আচ্ছা, তুমি খুব সুখী মানুষ, তাই না? আমার তোমাকে খুব সুখী সুখী লাগে। এটা ভাবতে ভালো লাগে না। সুখী মানুষ খুব অসহায় ধরনের প্রাণী। সুখে থাকতে থাকতে মানুষ একসময় স্থবির ও অথর্ব হয়ে পড়ে। আমি চাই, তোমার কিছু অপূর্ণতা থাকুক, কিছু অপ্রাপ্তি, অশান্তি, অ-সুখ থাকুক। কিছু প্রচণ্ড বিষণ্ণতা তোমাকে ঘিরে রাখুক। এইসব না থাকলে মানুষ ঠিক মানুষ হয় না। যার মধ্যে কোনও বিষাদ নেই, তাকে দেখতে আমার কুৎসিত লাগে। আমার অসুখী মানুষজনকে খুব আপন আপন লাগে। আর তোমাকে খুব পর পর লাগে। তোমাকে অসুখী দেখতেই আমার ভালো লাগে। আবার, এই তোমার সামান্য অ-সুখও আমার মাথাব্যথার কারণ হয়! তোমাকে আমি আমার মনের মতো করে দেখতে চাই, আবার তুমি আমার মনের মতো হয়ে গেলে তখন আমার আর ভালো লাগে না। আমি এক তোমাকেই সহ্য করতে পারি, এবং এক তোমাকেই সহ্য করতে পারি না। কী যে চাই আমি, নিজেও জানি না! ধ্যাত্! ভাল্লাগেনা বাঁচতে আমার! আমার কয়েক হাজার কোটি ছোটো ছোটো, টুকরো টুকরো দুঃখ আছে। তোমার তেমন দুঃখ-টুঃখ নেই, তবে যে এক-দুইটা দুঃখ আছে, ওগুলি আকৃতিতে, আমার সব দুঃখকে একত্র করলে যত বড়ো হয়, তার চেয়েও অনেক অনেক বড়ো। তা-ও তুমি ভালো আছ; এতগুলি ছোটো ছোটো দুঃখ থাকার চেয়ে বরং বড়োসড়ো একটা দুঃখ থাকাই বেশি স্বস্তির। একটা সময় পর গিয়ে বড়ো দুঃখ চলে যায়, কিন্তু ছোটো ছোটো দুঃখ মানুষকে বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন। বড়ো দুঃখ ঠিকই দূর করা যায়, আর ছোটো দুঃখ দূর করতে গেলে আরও কিছু ছোটো দুঃখ এসে পড়ে কোত্থেকে যেন! আমি চাই, তোমার সুখে কিছু দুঃখ থাকুক, তোমার দুঃখেও কিছু সুখ থাকুক।