ফর গ্রান্টেড

এ পৃথিবীতে 'ফর গ্রান্টেড' বলে কিছু নেই, যদিও কোনও কিছুকে 'ওটা তো পাবোই পাবো' হিসেবে ধরে নেওয়াটা খুব সহজ। সুইচ অন করলেই তো আলো জ্বলবে, কল ছাড়লেই তো জল পড়বে, ও তো আমার পাশে থেকে যাবেই যাবে, ঘরে ফিরলে মা তো সেবা করবেই করবে, আগামীকাল‌ও গোয়ালা দুধ দেবেই... এমন অনেক কিছুই আমাদের বিবেচনায় 'ফর গ্রান্টেড', তাই ওসব পাবার পর কখনোই আমাদের মন থেকে ধন্যবাদের অনুভূতি জাগে না।

মানুষ হারালেই বোঝে। হারানোর আগ পর্যন্ত মানুষ ধরেই নেয়, সব থেকে যাবে। আমরা যে কতটা সৌভাগ্যবান, তা দেরি হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত আমাদের মাথায় তেমন আসেই না। আমরা প্রশংসা করতে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলে যাচ্ছি, এ কারণেই আমাদের দুঃখ ক্রমেই বাড়ছে। হারিয়ে যাবার আগেই জড়িয়ে ধরতে হয়।

এক ছেলে একদিন ভাবল, আজ থেকে আমি মুক্ত পাখির মতন করে বাঁচব। যে ভাবা, সে-ই কাজ। সে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। একদম তার মতো করেই ভাবে, এমন দু-জন বন্ধুর সাথে বাসা ভাড়া নিল। অনলাইনে খাবার অর্ডার করে করে ক্ষুধানিবৃত্তির কাজ চালিয়ে নিচ্ছিল প্রথম কয়েক দিন। ভালোই কাটছিল দিন।

কিন্তু কতদিন‌ই-বা ওসব মসলাদার বাইরের খাবার মুখে ও পেটে রোচে! এখন তার খুব ইচ্ছে করছে ঘরের খাবার খেতে। কিন্তু কে তাকে রান্না করে দেবে? সে যে রাঁধতে জানে না! মা খাবার রান্না করে না দিলে যে তার খাওয়া বন্ধ হয়ে যেত, তা তো তার মাথায়‌ই কখনও আসেনি! আবার ওদিকে ময়লা কাপড়ের স্তূপ জমেছে। কে ধুয়ে দেবে তার কাপড়? মা তো এখানে নেই! সবসময়ই ইস্ত্রি-করা ধোয়া কাপড় পেতে পেতে তার যে মনেই ছিল না যে মাকে এসব কাজ করে দিতে হয়, যা মা পাশে না থাকলে কখনোই হবে না। কী আশ্চর্য! এই ব্যাপারটা তার মাথায় কখনও এল না কেন?

হায় হায়, ঘরদোর যে একদমই এলোমেলো হয়ে আছে! ধুলোর পাহাড় জমে গেছে ঘরের আনাচে-কানাচে, দরজা-জানালায়, আসবাবপত্রের গায়ে... সবখানে। এখন এসব পরিষ্কার কে করবে? তার মানে সবকিছু পরিচ্ছন্ন পাবার পেছনে একজন মানুষ ছিল, যার কথা তার কখনও মাথায় আসেইনি? মায়ের প্রতি এত অনর্থক অভিমান জমে ছিল কোন যুক্তিতে তবে?

সেবা দেয় যে, তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। ভালোবাসায় বাঁধে যে, তাকে মনে রাখতে হয়। মানুষ সেবা দিতে কিংবা পেতে বাধ্য নয়, ভালোবাসা দিতে কিংবা পেতে বাধ্য নয়। পাশ থেকে দূরে সরে গেলেই মানুষের দামটা টের পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে সেবার হাতটি দূরে সরিয়ে রেখে মানুষকে শূন্যতা ব্যাপারটা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে হয়।