একটা বিকেলের শেকড়

আমি, জানো‌, রাত বড়ো ভালোবাসি!
একেকটা রাত...
কী যে গভীর ও সুন্দর, যেমন তোমার চোখদুটো ! 
উষ্ণ, যেমন তোমার নিঃশ্বাস!
সতেজ, যেমন তোমার হাসি!
প্রশান্ত, যেমন তোমার আলিঙ্গন!




এ সবই আমার একান্ত অনুভূতি। তোমাকে এত অনুভব করি, এত.... যেন কখনও তোমার বাহুডোর-ছিন্ন হইইনি। যুগ যুগ ওখানেই আমার নিবাস।
এ অনুভূতি ঐশ্বরিক, আমি চেয়ে চেয়ে তা অর্জন করিনি।
এ যে চাওয়া যায়, আমি তা-ও ভাবিনি গো!
ভেবেছি, রাত আসবে, ওটাই আমার।




রাত এলে আমি নিজ ভবগৃহে ফিরি, আমার প্রত্যাবর্তন ঘটে একান্তে, কেমন চুপিচুপি।
রাত ঘন হলে আমি প্রশান্ত, স্থির, নিরাপদ! যেমনটা তোমার কাছে এলে, তোমার কথা শুনলে, তোমায় ভাবলে অনুভব করি, আমি নিজের ভেতরে ফিরেছি।
আমায় ফিরতে দিয়ো আজীবন! একটাই যে গৃহ---'তুমি'।




তুমি ঠিক বলেছ, এ মেশামেশি অনাদি, আত্মার এই অভিন্নতা ঘুচবার নয়।
যখন তোমার সঙ্গে আমার দু-একপ্রস্থ কথা হয়, তুমি আমার থাকো।
যখন হয় না, তখনও তুমি আমার থাকো।
যখন কাছে আসো, তুমি আমার থাকো।
দূরে পাড়ি দাও যখন, তুমি আমারই থাকো।
একা হেঁটে রেলসড়ক যাব বলে বেরোই যখন, তুমি আমার থাকো।
পথ হারিয়ে নিশ্চুপ যখন, তুমি আমার থাকো।
তুমি আমারই থাকো, আমি তোমারই থাকি।
বলেছিলাম, যদি চাঁদেও ঘর বাঁধো, আমি তোমারই পথ হব।




আমার ভালোবাসাটা যে ভীষণ সরল... আমি তোমার কাছে ভালো থাকি।
এই যে তুমি থাকো নিভৃতে আমার মুহূর্তে মিশে, এই যে তোমার অস্তিত্ব প্রজ্জ্বলিত আমার অস্তিত্বে, একে প্রশান্তি বলে।
আমি লিখি, তুমি পাশে পাশে হাঁটো, তুমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকো,
আমি বারান্দায় বসি, তুমি হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসো,
আমি বাইরের জীবনে নিমগ্ন, তুমি আলতো আলতো আদর করো,
আমি গান শুনি, তুমি সুরে সুরে স্বপ্ন আঁকো,
তুমি চিরসতেজ হয়ে আমার বাগানে ফুটে থাকো,
আমি কাঁদি, তুমি বুকের মধ্যে খুব করে জড়িয়ে নিজের করে রাখো,
একে ভালোবাসা বলে।




আমি একটাসময় বিশ্বাস করতাম, খুউব একা একা বাঁচতে শিখে গেছি;
আদতে তা হবার নয়, এখন বুঝি।
তুমি নেই যখন, তখনই তুমি থেকে যাও সবচাইতে বেশি।
তুমি আছ, জানান দিতে কখনও ভোলোনি।
এই তুমি যেমন আছ, আমার তেমনই চাই, বুঝলে!
তোমাকে কখনও বলা হয় না আমার, কত-কী আঁকিবুঁকি ভাবনা চোখের পাতায়, মনের জানলায়,
তোমার আমার কতশত মূহূর্ত জন্ম নেয়, বলা হয় না তো!




জানি, তোমারও হয় না বলা আমায়।
তবে কি আমরা নিভৃতচারী... নিভৃতেই ভালোবাসতে বড়ো ভালোবাসি?
হয়তো তা-ই, নয়তো না-ই। মস্তিষ্কের অমন সমৃদ্ধি হতে এখনো বাকি আমার।
কিন্তু আমি সমৃদ্ধ হয়েছি, তুমি সমৃদ্ধ করেছ আমায়, তোমার ছায়ায় আমি বেড়ে উঠছি ক্রমশ।
আমাকে বেড়ে উঠতে দিয়ো, জেনো, আমি ভালোবাসি এমন বেড়ে ওঠাতে।
রাতের কায়ায়, তোমার ছায়ায়, আমি ছোট্ট প্রাণ এক;
প্রাণের একমাত্র সুধা, সে-ও তুমিই তো!




তুমি আমার সেই মানুষটাই, যে আমাকে অসীম আকাশে সুতো ছাড়াই উড়তে দাও,
উড়তে উড়তে ক্লান্ত হলে আদর করে করে অনন্তে ভাসিয়ে দাও,
অথচ বলো না কখনও, মেয়ে, বিশাল আকাশে অত উপরে উড়তে হয় না, বিজলিবাতি কখন পড়বে, আর যেয়ো না...!
নিঃশব্দে ছায়ায়, মায়ায় আগলে আগলে রাখতে কখনও ভোলো না; তুমি আমার এই মানুষটাই!
তুমি বিশাল মহাকাল, শতাব্দীসম বিস্তৃত হয়ে তোমার অসীমতায় আমাকেও অসীম করেছ!




আমার নগরে তোমার নিবাস স্থায়ী হয়ে গেছে সেই কবে...
এখানে প্রশ্নের অবকাশ নেই আর, ছিলও না কখনও।
দুই নিবাসী এক নিবাসে ঘর তুলেছে, এ-কথা পৃথিবীর কেউ না জানুক!
ওরা চুরি করে ফেলে, অনুভূতিগুলো খুঁটে খুঁটে বসিয়ে দেয় আপন আলয়ে!
কেউ বুঝতেই চায় না, তুমি আমার একলা বিকেল, ওতে চাইলেই ঝুলে পড়া যায় না!
চায়ের কাপে দু-পাশে দু-জোড়া ঠোঁট, চাইলেই ওতে চুমুক দেওয়া যায় না। এ বড়ো কঠিন, অসম্ভব, অবাস্তব।
জানোই তো, একটা বিকেলের শেকড় কখনও দুটো হয় না।