পৃথিবীতে মানসিক অবসাদের চেয়ে বড়ো কোনো অসুখ আর দ্বিতীয়টি নেই। ক্যানসার হলেও সেটা ধরতে পারা যায়, ওষুধে কিংবা থেরাপিতে কঠিন অসুখও নিরাময়যোগ্য হয়। কিন্তু যে-মানুষটা প্রতিমুহূর্তে অবসাদে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে, কোনো এক অদৃশ্য দানব যে তার ভেতরটা খুবলে খুবলে খেয়ে নিচ্ছে, এই দৃশ্য তো আর বাইরে থেকে দেখাও যায় না, বোঝাও যায় না; এই রোগ তবে ধরা পড়বে কীসে? রোগী তবে বাঁচবে কী করে? এই রোগের কোনো সিস্টেম নেই, শারীরিক কোনো পরিবর্তন নেই, বাহ্যিক কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। তরতাজা একটা বাঁশকে ঘুণপোকায় যেমন কুটকুট করে কেটে কেটে ভেতরে ভেতরে খেয়ে নেয়, একজন মানুষকে অবসাদও ঠিক তেমনটাই ধ্বংস করে দেয়। আপনি হাসছেন, খেলছেন, খাচ্ছেন, ঘুরছেন, ফিরছেন। কিন্তু এই হাসিখুশি চাদরের ভেতরে এই মানুষটাকে যে কোনো এক ভয়ংকর দানব শুষে শুষে খেয়ে নিচ্ছে, সে খবর কেউই বুঝতে পারে না। এই ঘুণপোকা থেকে বাঁচতে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, কেউবা নিজেকে সব কিছু থেকে আলাদা করে নিচ্ছে। কেউ চুপচাপ ভাবছে, কোনো একদিন সময়সুযোগ বুঝে সে-ও…!!! আমরা চাইলেই এইসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। অবসরে দশঘণ্টা-ঘুমের তালিকা থেকে মাত্র দেড়টা ঘণ্টা বের করে ওদের সাথে একটু কথা বলি। শুনি, ঠিক কোথায় আটকে গেছে তার জীবনের চাকাটি। একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই। আপনার হাত ধরে মানুষটা হয়তো সেই ভয়ানক অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াবে। হয়তো আপনার বন্ধুটি আপনার সহযোগিতায় তার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারবে। সময় থাকতে পাশে দাঁড়ান, তার হাতদুটো ধরুন, কাছে গিয়ে তার নিচু-করে-রাখা মুখটি দু-হাতে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করুন, কী করলে তার ভালো লাগবে। নাহয় চুপচাপ তার মনের কথাগুলো শুনুন আর বুকে চেপে ধরে বলুন, এখানটায় কেঁদে হালকা হয়ে নে দেখি একটু! কিছু অসুখ কখনও কখনও শুধু ওষুধে সারে না। কিছু অসুখ কাছের কিংবা প্রিয় মানুষগুলোর উষ্ণ ছোঁয়াতেও সেরে যায়। কারণ কিছু অসুখের ওষুধ কেবলই একটু আদর, খানিকটা স্নেহের ছোঁয়া, দু-চারটা ভরসাপূর্ণ কথা। ব্যস্, এটুক! এটুকও একটা মানুষকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। এর চেয়ে বড়ো পুণ্য আর হয় না।