ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১২৪

 ভাবনা: আটশো বাষট্টি
 ………………………………………………………
  
 এক। না, আমি তোমাকে মিস করি না। বিশ্বাস করো, একটুও মিস করি না আমি তোমাকে!
  
 আমি শুধু মিস করি তোমার সেই মায়াভরা চোখদুটোকে, যখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে।
  
 আমি শুধু মিস করি সেই মুহূর্তগুলিকে, যখন তুমি আমার কানের কাছে ঠোঁট এনে খুব ছোটো ছোটো সুখ শেয়ার করতে আর হেসে গড়াগড়ি খেতে।
  
 আমি শুধু মিস করি সেই জার্নিগুলিকে, যখন তুমি অভ্যাসবশত আমার কাঁধে মাথা রাখতে এবং একসময় ঘুমিয়ে পড়তে।
  
 আমি শুধু মিস করি তোমার সেই চাহনিগুলিকে, যা ছুড়ে দিয়ে মুখে কিছু না বলেও তুমি অনেক কিছুই বলে ফেলতে এবং আমরা দু-জনই তখন খুব হাসতাম।
  
 আমি শুধু মিস করি সেই রাত তিনটেগুলিকে, যখন আমি ফোন রাখতে চাইলে তুমি বলতে, এখনই ফোন রাখবে? এখনও তো আসল সিক্রেটটাই বলার বাকি!
  
 আমি শুধু মিস করি তোমার সেই গভীর আলিঙ্গনগুলিকে, অনেক দিন পর আমাদের দেখা হলে প্রতি বারই যা আমি তোমার কাছ থেকে উপহার পেতাম।
  
 আমি শুধু মিস করি তোমার সেই মেসেজগুলিকে, যেখানে লেখা থাকত, বাসায় ফিরে টেক্সট পাঠিয়ো মনে করে...
  
 আমি শুধু মিস করি আমার সেই ভালোলাগাগুলিকে, যা আমি তোমার সঙ্গে আমার পছন্দের মুভি, মিউজিক, খাবার, ভাবনা, আরও কত কী শেয়ার করে অনুভব করতাম!
  
 আমি শুধু মিস করি সেই আমিটাকে, যে আমিটা দ্বিতীয় বার না ভেবেই তোমার সঙ্গে নির্দ্বিধায় সব কিছু শেয়ার করতে পারত।
  
 আমি শুধু মিস করি তোমার সেই আবেগগুলিকে, যা আমি তোমার মধ্যে টের পেতাম, যখন কোনও মুভির এন্ডিংটা তোমার মনের মতন হতো না।
  
 আমি শুধু মিস করি তোমার সেই বোকা বোকা স্বপ্নগুলিকে, যেগুলি তুমি আমাকে বলতে আর বলতেই থাকতে…
  
 আমি শুধু মিস করি তোমার সেই মনকেমনগুলি, যখন মায়ের সঙ্গে তোমার ঝগড়া হতো, তোমার পোষা বেড়ালটা ঠিকমতো খেত না…
  
 আমি শুধু মিস করি তোমার মনের সেই ক্ষতগুলিকে, যা আমাদের দীর্ঘ কথোপকথনে বার বারই সামনে চলে আসত, যা তোমাকে মনের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেছে বিভিন্ন সময়ে।
  
 আমি শুধু মিস করি তোমাকে নতুন করে জানতে পারাগুলিকে, যা নিয়ে আমি অনেকক্ষণ ধরে ভাবতে ভালোবাসতাম।
  
  
 আজ তুমি নেই, এ নিয়ে আমার মধ্যে সত্যিই কোনও কষ্ট নেই।
 তোমাকে ঘিরে যা-কিছু ছিল, তার সবই আজও রয়ে গেছে। কষ্ট শুধু এটুকই!
 আজ তুমি নেই, তবু এক তুমি বাদে এ জীবনে আর কিছুই নেই!
 মানুষ চলে যায়, জীবনে তবু সেই মানুষটাই কেবল থেকে যায়!
  
 দুই। আমি জানি, কেউ আমার দুঃখ তাড়াতে পারবে না। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আমার প্রেমিক কিংবা স্বামী, কেউই পারবে না!
  
 কেউ আমার দুঃখ দূর করে দিক, এটা আমি চাইও না! সত্যিই চাই না।
  
 আমি যেমন আছি, ঠিক তেমন করেই আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। এখান থেকে সরে যেতে আমি নিজেই চাই না।
  
 মাঝে মাঝে আমি এমন কাউকেই খুঁজি, যে আমার পাশে বসে আমার কথাগুলি শুনবে। আমি যা বলতে চাই, আমার কথা অর্ধেক শুনেই, তা বলে দিতে হবে না। অত বুদ্ধিমান মানুষ আমার লাগবে না। আমি কারও আইকিউ-টেস্ট নিতে চাই না। বরং আমার সেই বোকা মানুষটাকেই লাগবে, যে ধৈর্য ধরে আমার সামনে বা ফোনে চুপচাপ বসে থাকবে এবং আমার কথাগুলিকে আমার মনের মতো করেই বলতে দেবে।
  
 আমাকে ভালো রাখতে হবে না, আমাকে বুঝতে পারলেই আমি ভালো থাকব। যখন আমার খুব কষ্ট হবে, তখন আমার কষ্ট দূর করতে হবে না; বরং তখন আমাকে একটু হাসাতে পারলেই আমি খুশি হব!
 এ জীবনে যাদের দেখা পেয়েছি, তাদের সবাই অনেক কিছুই করতে পারে, কিন্তু একজনও সেই সামান্য কিছুটাই করতে পারে না, যা আমার খুব দরকার! জীবনে মানুষ অনেক কিছুই পায়, কিন্তু সামান্য যা চায়, তা-ই পায় না।
  
 তিন। আমি কাউকে খুন করেছি।
  
 আমি সেই নিষ্পাপ মানুষটিকে খুন করেছি, যে একদিন বুদ্‌বুদ ওড়াতে ওড়াতে খুশি হয়ে উঠত, হাতে তালি দিত। শিশুদের দেখলেই যে মানুষটি হাত নাড়াত, ওদের সঙ্গে গল্প করতে করতে কলকল করে হাসত যে মানুষ, আমি তাকে খুন করেছি। যে মানুষটি সবার সব কথা খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলত, আমি সেই সরল মানুষটির সঙ্গে দিনের পর দিন মিথ্যে বলেছি।
  
 নিজের মধ্যে থাকা সেই আবেগি মানুষটিকে আমি গলা টিপে হত্যা করেছি, যে সবসময়ই বড়ো বড়ো স্বপ্ন দেখত; যে ভাবত, একদিন সে পুরো পৃথিবীই বদলে দেবে। তার চোখে অনেক আশা ছিল; সে ভাবত, সে সবসময়ই ঠিক এরকমই থেকে যাবে।
  
 আমি আমার ভেতরের সেই সহজ মানুষটিকে নিজহাতে খুন করেছি, যে বুঝতেই পারত না, কোন জিনিসটা লুকিয়ে রাখতে হয়, কোন জিনিসটা বলে দিতে হয়। তার সমস্ত গোপন কথাকে আমি ব্যবহার করেছি তাকে শেষ করে দিতেই!
  
 হ্যাঁ, আমি আমার সমস্ত আবেগ, অনুভূতি ও আত্মবিশ্বাসকে আজ খুন করেছি। আজ আমি আর কারও কথা ভাবি না, কারও জন্য নিজের বুকটা পেতে দিই না। যখন আমার বন্ধুর প্রয়োজন ছিল, তখন আমি একা ছিলাম। আজ আমার বন্ধুর অভাব নেই, তবু আজ আমি একাই আছি।
  
 আমি আমার মধ্যে থাকা সেই পুরনো আমিটাকে নিজেই মেরে ফেলেছি, কেননা ওর সামনে নিজেকে মুখোশ পরাতে পরাতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সে ছিল একটা অপদার্থ! সে এতটাই নির্বোধ ছিল যে, তার স্বপ্ন ছিল, একদিন সে পৃথিবীটাকে বদলে ফেলবে! অথচ আজ পৃথিবীই তাকে বদলে ফেলল! কিন্তু কেন এমন হলো? চারপাশে তাকিয়ে দেখো, উত্তরটা পেয়ে যাবে। এমনকী তুমি যদি উত্তরটা পেতে না-ও চাও, তবু তুমি উত্তরটা পেতে বাধ্য হবে!
  
 চার। 
 : তুমি আমায় কষ্ট দেবে?
  
 : ইচ্ছে করে দেবো না, তবে কখনও কখনও, তুমি কষ্ট পাবে। হয়তো আমার কথায় কষ্ট পাবে, কিংবা আমার আচরণে কষ্ট পাবে। আমার কাছ থেকে যা তুমি আশা করোনি, আমি যখন তা করব, তখন তুমি কষ্ট পাবে। সবসময় সব কিছু আমাদের মনের মতন হয় না। তবে মনের মতন হোক না হোক, আমরা চাইলে মনটাকেই পরিস্থিতির মতন করে ফেলতে পারি। এর জন্য একটু সময় লাগে। ওই সময়টা একসঙ্গে থাকতে হয়, কষ্ট করে হলেও থাকতে হয়।
  
 : তোমার কথা শুনে ভয় পাচ্ছি!
  
 : ভয় পেতেই পারো। মানুষ ভয় পায়। বাঁচতে চাইলে ভয় পেতে হয়। সত্যি বলতে কী, ভয় আমিও পাচ্ছি। তোমাকে পেতে চাই বলেই ভয়টা পাচ্ছি, নইলে পেতাম না। আসলে কী জানো, একসঙ্গে থাকার মানে হলো, বিচ্ছেদের ঝুঁকিটাকে মেনে নিয়েই একসঙ্গে থাকা। সামনে কী হবে, আমরা জানি না। কেউই তা জানে না। প্রেমে পড়ার অর্থই হলো, ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিটাকে গ্রহণ করে নেওয়া। মৃত্যুকে বাদ দিয়ে জীবনকে যেমনি ভাবা যায় না, কষ্টকে বাদ দিয়ে ভালোবাসার অস্তিত্বকেও ঠিক তেমনি ভাবা যায় না।
  
 : আমাদের সব ঠিক হয়ে যাবে তো?
  
 : ঠিক হয়ে যাবে না হয়তো, তবে আমরা মানিয়ে নিতে পারব, যদি দু-জন একসঙ্গে থাকি। না-ও যদি থাকি, তবু জীবনের একটা অংশ তো সুখে কাটবে, তাই না, বলো? একটা কথা জেনে রেখো---যদি কখনও আমি এমন কিছু বলি, যার দুইটি অর্থ হয়, তবে সবসময়ই ধরে নিয়ো, আমি ঠিক সেই অর্থেই কথাটা বলেছি, যা তোমাকে কষ্ট দেয় না। মানুষ যাকে ভালোবাসে, তাকে কষ্ট দেবার জন্য কিছু বলে না; সে নিজেই কথাটার মধ্যে কষ্ট খুঁজে নেয়। এই কাজটা কখনও কোরো না, তাহলেই হবে।
  
 ভাবনা: আটশো তেষট্টি
 ………………………………………………………
  
 এক। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘোরলাগা সন্ধ্যা। চায়ের কাপহাতে তুমি ব্যালকনিতে বসে আছ। বৃষ্টি দেখছ আর ভাবছ সেই প্রথম দিনটার কথা, যেদিন তার সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছিল। সে চলে গেছে, তবু সে ফিরে ফিরে আসে। বার বার আসে, আজও এসেছে। যে চলে যায়, সে-ই থেকে যায়!
  
 সে যখন তোমার পাশে ছিল, তখন জীবনটা অনেক সুন্দর ছিল। তোমার মনে স্মৃতিরা এক এক করে ভেসে উঠছে। একদিন খুব সহজেই কথা দিয়ে ফেলতে পারতে, বিশ্বাস করে ফেলতে পারতে; এখন আর পারো না, ভয় পাও। বৃষ্টি পড়ুক না পড়ুক, সে পাশে থাকলে শিহরনটা ঠিকই জাগত। তার হাতটা ধরলে রৌদ্রে-পোড়া দুপুরকেও খুব সুখের মুহূর্ত মনে হতো।
  
 পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলেও তাকে জানাতে খারাপ লাগত না। চুল কাটালে সবার আগে তাকেই দেখাতে। তাকে সব বলা যেত। সে জানত, তুমি কথা বলা শুরু করলে সহজে থামো না, তবুও সে মন দিয়ে তোমাকে শুনত। তার যা যা তোমার পছন্দ নয়, সেগুলিকেও তুমি একসময় পছন্দ করা শুরু করেছিলে। মানুষ যাকে সত্যিই ভালোবাসে, তার বদভ্যাসগুলিকেও সে একসময় পছন্দ করে ফেলে।
  
 সে চুল আঁচড়াত না, খুব জোরে শব্দ করে হাসত, চোখে কীরকম একটা দুষ্টু দুষ্টু হাসি ছড়িয়ে রাখত। এইসব দেখে প্রথম প্রথম তুমি খুব চেঁচাতে, পরে পরে এইসবই তোমার ভালো লাগত। তার সঙ্গে বসে তুমি যে মুভিগুলি দেখেছ, সেগুলিই তোমার প্রিয় মুভি; হ্যাঁ, আজও!
  
 সে আজ নেই। জীবনটা আজ কেমন জানি হয়ে গেছে! তার কারণেই তোমার প্রতিদিনের রুটিন অনেক বদলে গেছে, সে নেই বলে এই বদলে-যাওয়া রুটিনটাকেই আজ অস্বাভাবিক লাগে। এখনও তুমি অনেক রাত অবধি জেগে থাকো, যদিও তোমার কথা বলার কেউ নেই। হঠাৎ সুন্দর কোনও গান খুঁজে পেলে সেটি শেয়ার করার মতন কেউ আর নেই। তোমার খুব খারাপ লাগে, কিন্তু কিছুই করার নেই।
  
 তুমি তাকে ছেড়ে বাঁচতে শিখে গেছ। সামনে আরও শিখবে। তবু তোমার প্রায়ই মনে হয়, জীবনটা আরও সুন্দর হবার কথা ছিল। তুমি যা-ই করো, তার কথা মনে পড়ে। সে পাশে থাকলে জীবনটা আরও চমৎকার কাটত। তোমার কোনও কিছুরই অভাব নেই, তবু তুমি সারাক্ষণই কী যেন চাও...
  
 দুই। আমি জানি, এই কথাগুলি কেউই তোমাকে খুব একটা বলে না, কিন্তু কথাগুলি তোমার জানা প্রয়োজন।
  
 তুমি কবে পা পিছলে কাদায় পড়ে গিয়েছিলে, কবে ক্লাসে বোকার মতন প্রশ্ন করেছিলে, কিংবা কবে তোমার ক্রাশের সামনে গিয়ে ঘামতে ঘামতে তোতলাচ্ছিলে, এসব কেউ মনে রাখে না; যদিও এগুলি ঘটার সময় সবাই তোমাকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি করেছিল। বিশ্বাস করো, আমাদের সবার জীবনেই এরকম ঘটেছে। সব বাজে পরিস্থিতিরই শেষ আছে।
  
 তুমি বদলে গেছ। আগের সেই বোকা ছেলেটি বা মেয়েটি তুমি আর নও। একদিন যে কথা বলতেই জানত না, সে এখন অনেক গুছিয়ে কথা বলে। একদিন যে সবার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াত, সে এখন সবার সঙ্গে মিশতে জানে। হ্যাঁ, তুমি অনেকদূর পাড়ি দিয়েছ। তোমাকে নিয়ে এখন আর কেউ ওরকম মজা করে না।
  
 তবে এখনও তোমার মন খারাপ হয়, এখনও তুমি খুব চেষ্টা করেও অনেক কিছুই করতে পারো না। রাতের পর রাত জেগে, মগের পর মগ ব্ল্যাককফি শেষ করেও কেন জানি সব এলোমেলো হয়ে যায়; যা করতে চাও, শেষমেশ তা আর হয় না। এমন হয় যখন, শান্ত থেকো; কখনও কখনও, নিজেকে ক্ষমা করে দিতে জানতে হয়। সবারই হয় এমন, তুমি একা নও।
  
 একটু ছুটি নাও। একটু বিশ্রাম নাও। একটু ফাঁকি দাও। ভবিষ্যতে কী হবে কী হবে না, তা ভেবে ভেবে নিজেকে সারাক্ষণই ব্যস্ত করে রাখার নাম জীবন নয়। তোমার গ্রেডশিটে যে সি বা ডি আছে, একদিন ওগুলি কেবলই ইংরেজি বর্ণ হয়ে যাবে। আজ যা গ্রেড, একসময় তা-ই সুখের স্মৃতি। বাজে গ্রেড মানেই বাজে ক্যারিয়ার নয়। বাজে রেজাল্ট মানেই জীবনের শেষ নয়। ক্লাসমেটদের সামনে মাথা হেঁট হয়ে যাবার মানেই পৃথিবীর সামনে মাথা হেঁট হয়ে যাওয়া নয়। অপেক্ষা করো, সময় হলে সময়ই কথা বলবে।
  
 একা থাকতে মন চাইলে একা থাকো। নিজের সঙ্গে নিজে কোথাও ঘুরতে যাও। কফিশপে বসে কানে ইয়ারফোন গুঁজে থাকো ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কোনও পার্কে বাদাম খেতে খেতে হাঁটো, নিজের রুমের দরোজা-জানালা বন্ধ করে প্রিয় গানটা ছেড়ে নাচতে থাকো পাগলের মতো। মাঝে মাঝে তোমার নিজের কাছেও পাগল হয়ে থাকতে না পারলে তো সত্যি সত্যি পাগলই হয়ে যাবে!
  
 একা থাকার মানেই একাকিত্ব নয়; প্রায়ই দেখা যায়, মানুষ কারও পাশে থেকেও অসীম একাকিত্বে ডুবে থাকে। প্রত্যেকেরই এমন কিছু মুহূর্তের খুব দরকার, যখন সে নিজের সঙ্গে গল্প করে। কেউ তোমাকে একা করে দেবার আগে নিজেই নিজেকে একা করে রাখতে শেখো, তাহলে অনেক কষ্ট থেকে বেঁচে যাবে।
  
 খারাপ সময় কেটে যায়। তোমার যে তুমিটাকে এই মুহূর্তে অথর্ব মনে হচ্ছে, একদিন সেই তুমিই তোমার মাথা উঁচু করে দেবে। তোমার তুমিটার যত্ন নাও। খুঁজে দেখো, কোথাও-না-কোথাও কেউ-না-কেউ আজও তোমার সামর্থ্যে আস্থা রাখে, আজও তোমাকে ভালোবাসে, আজও তোমাকে নিয়ে গর্ব করে। দিনশেষে, যারা তোমাকে তোমার মতো করে গ্রহণ করে খুশি থাকে, তারাই তোমার বন্ধু, বাকিরা সবাই স্রেফ পরিচিত। বন্ধুদের জন্য হলেও নিজেকে ভালো রাখো।
  
 তিন। তুমি যখন ঘুমিয়ে থাকো, তখন আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার ভালো লাগে। তোমার নিঃশ্বাসের শব্দটা শুনি, ভালো লাগে। হৃদয়টা শান্ত হয়ে তোমার দু-চোখে পড়ে থাকে। মনে হতে থাকে, এই মানুষটা পাশে থাকলে আমি পৃথিবীর যে-কোনও কিছুর মায়া ছেড়ে দিতে রাজি। ঘুমন্ত তুমি দেখতে অনেক সুন্দর, অনেক মায়াবী।
  
 আমরা এখন এমন একটা সময়ে বাস করি, যখন কারও ভালোবাসা পাওয়া এ পৃথিবীর সবচাইতে সৌভাগ্যের ব্যাপার। যদি এমন কারও সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, যাকে হৃদয়ে জায়গা দিতে ভালো লাগে, নির্ভার লাগে, তবে তখন নিজের সবটুকু দিয়ে মানুষটাকে ভালোবাসতে আর কোনও বাধাই থাকে না। আমি কিন্তু খুব সহজে কাউকে পছন্দ করে ফেলতে পারি না। এটা জেনে রেখো।
  
 আমি বোধ হয় একটু খ্যাপাটে ধরনের। কাউকে দেখলেই আমার মনে সন্দেহ তৈরি হোক না হোক, আমি জোর করে হলেও সন্দেহ তৈরি করে ফেলি। তবে তোমাকে নিয়ে মনের মধ্যে আজ পর্যন্ত ওরকম কিছু হয়নি। তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, তোমাকে নিজের মধ্যে রাখতে ভালো লাগে। তোমাকে দেখি আর ভাবি, প্রতিটি মানুষের জীবনেই একজন অন্তত থাকে, যার জন্য তার মনে অসীম দয়া ও ক্ষমা জমে যায়।
  
 জীবনে যা যা দুঃখ, তার সব কিছুই আমি ভুলে যাই, যখন তুমি পাশে থাকো। তোমার চোখের দিকে তাকালে মনে হয়, বাকি জীবনে ভালো একজন মানুষ হয়ে বেঁচে থাকি। যাকে দেখলে ভালো হয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করে, সে-ই তো মনের মানুষ!
  
 সবাই আমাকে সতর্ক হতে বলে। ওরা বলে, আমি তোমার প্রেমে এমন ডুবে যে আছি, পরে আমাকে কষ্ট পেতে হবে। কিন্তু আমি নিজে জানি, যত কষ্টই পাই, তোমাকে আমি ধরে রাখার চেষ্টা করব। খুব সহজে বিনা যুদ্ধে তোমাকে হারিয়ে যেতে দেবো না। নিজের প্রতি এটাই আমার চ্যালেঞ্জ!
  
 আমার কথাগুলি শুনতে তোমার কেমন লাগছে আমি জানি না। হয়তো ভাবছ, আমি পাগল! মাথায় পাগলামি চেপেছে বলেই এরকম করে ভাবছি। জেনে রাখো, এটা পাগলামি নয়, এটাই আমি। যে আমিটা তোমার, সে আমিটা ঠিক এরকম করেই ভাবে। এর বাইরের আমিটা পুরোপুরিই সুস্থ ও স্বাভাবিক, তবে তোমার আমিটা ঠিক এমনই পাগল।
  
  
 ভাবনা: আটশো চৌষট্টি
 ………………………………………………………
  
 এক। প্রায়ই, মরে যাবার ভাবনা মাথায় আসে।
  
 সবাই যেমন বলে, মরে যাওয়াটা কি সত্যিই অমন শান্তির কিছু? সময় হলে স্বর্গ থেকে ঠিকই দেবদূত নেমে আসবেন? না কি কোনও পিশাচ এসে নির্দয়ভাবে টেনে-হিঁচড়ে আমাকে নরকে নিয়ে যাবে?
  
 মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনটা শেষই হয়ে যাক! না না, আমি নিজেকে শেষ করে দিতে চাই না, অত সাহস আমার নেই; আমি শুধু এই জীবনটার শেষ চাই। জীবন শেষ হয়ে গেলে কী হয়, তা জানার কৌতূহলটা আমার হয় কখনও কখনও।
  
 চলে যাবার সময় আমি কি কিছু বলে যাব? না কি তখন আমার কিছু বলতেই ইচ্ছে করবে না? আমার পাশে তখন কে থাকবে? না কি বিদায় নেবার জন্য পাশে কাউকেই পাবো না আমি? কত মানুষই তো বিদায় না নিয়েই বিদায় নেয়!
  
 যাদের ভালোবাসি, তাদের কেউই কি থাকবে না সেদিন আমার পাশে? আচ্ছা, এমন অনেক মানুষও তো আছে, যারা আমাকে ভালোবাসে, কিন্তু কখনও মুখে তা বলতে পারেনি, ওদের কেউও কি আসবে না সেদিন?
  
 চোখের সামনে কাউকে মরে যেতে দেখলে নিজের মধ্যে একধরনের ধাক্কা লাগে। আচ্ছা, সেদিন আমি এই ধাক্কাটা ঠিক কয়জনকে দেবো?
  
 ইদানীং, মৃত্যু নিয়ে ভাবছি। এতে দোষের কিছু নেই, অন্তত আমি দেখি না দোষের কিছু।
 আমার তো এখন সুখী হবার কথা ছিল, শান্তি পাবার কথা ছিল। ওরকম হচ্ছেই-বা আর কোথায়! আপনারাই বলুন, মৃত্যু নিয়ে আমি ভাবব না তো কে ভাববে? ওরা তো সবাই বলে, মরে গেলেই বরং মানুষ শান্তিতে থাকে! শান্তির জন্য মানুষ কত কী-ই তো করে, আর আমি সামান্য মরতেও পারব না!?
  
 দুই। দু-জন যখন পরস্পরকে ভালোবাসে, তখন দু-জনই সমান সমান ভালোবাসে না। এখানে কম-বেশি হয়। দু-জনের একজন বেশি বেশি ভালোবাসে, বেশি বেশি যত্ন নেয়, বেশি বেশি ফোন করে, বেশি বেশি আরেকজনের জন্য ভাবে, বেশি বেশি ভাবনা ও অনুভূতি শেয়ার করে, বেশি বেশি 'ভালোবাসি' বলে; হ্যাঁ, বেশি বেশি বিরক্তও করে!
  
 ধরুন, ঠিক এরকমই কারও সঙ্গে আপনার প্রেম। আপনি তার চোখের দিকে তাকালে দেখবেন, আপনার জন্য তার চোখে একসমুদ্র মায়া লেপটে আছে! এতটাই যে, দেখলে ভয় পেয়ে যাবেন! একসময় আপনার মনে হবে, সে যা-ই চায়, তা দিতে আপনি প্রস্তুত। যা তার প্রাপ্য, তা আপনি দেবেনই, যে-কোনও মূল্যে!
  
 একইসঙ্গে, আপনার মাথায় আসবে, যদি আপনাদের এই সম্পর্কটা না টেকে, তখন কী হবে! তখন আপনি বাঁচবেন কী করে! অতটা যন্ত্রণা সহ্য করবেনই-বা কী করে! যদি সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়, সেদিন কী হবে! অতীতের কোনও একটা তীব্র যন্ত্রণার দগদগে স্মৃতি চোখের সামনে এসে যাবে, তখন আপনি সত্যিই এসব ভাবতে ভাবতে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাবেন!
  
 এভাবে ভাবতে ভাবতে, একসময়, আপনি এক-পা এগোবেন, দুই-পা পেছোবেন। নিজের মধ্যেই অনিশ্চয়তার জন্ম নেবে। মনে হবে, এখনই সব শেষ করে দিই! পরের কষ্টের চাইতে আগের কষ্টই তো ভালো!
  
 এই যে এরকম করে ভাবছেন, এর মানে হচ্ছে, আপনি তার বিশ্বাসের জায়গাতে আঘাত করছেন। সে তার সমস্ত হৃদয় দিয়ে আপনাকে যেভাবে চায়, ঠিক সেভাবে করে তাকে আপনি চাইতে পারছেন না বলেই এত কিছু আপনার মাথায় আসছে। এইসব যখন মাথায় আসবে, তখন আপনার নিজেকে ভিলেইন মনে হবে!
  
 আপনি ভাবছেন, নিজের সব কিছু কি কাউকে এতটাই দিয়ে দেওয়া ঠিক, যতটা সে দিচ্ছে? এ-ও ভাবতে পারেন, হয়তো আপনার ভালোবাসার চাইতে তার ভালোবাসা বেশি বলেই আপনার মাথায় এইসব ভাবনা আসছে। এরকম সংশয়ে ভুগতে থাকলে হঠাৎ আপনি পালিয়ে যাবার পথ খুঁজবেন নিজের অবচেতনেই।
  
 ভাবুন তো, এমনও তো হতে পারে, আপনি তাকে অনেক ভালোবাসেন বলেই তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা আপনাকে এমন অস্থির করে রাখছে! এই যে এত ভালোবাসেন, তার বিনিময় আশা করেন না বলেই তার কাছ থেকে অমন অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা আপনাকে বিস্ময়ে বিহ্বল করে দিচ্ছে! হতে পারে না এমন?
  
 আপনি কেন কষ্ট পাচ্ছেন? বেশি ভাবছেন বলেই তো? বেশি ভাবছেন কেন? সে যদি আপনার না হয় শেষপর্যন্ত, এই ভয়ে তো? ভয়টা কেন আসছে? সে চলে গেলে তাকে ছেড়ে বাঁচতে খুব কষ্ট হবে, এটা ভেবেই তো?
  
 স্থির হোন। সময়কে সময় দিন, তাকে সময় দিন, নিজেকে সময় দিন, পরিস্থিতিকে সময় দিন। সময়ই সব বলে দেয়, আগেও দিয়েছে, এখনও দেবে; অপেক্ষা করুন, নিজের ভূমিকাটা ঠিকভাবে পালন করুন, দু-জন দু-জনের জন্য সব দিক বিচারেই তৈরি হয়ে উঠুন; সব উত্তর এত তাড়াতাড়ি নিজেই দিয়ে দেবেন না!
  
 তিন। যদি শেষমেশ আমাদের বিয়েটা হয়, তবে অনেক কিছুই বদলে যাবে। তবু প্রায় সব কিছুই একই থেকে যাবে। বিয়ের পরও আমি সেই দেরিতেই ঘুমোতে যাব। তবে যেদিন তোমাকে ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠতে হবে, সেদিন তোমাকে ঠিকই ডেকে দিতে পারব। মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করেই শোবো, যখনই শুই না কেন!
  
 এই যেমন এখন আমি ঘরকুনো, তখনও এমনই থাকব। তবে তুমি কোথাও নিয়ে গেলে লাফাতে লাফাতে চলে যাব, সেটা যদি বাসার নিচের ফুচকার দোকানটাও হয়, তা-ও! তোমার পছন্দের যা যা খাবার খেতে আমার ভালো লাগে না, তা নিয়ে তোমাকে খেপাব ঠিকই, কিন্তু বাসায় সেগুলিই বেশি বেশি রান্না করব এবং দু-জন মিলে তৃপ্তিভরে খাব।
  
 আমি তখনও কল করার চাইতে বরং টেক্সট পাঠাতে ও পেতে পছন্দ করব, তবে তুমি কোথাও গেলে রাতে তোমার সঙ্গে গল্প করতে করতে কলটা না কেটেই তখনও ঘুমিয়ে পড়ব, এখন যেমন পড়ি।
  
 আমি সত্যিই বই পড়তে পছন্দ করি না, তুমি তো জানোই। তবে এখন যেমন তোমাকে বড়ো বড়ো চিঠি লিখি, তখনও লিখব। বানানে অনেক ভুল হবে, তুমি বার বার বলা সত্ত্বেও ভুল বানানেই পরের চিঠিটাও পাঠাব।
  
 অন্যান্য কাপল যেমনি উঠতে বসতে ফেইসবুকে ছবি আপলোড করে, আমরা তেমন করব না, তবে আমার ইচ্ছে, দু-জন মিলে উলটাপালটা ছবি তুলে ফেইসবুকে দু-জনের মধ্যেই কাস্টমাইজ করে পোস্ট করব এবং সেখানে কমেন্টে আমরা দু-জন খুব ঝগড়া করব।
  
 তোমাকে ট্যাগ করে ফেইসবুকে দীর্ঘ বা ছোটো কোনও পোস্টই আমি দেবো না। যা বলতে মন চাইবে, তোমাকেই সরাসরি লিখব, অন্যরা এসব জানবে না। আমার ওসব লোকদেখানো ব্যাপার দেখলেও বিরক্ত লাগে! এখন যেমন তোমাকে মুখে বলার চাইতে লিখে বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তখনও তা-ই করব।
  
 আমার হুডিটা পরতে ইচ্ছে করলে পরবে, রুমালটা ইউজ করতে ইচ্ছে করলে করবে, এমনকী তুমি চাইলে আমার ব্রাশটা দিয়েও ব্রাশ করতে পারো, আমি কিছুই মনে করব না। তুমি চাইলে আমার কম পছন্দের খাবারের বেশি শেয়ার আমার কাছ থেকে চাইতে পারো, অবশ্য না চাইলেও আমি যতটুকু আমার জন্য বাড়তি, তা তোমার প্লেটেই তুলে দেবো। শুধু পুডিংটা আমাকে পুরোটা খেতে দিয়ো, ওতেই হবে।
  
 যদি সত্যিই আমরা বিয়ে করতে পারি, অনেক কিছুই বদলে যাবে। আমিও বদলাব, বদলাবে তুমিও, এবং আমাদের মধ্যকার অনেক কিছুই। বদলাতে হয়, সময়ই বদলে দেয়। আমরা দু-জন একসঙ্গে থাকব, মনের দিক থেকে একসঙ্গেই বেড়ে উঠব। কেউ কারও বেড়ে ওঠায় বাধা দেবো না। নিজের মনের মতো করে বেড়ে উঠতে না পারলে বেঁচে থাকতে কষ্ট হয়।
  
 যত যা-কিছুই বদলাক না কেন, একটা জায়গায় আমি তখনও ঠিক এরকমই থেকে যাব, এখন যেরকম আছি, এবং তা হলো: তোমার যা যা আমার ভালো লাগে না, তা নিয়ে শুধুই তোমাকে বলব। যদি তুমি শোধরাও তো ভালো, আর না শোধরালে তখন যদি আমি তা কিছুতেই মেনে নিতে না পারি, তবে হয়তো তোমাকে ছেড়ে চলে যাব; কিন্তু কোনও অবস্থাতেই তুমি বাদে আর কাউকেই তোমার খারাপ দিকগুলি কখনওই বলব না, এমনকী ছেড়ে চলে গেলেও না!
  
 আমার যা ভালো লাগে, তা নিয়ে যেমনি আমি নিজের সঙ্গে থাকতে পারি, ঠিক তেমনি, আমার যা ভালো লাগে না, তা বাদ দিয়েও আমি নিজের সঙ্গে সহজেই থাকতে পারি। তোমাকে তো আমি ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে ছেড়েও আসা যায়, কিন্তু তাকে অন্য কারও কাছে ছোটো করা যায় না। ওতে আমি নিজেই নিজের কাছে ছোটো হয়ে যাব!
  
 ভাবনা: আটশো পঁয়ষট্টি
 ………………………………………………………
  
 এক। ধৈর্য। বোধ হয় এটাই আমাদের সবচাইতে বেশি প্রয়োজন। এমনকী শান্তি, সুখ ও ভালোবাসার চাইতেও অনেক বেশি!
  
 এ জীবনটাতে বেঁচে থাকতে চাইলে কিংবা খুব কষ্টের সময়েও মনের শক্তি ধরে রাখতে এই ধৈর্যের খুব দরকার। খোলামাঠে দাঁড়িয়েও মানুষের হাঁসফাঁস লাগে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, যদি ধৈর্য কম থাকে।
  
 যাকে ভালোবাসেন, সে যখন বলে, 'আমাকে ভুলে যাও। তোমার জীবনটাকে তোমার মতো করে সাজাও। তোমার সঙ্গে থাকা আর সম্ভব নয়!', তখন ধৈর্য না থাকলে তো বেঁচে থাকাটাই আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে! কেউ চলে যাবার মানে তো আর জীবন চলে যাওয়া নয়, তাই না?
  
 ধৈর্য লাগে, মাঝে মাঝে একেবারেই চুপ করে থাকতে হয়। সবসময়ই উত্তর দিতে নেই, সবসময়ই প্রতিক্রিয়া দেখাতে নেই। সময় অনেক কিছু ঠিক করে দেয়। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়। যা থাকার থাকবে, যা যাবার যাবে। চেষ্টা করেও যা রাখা যায় না, তা চলে গেলেই আপনার মঙ্গল হবে। এই বিশ্বাসটা রাখুন, একদিন মিলিয়ে নেবেন।
  
 আপনার মা যখন বলেন, তাঁর মৃত্যুর সময় আপনিই তাঁর পাশে থাকবেন, এটা তাঁর ধারণা, তখন ধৈর্য নিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হয়। হয়তো মায়ের মনে কোনও একটা দুঃখ বা ভাবনা এসেছে হঠাৎ, তা চুপ করে শুনতে হয়। মাকে কঠোর ভাষায় যুক্তি দেখাতে নেই, মাকে বাজেভাবে বকতে নেই। মা তো চলেই যাবেন, একটু সহ্যই নাহয় করলেন! ছোটোবেলায় মা যে আমাদের কত অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ সহ্য করেছেন, নিজে বাবা-মা না হলে বোঝা যায় না।
  
 আপনার প্রিয় মানুষটা যখন মানসিক বা শারীরিকভাবে খুব কষ্টে আছেন, কিন্তু আপনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, কীভাবে তাঁর কষ্ট একটু হলেও কমাতে পারবেন, তখন ধৈর্য না ধরলে এমনও হতে পারে, আপনি উলটো তাঁর কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছেন!
  
 জীবনের সব ক্ষেত্রে, সকল সময়ে নিজে বাঁচার জন্য এবং অন্যকে বাঁচানোর জন্য ধৈর্য খুব কাজে লাগে। এটা সবাই জানে ও বোঝে, কিন্তু প্রয়োজনের সময় মেনে চলতে পারে খুব কম মানুষ। পারে যারা, তারা নিজেদের এবং সবার জন্য আশীর্বাদের মতন।
  
 যখন সব কিছু ভেঙে পড়ে, তখন আমাদের প্রার্থনা হোক একটাই: স্রষ্টা যেন আমাদের ধৈর্য ধরার ক্ষমতা দেন। ধৈর্য ধরতে জানলে পুরো পৃথিবীই জয় করা যায়! চুপ করে দেখুন, হাসুন, প্রার্থনা করুন। চোখের জলটা স্রষ্টার কাছেই নিবেদন করুন।
  
 যা-কিছুই আপনাকে কষ্ট দিক না কেন, ধৈর্য ধরুন। কষ্টের শেষ আছে, সেই শেষটার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। প্রার্থনা করুন, পৃথিবীর সব বাজে সময়ের মতোই আপনার এই সময়টাও ঠিকই ভালো সময়ের দিকেই যাচ্ছে। যা পেলে ভালো লাগে, তা পাবার জন্য, খারাপ লাগলেও ধৈর্য ধরতে হয়।
  
 দুই। প্রিয় ভাইয়া,
  
 বাবা আমার স্বপ্নের নায়ক, আর তুমি আমার পুরো লাইফের জন্যই একটা দারুণ বোনাস!
 তোমার জন্যই আমি আজ জানি, ভালো মুভি দেখতে কেন হয়, ভালো গান শুনতে কেন হয়, ভালো বই পড়তে কেন হয়, ভালো বন্ধুদের সঙ্গে কেন মিশতে হয়।
 মনে আছে ভাইয়া, আমার রেজাল্ট খারাপ হলে তুমি প্রায়ই বলতে, মন খারাপ করিস না, সামনের বার এই ভুলগুলি আর করিস না, তাহলেই হবে!
 কলেজ থেকে বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে যাবার সময় বাবা-মা রাজি না হলে তুমিই রাজি করাতে, মনে আছে?
 তুমি পাশে থাকলে জীবনটাকে অনেক সহজ মনে হতো; তবে যখন কনুই দিয়ে পিঠে মারতে, তখন খুব রাগ লাগত।
 তুমি না থাকলে আমার অত অত রাজ্যের গল্প কার সঙ্গে করতাম, বলো?
 বাবা বকলে, মা কষ্ট দিলে ওসব নিয়ে আমাদের ভাই-বোনের দীর্ঘ আলোচনা হতো, তাই না, বলো?
 তোমার পেছনে লেগে থাকাই ছিল আমার একমাত্র কাজ; সুখী আপুর কথা মাকে বলে দেবো বলে বলে ভয় দেখাতাম, মনে আছে, ভাইয়া?
  
 এখন তো কেউ আর বকেও না, ভুল করলেও কেউ কিছু বলে না। আমি এখন স্বাধীন, তাই আমি এখন খুব মিস করি তোমার বকাগুলি! আমি এখন চাইলেই যেমন খুশি খরচ করতে পারি, কিন্তু আমার তোমার কাছে আজও নানান কিছু চাইতে ইচ্ছে করে!
  
 আমি সত্যিই এমন মুক্ত হতে চাইনি, আমি তোমার ছোট্ট বোন হয়ে থাকতেই চেয়েছিলাম।
  
 তিন। এমন কেন হয়, সুতোটা কেবল আমিই জোর করে ধরে রাখি, যখন তুমি কাঁচিহাতে তৈরি?
 এমন কেন হয়, তোমার অমন অমর প্রেম আমাকে প্রতি মুহূর্তেই ভয়ে তটস্থ রাখে?
 এমন কেন হয়, তোমার ভালোবাসায় সুখের চাইতে দুঃখই বেশি?
 এমন কেন হয়, প্রতিদিনই তোমার ভালোবাসায় আমি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাই?
 এমন কেন হয়, তোমার কথা ভাবতে ভাবতে আমি নিজেকে আরও গুটিয়ে ফেলছি?
 এমন কেন হয়, তোমার সঙ্গ আমাকে শুধুই এমন একটা কষ্টের বর্তমানই উপহার দিচ্ছে?
 এমন কেন হয়, তোমার ভালোবাসা আমার যোগ্যতা ও সামর্থ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয় সবসময়ই?
  
 কেন আমার প্রায়ই মনে হয়, যে সুতো আমাদের দু-জনকে একদিন একসঙ্গে বেঁধেছিল, তা ক্রমেই ছিঁড়ে যাচ্ছে...?
  
 চার। হ্যাঁ, তোমার উপর আমার অনেক রাগ!
  
 তোমার উপর আমার অনেক রাগ, কেননা আমার এ জীবনে অন্য কেউ আসতে না পারার পেছনে এক তুমিই দায়ী! তোমার কারণেই আজ আমি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারি না, এবং আমার সারাক্ষণই মনে হতে থাকে, সবাই-ই স্বার্থপর, প্রত্যেকেই আমার কাছ থেকে কিছু-না-কিছু চায়!
  
 তোমার উপর আমার অনেক রাগ, কেননা যা আমার সাথে এখনও ঘটেইনি, তা নিয়েও আমি অনর্গল ভাবতে থাকি আর ভাবতেই থাকি; এবং এ কারণেই, আমার জীবনে ভালো কিছু আসতে গিয়েও কখনওই আসে না। আমার চিন্তাভাবনাই আমার জীবন থেকে সমস্ত ভালো কিছুকে দূরে সরিয়ে দেয়।
  
 তোমার উপর আমার অনেক রাগ, কেননা শুধু তোমার জন্যই আমি কাউকেই আমার ধারেকাছেও ঘেঁষতে দিই না। এর ফলে আমার জীবনটা, যেখানে আছে, সেখানেই থেকে যায়; জীবনে নতুন কিছুই আর আসে না, আসতেই পারে না!
  
 তোমার উপর আমার অনেক রাগ, কেননা তোমার কারণেই আজ আমি খুবই কুটিল মানসিকতার একটা মানুষে পরিণত হয়েছি। কেউ যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতে শুরু করে, আমি তাকে সঙ্গে সঙ্গেই সন্দেহ করতে শুরু করে দিই, এবং একসময় বিনা কারণেই খারাপ আচরণ করে আমার জীবন থেকে তাকে তাড়িয়ে দিই। ভালোবাসায় আজ আমার আর বিশ্বাস নেই।
  
 তোমার উপর আমার অনেক রাগ, কেননা একমাত্র তোমার কারণেই আজ আমার একা থাকতেই ভালো লাগে, কিংবা ভালো না লাগলেও আমি একাই থাকি। আমি কারও সঙ্গেই যোগাযোগ রাখি না। আমার শুধুই মনে হয়, সবাই বোধ হয় আমাকে দুঃখই দিতে চায়!
  
 এখন সত্যিটা বলি। আমার আসলে তোমার উপর কোনও রাগ নেই। আমার সমস্ত রাগ আমার নিজের উপরই, কেননা একদিন আমি বোকার মতন ধরেই নিয়েছিলাম, তুমিই আমার সারাজীবনের সব কিছু!
  
 ভাবনা: আটশো ছেষট্টি
 ………………………………………………………
 এক। হতে পারে, এর নামই একাকিত্ব।
 হতে পারে, এই সময়ে কারও সঙ্গে থাকার চাইতে নিজের সঙ্গে থাকাই নিরাপদ।
 হতে পারে, থেকে যাবার মতো চমৎকার কোনও জায়গা আমি আজও খুঁজে পাইনি।
 এমনও হতে পারে, এই পুরো পৃথিবীর জন্যই আমি বড্ড বেমানান!
  
 আমি বাইরে বেরোতে চাই, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে চাই। কিন্তু যা হয়, ওদের সঙ্গে মিশতে গেলেই আমার কেমন জানি বিরক্ত লাগে। আমার আসলে কিছুই ভালো লাগে না, কাউকেই ভালো লাগে না। আমার যে কেমন লাগে, তা নিজেই বুঝতে পারি না। আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না!
  
 মাঝে মাঝে মনে হয়, আঁকি। অনেক দিন আঁকতে বসি না। তখনই মনে হয়, আঁকতে গেলে তো হাতে রং লেগে যাবে। ওসব আবার পরিষ্কার করতে হবে। ঝামেলা!
  
 আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি জানিই না কীভাবে গল্প করতে হয়। আমি লোকজনের সঙ্গে মিশতেই জানি না! আমার ধারণা, সবাই আমার উপর বিরক্ত, কারণ আমি কিছুই পারি না। আমি যা যা পারি, সেগুলি না পারলেও কিছু হয় না।
  
 কখনও কখনও, আমি আবার ভালো বন্ধু হয়ে যাই। বন্ধুদের সঙ্গে মিশি, ঘুরি, সবাই মিলে আড্ডা দিই, মজা করি। সবাই খুশি, আমিও খুশি। হঠাৎ করেই বদলে যাই! আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ফোনটা পর্যন্ত ধরি না! কারও সঙ্গেই কথা বলি না, এমনকী কোনও কারণ ছাড়াই ওদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করে বসি!
  
 একই মানুষ, দু-রকমের আচরণ! আমার মনের একটা অংশ বলে, যাও, ওদের সঙ্গে গল্প করো! আরেকটা অংশ বলে, থাক, দরকার নেই, একা একা চুপ করে বসে থাকো!
  
 মাঝে মাঝে আমি দাঁতে দাঁত চেপে মজা করি, জোর করে হাসি, মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সবার কথার সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সত্যি বলতে কী, আমার সারাক্ষণই রাগ জমতে থাকে। 
  
 আমার সবার উপরেই রাগ, আমার নিজের পরিবারের উপরেই রাগ, আমার পুরো পৃথিবীর উপরেই রাগ। আয়নার সামনে দাঁড়ালে আমার রাগ হয়, কেউ আমার সঙ্গে ভালো কথা বললেও আমি রেগে অস্থির হয়ে পড়ি!
  
 আমার একা থাকতে ভালো লাগে; একইসাথে, আমি একাকিত্ব ভয় পাই। আমার শুধুই মনে হয়, লোকজন খুব খারাপ, মানুষ সবাই-ই খারাপ। ওরা বোধ হয় আমার কোনও-একটা ক্ষতি করে ফেলবে! আমি কাউকেই বিশ্বাস করি না, আমি নিজেকেও বিশ্বাস করি না!
  
 আমি সত্যিই জানি না, আমি কী করব! আমি শুধু জানি, আমার যাবার কোনও জায়গা নেই, কেননা কেউই আসলে আমাকে ভালোবাসে না। আমাকে একাই থাকতে হবে, কিন্তু একা থাকলে আমার পাগল পাগল লাগে!
  
 দুই। তুমি কেন অমন করে সব সম্পর্ক শেষ করে দিলে?
  
 আমি তোমার সঙ্গে থেকে যেতে চেয়েছিলাম।
 তবে তুমি অন্য কারও সঙ্গে থাকতে চাইছিলে।
 ...এটাই তো কারণ, তাই না?
  
 ভালোবাসাটা কী, বলো তো? রাত জেগে গল্প করা? দু-জন মিলে ইচ্ছেমতো মজা করা? ঘুরতে যাওয়া? একসঙ্গে ফুচকা খাওয়া?
  
 একসঙ্গে থাকলেই, সময় কাটালেই ভালোবাসা হয়ে যায়? কারও সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগলেই তাকে ভালোবাসা যায়? এখানে আর কিচ্ছু লাগে না? সত্যি?
  
 তুমি এমন কাউকেই ডিজার্ভ করো, যে তোমার সঙ্গে থাকার জন্য সব কিছু করতে রাজি। তুমি যেখানে আছ, তোমাকে একপলক দেখার জন্য, সেখানে ছুটে যেতে পারে না যে, সে-ও কি তোমাকে ভালোবাসে? তোমাকে যে মিস করে না, সে, তোমাকে দেখতে কেন আসতে পারছে না, তার পক্ষে হাজারো অজুহাত দাঁড় করিয়ে ফেলবে। আর যদি মিস করে, তবে তার সমস্ত ব্যস্ততার মধ্যেও তোমার জন্য সময় ঠিকই বের করে ফেলবে। তোমার হাসির জন্য সে করতে পারে না, এমন কিছুই নেই। তোমাকে ভালো রাখতে তার চেষ্টাই সব কিছু বলে দেবে। তুমি নিজেই বুঝতে পারবে।
  
 ভালোবাসা ব্যাপারটা সহজ নয়, কিন্তু এটা এমন কিছু, যার জন্য যুদ্ধেও নামা যায়! ভালোবাসলে সময় ভূতে জোগায়, অন্য কাজ থেকে সময় চুরি করে হলেও মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের জন্য সময় ঠিক বের করে ফেলে। প্রতিদিনই মনে হয়, মানুষটাকে পেয়ে কত সুখী আমি! তুমি দামি কিংবা সস্তা, যেমনই মানুষ হও না কেন, যে তোমায় ভালোবাসে, তার কাছে তুমি অনেক দামি।
  
 তোমার এমন কাউকেই দরকার, যার কাছে তুমিই সবচাইতে দামি ও প্রিয় অজুহাত। যার জন্য তুমি সমুদ্র পাড়ি দাও, সে যদি তোমার জন্য পুকুরেও না নামে, তবে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার আগে দ্বিতীয় বার চিন্তা করা উচিত।
  
 আরেকটা ব্যাপার। যে তোমাকে ভালোবাসে না, কিন্তু তোমার বিভিন্ন গুণকে ভালোবাসে, সে হয়তো বড়োজোর তোমার গুণমুগ্ধ, তবে এমন কেউ নয়, যে তোমাকে ভালোবাসে। গুণমুগ্ধতা আর ব্যক্তিমুগ্ধতা পুরোপুরিই ভিন্ন দুইটি ব্যাপার। এই দুইয়ের মধ্যে মিলিয়ে ফেললে মহাসমস্যা!
  
 যা-ই হোক, সম্পর্কটা শেষ করে দিয়ে ভালোই করেছ। জীবন অতটা বড়ো নয় যে, কেউ আমার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিতে চাইলেও তার সঙ্গে থেকে যাবার চেষ্টা করেই যেতে হবে। আমাকে ছেড়ে দিতে হবে না, আমিই তোমাকে ছেড়ে দিলাম! খুশি থাকো!
  
 তিন। তুমি আমাকে সবসময়ই বলো, জীবন একটা নাট্যমঞ্চ। নিজেদের লুকিয়ে রাখার জন্য আমরা অনেক ধরনের মুখোশ পরে থাকি। এ সবই লোকদেখানো, এটা আসলে একটা খেলা। পর্দার সামনে বা পেছনে, এটা মূলত এমন একটা-কিছু, যা কেবল অন্যকে দেখাতেই মানুষ করে।
  
 এখন আমি বলছি, শোনো। জীবন নাট্যমঞ্চ নয়। জীবন শুধুই রঙিন এক শোভাযাত্রাও নয়। জীবন ভয়ংকর, কিন্তু এক‌ইসঙ্গে জীবন সুন্দর‌ও। জীবনের তুলনায় সব কিছুই বিবর্ণ, এমনকী মৃত্যুও!
 তুমি এবং আমি দু-জন দুইটি ভিন্ন মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছি। হ্যাঁ, তুমি এবং আমি! তুমি, হ্যাঁ আমি তোমার কথাই বলছি, তুমি কখনও সত্যি সত্যি কাঁদো না। উলটো যখন তোমার মন খারাপ হয়, তখন তুমি ভ্রু উঁচিয়ে বলো, কী হয়েছে!...অসুবিধে নেই, তুমি তো কেবল অভিনয় করছ। আমি এসব বুঝি।
  
 আমাকে দেখো, আমি আপাদমস্তক একজন ক্ষতে-গড়া মানুষ। আমি সবসময়ই আমার মধ্যে একধরনের ভয় নিয়ে চলি। এর মানে কিন্তু এ নয় যে, আমি দুর্বল। ভেবে দেখো, তুমি কিন্তু সত্যিই দুর্বল। দুর্বল না হলে তোমাকে অভিনয় করে চলতে হতো না।
  
 আজ সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে। তুমি সেখানে যাবে। ওখানে অনেকেই আসবে। খুব ভিড় হবে। তুমি সেখানে সবার সঙ্গে গল্প করবে, মেয়েদের সঙ্গে ভাব জমাতে চাইবে, এবং মন চাইলে হয়তো নাচবেও। খোলা দরোজা বন্ধ হয়ে যাবে। সবাই যা করবে, তুমিও তার সঙ্গে তাল মেলাবে। এ-ই তো!
  
 ওই অনুষ্ঠানে আমারও যাবার কথা। কিন্তু আমি যাব না, বাসায় থাকব। সন্ধ্যায় শাওয়ার ছেড়ে চিৎকার করে গান গাইতে গাইতে কিছু সময় নিজেকে ইচ্ছেমতো ভেজাব। এরপর এক মগ গরম জলে সাড়ে তিন চামচ কফি দিয়ে সুগারলেস ব্ল্যাককফি বানিয়ে মগটা চোখের সামনে রেখে লিখতে বসব। মন চাইলে রুমের জানালা খুলে দিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমার সংলাপ আওড়ে যাব কিছুক্ষণ। আমার খোলা আকাশ ভালো লাগে, এমনকী চাঁদ না থাকলেও। এমন নয়, কবিতা লিখব। আবার এমনও নয়, কবিতা লিখব না।
  
 তুমি আর আমি দু-জন ভিন্ন মানুষ। আমরা এক‌ই মঞ্চের মানুষ ন‌ই। তুমি কখনও সত্যি সত্যি কাঁদো না, আমি কাঁদি। কান্না পেলে তুমি কীরকম ভ্রু কুঁচকে ফেলো! এমনকী তুমি যখন হাসো, তখনও, আমি দেখেছি, তুমি একাই হাসো। আশেপাশের কেউই তোমার সঙ্গে হাসে না। ওরা বুঝে ফেলে, তোমার আসলে হাসি পাচ্ছে না। আমার দুঃখ আছে, ক্ষত আছে। আমি কান্না লুকিয়ে রাখতে পারি না, আমার কষ্ট হয়। আমি হাসলে আমার সঙ্গে পুরো পৃথিবীটাই হাসে। ওরা জানে, আমিও ওদের মতো অনেক যন্ত্রণা সহ্য করে করে অবশেষে হাসতে শিখেছি। তুমি আজ‌ও হাসতে শেখোনি, এর একটাই কারণ, তুমি কখনও কাঁদো না।
  
 তুমি আর আমি ভিন্ন ধরনের মানুষ। আমাদের জীবনদর্শন এক নয়, দুই; কিংবা আরও বেশি...
  
  
 ভাবনা: আটশো সাতষট্টি
 ………………………………………………………
  
 এক। খুব সহজ চারটি কথা বলি।
  
 আপনি যে সম্পর্কে আছেন, সেখানে বার বার ভালোবাসা মাপতে যাবেন না, মাপতে গেলেই হতাশা বাড়বে। সম্পর্কে ভালোবাসার চাইতে বেশি থাকে অভ্যস্ততা, বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব। ভালোবাসা খুঁজতে যাবেন না, খুঁজতে গেলেই দুঃখ পাবেন ও দুঃখ দেবেন।
  
 শরীরের ছোটোখাটো কাটা-ছেঁড়া পাত্তা না দিলে আপনাআপনিই সেরে যায়, খোঁচালে বেড়ে যায়। ঠিক একইভাবে, মনের ছোটোখাটো কাটা-ছেঁড়া পাত্তা না দিলে আপনাআপনিই সেরে যায়, খোঁচালে বেড়ে যায়। কষ্ট একটু থাকুক, ওটা নিজে নিজেই সেরে যাবে।
  
 আপনার জীবনে হাসি ও কান্নার সংখ্যা কখনওই গুনতে যাবেন না। ভালো থাকতে চাইলে এসব না গুনে চুপচাপ নিজের কাজ করে যেতে হয় এবং যখন যা সামনে আসে, তা নিয়েই থাকতে হয়।
  
 অনুমতি না নিয়ে কখনওই কারও ডায়েরি, নোটবুক, খাতা, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ কিছুই দেখবেন না, পড়বেন না। প্রত্যেকেরই একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। ওখানে কোনটা কেমন, তা এক সে বাদে আর কেউই জানে না; জানার দরকারও নেই। জানতে গেলেই দূরত্বের তৈরি হবে। হ্যাঁ, হবেই, আপনি শত না চাইলেও হবে; আজ না হলেও একদিন হবে।
  
 চারটি কথা শেষ। মেনে চললে ভালো থাকবেন।
  
 দুই। আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্তই চাপিয়ে দিতে যাবেন না, মাঝে মাঝে কিছু ব্যাপারে অন্যদেরও জিতিয়ে দিন। কেউ জিতে যাবার মানে আপনি হেরে গেলেন, এমন নয় কিন্তু! ছেড়ে দিতে জানতে হয়, এর নামই মনের শক্তি। যে লোক সব কাজেই নাগ গলানোর চেষ্টা করে, তার চাইতে বিরক্তিকর মানুষ আর হয় না। গোঁয়ার হবেন না, কিছু জিনিস চোখ বুজে ছেড়ে দিতে জানতে হয়। দু-একটা ব্যাপারে অন্যদের সিদ্ধান্ত মেনে নিন; দেখবেন, আপনার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা, দুই-ই অনেক বেড়ে গেছে।
  
 শুরু করলেই সব কিছু শেষ করতে হয় না। একটা মুভি দেখতে ভালো না লাগলেও শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন? একটা গান শুনতে ভালো না লাগলেও শুনে শেষ করতেই হবে কেন? কারও সঙ্গে প্রেম করতে ভালো না লাগলে বিয়ে পর্যন্ত প্রেমকে টেনে নিতে হবে কেন? শুরু করেছেন, কিছু সময় খরচ হয়েছে, এটাই তো বেশি হয়ে গেছে; আরও বেশিদূর যাবার মানেই তো আরও দুঃখ, আরও বিরক্তি, আরও কষ্টকে আমন্ত্রণ জানানো। কী দরকার! নিজেও বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচতে দিন।
  
 'সারাজীবনের জন্য' মানে আমৃত্যু টানতেই হবে, এমন নয়। টানতে কষ্ট হলে, ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে, কোনোভাবেই সম্পর্কটা স্বাভাবিক করা না গেলে, কিছু মাস বা বছরের পর ছেড়ে গেলে ও যেতে দিলেই ভালো। ভালোবাসার চাইতে ভালোথাকা অনেক বেশি জরুরি। প্রেমের চাইতে শান্তি লক্ষ গুণ দামি। শান্তি এবং শান্তিই জীবনের প্রথম- ও শেষকথা।
  
 যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তা নিয়েই কি সারাজীবন থাকতে হয় নিজে না চাইলেও? ভুল সাবজেক্টে পড়ার চাইতে ভুল জীবনে বাঁচা অনেক বেশি কষ্টের। সুযোগ তো আছেই অন্য দিকে যাবার। সুযোগটা নেবেন না কেন? নিজের সাবজেক্টে বাজে কর্মী হবার চাইতে পরের সাবজেক্টে ভালো কর্মী হওয়া ভালো।
  
 মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনও কাজ শেষ করার চাইতে অনেক ভালো হচ্ছে, কাজটা অর্ধেক-সম্পন্ন অবস্থাতেই ছেড়ে দেওয়া। যে কাজে ভালোবাসা থাকে না, আন্তরিকতা থাকে না, সে কাজের মান ভালো হয় না। খারাপ মানের কাজ করার চাইতে কাজটা না করাই তো ভালো, তাই না? আপনি কাজটা না করলে, অর্ধেক-সম্পন্ন অবস্থায় ছেড়ে দিলে তা কেউই জানবে না; কিন্তু বাজেভাবে সম্পন্ন একটা কাজের কর্মীকে সবাই চেনে, সবাই অসম্মান করে। কী দরকার নিজের গায়ে এমন সাইনবোর্ড লাগানোর, যা আপনার সম্মান বাড়ায় না, বরং কমায়?
  
 তিন। এক পথিক রাতে বিশ্রামের জন্য কোনও এক বাড়িতে থাকতে চাইছে। তো সেই বাড়ির গৃহকর্ত্রী পথিককে বলছে, শোনো পথিক, আমার বয়স অল্প; চোখেও দেখে না এবং কানেও শোনে না, এমন এক শাশুড়ির সঙ্গে আমি একা থাকি; আর আমার স্বামীও বহু বছর ধরে বিদেশে থাকে। তোমাকে থাকতে দিতে পারি, কিন্তু তুমি যেন ভুল করেও আমার কক্ষে ঢুকে পোড়ো না।
  
 গৃহকর্ত্রীর শেষ বাক্যে আছে তার তারুণ্যের ক্ষুধা, দৃষ্টি-শ্রুতিহীন শাশুড়ি আর প্রবাসী স্বামী। তার তো পথিককে এত কথা বলার দরকারই নেই। সে পথিককে থাকার জায়গা করে দিলেই হয়, এখানে অত বাড়তি কথার কী আছে?
  
 সে আসলে পথিককে বলছে, তুমি আমার কক্ষে অবশ্যই এসো।
  
 মানুষ এভাবেই না চেয়েও অনেক কিছু চেয়ে ফেলে।
  
 আরেকটা উদাহরণ দিই।
  
 এক ছেলে বাগানে প্রেম করতে যেত। তো সেই বাগানে হাঁটতে আসতেন এক বৃদ্ধ। তাঁর কারণে ওদের প্রেম করতে একটু সমস্যা হতো।
  
 একদিন ছেলেটি সেই বৃদ্ধ লোককে বলল, দাদু, এই বাগানের কুকুরটা কাল সন্ধ্যায় মারা গেছে। আপনি তো কুকুর ভয় পান, তবে এখন আর ভয় নেই। কুকুরটাকে একটা বিষধর সাপ গতসন্ধ্যায় ছোবল দিয়ে মেরে ফেলেছে। আজ থেকে আপনি নিশ্চিন্তমনে বাগানে হাঁটতে পারেন, দাদু।
  
 এরপর বৃদ্ধ লোকটি সাপের ভয়ে আর কোনোদিনই সেই বাগানে হাঁটতে যাননি।
  
 মানুষ এভাবেই চেয়েও অনেক কিছু না চেয়ে ফেলে।
  
 তবে সবাই মাথায় এত বুদ্ধি রাখে না। বেশিরভাগই জানে না, কখন চাইতে হয়, কীভাবে চাইতে হয়; ফলে ওরা, যা দরকার, তা পায়ও না।
  
 চার। খেয়াল করলে দেখবেন, গায়ে পড়ে যারা মাস্টারি করতে আসে, তাদের কারুরই আপনার ছাত্র হবারও যোগ্যতা নেই।
  
 আর যাঁদের পায়ের ধুলোর কাছে বসে শিখতে পারলেও আপনি ধন্য হয়ে যেতেন, তাঁদের কাছ থেকে দুইমিনিটও সময় বের করা ভীষণ কঠিন!
  
 আমি পড়ানোর সময় যে ধরনের স্টুডেন্টদের কোচিং থেকে বের করে দিতাম প্রতি সপ্তাহেই, তার চাইতেও বাজে মানের স্টুডেন্টরা দৌড়াতে দৌড়াতে আমার ওয়ালে চলে আসে আমাকে শেখানোর জন্য! মাননীয়, মাস্টারি করার আগে ছাত্র চিনতে শিখুন!
  
 (এই পোস্টটা আমার স্টুডেন্টদের কারও চোখে পড়লে শেষ অনুচ্ছেদটা নিয়ে চাইলে বলতে পারো।)
  
  
 পাঁচ। অন্তত এই সময়গুলোতে থাকা যেত না আমার পাশে? এখনই যেতে হলো? চলে যাবার জন্য এই মুহূর্তকে ঠিক মনে হলো? আর কেউ না জানুক, তুমি তো জানতে, তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই! অন্য সবার মতো তুমিও আমাকে বুঝলে না। হয়তো তুমি সত্যিই অন্য সবার মতোই!
  
 তোমার কাছ থেকে শুধু “ভালোবাসি” শব্দটুকু শোনার জন্য আমার আস্ত একটা জীবন নষ্ট হবার অপেক্ষায়…তোমার ভালোবাসা না পাবার বেদনায় আমার গভীর অনুভূতিগুলো রোজ একটু একটু করে চুপচাপ হারিয়ে যায়।
  
 অপেক্ষা করতে তবু ভুল হয় না। রোজই অবহেলা গিলে গিলে অনুভূতিগুলোকে হারিয়ে যেতে দিতে কার্পণ্য করি না। এত কিছুর পরও কাউকে ভালোবাসতে না পারার যন্ত্রণায় রোজে মরে যাবার চেয়ে তাকে অসীম ভালোবাসায় রেখে তার অপেক্ষায় অপেক্ষায় যন্ত্রণায় মরতে থাকাও কি ভালো নয়? কিছুই না পাওয়ার চাইতে বরং আমার কাছে কারও অবহেলা নিয়ে বেঁচে থাকাও ভালো।
  
 আমি ভালো আছি। তুমি আমাকে ভালো রেখেছ। কারও কারও জীবনে তো অবহেলা করার মানুষটারই অভাব! তুমিই বলো, ওদের চেয়ে আমি অনেক ভালো আছি না?
  
 ভাবনা: আটশো আটষট্টি
 ………………………………………………………
  
 এক। আপনার সেই রুমমেটটির কথা মনে আছে, যার সঙ্গে কখনওই আপনার মতের মিল হয়নি, কিন্তু যার দেখানো উপায়েই আপনি আজও কাপড় ইস্ত্রি করেন?
 কিংবা সেই মানুষটির কথা, কোনও এক রাতে যে আপনার সঙ্গে ব্রেকআপ করে দিয়েছিল, অথচ আপনি আজও তার মতো করে পোলাওয়ের সঙ্গে দই মেখে খান?
 কিংবা সেই বন্ধুটিকে শেষ কবে মনে পড়েছে, যার সঙ্গে আপনি বাকি জীবনে আর কোনোদিনই কথা বলবেন না কোনও এক অভিমান থেকে, অথচ যার কাছ থেকে প্রথম শোনার পর চমৎকার একটা গান আপনি আজও প্রায় প্রতিরাতেই শোনেন?
 কিংবা সেই অপরিচিত মানুষটার কথা মনে আছে, যিনি আপনাকে রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ ধাক্কা মেরে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন?
  
 আমরা নিজের অজান্তেই সেভাবে হাসি, যেভাবে আমাদের প্রিয় বন্ধুটা হাসে।
 আমরা নিজের অজান্তেই সেভাবে গুনগুন করি, যেভাবে ছোটোবেলা থেকে মাকে গুনগুন করতে দেখেছি।
 আমরা নিজের অজান্তেই সেভাবে 'সরি' শব্দটা বলি, যেভাবে আমাদের ক্রাশ টেনে টেনে সরি বলে।
  
 জীবন থেকে কেউ চলে গেলেও কিছু জিনিস থেকে যায়। তার হাসি, তার ভালোলাগা, তার পছন্দের গান।
 জীবনে চলার পথে অনেকেই এসে আবার চলেও যায়। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ স্মৃতি হয়ে থেকে যায়।
 কখনও কারও সঙ্গে গল্প করার সময় মনের অবচেতনেই ওরা এসে যায়, ওদের বারে বারে আসতে হয়...
  
 মাথায় কত কী যে থেকে যায়...! সত্যি, নিজেরাও ঠিক জানি না, কখন কীভাবে কে এসে হাজির হবে, হয়তো বহু বছর পর!
 কেউ কেউ থেকে গিয়েও বিস্মৃতিতে জায়গা পায়, কেউ কেউ চলে গিয়েও স্মৃতিতে থেকে যায়।
  
 আমরা যেভাবে খাই, যেভাবে কথা বলি, যেভাবে হাঁটি, যেভাবে হাত নাড়াই, যেভাবে তাকাই, যা খেতে পছন্দ করি, যে ধরনের মুভি দেখতে পছন্দ করি, যে ধরনের বই পড়তে পছন্দ করি, যেখানে ঘুরতে যেতে পছন্দ করি, এর সবই কত কত মানুষকে যে ধারণ করে রাখে! হয়তো মানুষটার চেহারাই আমরা ভুলে যাই, তবু মানুষটা ঠিকই থেকে যায় কিছু-একটার মধ্যে!
  
 কেউ কেউ হাজারো চাইলেও কখনওই আমাদের ছেড়ে যেতে পারে না। কেউ কেউ হাজারো চাইলেও কখনওই আমাদের কাছে থেকে যেতে পারে না।
  
 মাত্র একটা হৃৎকম্পে যে সময়টা লাগে, সে সময়েও অনেক অনেক আগে হারিয়ে ফেলা মানুষটি কোনও-না-কোনও রাস্তায় আমাদের কাছে ঠিক ফিরে আসতে পারে!
 সবাই হারিয়ে যায়, তবু কিছু মানুষের কিছু জিনিস কখনও হারায় না।
  
 দুই। মাঝে মাঝে একাই বেরিয়ে পড়ো।
 বেড়ে ওঠার সময়, সব কাজেই অনুমতি নিতে নেই।
 সবাই একভাবে বেড়ে ওঠে না। তাই সবাই তোমার সব কাজে সঠিক সিদ্ধান্তটা দিতে পারবে না।
 মাঝে মাঝে নিজের বুদ্ধিতে ভুল করলে কিছু হয় না।
  
 তিন। বন্ধু সে নয়, যে সবসময়ই শুধু বলে, হ্যাঁ রে, তুই ঠিকই বলেছিস! তোর ভুল হয়েছে।
  
 বন্ধু সে-ই, যে মাঝে মাঝে এ-ও বলে, সারাক্ষণই নিজের ভুল খুঁজে চলেছিস! তোর আর কোনও কাজ নেই!?
  
 চার। কার‌ও প্রতি ভালোবাসা চলে গেলেও তা ফিরিয়ে আনা যায়, কিন্তু মায়া একবার উঠে গেলে তা সহজে আর ফিরে আসে না।
  
 পাঁচ। যদি পকেটে পয়সা রেখেও কাচ্চি বিরিয়ানিতে মাংসের বড়ো পিসের জন্য ঝগড়া করেন,
 তবে সেই পয়সার কী দাম?
  
 ছয়। আপনি প্রায়ই, আপনার কষ্টের অতীত ভুলে যেতে চাইবেন, ভুলে থাকতে চাইবেন, এমনকী একটাসময়, অতীতের উপর ক্রমশ ধুলোময়লা জমিয়ে জমিয়ে সব ভুলেও যাবেন। হঠাৎ করেই একদিন খেয়াল করবেন, অতীতের কিছুই আপনার আর মনে নেই!
  
 এত কিছুর পরও, চারপাশের মানুষ আপনাকে আপনার অতীত ভুলে যেতে দেবে না। মাঝে মাঝেই তারা নানানভাবে আপনাকে বিরক্ত করবে যেন অতীতের সবই আপনার মনে পড়ে যায় এবং বেঁচে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে পড়ে!
  
 আসলে কী জানেন তো, দূরের মানুষ কখনও আপনাকে কষ্ট দেবে না, আপনার অতীত নিয়ে জানলেও খোঁচাবে না, বরং তারা আপনার পাশে যতটা সম্ভব থাকবে। অথচ কাছের মানুষগুলোই, মানে যাদের আপনি আপন মনে করেন, তারাই আপনার কাটা ঘা’য়ে নুনের ছিটা দেবে। আপনাকে বারে বারে অপরাধী প্রমাণ করতে চাইবে এবং আপনাকে সবসময় মাথানত করে বেঁচে থাকতে বাধ্য করবে। ভেতর থেকে আপনি যতই মানসিক শক্তি ধরে রাখতে চান না কেন, এই মানুষগুলো চাইবে, আপনি দুর্বল হয়ে কোনোরকমে বেঁচে থাকুন।
  
 পৃথিবীতে চিরন্তন বলে কিছু নেই, এই মানুষগুলো বোধ হয় কখনও কখনও সেটি ভুলে যায়। ওরা আরও ভুলে যায়, যার কাছে তথাকথিত আপন-পরের সব ধারণাই পালটে যায়, তার কাছে জীবনের কোনও কিছুই মুখ্য হয়ে ওঠে না, এমনকী এই জীবনটাও তার কাছে বড়ো ঠুনকো!
 সাত। জীবনটা আপনার একার নয়, আপনার পরিবারের এবং আশেপাশের মানুষেরও, কেননা আপনার জীবনের বিভিন্ন বাহ্যিক দিক ওদের জীবনেও প্রভাব ফেলে। তবে মনের কষ্টগুলো আপনার একার। তাই সেই কষ্টগুলোর সূচনা পুরোপুরি নিজের হাত ধরে হলেই ভালো।
 আট। যারা এক‌ই সুবিধা পেয়ে সেগুলির সদ্‌ব্যবহার আমার চাইতে কম বা আমার সমান করেছেন, অথচ আমার সুবিধার দিকে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলেন, তাঁদের এরকম ভণ্ডামি দেখলে সহ্য করতে কষ্ট হয়।
 নয়। যে তার ভালোবাসার মানুষটির হাত ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করে, ধরে নিয়ো, তাকে নিয়ে জীবনে সুখী হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
 দশ। অভিশাপ দিতে হয় না, দীর্ঘশ্বাস‌ই যথেষ্ট! বিশ্বাস হলো না কথাটা? ঠিক আছে, আপনি যার প্রতি অন্যায় করেছেন, তার নামটা ও এই পোস্টের প্রথম বাক্যটা কোথাও লিখে রাখুন। সময়‌ই আপনাকে সব উত্তর দিয়ে দেবে। তখন না পারবেন মরতে, না চাইবেন বাঁচতে!
  
 যে আপনার প্রতি আজ অন্যায় করল, একদিন আপনি তার চাইতে অনেক বেশি ভালো থাকবেন। থাকবেনই! তাকে বা তার প্রিয় কাউকে শাস্তি পেতে না দেখে আপনি মরবেন না। এরকম ঘটনা একটা নয়, কয়েকটা ঘটতে দেখেছি।
 এগারো। পথচলা থামিয়ে কাউকে জোর করে খুঁজে নিয়ে বিয়ে করার চাইতে চলতে পথে মনের অবচেতনে কাউকে খুঁজে পেলে পরস্পরের পূর্ণ সম্মতিতে বিয়ে করা অনেক ভালো। এতেও ভুল হয়; তবে যে ভুলের সমস্ত দায় কেবল নিজের ঘাড়ে, সে ভুলের শাস্তি সহ্য করা অনেক সহজ।