খুব ঠান্ডায় জল জমে বরফ হয়ে যায়। খুব উত্তাপে জল উড়ে বাষ্প হয়ে যায়। নইলে জল জলই থেকে যায়। একই জল...কখনও জল, কখনও বরফ, কখনও বাষ্প। শিশুকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। সে জলকে জলই বলবে, বরফকে বরফই বলবে, বাষ্পকে বাষ্পই বলবে। ও আলাদা করে ভাবতে জানে। ও জানেই না যে বরফ ও বাষ্প একসময় জল ছিল। জানে না বলেই ওর কাছে বরফের রং, বাষ্পের রং, জলের রং একই নয়, তিন রকমের। ওদের শরীরও তিন রকমের। শিশুর মাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। তিনি জলকে জলই বলবেন; বরফকে বরফই বললেও সাথে জানিয়ে রাখবেন, ওটা আদতে জলই; বাষ্পকে বাষ্পই বললেও সাথে জানিয়ে রাখবেন, ওটা আদতে জলই। তিনি আলাদা করেও ভাবতে জানেন, এক করেও ভাবতে জানেন। তাঁর কাছে এই তিনের রং এক, এই তিনের শরীরও আদতে এক। তিনি তিন দেখায় এক জিনিসই দেখেন, যেখানে তাঁর শিশুটি তিন দেখায় তিন জিনিস দেখতে পায়। জলকে শুধুই জল ভাবতে পারার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। বরফকে শুধুই বরফ ভাবতে পারার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। বাষ্পকে শুধুই বাষ্প ভাবতে পারার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। এ আনন্দ পেতে চাইলে ভাবতে জানতে হবে। ভাবতে জানতে হলে এক ভাবনার সময়ে অন্য ভাবনা সরিয়ে ফেলতে হবে। সরিয়ে ফেলতে না জানলে সরিয়ে ফেলার কিছু যে আছে, তা-ই জানা যাবে না। প্রত্যেক জিনিসেরই নিজস্ব কিছু সৌন্দর্য আছে। যে জিনিস যা, সে জিনিসকে তা-ই দেখতে হয়। তার সাথে অন্য কিছু নিয়েও ভাবলে সৌন্দর্যটা ঠিক উপভোগ করা যায় না। বড়ো হওয়ার সাথে সাথে বুদ্ধি বাড়ে, মগজ বাড়ে। এসব যখন বেড়ে যায়, তখন আমরা যা দেখি, তা যত দেখি, ততোধিক দেখি তা-ই, যা কিনা সামনেই নেই! এতে যা হয়, তা হলো, এক সুন্দরকে দেখার সময় অন্য সুন্দরকে ভাবি। ফলে দুই সুন্দরের কোনোটাই আর ঠিকমতো উপভোগ করতে পারি না। ছোটোদের এই বেশি জানবার দুঃখটা নেই। নেই বলেই ওরা সুন্দরের পুরোটাই দেখে। যা দেখে, কেবল তা-ই ভাবে। যা ভাবে, কেবল তা-ই দেখে। ওরা বরফ থেকে আইসক্রিমে যায়, জলে ফিরে যায় না। ওরা বাষ্প থেকে গ্যাসবেলুনে যায়, জলে ফিরে যায় না। ফিরতে যে হয়, ওরা তো তা-ই জানে না! জানার দুঃখ অনেক! জানার ব্যর্থতাও অনেক! বড়োরা কেবলই ফিরতে জানে। আনন্দের পথে কখনও পেছন ফিরে তাকাতে নেই। পেছনে ফিরলে যে শুধুই বিষাদ আর বিষাদ! কিছু কিছু জিনিস ফেলে এলে ফেলেই দিতে হয়। কুড়োতে গেলেই বিপদ! বরফ-দেখার আনন্দ পেতে চাইলে বরফেই থাকতে হয়। বাষ্প-দেখার আনন্দ পেতে চাইলে বাষ্পেই থাকতে হয়। থাকতে না পারলে দুই আনন্দই শেষমেশ জল হয়ে যায়! রংধনুকে জলের কণা ভাবলে তো রংধনুর রংটাই ফিকে হয়ে যায়! কী লাভ ওতে?