তোমার সাথে আমার, আমার সাথে তোমার কোনও হেরে যাওয়া নেই, কোনও জিতে যাওয়া নেই।
তুমি আমার সাথে থাকো, তোমাকে আমি অনুভব করি সবসময়ই।
বিনয়, অনুরোধ, আত্মসমর্পণ, হেরে থাকা, নত হওয়া, সরে যাওয়া... এইসব শব্দের সাথে আমার সহাবস্থান অনেক অল্প। আমি চাকরি করি না, খেটে-খাওয়া মানুষ, তাই জীবনে চলার পথে, আমার সামাজিক যাপনে এইসবের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।
কিন্তু আমার ব্যক্তিগত জীবনে বাবা এবং তোমার ক্ষেত্রে এইসব শব্দ নিজের সাথে মানিয়ে নিতে কখনও দ্বিধা করিনি। এর একটাই কারণ: তোমাদের দু-জনকে আমি ভীষণ রকমের ভালোবাসি। আমার প্রতি বাবার অনুভূতি বুঝতে পারি, কিন্তু তোমার কী অনুভূতি, এটা আমি এখন আর ঠিক করে অনুভব করতে পারি না।
যেহেতু আমাদের দু-জনের মধ্যে অনেক ঝড়তুফান গিয়েছে, সেহেতু এতসব যুদ্ধশেষে এখনও আমি যে অনুভূতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, তেমন কিছু তোমার মধ্যে আদৌ আছে কি না, না কি সেই জায়গা থেকে তুমি বেরিয়ে গিয়েছ, এটুকু আমার কাছে অস্পষ্ট। অস্পষ্ট বলেই, তোমার কাছে হঠাৎ হঠাৎ আমার ফিরে যাওয়াটা ঠিক, না কি ভুল হচ্ছে, এটা আমি পরিষ্কার করে বুঝতে পারছি না।
তাই বলছি, আমি এখন এমন একটা ভুল কোনও কারণেই কোনোভাবেই করতে চাই না, যে ভুলের ফলে তুমি বিরক্ত হবে, আর আমি অপমানিত হব। প্রকৃতপক্ষে, আমি কিছুতেই চাই না, আমার ক্ষুদ্র কোনও আচরণেও তুমি কষ্ট পাও কিংবা বিরক্ত হও।
আমি তোমার দেওয়া কষ্ট সহ্য করি, অবহেলা সহ্য করি, তোমার সকল নির্দয়তা মেনে নিই, তোমার কাছে নত হই, এই সব কিছুই ঠিক আছে, কেননা আজও আমি তোমাকেই অনুভব করি; তবে এর মানে এ নয় যে, আমি তোমার বিরক্তির কারণ হব। এটা আমি কোনোভাবেই চাই না বলেই, তার জন্য যদি তোমার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ আমাকে বন্ধও করে দিতে হয়, আমি তা-ই দেবো।
এ পৃথিবীর এক জনও মানুষের কাছে ছোটো হয়ে বাঁচতে আমি চাই না, কেননা ছোটো হয়ে বেঁচে থাকার মতো কোনও কাজ আমি করি না।
আমাদের পরস্পরের জন্য একটা মায়া ছিল, তার একটা গভীরতাও ছিল এবং আছে--- আমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে বলছি, তোমারটা তুমিই ভালো জানবে।
তোমার প্রতি আমার যে তীব্র একটা টান, এত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আসার পরও যে তা শেষ হয়ে যায়নি, এটা আমি মাঝে মাঝে খুব স্পষ্ট করে বুঝতে পারি। কখন, জানো? যখন হঠাৎ সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে তোমাকে লিখতে শুরু করি, তোমাকে দেখার আবদার করি আবারও, তখন।
এর আগেও বেশ কয়েকবার প্রচণ্ড অভিমান থেকে, কষ্ট থেকে তোমাকে বলেছি, তোমাকে আর লিখব না, তোমাকে দেখতে আর চাইব না... কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারি, তুমি আমার কাছাকাছি আছ, তখন আবার সব ভুলে গিয়ে অধিকার নিয়ে আবদার করে বসি।
আমি বেমালুম ভুলে যাই, এখন আর অধিকার নিয়ে আবদার করা যাবে না, এখন আমরা দু-জন আর আগের মতো নই। এখন আমাদের দু-জনের মধ্যে অনেক অনেক দূরত্ব! বাকিটা সৃষ্টিকর্তাই জানেন, আসলে আমাদের মধ্যে কী!
তোমার কাছে সব স্বীকার করতে আমার কোনও অসুবিধে নেই, কারণ তোমার কাছে কোনও আড়াল কখনোই আমি রাখিনি--- তোমার সাথে আমার সম্পর্কের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাগ, অভিমান, অস্থিরতা, পাগলামি; অধৈর্য বা অগোছালো হয়ে যাওয়া; নিজে নিজে অনেক কষ্ট পাওয়া এবং তোমাকেও কষ্ট দেওয়া... এমন অনেক কিছু ঘটে যাবার পর একটু একটু করে নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করা... এর সব কিছুই তুমি দেখেছ।
অনেক সয়ে, অনেক চেষ্টায়, অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে করে নিজেকে এইটুকু নিয়ে এসেছি। অথচ দেখো, যার জন্য আমার এত কিছু, সে আমার জীবনে আছে কি নেই, তা-ও আমি ঠিক করে বুঝতে পারি না। তবে তার প্রতি যে তীব্র মায়া, সেটা আড়ালে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা থাকে আমার।
তোমার তো দিনশেষে ফিরে যাবার একটা জায়গা আছে, আমার যে কোথাও ফিরে যাওয়া নেই... ভালো যে তোমাকেই বাসি, তাই সে চেষ্টা করিওনি কখনও।
আগে তোমার কাছে ছোটো হতে লজ্জা লাগত না, এখন একটা দ্বিধা-সংকোচ কাজ করে। কেন জানি না, যখন থেকে তুমি চুপ করে আছ, আমার মনে হচ্ছে, আমি তোমাকে বিরক্ত করছি। প্রথমত, একটা অস্থিরতা কাজ করছে; দ্বিতীয়ত, প্রায় রাতেই তেমন ঘুম হয় না। সব কিছু মিলিয়ে একধরনের কষ্টবোধ তো আছেই, তবে কোনও রকমের অভিমান রাখছি না আর; অভিমানটা তোমার প্রতি আমার একটা অধিকার রেখে দেয় সবসময়!
মোবাইলে হয়তো কথা হবে না, তাই আবারও এত কিছু লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি কথা দিচ্ছি, আমার প্রতি তোমার যদি কোনও অনুভূতি না থাকে, কখনও কখনও তোমাকে দেখতে চাওয়ার আবদারের কারণে যদি তুমি বিরক্ত হও, শপথ করে বলছি, নিজ ইচ্ছায় কোনোদিনই তোমার মুখোমুখি হব না। তোমাকে আর কোনোদিন দেখতেও চাইব না। এবং, আর কোনও মাধ্যমেই কখনও তোমার সাথে কোনও রকম যোগাযোগ করব না।
আমি জানি, তোমার জবাবের উপর তোমার প্রতি আমার যে অনুভূতি, সেটা নির্ভর করে না, তবে বিষয়টা তুমি স্পষ্ট করলে আমার উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা, দ্বিধা-সংকোচ...এ বিষয়গুলো কাটিয়ে উঠতে পারব, কিছুটা নির্ভার হয়ে গন্তব্যের দিকে হাঁটতে পারব। হ্যাঁ, অনেকটা সহজ থাকব নিজের কাছে। তুমি নিশ্চয়ই চাও না, যে মানুষটা তোমাকে ভালোবাসে, সে বার বার তোমার কাছে ছোটো হয়ে থাকুক!
যদি এখনও চুপ করে থাকো, তবে দুটো বিষয়: যদি তোমার সাথে আমার দেখা হয়, মানে তুমি দেখা করো, তাহলে আমি তোমাকে বিরক্ত করছি না। যদি দেখা না করো এত কিছু বলার পরও, তাহলে ধরে নেব, আমি তোমাকে বিরক্ত করছি। কষ্ট কিংবা আনন্দ, যা-ই আমার জন্য অপেক্ষা করুক না কেন, কথা দিচ্ছি, তুমি না চাইলে আর কোনোদিনই তোমার সাথে আমার যোগাযোগ হবে না।
উপরের কথাগুলো বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে আগেও লিখেছি, আজ শেষ বারের মতো লিখলাম।
জানো, তোমার হঠাৎ করে চুপ হয়ে যাওয়া, আমার অনেক অনুরোধের পরও জবাব না দেওয়া... এতে করে মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমার প্রতি তোমার কোনও অনুভূতি নেই আর, আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি একধরনের আনন্দ পাও এখন, তাই এরকম চুপ করে থাকতে পারো; কিন্তু কেন জানি এই বিষয়টা আমার মন কখনোই মেনে নেয় না!
তাই বিনয়ের সঙ্গে তোমার কাছে আমি শুধু এইটুকুই জানতে চাই, অনেক দিন পর হঠাৎ করে তোমাকে দেখতে চেয়ে তোমাকে কি আমি বিরক্ত করছি? হ্যাঁ কিংবা না, তোমার মনের মধ্যে যা আছে, সেটুকই শুধু তুমি আমাকে বলে দাও, প্লিজ!
আমি মন থেকে বলছি, আমি কোনোভাবেই তোমার বিরক্তির কারণ হতে চাই না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, এই অনুভূতিটুকু আমার কাছে অনেক যত্নের। শুধু তুমি কেন, কারও কাছেই আমি আমার অনুভূতিকে ছোটো হতে দিতে পারি না--- প্রয়োজনে তোমাকে কোনোদিনই দেখব না!
সত্যিই কি তোমাকে দেখতে চেয়ে তোমাকে বিরক্ত করছি? যা সত্যি, বলে দাও না, প্লিজ!