ইতি আমি

প্রিয়,

মনে এত এত কথা গেঁথে থাকে যে, চিঠি লিখবার সাহস‌ই করি না। কয়টাই-বা কথা এক পৃষ্ঠায় ধরে, বলো?

আমার চোখে জলের মতো শুধুই অভিযোগ ঝরছে। কাকে নালিশ জানাই? প্রচণ্ড ক্ষতের বোধ হয় এই এক ক্ষমতা, মুখে একদম তালা মেরে দেয়! ক্ষতবিক্ষত মানুষটা জানে, মুখে বলে-কয়ে এসব বোঝানো যাবে না।

আমি আমার নীল শাড়ি ছুঁয়ে বলছি, আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি কোনও উপায় করতে পারো? পারোই তো! পারো বলেই তোমাকে চিঠি লিখছি। আমার একটা চিঠিও তোমার কাছে পৌঁছোয় না, তাই না? তাহলে কি এত বছর আমি আমি ভুল ঠিকানায় এসব পাঠিয়ে যাচ্ছি?

তোমার ঠিকানা নেই বিধায় চিঠি লিখে জানাতে পারছি না কিছুই। ফেইসবুকেই লিখে যাচ্ছি বাধ্য হয়ে... যদি হাতবদল হয়ে তোমার চোখে পড়ে, এ আশায়।
তা কী কী করলে এই জন্মদিনে? ফুল কিনেছিলে? মিষ্টি? কেক কাটোনি?

জানো, আজকাল না খুব চা খাই। তোমার হাতের চায়ের স্বাদ পেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু "চা খেতে এলাম!" বলেই তো আর তোমার বাসায় চলে যাওয়া যায় না। খুব শক্ত কারণ লাগে তোমার কাছে পৌঁছুতে হলে। কী করে একটা শক্ত কারণ বানাই, বলো তো?

সিজনাল জ্বর, ঠাণ্ডা লাগছে অনেকের। তোমার খবর ভালো? অত একা একা থেকো না। অসুস্থ হলে তোমার সাথে যে ছেলেটা থাকে, অন্তত তাকে জানতে দিয়ো।
একটা জীবন তো কাউকে কোন‌ও দুঃখের কথা না জানিয়েই কাটিয়ে দিলে। কিন্তু জানো, একবার অসুস্থ হলে টের পাওয়া যায় সুস্থতা যে কত দামি।নিজের খেয়াল নিজে না রাখলে দুনিয়ার সাথে লড়বে কী করে?
আর তোমার প্রিয় বিশ্বকাপ এসে গেছে। এখন তো আমার অপছন্দের দল সাপোর্ট করার জন্য হলেও তোমাকে সুস্থ থাকতে হবে।
শুধুই ভাজা-পোড়া খেয়ে দিন কাটিয়ে দিয়ো না, একটু সেদ্ধ করে সবজি খেয়ে নিয়ো আর সাথে ডিম, দুধ।

তুমি তো গোছানো মানুষ, তবুও সব বলে দিতে হয় আমার। বলে বলে নিজেকে বোঝাই, এখনও তোমাকে শাসন করার অধিকার আমার রয়েই গেছে।
মানুষ তো এমনই গো! কোনও-না-কোন‌ও ভুল অজুহাত আঁকড়ে ধরে হলেও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ছাড়ে না।
মানুষ ভাবতে ভালোবাসে, তার অনুপস্থিতি তার ভালোবাসার মানুষটিকে এলোমেলো করে দেবে। সেই অজুহাতেই মানুষ বাঁচে। কিন্তু মানুষ এক বারের জন্যও ভাবে না যে নির্ভর করার মানুষটি হারিয়ে গেলেই কেবল মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে শেখে।

তুমি কি ঘুমোচ্ছ? তোমাকে দেখার লোভ হয় না এখন, কথা বলতেও ইচ্ছে করে না, জানো? নিরাপদ দূরত্বে থেকে কাউকে প্রতিমূহূর্তে মিস করে যাবার একটা আলাদা স্বাদ আছে। এই স্বাদের কোনও তুলনাই হয় না। তুমি কাছে থাকলে এসব এলোমেলো বকবকানি কি আর চিঠিতে লিখতে পারতাম, বলো?
আচ্ছা, দুনিয়ার কেউই কি অপ্রয়োজনে চিঠি লেখে না? তাহলে অপ্রয়োজনীয় কথাগুলো মানুষ কী করে? গিলে ফেলে? না কি বিক্রি করে দেয়? আমার এত এত অপ্রয়োজনীয় কথা আছে যে সেগুলো গিলে ফেলা অসম্ভব!
তবে হ্যাঁ, বিক্রি করা যেতে পারে; অনেক টাকা কিংবা সময় আছে, এমন কেউই শুধু কিনতে পারবে। তোমার আছে কি অনেক টাকা... কিংবা সময়?

ইতি
আমি