যারা এইচএসসি’তে ভাল করেছ, তাদেরকে অভিনন্দন জানাই।
সফলদের কাছের মানুষদের কাছে কিছু ছোট্ট-ছোট্ট অনুরোধ করছি। খেয়াল রাখবেন, সামনের দিনগুলোতে ওদের যা কিছু অর্জন আসবে, তা যেন এই অর্জনকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না করে। অল্প বয়সে সাফল্যের ধকল কিন্তু অনেকেই সামলাতে পারে না। অল্পবয়সী অনেক সফলই বিশ্বাস করে বসে থাকে, জীবনটা বুঝি এখানেই শেষ! বয়স অল্প, বুদ্ধিশুদ্ধি আরও অল্প। আমার প্রিয় লেখক সুনীল কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আত্মতৃপ্তি মৃত্যুর সমান।” কথাটি আমার খুব খুব প্রিয়। জিপিএ ৫ পাওয়াটা খুব সামান্য কিছু না হলেও অনেক বড় কিছু নয়। যদি ওকে কখনও শুনতে হয়, “আজকাল চেয়ারটেবিলও তো জিপিএ ৫ পায়। ভাল কোনও জায়গায় তো চান্সই পেলে না! আসলে মাথায় কিছু নাই। সিস্টেমে পড়ে এ+ পেয়ে গেছ।” তখন কিন্তু আপনার কষ্ট হবে সবচাইতে বেশি। আমি এইচএসসি’তে স্টার মার্কস পেয়েছিলাম। চিটাগাং কলেজ থেকে সায়েন্সে আমরা স্টার মার্কস পেয়েছিলাম খুব বেশি হলে ৬০-৭০ জনের মতো, কিংবা আরও কম। এখন তো গোল্ডেন এ+ পায় এর চাইতে ঢের বেশি। আমি বুয়েটে পরীক্ষা দিতে পারিনি, ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথসে কম মার্কস পেয়েছিলাম বলে। ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য দরকার ছিল অ্যাভারেজে ৭২.৬৬, আমার ছিল ৭২.৬০। পরে চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় সেকেন্ড হয়েছিলাম। এখন তো দেখি, গোল্ডেন এ+ পাওয়া স্টুডেন্টরা ওয়েটিং-লিস্টেই আসতে পারে না। দেখে সত্যিই কষ্ট লাগে। এর জন্য কিন্তু আপনারা অভিভাবকরাও অনেকাংশে দায়ী। ওকে কড়া শাসন করতে হবে, বোঝাতে হবে। ওর অনেক অন্যায় আবদারকে ‘না’ বলতে হবে। এইচএসসি পাস-করা একটা ছেলে কিংবা মেয়ে জীবন সম্পর্কে কিছুই বোঝে না, কিংবা যতটুকু বোঝে, তার বেশির ভাগই ভুল। ওর সাথে খোলাখুলি কথা বলে দেখুন। ও কী জানে? কতটুকুই বা বোঝে? ওর দুনিয়াটা অনেক রঙিন। আপনি তো জানেন, দুনিয়াটা আসলে এমন নয়। যে ভাল কোথাও চান্স পায় না, তাকে আসলে তেমন কেউ পাত্তা দেয় না। পাত্তা না পেলে বেশিরভাগ মানুষই তো দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেকে অবশ্য পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়ায়। সেটা কিন্তু পুরোপুরিই অনিশ্চিত! আপনার দায়িত্ব, ও যাতে ভুল পথে পা না বাড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখা। ও কাদের সাথে মেশে, খবর নিন। আশেপাশে ভাল স্টুডেন্টদের না দেখলে ভাল করার ইচ্ছে জাগে না। যখন অনেক দেরি হয়ে যাবে, তখন ওকে বকাঝকা করে কিংবা মনখারাপ করে তো আর কোনও লাভ নেই। ওকে ছেড়ে দেবেন না, চোখেচোখে রাখুন। ও এখনও বড় হয়নি। ও পৃথিবীর চোখে এখনও কিছুই না! কিছু হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত সবসময়ই ওর পাশে থাকুন।
ছোট বন্ধুরা, যারা অতটা সফল হতে পারনি, যতটা তোমরা আশা করেছিলে, তাদের বলছি, কম বয়সে কম-সফলদের তালিকায় ঢুকে যাওয়ার একটা মস্ত বড়ো আপাত সুবিধা আছে। তা হল, সফলরা তোমাদের সহজ টার্গেট ভাববে। সফলদের এই ভাবনার স্বাচ্ছন্দ্যই ওদের ক্রমশ দুর্বল করে দেয়। এটাকেই কাজে লাগাও। পৃথিবীতে নোবডি হয়ে থেকো না। যে যা-ই বলুক, এটা নিশ্চিত, নোবডি-দের জন্যে এই পৃথিবীতে শুধু নাথিং-ই বরাদ্দ থাকে। জীবন আমাদের কোথায় নিয়ে যায়, আমরা কখনও তা ভাবতেই পারি না। লাইফ ইজ অলওয়েজ স্ট্র্যাঞ্জার দ্যান ফিকশন। গ্রেড দিয়ে কখনওই নিজেকে যাচাই কোরো না। আমি নিজে ভার্সিটিতে আমার ব্যাচের সবচাইতে কম গ্রেড পাওয়া স্টুডেন্টদের একজন। তোমার রেজাল্ট ভাল হয়নি তো কী হয়েছে? এটাকেই একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও। দুনিয়াকে দেখিয়ে দাও, তুমি কোনোভাবেই ফেলনা না। তোমার শক্তিকে ঠিকভাবে কাজে লাগাও। আমাদের একটা সমস্যা হল, নিজেকে দুর্বল ভেবে জীবনের কাছ থেকে ছোট-ছোট জিনিস চাই, এবং পেয়েও যাই। হায়! ওতেই খুশি থেকে জীবনটা কাটিয়ে দিই! শুয়েবসে ঘোরাঘুরি করে হেসেখেলে জীবন কাটালে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। এটা কখনওই কোরো না। তোমার এখন অসম্ভব রকমের পরিশ্রম করার সময়। তুমি এখন সবেমাত্র বড় হতে শুরু করেছ। পৃথিবী তোমাকে এখন আর ভুলের জন্য ক্ষমা করে দেবে না। তোমার ভুলটাকে যদি তুমি তোমার জীবনের শিক্ষা হিসেবে না নাও, তবে তুমি নিশ্চিত থাকতে পার, অনেক বড় ধাক্কা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। ভুলের মাশুল দিতে সবাই পারে না, বেশিরভাগই হারিয়ে যায়। পৃথিবীতে আমরা কেউই হারিয়ে যাওয়ার জন্য আসিনি। যদি জীবনে কিছু করতে না পারি, তবে সেটার দায়ভার সম্পূর্ণই আমাদের নিজের। অন্তত তোমার চারপাশের সবাই-ই সেটাই ভাবে; হয়তো মুখে কিছু বলবে না, কিন্তু তোমাকে অযোগ্যই ভাববে। সত্যি বলছি, খুব খুব কষ্ট লাগবে তখন। আমি অনেক ছেলেমেয়েকে হারিয়ে যেতে দেখেছি, শুধু এইচএসসি পাস করার পর সচেতন ছিল না বলে। তুমিও তাদের দলে ঢুকে যাবে যদি এইচএসসি’র রেজাল্টটাকেই সবকিছু ধরে বসে থাক। ভাল কোথাও চান্স পাওয়ার চেষ্টা কর। তোমাকে প্রাইভেটে পড়াতে কিন্তু তোমার বাবা-মা বাধ্য নন। তোমার হেঁয়ালিপনার মূল্য দিতে তোমার বাবা-মা চাকরি করেন না। কখনও উনাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে দেখেছ, জীবনটা আসলে কত কঠিন? উনারা কি সারাজীবনই তোমার অক্ষমতার মূল্য দিতে তোমাকে জন্ম দিয়েছিলেন? কঠোর পরিশ্রম কর। তোমার বন্ধু তোমার চাইতে ভাল জায়গায় চান্স পেয়ে গেলে যে কী পরিমাণ মেজাজ খারাপ হবে, ভাবতেও পারবে না। নিজেকে তৈরি কর, ওসব বিশ্রামটিশ্রাম পরে হবে। এখনই সময়! আজ থেকে ১০ বছর পর কী হবে, সেটা আমরা কেউই জানি না। নিজেকে কখনওই অতটা ছোট ভেবো না, যেটা তোমাকে শুরুই করতে দেয় না। নিজেকে কখনওই অতটা বড় ভেবো না, যেটা তোমাকে শেষই করতে দেয় না।