আরেকটি ঘরের সংলাপ

তুমি হঠাৎই একদিন কোথা থেকে যেন একরকম উড়েই এলে,
দু-চারটে জীবনের কথা বললে, আর এ-ও বললে,
তোমার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে আমার গুরুত্ব ঠিক কতখানি!
আমি শুনলাম সবই, চুপটি করে;
ধীরে ধীরে বিশ্বাসও করলাম, তলিয়ে গেলাম মায়ার সাগরে।
যাচাই পর্যন্ত করে দেখিনি
ভণিতায় ঠাসা তোমার অন্তরের পুরুত্বটি।


মিথ্যে তুমি বলোনি কখনও,...
না না, ওই অপবাদ আমি দিচ্ছি না তোমায়,
তবে ‘মিথ্যে আমি বলি না’র মিছিল করে করে
তুমি রোজই করেছ আসল সত্যটা গোপন;
নাওয়া খাওয়া ভুলে, নিজের অতীত ভুলে,
প্রতারণার ক্ষত সারাতেই নাকি তুমি আমায় করেছিলে আপন!


বলেছিলে তুমি, ‘বেখেয়ালি আর অবাধ্য আমিটা কখনওই যে বাড়ি ফিরতে চাই নাকো,
তোমার শাড়ির আঁচল আর ভালোবাসার শক্তি দিয়ে তুমি আমায় শক্ত করে বেঁধে রাখো!'


আজকে বুঝি, আমাদের মধ্যে হয়েছিল যা-কিছু, ওসব কিছুই ছিল সময়ের দাবি,
দুঃসময় গিয়ে সুসময় ফিরে এলে, ছুড়ে ফেলে দাও তোমরা অতীতের সবই।


তোমরা ঝোপটা বুঝে কোপটা ঠিকই মারো,
আজ চুপ করে আছ, তবে আমি নিশ্চিত,
সুযোগ পেলে তুমি আমার কাছেই ফিরে আসবে ঠিকই আবারও।


এক ভালোবাসা বাদে মানুষ আর ফিরবেই-বা কোথায়?
যেখানে আছ এখন, আমি তো জানিই,
একজনও ভালোবাসার মানুষ তোমার নেইকো সেখানে।


রাতের সুখেই বিশ্বাসী তোমরা, দিনের সুখে নও,
ওরকম নোংরা একটা মন নিয়ে,
তোমরাও আবার ভালোবাসার কথা কও!


তোমরা কি জানো আদৌ, ভালোবাসা কারে কয়?
সুসময়ে যে ভুলে গেল দুঃসময়ের প্রেমিকার ভালোবাসার কথা,
তার ভালোবাসা আর যা-ই হোক, ভালোবাসা কিছুতেই নয়!


আগ বাড়িয়ে একটা কথা বলেই ফেলি।
কেউ যখন তোমার মতন অনেক বড়োলোক হয়,
তখন মানুষ তোমাদের টাকা আর সুযোগের গোলামি করে,
তোমাদের ভালোবাসার নয়।


ওসব টাকাপয়সা আর সুযোগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে দেখোই না,
জলের মতন পরিষ্কার দেখতে পাবে,
কোনটা ভালোবাসা আর কোনটাই-বা ভালোবাসা নয়।
পয়সায় মেলা ভালোবাসা, পয়সাতেই মিলিয়ে যায়।


কত বললাম, বাড়ি ফিরলে আমায় তুমি ভুলেই যাবে,
তুমি রক্তবর্ণ চোখে বললে, ‘না, কখনওই না!’
সেদিন বাড়ি ফিরতেই চায়নি যে মানুষটা,
সে আজ বাড়ির বাইরে পা-টা অবধি ফেলতে চায় না!


তুমি শুধু বলো, ‘ঘরের মানুষটিকে আমি ভালোবাসি না!’
আমি মুখ টিপে হাসি, আর তোমায় বোঝাই,
‘হ্যাঁ গো, হ্যাঁ, তোমার ওসব ভণিতার আমি বুঝি না কিছুই!’


শুনে রাখো তোমরা, প্রয়োজনে লিখে রাখো আমার এই একটা কথা।
দিনশেষে, দুনিয়ার সব অবাধ্য ছেলেই ঘরে ফিরে যায়,
ওদের তোমরা সুপুরুষ বলো, কিন্তু ওদের কাপুরুষত্বের
শত শত প্রমাণ দিতে পারবে যে মানুষটা,
তাকে তোমরা কখনও চোখেও দেখোনি।