- নীলা, দারুণ ব্যস্ত পৃথিবী; নেই-ব্যস্ততা মানুষগুলো কীরকম অর্থহীন বেঁচে থাকে। - ভালো থাকার, ভুলে থাকার সহজ পথ তো ওই একটাই…কারণে-অকারণে ব্যস্ত থাকা! - উচ্চারিত প্রেম আজ হঠাৎ প্রেমহীন তৃতীয় মাত্রা বলে মনে হচ্ছে! - কখনো-সখনো…তবে তার নিশ্চয়তা এখনই দিচ্ছি না! - নষ্ট মানুষের মতো বেঁচে থাকে জীবন! বেঁচে থাকতে হয়…কী যে দায়বদ্ধ মানুষ! - দায়বদ্ধতা বিষয়টা কীরকম? - দায়বদ্ধতা! কী আর বলব…এমনিই বললাম মনে হচ্ছে কি? ধরে নাও, জাগতিক মোহাবিষ্ট দায়গুলোর কথাই বলছি! - আজ কঠিন যত দায়, তার সবই সময়ের; আর স্বপ্নের দায়?…সে তো অনেক আগেই চুকে গেছে! - আমার নিজস্ব সময়গুলো নিলামে উঠেছে সেই কবেই…এক বিকট অমাবস্যায় অথবা মাধবী জোছনায়…তবু আজ ভালোই আছি মনে হয়! - বিশেষ কোনও কারণ ছিল? - নাহ্! বাধ্য মানুষের আবার কারণ!! - অভিমান বলব? না কি আত্ম-অনুযোগ? - কী জানি! আমার কোনও অনুযোগ নেই পৃথিবীর কাছে, শুধু মনে হয়…পৃথিবীর অনেক সুন্দর নষ্ট করলাম কি?! - যে প্রতিনিয়তই সুন্দরের সৃষ্টি করে চলেছে, সে নষ্ট করে আবার কীভাবে? মায়া যে পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে! - আত্মতুষ্টি থাকা ভালো; আমি তো চাই-ই তুষ্ট হতে, তবু পারি না…এত বিবর্ণতার সাথে পথ চলা... - রঙগুলো সব হারিয়ে যায় কেন? কীসের অভাববোধে? - আমি মানুষটা অবহেলার কৈশোর বই আর কিছু না। - পূর্ণতাদানে কেউ আসেনি? - পূর্ণতা!! কোনও এক কিশোর কি যুবককে দেখেছে নিদারুণ কষ্টে অভিবাসিনী এক কাশবন-কিশোরী! - সেই কিশোরী কি ছোঁয়ার অতীত ছিল? - হয়তো…হয়তো না। - বসন্ত কি আর আসেনি? - সেই থেকেই তো মেরুনরঙা বসন্তের জন্ম হলো! বোধের অতীত সেই থেকে দারুণ নিঃসঙ্গ। - নিঃসঙ্গতা, বিবর্ণতা…এসবের শেষ কোথায়? - এই যে পথে চলা, যদিও ভুল পথেই অনেকটা, আবার ফিরে আসা…আবার প্রথম পদক্ষেপ, এই তো…এইভাবে একদিন সমাপ্তি-রেখা ছু্ঁয়ে দেবো। - ওহ্! এ পৃথিবীর সকল আত্মা যেন একটু শান্তি পায়। - আমি কি ক্রমশ কথাকাতর হয়ে যাচ্ছি? - তাতে বাধ সেধেছে কি কেউ? - আচ্ছা নীলা, আজ খুউব বৃষ্টি হলো বুঝি…তুমি যাকে মেঘের কান্না বলেছিলে? - বেশ হয়েছে, আমি তো ছুঁইইনি! - ওটা তুমি না ছুঁয়েও ঠিকই ছু্ঁয়ে দিতে পারো…আমার তা-ই মনে হয়! - তাহলে বোধ হয় একবার ভিজতে হবে। - মেয়ে, তুমি চোখে মেঘ মেখো না; মাখো যদি, তবে নদীর খুব কষ্ট হবে। - কাজল পরে নেবো’খন। আগে খুব ভিজতাম, একবার অনেকগুলো রাজহাঁসের তাড়া খেয়েছিলাম। তাতে অবশ্য সুখ ছিল। - আহা রে সুখ…সুখ রে, তুমি কোথায় নিবাস নিলে! - সেই সবুজ মাঠে, রাজহাঁসের দলে সে থমকে গেছে! - সেখানে এক বিপন্ন মানুষ হয়তো দারুণ নিঃসঙ্গ! - পৃথিবীর তাবৎ সবুজই এখন ময়ূরের পালকে আবদ্ধ! মানুষ সেখানে নিতান্ত অসহায়। - আজ সকালে কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড নোট’টা পড়লাম। - পড়া হয়েছিল একবার; এ সম্পর্কে কিছু বলুন, শুনি। - আমার আস্পর্ধা হবে না। - কিছু অনুভূতি নিশ্চয়ই প্রকাশ করা যায়! - যদি কখনও সাহস হয়, বলব। মনে হচ্ছে, এক পরগাছা মানুষ হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ! - এ যে বৃক্ষের অন্যরকম ভালোবাসা! - মেনে নিতে যতটা শুদ্ধতার প্রয়োজন, তার কাছাকাছি হতেও আরেক জনম অপেক্ষা করতে হবে। - ইস্! আপনার সঙ্গে পারা যাবে না। আমার বোধের আরেকটু পরিপক্বতা লাগবে! - প্রজন্মটা নারীদের…পরাজয় তাই আমারই থাক। - উঁহু! পরাজিত হতে আমার ভালোই লাগে। ওতে শেখা যায়। - আজ দু-এক বার নীলা নামটা উচ্চারণ করেছি, তাই না? আবারও বলি, নীলা কখনও পরাজিত হয় না। - হুম, শুনতে বেশ লেগেছে। নীলা নামটা অনেক গল্প বলে? আমার মনে হয়, নামটা গল্পের জন্ম দিয়ে রেখে গেছে! - বেশ চমৎকার বললে, তোমারও একটা ধ্রুপদী গল্প আছে। অথবা অনেকগুলো পরাজিত গল্প তোমাকে আঁকড়ে বাঁচতে চায়। - হ্যাঁ, আছে। মানুষ মানেই গল্প, কারও কারও একের অধিক… - আ-কার’টা রেখে দিলাম; নীল, ভালো থেকো। - ভালো থাকবেন।