অচেনা

চক্রবর্তীদের বাড়িতে সাত দিন ধরে লাল-সবুজ-সোনালি নানান রঙের মরিচবাতি জ্বলছে; বাড়ির ছোটো মেয়ে সুতপার বিয়ের আলোকসজ্জা।




গ্রাম থেকে, শহর থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও সব আত্মীয়-স্বজন চলে এসেছেন। সুতপার বিয়ে বলে কথা! দিল্লি থেকে বিখ্যাত পাচকঠাকুর আনানো হয়েছে। সারাদিন একটার পর একটা রান্না চলছে। মিষ্টি, নাড়ু, মোয়া, সেমাই, পায়েস এসব তো সকালেই হয়ে গেছে। বাড়ির বড়োরা একেক জন একেক কাজের তদারকি করে যাচ্ছেন, আর বাচ্চারা মেতে আছে হইহুল্লোড়ে।




আজ এ বাড়িতে শুধু একজন মানুষই কাজ ফেলে ঠাকুরঘরে বসে রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন সুতপার মা অরুণিমা চক্রবর্তী। একটু পরপরই চোখে জল আসছে তাঁর। তাঁর ওইটুকু সুতপারও আজ যাবার পালা চলে এল।




সন্ধে সাতটা বিয়াল্লিশের লগ্নে কপালে সিঁদুর উঠে গেল সুতপার। আজ থেকে সে সেনগুপ্ত বাড়ির ব‌উ।




মেয়েকে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানাতে জানাতে রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেল।




সানাইয়ের শব্দ দূরে সরে যেতে যেতে একসময় মনে হলো, একদল লোক ‘বলো হরি’, ‘হরিবোল’ বলতে বলতে সুতপাদের গাড়ির পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। সুতপার মামাতো ভাইটা ড্রাইভারকে একসাইডে থামাতে বলে নেমে গিয়ে দেখে এল। এসে বলল, ওদের এলাকার বিনয় নামের এক ছেলে সায়ানাইড খেয়ে আত্নহত্যা করেছে। সে নাকি সুতপারই ক্লাসমেট ছিল।




ওর বর জিজ্ঞেস করল, “চেনো?”




না-সূচক মাথা নাড়ল সুতপা, যেন আজই প্রথম শুনল এই নাম!