এই ঘরে, এই ঘোরে


১. এইসব ভয়, এইসব কামনা, এইসব ভাবনা, এইসব বিশ্বাস:
সবই সরিয়ে নাও; এ সব কিছুই তোমার, আমার নয়।


সম্পূর্ণ সমর্পণে ঔদ্ধত্যের ভাব জাগে, চলে মিথ্যের আমন্ত্রণ---
নিজেকে এবং নিজের যা-কিছুকে ধরে রাখছি, এই দুইয়ের মধ্যে।


২. সেই মুহূর্তটা, ঠিক যে মুহূর্তে একটা গান আমার সমস্ত ভাবনা দখল করে নেয়, এবং ওরকমই আরেকটা গানের জন্য তীব্র একধরনের অপেক্ষা আমার মধ্যে থাকে,
তখনই তুমি আমার কাছে এসে যাও;
এসে কিছুক্ষণ থাকো, আমার পাশে বসো, তোমার অস্তিত্বের কথা আমাকে মনে করিয়ে দাও এতটাই বেশি যে, আমি কিছু সময়ের জন্য সুরটা থামিয়ে রাখি, তোমার দিকে আমার সমস্ত মনোযোগ ও দৃষ্টি ফিরিয়ে দিই, এবং নিজেকে খুব স্পষ্টস্বরে জানাই: এইখানে এক তুমি বাদে আর কেউ নেই।


৩. তুমিই যখন আমার ভাবনাচিন্তার এবং আমার উৎস ও শেষ,
যখন প্রতিটি জিনিস, প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি ঘটনা আমাকে তোমার কথাই মনে করায়,
তখন আমার আর কীই-বা করার থাকে এক তোমাকে নিয়ে ভাবা বাদে?!


৪. আজ সকালে ঘুম ভেঙে জানালার বাইরে দু-একটা পাখিকে উড়তে দেখে…
কী যে ভালো লাগল! কী যে সুখ পেলাম!
শুধুই ভাবছিলাম, না জানি তিনি কতটা সুন্দর...
স্থান ও সময়ের সকল সীমার ঊর্ধ্বে থেকে,
যিনি তোমাকে এত সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন!


৫. যখন বুকের মধ্যে ভয় জমে থাকে,
যখন অস্থিরতা, সন্দেহ, সংশয় বছরের পর বছর টিকে থাকে,
তখন তুমিই একমাত্র আশ্রয়…সমস্ত অজানা পথের মাঝেও,
পাশ থেকে পুরো পৃথিবী সরে গেলেও…


৬. একটা প্রশ্ন জাগে মনে…
তার উত্তরটা আসে যদি, মৃত্যুও তার সঙ্গে আসে।
এবং মৃত্যুর সময়, কারও-না-কারও শূন্যপাত্র জীবনে ওঠে ভরে।


৭. ভাবতে গিয়ে আমি আমার খেয়ালের বশীভূত হয়ে পড়লাম,
ভাবতে গিয়ে আমি আমার কাজগুলিকে একা একাই গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম,
যেখানে কণ্টকের সিংহাসনে তুমিই ছিলে আমার সমস্ত চলাফেরার একমাত্র চালিকাশক্তি।


৮. আমাকে হত্যা করো। আমাকে শুদ্ধ করো।
আমাকে আমার এই মিথ্যে নিজস্বতা থেকে মুক্ত করো।
আমার মধ্যে এক তুমি বাদে আর কারও জন্যই কোনও জায়গা নেই।
তোমার সঙ্গে মাত্রই দেখা হলো যদিও,
তবু বার বারই মনে হচ্ছে, কতদিন তোমাকে দেখি না…
কতদিন আমাদের কথা হয়নি…


৯. বলো তবে, আনন্দের পথে, সুখের সমারোহে…
আমি কী করে ওদের সবার কথা শুনব,
যখন এক তোমাকে পেলেই আমার জীবনটা দিব্যি কেটে যায়?!


১০. বিশ্বাসকে হ্যাঁ বলো।
মস্তিষ্কের ভেতরে নৃত্যরত জ্ঞানকে হ্যাঁ বলো।
ধমনীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সত্যকে হ্যাঁ বলো।
ভালোবাসাকে হ্যাঁ বলো।
সুন্দর যা-কিছু আসে ভাবনার ভাস্কর্য থেকে,
তার কিছুই ফিরিয়ে দিয়ো না ভুল করেও।


১১. এবং, দুঃখ থেকে পালাতে চেয়ে
আমি তোমার মধ্যে আশ্রয় খুঁজেছি বহু বহু বার।
যত বার…আমি? না কি তুমি?...এই প্রশ্নে হয়েছি দ্বিধান্বিত,
তত বারই আমি খুঁজেছি আশ্রয় সেই তোমার মাঝেই…নিজের কাছ থেকে পালিয়ে যেতে!


১২. এই পৃথিবীটা, এই নশ্বর পৃথিবীটা কী করে কামনার বস্তু হতে পারে,
যখন তোমার মধ্যে, তোমার বাইরে, তোমার তুমিতে…যে হৃদয়, তা আগুনে অবিরত পোড়ে?


১৩. তুমি যা নরক ভাবছ, নরক না নয়।
তুমি যা স্বর্গ ভাবছ না, স্বর্গ তার চেয়ে সুখের কিছু নয়।


১৪. তুমি ছুঁয়ে দিলে, আর অমনিই…সে কী শিহরন!
আহা! আমার সমস্ত নিঃশ্বাস মিলেও অতটা চৈতন্য ধারণ করতে পারেনি,
আমার শরীরে তোমার স্পর্শ কিংবা আমার চেতনায় তোমার উপস্থিতি…যতটা করেছে ধারণ।


১৫. তোমার উত্তাপে যে নিজেকে পোড়ায় ক্রমাগত,
সে-ও একাকিত্বে ডোবে কী করে?!


১৬. যখন শস্য ফলে,
তখন এক কৃষকই জানেন,
বীজটা তিনি মাটিতে বপন করেননি,
বরং হৃদয়ে করেছিলেন।


যখন দালানের ভিত্তিটা তৈরি হয়ে যায়,
তখন এক স্থপতিই জানেন,
নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে না ফেললে
কখনওই, নিজের ভেতরটা চোখের সামনে বেরিয়ে আসে না।


১৭. কথায় কথায়, কারও কারও, ঠোঁটে ও চোখে কত কত গল্পের বসতি!
ভালোবাসে যে, এক সে-ই বোঝে, মিথ্যের ভাঁজে ভাঁজে কতটা সত্যি খেলে আদৌ!


১৮. দিনশেষে, সমর্পণই দিনের ও রাত্রির দূরত্বটা বোঝায়।
সকল ভ্রম মাড়িয়ে এক সত্যই পথ দেখায় শেষ অবধি।


১৯. ধর্মের নামে
যে থেকে যায়
নিজের মনের শৃঙ্খলে,
সে হিন্দু নয়, নয় সে মুসলমানও,
সে কেবলই এক অন্ধ মানুষ
কিংবা চক্রান্তকারী,
যে তার অন্ধত্ব কিংবা চক্রান্ত দিয়ে
চায় খুন করতে তাদের প্রত্যেককে,
যারা আজও চোখে দেখে,
যারা আজও মানুষ ভালোবাসে।