প্রিয় অরণ্য, আজ একটা প্রশ্ন দিয়েই শুরু করি, কেমন! তোমার কখনও এমন হয়েছে, আমাকে দেবে ভেবে অনেক কথাই তুমি লিখে ফেলেছ, কিন্তু আমাকে আর দেওয়া হয়ে ওঠেনি, কিংবা লিখে পরক্ষণেই ছিঁড়ে ফেলেছ, ছুড়ে মেরেছ একটু দূরের ঝুড়িতে, কিংবা যা লিখেছ সবই মুছে ফেলেছ! সত্যি করে বলবে কিন্তু! যদি না বলো, তাহলে দেখো, তোমার কফিতে রোজ রোজ লাল পিঁপড়ে পাবে, কফি খাওয়ার সময় কুট কুট করে তোমার ঠোঁট কেটে দেবে ওরা। একদম বলে দিচ্ছি কিন্তু! এই অভিশাপে ঠোঁটটা নাহয় ব্যথাই একটু পেল, এমনটা ভেবো না; সে ব্যথা ঠিকই থেকে যাবে দু-একটা দিন। তখন আমাকে সত্যি না বলার মজাটা হাড়ে হাড়ে বুঝবে, মশাই! এখন বলো, তুমি কেমন আছ, অরণ্য? সত্যি করে বলো। চোখ বন্ধ করে বলো। চোখ বন্ধ করে নিজের সাথে ঠিক গুছিয়ে মিথ্যে বলা যায় না। আচ্ছা, ওরকম চোখ বন্ধ করলে আমাকে কতটা কাছে পাও তুমি? ঠিক কতটা ভালো থাকো আমাকে পেলে? জানি জানি! একটা প্রশ্নেরও তো উত্তর তুমি দেবেই না! আমার বেলাতে এমন করো, না কি সবার সাথেই এমন? অরণ্য, তোমার ওই ছোট্ট ঘরটা থেকে বেরোও না কেন! অন্তত তোমার বাসার ছাদে তো যেতে পারো। অদ্ভুত সুন্দর তোমাদের এই ছাদ! অথচ দ্যাখো, তা দেখার ইচ্ছে তোমার একটুও নেই। এমনই হয়! যার যা থাকে, তা সে দেখেও তেমন দেখে না! আমি তোমার কাছে থাকলে তুমি বড্ড অস্থির হয়ে যেতে এই ভেবে যে পৃথিবীর সব মেয়েই এমন নাকি! আচ্ছা, তখন তুমি কি বড্ড বিরক্ত হয়ে বকে দিতে খুব? ওরকম করে বকলে তো আমি দুম্ করে পাহাড়েই চলে যেতাম! অমন সুন্দর পাহাড়ের উপর আকাশ দেখার লোভে আমি একদমই তোমার মতো ঘরে থাকতে পারতাম না! তবে কি তুমি অনুভূতিশূন্য? মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে একটুখানি ভেবে ছাদে গিয়ে আকাশের সাথে জম্পেশ একটা আড্ডাও তো তুমি মারতে পারো! কই, কখনও অমন করো না তো! তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। আচ্ছা, তুমি আমাকে এত জ্বালাও কেন গো? একটুও ঘুমুতে দাও না, রীতিমতো স্বপ্নে এসেও ঠায় জাগিয়ে রাখো! তোমাকে নিয়ে আমি আর পারি না! জানি, আমাকে নিয়েও তুমি আর পারো না! আমিও কি তোমাকে অনেক জ্বালাই? রাতের পর রাত জাগিয়ে রাখি? অবশ্য, তুমি তো বরাবরই মুখটা বন্ধ করেই রাখো! আচ্ছা, শোনো, আজ রান্না করতে করতে তোমার সাথে রাজ্যের হাজারো গল্প করলাম। তখন মনে হচ্ছিল, পরে কথা হলে তোমাকে খুব করে বলব এটা ওটা সেটা! কিন্তু দ্যাখো, সেই কথাগুলিই দিব্যি খেয়ে বসে আছি! কিছুতে মনে আসছে না কিছুই! মনে যদি আসে, তবে বলব। ঠিক আছে? এই অরণ্য, কাল জানো দুজন তুমিকে দেখলাম। দুজনই আমার সামনে এসে হাজির। ওদের দাবি, ওরা দুজনই নাকি আমার অরণ্য! আমার জায়গায় তুমি হলে কেমন করে চিনে ফেলতে ওদের, বলো তো! বলো…পারতে চিনতে? আমিও ভীষণ দ্বিধায় পড়ে গেলাম। সত্যি তো, কী করে চিনি তোমাকে! তারপর কী হলো, বলি! দুজনই দেখি ভালোবাসার চিরকুট হাতে আমার উঠোনে দাঁড়িয়ে। আমি দুজনকেই দেখছি। অবিকল তুমিই! কী শুভ্র পবিত্রতায় ভরা মুখ ওদের! আহা, আদর আদর মুখ! হ্যাঁ, আমি দুজনকেই দেখছিলাম মনভরে। তারপর কী হলো, সেই গল্প একটু পরে শোনো। আমি এখনও ভাবছি, আমার সত্যিকারের মানুষটা কে যে ছিল ওদের মধ্যে! তুমি কী করছ এখন? কিছুই তো বলো না আমাকে! তোমার পছন্দের লিস্টে সবার আগে কারা আছে, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে! ওদের সম্পর্কে জানতেও বড়ো বেশি ইচ্ছে করে। জানো অরণ্য, স্বপ্নকে আমার কাছে মনে হয় অলৌকিক মোহনীয় সৌন্দর্যের মাঝে সুরের এক ঐশ্বরিক ঝংকার! একটা সুন্দর স্বপ্ন একবার দেখে ফেললে তা সারাদিন মনের ভেতরে উঁকি দিতেই থাকে দিতেই থাকে…! আচ্ছা, বলো না…তোমার নামটায় এত মায়া কেন! তোমার চোখের সমস্ত মায়া লেপটে রয় তোমার ওই নামে! আমি আমার অরণ্যকে দেখেছিলাম এক অনন্ত অরণ্যের মাঝে। অদ্ভুত সুন্দর একটা দিন ছিল সেদিন। এমন দিন মাঝেমধ্যেই আসে। তোমাকে তো বলা হয়নি একটা গোপন কথা। অনেক গল্প করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে তুমি তো ঠিকই মাথায় টোকা মেরে বলবে, “এসব লিখে সময় নষ্ট না করে একটা ভাতঘুম দাও তো!” আচ্ছা, বললে বলো! কী হবে বললে! এত এত মাইল দূরের সেই শব্দগুলি আসবেই তো না আমার কাছে! জানোই তো, ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে গেলে বড়শি ঠিক মাছের মুখে আটকে যায়, ছাড়াতে সে আর পারে না। তোমার একটা মিষ্টি হাসি আমার মনে বড়শির মতো করে গেঁথে গেছে! এখন বলো, আমাদের এখানে মাছটা কে! তুমি, না আমি! আমি, না তুমি! না কি আমাদের গেঁথে যাওয়ার ইচ্ছেটাই মাছ? খুব ইচ্ছে করছে, কেবল গল্প করি আর গল্পই করি! আমার গল্প শুনতে শুনতে তুমি নরম হয়ে ঘুমিয়ে যাও। অরণ্য, ঠিক আছে, তোমাকে আর জ্বালাচ্ছি না। কাল সেই দুজন তুমি’র মধ্যে কীভাবে তোমাকে চিনে নিতে পারলাম, জানো! সত্যিকারের আমার তুমি’টা আমাকে এই বাঁ-গালে আলতো করে একটু আদর মেখে দিয়ে পাখির মতো উড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল! মজা না, বলো! বুঝতে পেরেছ কিছু? সেই আদরমাখা স্পর্শ বুকে রেখে রান্না করতে করতে কী কী যে ভাবছিলাম, তা তোমাকে আর জানানো হলো না। সব কিছু জানিয়ে দিতে নেই। জানিয়ে দিলেই সব অপেক্ষা শেষ হয়ে যায়। অপেক্ষার মৃত্যু মানেই বিষাদ! আমার কাছে যে তোমার অপেক্ষায় থাকার নামই বেঁচে-থাকা, অরণ্য! তুমি ভালো থেকো, এই দুচোখের স্পর্শে থেকো। একটু একটু হেসো, কেমন? ওরকম রাগী রাগী হয়ে থাকলে আমার যে বড্ড ভয় হয়, তা কি তুমি বোঝো না? ইতি- তোমার বোকাটা!