আজ অনেকগুলি বছর পর নিউমার্কেটে হঠাৎ দেখা! ছেলে আসেনি? মেয়েটা? কিংবা তোমার উনি...আসেননি? বাড়ি থেকে বেরুতে কেন দিল এমন একা একা? প্রশ্নগুলি মনেই ছিল, করার সাহসটা আর পাইনি। আচ্ছা, আজও কি তোমার, ওঁর সাথে বনিবনাটা ঠিক হয়ে ওঠেনি? জিনস ছাড়া যার চলতই না, সেও আজ দারুণ করেই পরে শাড়িটা! ভাবছিলাম, অমন কায়দা করে, কিছু না বলেই...দিয়ে দেওয়া যায়…আড়িটা? থাক, ওসব নাহয় মনেই রাখি! কিছুই বলতে আর চাই না! তুমিও তো চাও না কিছুই জানতে এখন! আমার জীবন কেমন কাটে, এটুক জানবার ইচ্ছেটাও আজ ফুরিয়ে গেছে! ...ভুল বলিনি তো, তাই না, বলো? মনে মনেই এত কথার ঝড় উঠিয়ে ধীর পায়েই এগিয়ে গেলাম। - কেমন আছ? বাচ্চারা সব কেমন আছে? আর তোমার উনি? - আরে, কী খবর? আমি ভালো আছি, ওরাও ভালো। তোমার খবর বলো। হঠাৎ এখানে কেন, শুনি? - আর বোলো না, শাড়ি কিনেছিলাম মায়ের জন্য। মা বলল, তাই এলাম পালটে নিতে। এদিকে এসেছি...মানে সাধ করে নয়! - এমা, দেখি? কী সুন্দর শাড়ি! অবশ্য জমিনটা তো খয়েরি রঙের, তাই আন্টির সাথে যাচ্ছে না ঠিক...! সে একটু থেমে বলল আবার, ‘এখনও দেখি অমন কাটা কাটাই কথা বলো! কে মেনে নেয়? নতুন করে আবার কেউ এল কি?’ - আরেহ্ রাখো তো ওসব! এখন চাকরি করি, আবার নতুন মানুষ? অত সময় আমার কোথায়, বলো? - সে কী! চাকরি? স্যার, সংসারের হালটা এবার তবে ধরতেই হলো? চাকরি করতে তো চাইতেই না, ব্যবসা নিয়েই থাকতে বিভোর! চাকরির তাগাদাটা তো আমিই দিতাম হরহামেশা! - ও…ই আরকি...হয়ে যায়! তা, আজকাল কী করা হয়? অবসরে কি পিয়ানো বাজাও আগের মতো? - কী যে বলো! দু-দুটো বাচ্চা আর অত বড়ো সংসারটা সামলানোর পর হাতে কি অত সময় জোটে? - আরে, ওদিকে কই যাচ্ছ? এই দোকানেই তো ভালো ভালো শাড়ি! কী লাগবে তোমার? এ...খানেই দেখো না খুঁজে! - ওহে মিস্টার, বাচ্চাদের কাপড়ও তো কিনতে হবে! এখন আর শুধু শাড়ি কিনলেই চলে না গো! - ও আচ্ছা, যাও তবে! সময় করে একদিন বাড়িতে এসো...সবাইকে নিয়ে, কেমন? - না না রাসু, তুমি আগে যাবে! একদিন দেখে এসো নাহয়…তোমার নীরা আজ কেমন আছে! হাসতে হাসতে চলে গেল সে। আঁচলটা ঠিক করতে করতেই ঢুকে গেল আর-এক দোকানে। এদিকে আমি কী যেন ভেবে, আপন মনেই, অনেকটা সময় ধরে ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। বহু বহু বছর পরে, হঠাৎ করেই মনে হলো, সারাজীবনই কাঁদার চেয়ে তখন বরং সরিটা বলে ফেললেই ভালো হতো!