শূন্যতার জলছাপ



এক।

: এসবের মানে কী, তিথি?
: আমি যা বলছি, তা করো। যন্ত্রণা বাড়িয়ো না আমার।
: তোমার কাছে আমার অনুরোধ—আমার এই শরীরটা ক্ষতবিক্ষত করে দাও তোমার অবহেলায়।
: এ কেমন অনুরোধ নিয়ে তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়ালে?
: বিশ্বাস করো, আমি শান্তি পাবো।
: চুপ! বুকে আসো। আমি আর তোমাকে ছাড়ব না।
: আমাকে বাধা দিয়ো না, নীড়। আমি এই কয়দিনে আমার শরীর একটু একটু করে প্রায় অনেকটাই কেটে ফেলেছি। আর যা বাকি আছে, তুমি সাহায্য করো। (প্রথমে ভীষণ কষ্ট হতো, এখন বরং সয়ে গেছে।)
যে-শরীরে তোমার অস্থিরতা আত্মসমর্পণ করতে পারে না, তা আর রাখব না বলে ঠিক করেছি।
: শান্ত হও, ঘুমিয়ে পড়ো, তিথি। আমি আছি।


দুই।

: এই একজীবনে আর কেউ কখনও তোমাকে ওভাবে বলবে না—"ভালোবাসি।" ওটা বলার জন্য যে সাহস লাগে!
: যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম, সেদিন থেকেই তোমার প্রতি গভীর মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে এ মন।

তুমি তো নিজের যত্ন নিতে পারো না। যে-মুহূর্তে আমার হাতটা ছাড়ো, মনে হয়, তোমাকে আগলে রাখার ভারটা বুঝি আমাকে ফিরিয়ে দেবে না তুমি, তিথি।
: তোমাকে খুব বেশিক্ষণ ছুঁয়ে থাকলে আমার অস্তিত্ব বিপন্ন লাগে। মনে হয়, এই বুঝি অতলে হারিয়ে যাব।


তিন।

: তোমার ডায়েরিগুলো আমাকে দেবে, তিথি?
: আমাদের ভালোবাসার মুহূর্ত-বন্দি অসমাপ্ত ডায়েরিটা দেবো। শেষের লেখাগুলো তুমি নিজে লিখবে।


চার।

: তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই তুমি কেমন শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে। আমি তোমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে তোমাকে অনুভব করছিলাম।
: আমায় ডাকোনি কেন?
: তোমার ভালোবাসা আমার ভাগ্যে নেই, নীড়। তবে তোমার অনুভবকে আমি নিজের করে নিয়েছি।


পাঁচ।

: তুমি যে আমার অস্তিত্বকে পুরোপুরি বিলোপ করতে পারোনি, আমি যেন এখনও কোথাও রয়ে গেছি তোমার অন্দরমহলে—তা কি বোঝো, নীড়?
: চাইনি তো তোমার অনুভূতিকে নিশ্চিহ্ন করতে!
: তোমার বুকে আমার অসহায়ত্ব কখনো গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল কি?
: তুমি নিঃশব্দে সরে গিয়ে, তোমার শরীর ছুঁয়ে দেখো—বুঝতে পারবে, তোমার অসহায়ত্বেই আমার অধীরতা।
: যার ভেতরটাই ক্ষয়ে গেছে, তার ভালোবাসা কি আর আলাদা করে পরিণতি পায়?
: ভালোবাসায় পরিণতিলাভ অপরিহার্য নয়, তিথি।
: ভালোবাসায় যে বিশেষ প্রাপ্তিযোগ নেই, তা তো কেবলই জেনেছি তোমার অনুভবে।
অস্বীকার করতে পারব না—প্রত্যাশাবিহীন ভালোবাসায় যে এত গভীরতা, তোমাকে ছুঁয়ে না দেখলে তা জানা হতো না।


ছয়।

: কোথায় আছ, তিথি?
: অভিমানে।
: পাগলি!
: আজ তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছে, নীড়।
: তোমার মনটাই তো আমার কাছে ফেলে গিয়েছ, তিথি।
: তোমার শেষ আলিঙ্গন আমাকে এখনও তাড়া করে বেড়ায় স্মৃতির কুয়াশায়। ফেরার কোনো রাস্তা নেই—আমার তৃতীয় চোখে হারিয়ে গিয়েছে।


সাত।

: নিথর সমাধি, সে কি শুধুই নীরবতার চাদরে মোড়ানো?
: তুমি এসেছ, নীড়! আমি জানতাম, আজ তুমি আসবেই!
: তুমি নিস্তব্ধ থেকো না, তিথি। তোমার কোলাহল আমার বুকে এখনও গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে চলেছে। তুমি কি তা দেখছ না? কেন নিথর হয়ে পড়ে আছ?
: কেন বোঝো না, তুমি আমার কবর ছুঁয়ে গেলে বেদনা হবে অম্লান! তাই তো রোজ তোমার অপেক্ষাতেই থেকে যাই আমি।
আজ একবার বলবে "ভালোবাসি"?
: ভালোবাসি, তিথি।
: অজানা অনুভূতির সব ভাষা ফেলে, রংমশালের ওই আলোতে সেদিন শুধুই জড়িয়ে ধরে বলতে চেয়েছিলাম তোমাকে—"ভালোবাসি"।
Content Protection by DMCA.com