লাইফটাকে অত সিরিয়াসলি নিয়ে কী হবে? লাইফকে যত সিরিয়াসলি নেবেন, লাইফ ততই জালের মতন পেঁচিয়ে যাবে। কিছু মানুষ মাছের মতন—শুধুই জালে আটকে যায়। জীবনকে দেখতে হয় স্বচ্ছ কাচের মতন করে। কাচে এত প্যাঁচগোছ রাখলে জীবনকে দেখা যায় না। লাইফটাকে রাখলে প্যাঁচে, আউট হবেন লাইফেরই ক্যাচে! যেদিন ইচ্ছে করবে, তিনরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাবেন—সেদিন ছুটে যান না ফুচকা খেতে, যত জরুরি কাজই থাকুক! সামর্থ্যে কুলোলে ইচ্ছেপূরণই সবচাইতে জরুরি কাজ। যেদিন মন চাইবে পাড়ার বাচ্চাদের সাথে ফুটবল খেলতে, খেলতে শুরু করুন। কেউ 'বুড়োর ভিমরতি উঠেছে' বলে বকলে বকুক। কিছু লোকে বকবেই, ওরা যে বকতেই জন্মেছে! এইসব ছোটো ছোটো কাজে আপনি যে-সুখ পাবেন, ফাইভস্টার হোটেলের ব্যুফেতে খেয়েও হয়তো তার ছিটেফোঁটাও পাবেন না। কে কী বলবে, কে কী ভাববে, এসব কথা অন্যদের ভাবতে দিন; যার ভাবার, সে যা খুশি ভাবুক না, যার বলার, সে যা ইচ্ছে বলুক না—আপনি সেটাই করুন, যেটা করলে আপনার মন খুশি হয়। খুশির জন্য সাত-শো-খুনও মাফ! সুখ আপেক্ষিক বিষয়। কখনো কখনো সত্যিই টাকায় সুখ কেনা যায় না। যে-সুখ টাকায় কেনা যায় না, তা-ই খুব দামি হয়। আপনার একদিন অনেক টাকা থাকবে, শুধু সুখ কিনতে পারার টাকাটাই সেদিন থাকবে না। এই মহাদামি সুখের রাজ্যের চাবিটা আপনি খুঁজে পাবেন যাপনের ব্যাকরণের তোয়াক্কা না করেই। একেকটা জীবন, একেকটা যাপন। ইচ্ছের ডানা মেলে দু-চারটা নিয়ম পায়ে মাড়িয়ে দিন। নিয়মের বাইরে গিয়ে হুটহাট কিছু নিয়মহীন কাজ করে ফেলুন। যে-নিয়ম ভাঙলে কারও কোনো ক্ষতি হয় না, কিন্তু নিজেকে ভালো রাখা যায়, তা যে ভেঙে ফেলার জন্যই! সারাজীবনই গুডবয়-গুডগার্ল হয়ে কাটিয়ে দিলেও সমাজ আপনার ভুল ধরবে, দু-চারটা অনিয়ম করলেও সমাজ আপনার ভুল ধরবে। ভুল করে যদি নিজেকে একটু ভালো রাখা যায়, তবে ক্ষতি কী তাতে? আয়ের বড়ো একটা অংশ স্রেফ নিজের জন্য খরচ করুন, নিজের প্রিয় কাজটা করুন বা প্রিয় জিনিসটা কিনে ফেলুন। দামি পোশাক বা ঘড়িটা পরে একদিন নিজের খুশিমতো ঘোরাঘুরি করুন। কেউ সঙ্গী হতে না চাইলে নিজেই নিজের সঙ্গী হয়ে যান। বেশিরভাগ সঙ্গীই আপনার সুখের দামে নিজের সুখ কেনার কথাই ভাববে। আপনার কীসের দায় ওই দামটা মেটানোর? বন্ধুবান্ধবদের হুট করেই একদিন দাওয়াত দিয়ে ইচ্ছামতো পার্টি করুন। কীসের নিয়ম! কীসের বিধিনিষেধ! ছবি তোলার দরকার নেই, কাউকে এসব শেয়ার করার দরকার নেই। লাইফটা ফেইসবুক নয়। যার লাইফের সব কিছুই ফেইসবুকে, তার লাইফে মাত্র দুটো ইমোজি আছে: টিয়ার্স আর অ্যাংগ্রি। ব্যক্তিগত সব সুখ ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেবেন না, মানুষ মানুষকে মূলত দুঃখী দেখতেই বেশি ভালোবাসে। আপনার সুখই অন্যের কষ্ট! মানুষ 'পরিবার পরিবার' করে তার নিজের শতকরা নব্বই ভাগ টাইম ও এফর্ট কেবল পরিবারের জন্যই ব্যয় করে। বাকি দশ ভাগ চাইলেও অবসাদে, সামাজিক জটিলতায় কিংবা সময়ের অভাবে নিজের জন্য ব্যয় করার হলেও করে না। অথচ দেখুন, মানুষ তার জীবনের সবচাইতে বড়ো কষ্টগুলি পায় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। যার গলায় মালা পরাবেন, সুযোগ পেলেই তার দু-হাত আপনার গলা টিপে ধরবে। যাদের জন্য নিজের সব কিছু দিয়ে দেবেন, তারাই আপনাকে সারাজীবন ভুল বুঝে যাবে। আপনার খেয়ে, আপনার পরে আপনাকেই ভয়ে ভয়ে বাঁচতে বাধ্য করবে। পুরো পৃথিবীর সামনে যে আপনি মাথা উঁচু করে বাঁচেন, সেই আপনাকেই পরিবারের সামনে বাঁচতে হয় লুকিয়ে, মাথা নিচু করে। ডু ইউ ডিজার্ভ ইট? একটাই আধপোড়া জীবন আমাদের, অথচ তার নব্বই ভাগেই কিনা আমরা অন্যের জন্য পুড়ে আর ক্ষয়ে যাই! তবে এ জন্মের মানেটা কী? এ যাপনের উদ্দেশ্যই-বা কী? বাঁচুন! দু-একটা দিন ইচ্ছেমতো নিজের জন্য বাঁচুন। আয়ের অর্ধেক হলেও নিজের জন্য খরচ করুন। যাদেরকে মাথায় করে রাখবেন, দিনশেষে তারাই আপনাকে পায়ের তলায় পিষবে। ব্যয়িত সময়ের কিছু অংশে ইচ্ছে হলে রাস্তায় বেখেয়ালিভাবে হাঁটুন, প্রিয় খাবারটি রাঁধুন, অথবা রুমের দরজা বন্ধ করে প্রিয় গানটি ছেড়ে দিয়ে নাচুন বা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকুন। ছোট্ট একটা জীবন—ফুরোনোর আগেই যাপন করুন! কিছু সময় নিজেকেও বাঁচতে দিন। কেবলই অন্যের জন্য না বেঁচে কিছু সময় নিজের আয়ুর সম্মানে উদ্যাপন করুন। নিজের বার্থডে কেকটি কিনে একাই গিলে খান। যারা বলবে, বার্থডে সেলিব্রেট করে অর্থের অপচয় করছেন, আরও একটা বার্থডে কেক কিনে তাদের মুখে ছুড়ে মারুন। জীবনটা আপনার, কিছু সময় নষ্ট করে, কিছু অর্থ অহেতুক ব্যয় করে, কিছু নিয়ম ভেঙে যদি নিজের জন্য ন্যূনতম সুখ পাওয়া যায়, তবে তা-ই করুন। নিজেকে সুখে রাখার প্রয়োজনে পরিবারের সাথে অভিনয় করতে শিখুন। এ পৃথিবীতে প্রেমিকা, স্ত্রী ও পরিবার সত্য সহ্য করতে পারে না—যে-সত্য আপনাকে ভালো রাখে, সেটা তো সহ্য আরও করতে পারে না! পরিবার সবসময় আপনার সুখ নিয়ে ভাবে না—আপনি ওদেরকে কতটা সুখে রাখতে পারছেন, কেবল তা নিয়েই ভাবে। মানুষ সুখে থাকলে নিজের স্রষ্টাকেও ভুলে যায়, আর সেখানে আপনি তো তুচ্ছ একটা ভারবাহী বলদ! মধ্যরাতে বিষাদে বালিশ চেপে কাঁদার চেয়ে দিনে-দুপুরে বালিশ ছিঁড়ে উল্লাস করে জীবনকে উদ্যাপন করাই শ্রেয়। জীবন একটাই, দ্বিতীয় বার এই পৃথিবীতে আবার আসার সুযোগ আপনি পাবেন না। একদিন আবিষ্কার করবেন, যে-জীবন আপনি যাপন না করে চলে যাচ্ছেন, সেটি নয়, বরং অযাপিত জীবনটাই আপনার সবচাইতে বড়ো ক্ষতি, বড়ো অপচয়, বড়ো অনুশোচনা। অযাপিত জীবনের চেয়ে বড়ো কোনো ক্ষতি মানুষের জীবনে নেই। প্রিয় কাজটি করতে না পারার দুঃখের চাইতে সেটি করতে পারার সামর্থ্যকে ব্যবহার করতে না পারার দুঃখ অনেক বেশি।