতো
কেউবা বাঁচে
শাস্তি যা পাচ্ছে এখন,
একদিন তা ফুরোবে বলে।




২২২. এই বুকে
ছুরি বসিয়ে দিয়ে
চলে গিয়েছিলে।




ছুরিটা আজ‌ও রেখেছি,
বুকের মধ্যেই!
ওটা সরিয়ে ফেললে
তোমার হাতের ঘ্রাণটা
আর কোথায় পাবো!




শুনলাম,
এখন নাকি
ছুরি বসানোর জন্য
নিজের বুকটাও
আর খুঁজে পাও না?




২২৩. তুমি কাছে থাকলেই বরং
কোথায় যেন চলে যাও!




তুমি দূরে থাকলেই কেবল
কীভাবে যেন চলে আসো!




২২৪. এখানে সমুদ্র নীল।
এখানে সমুদ্র শান্ত।




এখানে আকাশ কালচে।
এখানে জল বিক্ষুব্ধ।




আসুন, এসে বেড়িয়ে যান।
আপনাদের জন্যই তো
নীল রং সাজিয়ে রেখেছি,
শান্ত মুখ গুছিয়ে রেখেছি!




২২৫. বাগানে কিছু গোলাপ
নিজেরই ঘ্রাণের ভারে
কীরকম নুয়ে থাকে!




ওদের ছুঁতে কেউ আসে না।
ওদের শুঁকতে কেউ আসে না।




ওদের ঘ্রাণই যেন
ওদের একাকী করে রাখে!




২২৬. যখন তুমি এলে,
নিঃশ্বাস নেওয়াটা
আগের চাইতে
সহজ হলো।




তুমি থেকে গেলে।
তুমি থেকে গেলে।




এখন কেবল
নিঃশ্বাস নিতে পারলেও
নিজেকে ভাগ্যবান লাগে!




২২৭. যদি একটিও
হৃদয়কে
ভেঙে যাওয়া থেকে
বাঁচাতে পারো,
তবে তোমার জন্ম
বৃথা নয়।




যদি একটি
মানুষেরও দুঃখ
সত্যিই কমাতে পারো,
তবে তোমার বেঁচে-থাকা
বৃথা নয়।




যদি একটিও
পাখির ছানাকে
মায়ের কাছে
ফিরিয়ে দিতে পারো,
তবে তোমার ভালোবাসা
বৃথা নয়।




কেন তারই কথায় কাঁদছ,
যে কখনও
তোমায় দেখেনি,
কেবলই
তোমার ব্যর্থতা দেখেছে?




২২৮. আজ আমি
স্রেফ
এমন এক রক্তের দাগ,
যে কথা বলতে পারে;
এর বেশি কিছু নই।




২২৯. তোমাকে দেখার আগে
জানতাম,
আমার অনেক ধৈর্য!




অথচ এখন,
তোমার জন্য সারাক্ষণই
কী যে অধীর হয়ে থাকি!




চাঁদকে বলি,
এখনও উঠছ না যে?
সূর্যকে বলি,
এখনও ডুবছ না যে?




ওরা হাসে।
তখন বলি,
আমার প্রিয় যে
আমাকে
দেখা হবার
তারিখে বেঁধেছে!




তোমাকে দেখার পর
আমার
প্রতিটি রাতই
দীর্ঘ হয়েছে,
আর হাতঘড়িটা
হয়েছে দীর্ঘতর।




২৩০. হৃদয়ের ক্ষতস্থানে
সেলাই করলে
ভালোবাসা হয়,
আর ব্যান্ডেজ লাগালে
হয় প্রেম।




২৩১. তোমায় দেখার পর
ছবি মনে হয়েছিল।
তোমায় শোনার পর
সুর মনে হয়েছিল।




তোমায় জানার পর
এখন মনে হয়,
বাঁচতে চাইলে
সব কিছু দেখতে নেই,
সব কিছু শুনতে নেই,
সব কিছু জানতে নেই।




২৩২. সবসময় নয়,
কখনও কখনও,
হৃদয় দিয়ে,
তার কম---
আত্মা দিয়ে,
এমনকী তারও কম---
মনের জোর দিয়ে,
অতি অল্প কিছু মানুষ,
ভালোবাসতে জানে।




২৩৩. জীবন মানেই
এমনই এক ক্ষত,
যে ক্ষতটা
আমি অর্জন করিনি;
অথচ
এক সেই ক্ষত বাদে
আর কিছুই
অর্জন করতে
আমি আজও পারিনি!




২৩৪. ভালোবাসো যদি,
লিখতে দাও।




ভালোবাসো যদি,
শান্তি দাও।




ভালোবাসো যদি,
ভালোবাসা
দাও বা না দাও,
বাঁচতে দাও।




এ জীবনে
অমরত্ব কি ভালোবাসা
পাই বা না পাই,
বাঁচতে চাই।




২৩৫. ওরা বলুক যা মন চায়!
দিনশেষে---
তুমি এমনই থাকবে!
ওরা তেমনই থাকবে!




২৩৬. আমি লিখি,
কেননা
থাকার জন্য
আমার এমন একটা
জায়গার প্রয়োজন,
খুব চেয়েও,
যেখানে আমি
কখনও থাকতে পারিনি।




২৩৭. তুমি যা বলছ,
তার কিছুই
আমি বিশ্বাস করি না।




আমি তো দেখছিই,
তুমি কী করছ,
আর কী করছ না!




২৩৮. যদি আর
ফিরে না-ও আসি,
জেনে রেখো তবু,
আমি কখনও
যাই-ইনি চলে!




আমি যে বরাবরই
এখানেই থাকতে চেয়েছি,
যেখানে আমি
থাকিইনি আজও!




২৩৯. ভালোবাসা
এক নিজেকে বাদে
আর দেয় না কিছুই!




ভালোবাসা
নেয় যেটুক,
তা-ও নেয়
নিজেরই থেকে!




ভালোবাসা
রাখে না তো
আঁকড়ে ধরে!




আঁকড়ে ধরে
রাখতে গেলেই
ভালোবাসাটা
পালায় শেষে!




ভালোবাসা
এক ভালোবাসাতেই
ভালো থাকে!




২৪০. একদিন বুঝবে ঠিকই,
সবচাইতে হালকা কিছু
তা-ই ছিল,
পারেনি উড়িয়ে নিতে
হাওয়াও যাকে!




সেদিন
কোনও এক অশ্রুকণায়,
কিংবা একটি প্রিয় ঘ্রাণে,
অধীর হয়ে
সেই সুখটাই খুঁজবে,
আজ যা
হারালে পেয়েও!




হারিয়েছি যা,
তার দিকে না তাকিয়ে,
ধরো এই হালকা সুতোই,
দেরি হয়ে যাবার আগেই!




২৪১. আমি ফুল হব,
তোমায় পেলে একজনমের
বিশেষ গোপন ভুল হব।




আমি পাপ ছোঁব,
তোমার জন্য অনন্তকাল
গোলকধাঁধা সুখ ছোঁব।




তুমি ঝড় হয়ো,
শেষবিকেলের লুকিয়ে-থাকা
মায়াবী কোনও ঘোর হয়ো।




তুমি আমার রাত-গভীর,
শব্দভেদী উজানটানে
অভেদ্য এক গল্পভিড়।




২৪২. তুমি আমার সঙ্গে যেভাবে কথা বলো,
আমিও যদি তোমার সঙ্গে সেভাবে কথা বলতাম,
তবে তুমি নিজেই নিজেকে ঘেন্না করতে।




২৪৩. কথা ছিল,
আমরা মানুষকে কাছে টানব,
আর জিনিসকে ব্যবহার করব।




অথচ
আমরা মানুষকে ব্যবহার করি,
আর জিনিসকে কাছে টানি।




তাই আমাদের এত দুঃখ!




২৪৪. কোনও এক উপন্যাসে,
নয়তো কোনও গল্পে,
নয়তো কোনও কবিতায়,
নয়তো কোনও পঙ্‌ক্তিতে,
নয়তো কোনও শব্দে,
...তোমার অসুখের ওষুধ পাবে।




২৪৫. অ্যাই শোনো,
হাতটা বাড়াও!




দেখলে তো,
সব কিছুরই ভার
হঠাৎ কেমন
অর্ধেক হয়ে গেল!