উপেক্ষায় বাঁচা

তুই অফিস সেরে ঘরে ফিরিস ঠিকই, কিন্তু আমার কাছে ফিরিস না।
আমি ভাবি, তুই ক্লান্ত, তাই আর ডাকি না। কিন্তু লেইটনাইটে যখন মুভি রিভিউ দিস, তখন বুঝি, ক্লান্তিটা অফিসের নয়, ক্লান্তিটা হয়তো...




তোকে ইদানীং ফোন করি না, ঠিক সাহস হয় না।
আগে তো তা-ও ফোন কেটে দিতিস, আর এখন তো কোন‌ও রেসপন্সই করিস না।




তোকে কফিশপে দেখলাম সেদিন, নিবেদিতার সঙ্গে।
অথচ তুই বলেছিলি, ওকে তোর অসহ্য লাগে। আজকাল দেখি, অসহ্যকর মানুষটার সঙ্গে বসেও গরম কফিতে ঠোঁট পোড়াচ্ছিস!
তিনটা বছর চেষ্টার পরও আমি নিবেদিতার মতন অসহ্যকর একজন মানুষ হয়ে উঠতে পারলাম না!




'আমার মন খারাপ।' লিখে মেসেজ দিয়েছিলাম গত রোববার। সেটা সিন করলি এই বুধবার। কিছুক্ষণ টাইপিং সাইন দেখলাম; ভাবলাম, ঝাড়ি মেরে হলেও কিছু একটা লিখবি, আমার ওতেই চলবে!
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করলাম, মেসেজটা এলই না আর। মেসেজ টাইপ করেও কেটে দিচ্ছিস ইদানীং? অবশ্য আমরা নাকি একজন আরেকজনকে খুব বুঝি, সেজন্যই ফোন করা, মেসেজ দেওয়া হয় না। আর দেখা হবার কথা তো বাদই দিলাম!




ও আচ্ছা, ভালো কথা! শুনলাম, তুই নাকি এমবিএতে'ও ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিস? আমাকে জানালি না তো? মানুষ নাকি শত্রুকেও ভালো রেজাল্টের খবরটা দেয়, আমি কি তবে শত্রুও হই না আর?
আমি বরাবরের মতন সেকেন্ড ক্লাসটাই পেয়েছি, কিন্তু সিজিপিএ আরও নিচে নেমেছে। এখন তুই থাকলে, 'ইসস্ আর একটুর জন্য মিস করলি!' কিংবা 'অ্যাট লিস্ট পরীক্ষার আগে তো পড়াশোনা করতে হয়!' এরকম কিছু বলে সান্ত্বনা দিতিস।
জানিস, আমি আজকাল তোর দেওয়া সান্ত্বনাগুলোও মিস করি রে!




শরীর খারাপ হবার আর রেজাল্ট খারাপ করার খবরটা ইচ্ছে করেই অনিকে দিয়ে তোর কানে পৌঁছে দিলাম।
'মানুষের শরীর, এই ভালো, এই খারাপ!', 'রেজাল্ট একটা হলেই হয়!' এ ধরনের উত্তর শুনে অনি পর্যন্ত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
শুনে আমি হাসলাম। হা হা হা! বহুদিন পর হাসলাম। এটা কেমন অনুভূতি ঠিক বুঝতে পারছি না।




একজন মানুষকে পর করে দিলেও বলা যায়, 'এভাবে পর করে দিলি!'
কিন্তু অবহেলায় আর উপেক্ষায় বাঁচিয়ে রাখলে কী বলতে হয় রে?