তোমার সঙ্গে আমার এ কী নিগূঢ় সম্বন্ধ! তুমি সর্বাধার, সর্বাশ্রয়, সর্বময়, অনন্ত জ্ঞান। তোমার এককণা জ্ঞানে আমার জীবন। তুমি আমার আত্মা, আমার জীবন তোমার প্রবাহমাত্র। তোমার সঙ্গে আমি এক, অথচ তুমি অনন্ত, আমি ক্ষুদ্র। তুমি জ্ঞেয়, আমি জ্ঞাতা। তুমি দাতা, আমি গ্রহীতা। তুমি পালয়িতা, আমি পালিত। তুমি জ্ঞান, শক্তি, প্রেম, আনন্দ দিয়ে আমাকে শুধু পালন করছ।
আমি তোমাতে, তুমি আমাতে। তুমি মা, আমি ছেলে। তোমার সঙ্গে আমি এক অথচ ভিন্ন। মা-ছেলের ভেদাভেদের এ কী রহস্য! রহস্যই বটে। আমি এ বুঝিনে, অথচ স্বীকার না করে থাকতে পারিনে, অত গভীররূপে, নিগূঢ়রূপে, তোমার হয়েও আমি প্রেমে তোমার হলাম না, তোমার প্রেম ধরতে পারলাম না, তোমার প্রেমে মজতে পারলাম না। তোমার প্রেম তো এই প্রত্যক্ষ দেখছি। তুমি অপ্রেমিক হলে একাকী থাকতে, তোমাতে আমার জন্ম সম্ভব হতো না। এই যে আমাকে নিত্য সৃষ্টি করছ, এ-ই তো তোমার প্রেমের সাক্ষাৎ প্রকাশ।
কিন্তু আমি কী ভয়ে রয়েছি দেখো। তোমাকে কত বার পেলাম, কত বার হারালাম। আমাকে অভয় দাও। তোমার প্রেমধামে আমাকে একটু স্থান দাও। তোমাতে অনুক্ষণ বাস করছি, চিরদিন বাস করব। তোমার অমরত্বে আমি অমর, তা তো প্রত্যক্ষ দেখছি। কিন্তু আমি তোমার ঘুমন্ত শিশু হয়ে থাকতে চাইনে। আমি প্রকৃত নিদ্রা, মোহের নিদ্রা দুই-ই ছেড়ে সর্বদা তোমার জ্ঞানে, তোমার প্রেমে, জাগ্রত থাকতে চাই। তোমার নিত্য কল্যাণকাজে তোমার হাতের যন্ত্র হতে চাই!
এই যে বিদ্যুতের মতো আমার কাছে মুহূর্তের জন্যে প্রকাশিত হও, তাতে আর চলবে না। আমি বহুবার এই ক্ষণিক প্রকাশে সন্তুষ্ট হয়ে ঠকেছি। আমাকে দেখা দাও যাতে আমি আর তোমায় না ভুলি, না ছাড়ি। দেখা আর ভালোবাসা, জ্ঞান আর ভক্তি, সবই তো দেখছি এক। তোমাকে দেখে তো ভালো না বেসে থাকতে পারিনে। তবে দেখা দাও, দেখা দাও, দেখা দাও। তোমার প্রাণরূপী, আত্মারূপী, আশ্রয়রূপী, পিতৃরূপী, মাতৃরূপী প্রকাশ আমার জীবনে স্থায়ী করো।