ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১২১


  
 ভাবনা: আটশো একচল্লিশ
 ………………………………………………………
 এক। তোমাকে ভালো যে বাসি, তা বোঝার পর থেকে আমার কঠিন শব্দ বা অনেক সুন্দর শব্দের প্রয়োজন আর কখনও পড়েনি ভালোবাসার কথা তোমাকে বলে বোঝানোর জন্য বা লিখে পোস্ট করে লোকের বাহবা কুড়োবার জন্য।
  
 তোমাকে ভালোবাসি, একথা আমি যে-কোনও শব্দে বা ভাষাতেই বলি না কেন, আমি ঠিক জানি, আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। তুমিও তা জানো।
  
 মা যখন তার সন্তানকে ভালোবাসে, তখন কি মা পৃথিবীর কোনও কঠিন বা সহজ ভাষা খোঁজে তা প্রকাশ করার জন্য?
  
 বাবা যখন তার সন্তানের সাফল্য দেখে খুশিতে, আনন্দে চোখের জল ফেলতে থাকে, তখন কি খুব কাব্যিক শব্দ ব্যবহার করে বাবা তার ভালোবাসার পরিমাণ বোঝায়?
  
 ভাই যখন তার ছোট্ট বোনের জন্য বিভিন্ন জিনিস কিনে আনে বা বোনের সমস্ত রকমের খেয়াল রাখে, তখন সেখানে কি বলে বোঝাতে হয়, বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা ঠিক কতটা?
  
 মা যখন ভীষণ অসুস্থ এই করোনার সময়ে, তখন বেচারা সন্তান যখন লাশের ভেতরে পাগলের মতো দৌড়োতে থাকে মাকে সুস্থ করবে বলে, ঠিক তখন সন্তানকে কেউ যদি প্রশ্ন করে, 'মাকে কতটা ভালোবাসো?', সন্তান কি তার উত্তরে সত্যিই কোনও ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করে বোঝাতে পারবে, সে আসলে মাকে ভালোবাসে কতটা?
  
 ভালোবাসলেই তা বলে বলে মানুষটাকে পাগল করে ফেলার কোনও মানে নেই। হ্যাঁ, পৃথিবীতে মা-বাবা'র আর সন্তানের ভালোবাসার মতো কোনও ভালোবাসা হয় না। তবুও ভালো যে বাসে, সে নিজে অন্তত জানে, ভালোবাসলেই তা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলার তেমন কোনও প্রয়োজন নেই।
 ভালোবাসার মানুষটা বুঝুক না বুঝুক, তাতে কোনও আফসোস নেই। তাকে যে ভালোবাসি, তা নিজের কাছে স্বীকার করতে কণামাত্রও দ্বিধা নেই। অনেকসময় সুন্দরতম শব্দও ভীষণ ছোটো হয়ে যায় বা কম পড়ে যায় ভালোবাসা ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য। ভালোবাসা বোঝানো যায় না, শুধুই অনুভব করা যায়।
  
 আর বোঝাতেই-বা হবে কেন? তোমায় যে ভালোবাসি, সেকথা তো খুব ভালো করেই জানো! ভালোবাসি, তা নিজে জানি বলেই বোঝানোর দায়টা আর নেই।
  
 তুমি এ-ও নিশ্চয়ই জানো, যে ভালোবাসা যত বেশি গভীর, তার প্রকাশ ততই ক্ষীণ। ভেবে দেখো, আমাদের বাবা-মা যে আমাদের এত ভালোবাসে, তা কি ওরা কখনও লিখে বা বলে বোঝাতে চেয়েছে? সবচাইতে চমৎকার কাব্যভাষাও কি ভালোবাসার অনুভূতির প্রতি সুবিচার করতে পারে?
  
 দুই। আমি যখন দেখি বা শুনি, তুমি কারও সঙ্গে কথা বলেছ, দেখা করেছ কিংবা তাকেই নিজের সবচাইতে কাছের মানুষ ভাবো, মন খারাপ হলেই তাকে ফোন করো, এইসব যখন বুঝতে পারি...তখন কষ্ট তো লাগেই! এই সত্যটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সত্যিই তখন আমার কষ্ট হয়!
  
 নিজেকে তখন বার বার বলি, কেন ভালোবাসতে গিয়েছিলি তাকে! যা অন্যের, কেন তার দিকেই তোর এত লোভ! কেন ভালোবেসে কষ্ট পাবার জন্য তোর এত আয়োজন!
  
 এই সমস্ত কিছুই নিজেকে আর নিজের মনকে বলতে থাকি। আসলে কী জানো, মানুষ আমি, ফেরেশতা তো আর নই! কখনও কখনও রাগ হয়, কষ্ট হয়; কখনওবা ইচ্ছে করে, সব কিছু ছেড়ে-ছুড়ে কোথাও পালিয়ে চলে যাই।
  
 তোমাকে ভুলে যাবার জন্য তাই তো জীবনে নিয়ে এলাম অন্য কাউকে! আনার পর এখন দেখি, নাহ্‌, মানুষটা ভীষণ ভালোবাসে আমাকে! উচিত হবে না, অন্য কাউকে ভুলতে তাকে ইউজ করাটা!
  
 আমি এখন তাকে এড়িয়ে চলছি। সে ফোন দিলেও আর ধরি না।
  
 জীবনে একা থাকাই অনেক ভালো। দুনিয়াতে এর চাইতে শান্তির মনে হয় আর কিছু নেই। কারও সঙ্গে থাকলে সারাক্ষণই মনে হয়, এই বুঝি কী একটা ভুল করে ফেলব এক্ষুনি! চুরি না করেও নিজেকে কেমন জানি চোর চোর লাগে!
  
 তিন। ভালোবাসতে চাইলে নিজের দিকে গভীরভাবে তাকাতে শিখে নিতে হয়। যেমনি করে আমরা অনেক দূরের জিনিসও খুব খেয়াল করে দেখি, ঠিক তেমনি করে নিজের চোখের দিকে না তাকালে হয়তোবা নিজের কথা ভাবতেই একসময় বেমালুম ভুলে যাব!
  
 খুব ব্যস্ত থাকি, এটা সত্যি। তার চেয়ে বড়ো সত্যিটা হলো, নিজের কথা মাথায় না রেখে না রেখে একদিন হঠাৎ দেখব, ব্যস্ত হয়ে থাকার সুযোগটাই এখন আর নেই! নিজে ভালো না থাকলে মানুষ কী করে ভালোবাসার মানুষকে কিংবা ভালোবাসাকে ভালো রাখে?
  
 নদীতীরে বসে থেকে কিংবা ফুলের সঙ্গে গল্প করে, যে করেই হোক, হৃদয়কে শান্ত রাখতে হয়। অস্থির হয়ে থাকব যত, অসুখও বাড়বে ততই। কে আমাকে সারাবে যদি আমি নিজেই নিজেকে সারাতে আর না চাই?
  
 ভালো থাকলে একদিন সব হয়। গাছেরা এসে বলে, ভালো আছ তো? পাখিরা এসে বলে, চলো, বন্ধু হই! আলো এসে বলে, তোমার মতন আমারও যে হাওয়ায় ভাসতে খুব ইচ্ছে করে!
 এসব কি ভালোবাসা নয়? ভালো না থাকলে এসব হতো কী করে? বন্ধু খুঁজতে হয় না। হৃদয়ে হাসি খেললে বন্ধু ঠিক জুটে যায়!
  
 নিজেকে ও নিজের চারপাশে যা-কিছু আছে বা নেই, তার সব কিছুকে নিয়ে বাঁচতে শিখতে হয়। বাঁচতে শিখে নিলে বৃদ্ধ হতে অনেক সুবিধে! তখন অত ভয়ও আর করে না! আলো একবার চিনে ফেললে অন্ধকার এলেও পালাতে হয় না।
  
 পৃথিবীকে কী দিয়েছি, কী দিইনি, এসব হিসেব রাখতেই হবে, তার কোনও দায় নেই। হিসেব লেখা হয়ে যাচ্ছে কোথাও-না-কোথাও। সেই খাতা সবচাইতে ভারী যার বেলাতে, সে নিজেই হয়তো এর বিন্দুবিসর্গও জানে না! না জানলই-বা! কী এসে যায়! হিসেবটা যে লেখায়, সে তা জানুক না জানুক, ঠিকই জানায়!
  
 চার। আমি কখনওই চাই না তোমাকে সম্পূর্ণ পড়ে ফেলতে। সব কিছু পড়ে ফেললে নাকি ভালোবাসার মানুষটার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। যাকে পড়তে যত সময় লাগে, তার প্রতি আগ্রহ মানুষের তত বেশি থাকে।
  
 বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে তখন সেটার ফল ভালো হয় না। কিছু চ্যাপ্টার না পড়েই নাহয় তোমাকে ভালোবাসলাম!
  
 আমার কোনও তাড়া নেই---তোমাকে পাবার, তোমাকে হারিয়ে ফেলার, তোমাকে ছুঁয়ে দেখার কিংবা রোজ রোজ তোমার কণ্ঠে মন ভেজাবার। আমি শুধু জানি, তোমাকে ভালোবাসি।
 এতদিনে সামান্যটুকু হলেও তো ধারণা হয়েছে আমার সম্পর্কে। যদি খেয়াল করে দেখো, তবে দেখে থাকবে, ভীষণ ধৈর্য আমার, আর তোমাকে ভালোবাসার পর সেটা আরও বেড়েছে। এখন আর ভয় কীসের!
  
 আমার কখনও মনে হয়নি, তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলব। সবসময়ই মনে হয়, যতদিন বেঁচে আছি, ঠিক ততদিনই তুমি থাকবে আমার মাঝে।
  
 আমি বেঁচে আছি তোমাকে আরেক বার দেখার লোভে। তবু তুমি কাছে এসো না। কাছে এলে যদি হারিয়ে ফেলি! জানো তো নিশ্চয়ই, ভালোবাসা দূরত্ব ভালোবাসে!
  
 পাঁচ। আমি যা ভুল করেছি, আমার জায়গায় আপনি থাকলে সেই ভুলটা করতেনই না, এটা বলে বলে লাফানোর আগে জেনে রাখুন, আপনি যা ভুল করেছেন, আপনার জায়গায় আমি থাকলে যে সেই ভুলটা করতাম‌ই, তা কিন্তু নয়!
  
 আমি জীবনে যা যা কাজ ঠিকঠাক করেছি, আপনি জীবনে হয়তো তা তা কাজই ভুলভাল করেছেন। এর উলটোটাও সত্য!
  
 পরিবেশ, পরিস্থিতি, মানসিক অবস্থা অনেক কিছুই পালটে দেয়। সময় অনেক সহজ জিনিসকে কঠিন করে দেয়, আবার কঠিন জিনিসকে সহজ করে দেয়।
  
 মানুষ বড়ো অদ্ভুত! নিজে এক-শো'টা ভুল করলেও সেদিকে খেয়ালই করে না, আরেকজন একটাও ভুলস্বীকার করলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
  
 কিছু কিছু মানুষ সত্য ডিজার্ভ করে না। ওদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ভঙ্গিতে মিথ্যা বললে ওরা আপনাকে মাথায় তুলে নাচবে, আর অপ্রিয় সত্য বললেই সবাই মিলে আপনাকে আক্রমণ করবে।
 জীবনের দু-একটা ভুল নিয়ে বলেই দেখুন! দেখবেন, মুহূর্তের মধ্যেই ভিমরুলের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ভুলহীন মহামানবেরা এসে জুটবেন, যাঁরা এইমাত্রই জানলেন, মানুষের পক্ষেও ভুল করা সম্ভব!
 আবার এমন মানুষও পাবেন, যাঁরা প্রতিটি মুহূর্তেই আপনার ভুলগুলির কথা বলে বলে আঘাত করে আপনাকে রক্তাক্ত করে দেবে! বন্ধু ভেবে অকপটে ভুল স্বীকার করবেন যার কাছে, দেখবেন, সে-ই আপনার বুকে ছুরিটা বসিয়ে দিয়েছে সবার আগে! ওদের কাছে নিরাপদ থাকার দুইটা রাস্তা---মিথ্যা বলা, কপট সাজা।
  
 Some people don't deserve your confessions.
  
 ভাবনা: আটশো বিয়াল্লিশ
 ………………………………………………………
 এক। ভালোবাসার অনেকগুলো রূপের মধ্যে প্রকৃত রূপটি হলো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা---কোনও বিনিময় প্রত্যাশা না করে কারও ভালো চাওয়া, ভালোবাসার মানুষটির সর্বোচ্চ সাফল্য কামনা করা। যে ভালোবাসা, ভালোবাসার বিনিময়ে, এমনকী ভালোবাসাটুকুও চায় না, সেটাই ভালোবাসার সর্বোচ্চ আসন, যে আসনটি হয়তো সবাই পায় না, কিন্তু যে পায়, সে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান একজন মানুষ। সম্পর্ক শেষ হলেও আসলে ভালোবাসা কখনও ফুরায় না, বরং ভালোবাসা আরও শক্ত হয়, কেননা তখন আর কোনও প্রত্যাশা থাকে না, কেবল ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো থাকতে দেখা ছাড়া, তার জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া।
  
 অনেকেই ভাবে, ভালোবাসার সম্পর্কে থাকা দু-জন মানুষের ভেতরে যখন কেউ কাউকে ছেড়ে যায়, তখন যাকে ছেড়ে যাওয়া হয়, সেই মানুষটিই শুধু কষ্ট পায়, অপর প্রান্তের মানুষটিকে আমরা দোষ দিই, গালিগালাজ করি; কিন্তু প্রকৃত সত্যটি হচ্ছে, সব ক্ষেত্রেই, যাকে ছেড়ে যাওয়া হয়, শুধু তারই কষ্ট হয়, এমন নয়। কখনও কখনও, নেহায়েত বাধ্যতার কারণে যে সম্পর্কে থাকা যায় না, কিংবা জীবন, দায়িত্ব, নিয়ম, প্রথা, সময়, পরিস্থিতি যাকে কোনও মধুর সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে, তার কষ্ট অপর প্রান্তের মানুষটির থেকেও অনেক অনেক বেশি। এই অনুভূতি কাউকে দেখানো কিংবা বোঝানো যায় না, কিন্তু জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। হ্যাঁ, একটাসময় মানুষ হয়তো এগুলো মানিয়ে নেয়, কারণ থেমে থাকা যায় না, জীবন যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ গতি ধরে রাখতেই হয়।
  
 মানুষের বাহ্যিক যে দিকগুলো আমরা দেখতে পাই ও বুঝতে পারি, তার পরের যে জগত, যদি সে জগতের খোঁজ আমরা করতে পারতাম, তাহলে অন্যদের প্রতি অনেক ভুল ধারণাই হয়তোবা আমাদের বদলে যেত। ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরিয়েও ভালোবাসা, ভালোবেসেই যাওয়া খুব সহজ কিছু নয়। সময়, পরিস্থিতি, জীবনের অনেক ঘটনা মানুষকে যেমন বদলে যেতে বাধ্য করে, তেমন জীবনের অর্থও বদলে দেয়, জীবনের প্রতি তার চাওয়াগুলোও অনেকটা বদলে যায়। এই বদলে যাওয়া হয়তো আমরা দেখতেও পাই, কিন্তু জানতে পারি না তার আসল কারণটি। যে কারণগুলো একা ওই মানুষটিই কেবল জানে।
  
 যে কষ্ট পায়, সে একটাসময় নিজেকে নির্দোষ ভেবে ঠিকই মানিয়ে নিতে পারে, কিন্তু যে কষ্ট দেয়, সে নিজের ভেতরে ভেতরেই রোজ এক বার করে মরে যেতে থাকে, নিজের সামনে সোজা হয়ে নিজের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহসটুকুও তার আর হয়ে ওঠে না, এই ভয়ে যে, পাছে নিজেই নিজেকে থুতু দিয়ে বসে! যে মানুষ নিজের বিবেকের কাছে হেরে যায়, সে মানুষকে পুরো পৃথিবী মিলে জিতিয়ে দিলেও তার আত্মার শান্তি কোনওভাবেই আসে না!
  
 জানি, কোনও লাভ হবে না; জানি, এ গর্তে পা ফেললেই তলিয়ে যাব; কিন্তু তারপরও মানুষ বুঝে কিংবা না বুঝে, অথবা সব জেনে-বুঝেই কেবল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেও এমন কিছু ভুল করে বসে। ভুলগুলো একদিক থেকে খুব জঘন্য অপরাধ মনে হলেও এই ভুলগুলোই আবার মানুষকে শুদ্ধ করে আরও ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করে। কোন‌ও মানুষ দশটি পাপ কাজ করার ফলে ঠিক যে পরিমাণ ক্ষতি হতে পারত, মানুষের একটি ভালো কাজের লাভের পরিমাণ তার দ্বিগুণেরও বেশি হয়। হয়তো এজন্যই সেই মানুষটি বেঁচে থাকতে পারে, কিংবা নিজের কাছে ফিরে আসতে পারে।
 যে মানুষকে আমি কখনও নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করতে পারব না, কিংবা সমাজের চোখে আমি যাকে কোনও সম্মানজনক পরিচয় দিতে পারব না, তা জেনেও আমি তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারছি না, এ এমনই এক অপারগতা, যা কাউকে বোঝানো যায় না, এমনকি বোঝাতে গেলেও নিজের চরিত্রের উপরে প্রশ্ন চলে আসে।
  
 যুগের পর যুগ এ জগতে যা-কিছু প্রথা প্রচলিত এবং পালিত হয়ে আসছে, তার সবই তো মানুষের তৈরি। তাহলে মানুষ হয়েও, মানুষেরই বিরুদ্ধে যায়, এমন প্রথা, এমন নিয়ম মানুষই কী করে তৈরি করে! মানুষ নিজেই নিজের চলার সবগুলো পথ রুদ্ধ করে কী করে সামনে এগোয়?
  
 দুই। ছোটোলোক হ‌ওয়া মোটামুটি সহজ হলেও ছোটোলোকি ধরে রাখাটা অত সহজ নয়। যদি এক বার ছোটোলোক হতে পারেন, তাহলে দেখবেন, আপনার কম্পিটিটরের কোনও অভাব নেই। চারিদিকেই ওদের‌ও রাজত্ব! তার পরেও কিছু মানুষ তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ছোটোলোক হিসেবে নিজের শক্ত অবস্থানটা ধরে রাখে।
  
 তিন। নিবিড়, অনেক দিন হলো তোমাকে দেখি না। আজকে আসবে একটু? খুব খারাপ না লাগলে তো আর এভাবে বলি না আমি!
  
 কেমন আছ? তোমাকে একটু ছুঁই, নিবিড়? একটু চোখ বন্ধ করে থাকবে? তোমার হাতটা ধরি এক বার? খুব অনধিকারচর্চা হয়ে যাবে কি? এত কিছু চেয়ে ফেলার পরেও তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার অনুমতি কি পাবো? যদি পাই, যদি তোমার মন ভালো থাকে, আমি অনেকক্ষণ তোমার চোখে তাকিয়ে থাকব।
  
 সব ঠিক আছে তো? তোমার কোনও কিছু নিয়ে কি মন খারাপ? আমি অনেক হাসির গল্প জানি, শুনবে? তোমার কি মায়ের জন্য কান্না পাচ্ছে? আচ্ছা, কাঁদো। শব্দ করে কাঁদো। আমি আছি এখানেই, বসে আছি তোমার সামনেই। ছেলেরাও কাঁদে, কাঁদাই উচিত! মানুষ না কাঁদলে, কাঁদবে কে আর?
  
 তুমি আমার সামনে বুকের সমুদ্রকে চোখের জল বানিয়ে ফেলো, আমি শুষে নেব। আমার বুকের ভেতরের নদীটা কিন্তু তোমার ভেতরের সমুদ্রের খোঁজ জানে। নদীকে যে সমুদ্রের খোঁজ রাখতেই হয়!
  
 আমি তোমার অপছন্দের ওইসব ভালোবাসার কথা বলতে আসিনি আজ। আমি তোমাকে শুনতে এসেছি। তোমার গলা ধরে এলে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকব না। আমি মাথা নত করে বসে আছি তোমার ব্যথা সারানোর জন্য। অত ব্যথা তুমি কেন লুকিয়ে রাখো? আমি আছি না?
 তোমার প্রেমিকাকে বলে দিয়ো, আমি তোমার বন্ধু। আরও বোলো, আমি সবার জন্যই নিরাপদ। কেড়ে নেবার বিদ্যার চেয়ে বরং চুপচাপ হারিয়ে যেতে দেবার বিদ্যায় আমি রেকর্ড নম্বর পেয়ে পাশ করেছি। সেটা নিয়ে মনে মনে অহংকারও পুষি। সে নিজগুণে বুঝে নিক, আমি কতটা নিরাপদ!
 কী, চুপ করেই থাকবে, নিবিড়? আরে, সব কথা তো প্রেমিকাকেও বলা যায় না! তুমি যেসব কথার ভারে নুয়ে পড়ছ, সেসব কাঁধে নিতেই তো এলাম! আমি নুয়ে পড়লে সমস্যা নেই, কারণ আমার কোনও প্রেমিক নেই। আমি এক নুয়ে-যাওয়া-মানুষ হয়ে যে-কোনও কিছুর ক্ষত, যন্ত্রণা, ভার, এমনকী সুখ নিয়েও সারাশহর ঘুরে বেড়াতে পারি, আমাকে কেউ কিছুর কারণ জিজ্ঞেস করবে না। কেউ আমার হাত ধরার জন্য মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করে না। একটা মানুষও আমার দেখা পাবার জন্য এই মহামারির শেষ চেয়ে খোদার কাছে দু-হাত তোলে না। আমিও কোনও গল্প-কবিতা লিখে কিংবা অফহোয়াইট কালারের পাঞ্জাবি কিনে তুলে রাখিনি, দেখা হলে কাউকে উপহার দেবার জন্য। আমার যে কেউ নেই!
  
 শোনো, যার কেউ নেই, সে খুব নিরাপদ একজন মানুষ। কারুর ব্যথাবেদনার কথা নিয়ে সে চাইলেই অন্য কারুর সাথে বলাবলি করে হাসতে পারে না। যার কেউ নেই, সেই মানুষটা, অন্যের সুখ দেখে কারুরই বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ‘জানো তো, ওর সুখ দেখলে খুব হিংসে হয়! বলো না, আমাদেরও এমনটা কবে হবে?’ এসব বলতে পারে না। এমনকী আমার মতন মানুষ আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও নিজেকে লুকোতে জানে!
  
 তুমি আজ কথার বর্ষণ করো, নিবিড়! ধরে নাও, আজ তোমার মনের বর্ষাকাল। তোমার আকাশ কালো করে দেওয়া বুকের ব্যথা দু-চোখ দিয়ে ইচ্ছেমাফিক ঝড়ের মতন করে বয়ে যাক। আমি ছাতা নিয়ে আসিনি। আজকে আমি ভিজব তোমার কান্নায়। কাঁদো, তুমি কাঁদো! শুরু করো। এই তো, আমি আছি পাশে! তোমার যন্ত্রণা না কমিয়ে আমি বাড়ি ফিরব না। আমার সময় নিয়ে তুমি ভেবো না, আমি অফিসছুটি নিয়ে এসেছি, ঘড়িও খুলে রেখে এসেছি।
  
 তুমি চাইলে আমি তোমাকে জড়িয়েও ধরতে পারি। কিন্তু আমার হৃৎকম্পন শুনতে চাইতে পারবে না, আমার ভালোবাসা চাইতে পারবে না। কেন? ওই যে বললাম, আমি বিশ্বস্ত, নিরাপদ! কাউকে ভালোবাসার মতন বড়ো অপরাধটা করি না বলেই তো আজ আমি বিশ্বস্ততার এই জায়গায় আসতে পেরেছি! আমার মতন সবাই হতে পারে না। এই সম্মান, এই আসন পেতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমি চাই না, তুমিও এই আসনের যোগ্য হয়ে ওঠো!
 দুঃখ জমিয়ো না। হাউমাউ করে কাঁদো, নিবিড়। আমি এখানেই আছি।
  
 ভাবনা: আটশো তেতাল্লিশ
 ………………………………………………………
 এক। বিচ্ছেদের পর যখন মানুষটা অনেক দূরে চলে যায়, এতটাই দূরে যে, খুব করে চাইলেও তাকে আর একপলকের দেখা পর্যন্ত যায় না, তখনও, তারাশোভিত কোনও এক নিঃসঙ্গ মাঝরাতে, হঠাৎ কখনও, আমরা আবিষ্কার করি, ভৌগোলিক দূরত্বে শত-হাজার মাইল দূরে-থাকা মানুষটাকে আজও আমরা মগজের মধ্যে ধারণ করে আছি; যেখানেই যাচ্ছি, মানুষটাও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাচ্ছে।
  
 এ জীবনের সবচাইতে কঠিন সত্যটা কী জানেন? কাউকে বিছানায় পাশে রেখেও ভাবনার বাইরে রেখে দেওয়া যায়, কিংবা সে ভাবনার বাইরেই থেকে যায়…না চাইতেই; অথচ ছেড়ে এসেছি যাকে কিংবা ছেড়ে গেছে যে, সে মনে ও মস্তিষ্কে ঢুকে এতটাই স্থির হয়ে গেড়ে বসে থাকে যে, তাকে কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যায় না, একটা দিনের জন্যও তাকে ছেড়ে থাকা যায় না, শত চেষ্টাতেও আমাদের ভাবনা থেকে তাকে দূরে রাখা যায় না। তাকে মুছতে হলে নিজের পুরো অস্তিত্বকেই মুছে ফেলতে হয় যেন! একজনের হাত ধরে আরেকজনের হাতে হাতটা রেখে দেবার যে অসহায় বাধ্যতা, তা বড্ড কাঁদায়!
  
 মগজের দৃশ্যমান টিউমারটা অপারেশন করে কেটে ফেলে দেওয়া যায়, কিন্তু সেই মগজেই যখন কারও সার্বক্ষণিক অশরীরী বসবাস হয়, তখনই মহাবিপত্তিটা বাধে! এক মৃত্যু বাদে আর কোনও রাস্তায় হেঁটে তাকে কিছুতেই সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় না। মানুষটা আজ নেই, তবু আজও এক সে বাদে আর কিছুই যেন কোথাও নেই!
  
 জীবনটাকে বয়ে বেড়ানোর সময়ে নিজের সঙ্গে আমরা সবচাইতে বড়ো কোন ছলনাটা করি জানেন? ‘এবার মানুষটাকে ভুলে যাবই যাব!’ এই কথাটা বার বার নিজেকে বলতে বলতে তাকে ভুলে যেতে একেবারেই ভুলে যাওয়া। এ বড়ো কঠিন আত্মশঠতা! কিছু মানুষ বেঁচে থাকে না, শুধুই জ্যান্ত থাকে!
  
 সব বিচ্ছেদের মানে প্রস্থান নয়। কিছু বিচ্ছেদের মানে ছেড়ে এসে বরং আরও বেশি করে থেকে যাওয়া; কিছু বিচ্ছেদের মানে দূরত্ব যেটুক ছিল, তা-ও ঘুচিয়ে আজীবনের জন্য কাছে চলে আসা; কিছু বিচ্ছেদের মানে বৃত্তের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে একই বিন্দুতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা। দূরে সরা কখনওই দূরে যাবার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। আহা, পারত যদি, কত মানুষই তো মৃত্যুর আগে সত্যিই একটু বেঁচে থাকতে পারত!
  
 রাগ থেকে যে বিচ্ছেদের সূচনা, অনুরাগেই তার পরিণতি।
 ভুল বোঝাবুঝি থেকে যে বিচ্ছেদের জন্ম, আফসোসেই তার যাপন।
 অধীরতা থেকে যে বিচ্ছেদের বিস্তার, দীর্ঘশ্বাসেই তার প্রায়শ্চিত্ত।
 পরিবার থেকে যে বিচ্ছেদের নিয়ত, একাকিত্বেই তার নিয়তি।
 ইগো থেকে যে বিচ্ছেদের প্রশ্রয়, অশ্রুসমুদ্রেই তার আশ্রয়।
  
 আমাদের দেওয়া প্রতিটি উত্তরের প্রশ্ন জীবন একটা একটা করে ছুড়ে মারে! তখন দলা-পাকানো কান্নাগুলি গিলতে গিলতে শূন্যদৃষ্টিতে নিরুত্তর থেকে যাওয়া বাদে আর কিছুই করার থাকে না।
  
 মানুষ তবু বাঁচে, মাঝে মাঝে শুধু নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়!
  
 দুই। যে মানুষ নিজের দায়িত্বপালন করার সময় ভাবে, সে এটা করার মধ্য দিয়ে কাউকে ফেভার করছে, মানে আনুকূল্য দেখাচ্ছে, সে মানুষ জীবনে বেশিদূর যেতে পারে না। দায়িত্ব-এড়িয়ে-চলা মানুষ ক্রমেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
  
 তিন। আমার ছোটো ভাই ও তার সহধর্মিণী রুপার গয়নার ব্যবসা করে, অনলাইনে; প্রতিষ্ঠানের নাম রৌপ্যরূপ। ধরে নিই, যে ক্যুরিয়ার কোম্পানির মাধ্যমে ওরা বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পাঠায়, সেটির নাম ক ক্যুরিয়ার সার্ভিস। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ক ক্যুরিয়ার সার্ভিস-এর শাখা রয়েছে। ধরে নিই, একটি শাখার নাম খ। খ শাখার মাধ্যমে প্রতিদিনই রৌপ্যরূপ-এর পণ্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়, খ-এর সঙ্গে রৌপ্যরূপ চুক্তিবদ্ধ। এটা নিয়ে ওই কোম্পানির গ শাখার খুব রাগ। কীরকম রাগ? গ শাখা রৌপ্যরূপ-কে চিনলই-বা কীভাবে?
  
 মাঝে মাঝে রৌপ্যরূপ গ শাখার মাধ্যমেও কিছু পণ্য পাঠায়, কিছু কারণে পাঠাতে হয়। গ শাখাতে রৌপ্যরূপ-এর অন্যান্য কিছু লেন-দেনও হয়। এককথায়, রৌপ্যরূপ গ শাখারও নিয়মিত গ্রাহক বা সেবাগ্রহীতা।
  
 এই সেবা দিতে গিয়ে গ শাখা মাঝে মাঝে খুব গড়িমসি করে। কেন করে? রৌপ্যরূপ কেন পণ্যপ্রেরণের দৈনিক চুক্তিটা গ-এর সাথে না করে খ-এর সাথে করল? সপ্তাহে দু-এক দিন রৌপ্যরূপ-এর দেখা পায়, প্রতিদিনই কেন পায় না? এটাই ওদের রাগের কারণ, এবং এই রাগটা সেবার উপর বাজেভাবে প্রভাব ফেলে।
  
 ধরে নিই, অন্য একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের নাম ঘ। ওরা বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পাঠায় চ ক্যুরিয়ার সার্ভিস-এর মাধ্যমে। ঘ ওই চ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। স্বাভাবিকভাবেই, ঘ-এর কাছ থেকে ক ক্যুরিয়ার সার্ভিস-এর কোনও শাখাই সাধারণত টাকা পায় না, অর্থাৎ ঘ-এর কাছ থেকে গ শাখার প্রাপ্তি শূন্য। এমনও হতে পারে, ঘ-এর অস্তিত্ব নিয়েই গ জানে না। না জানাটাই স্বাভাবিক!
 মানুষ যাকে চেনে না, তার ক্ষতি করে না। করবে কী করে, চেনেই তো না! আর যাকে মানুষ চেনে, তার ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তার পেছনে লাগে। যদিও সেই চেনা মানুষের কাছ থেকে সে উপকৃত হয়, তা-ও ক্ষতি করার চেষ্টা করেই করে!...আমার লিখতে একটু ভুল হলো; বাক্যটা হবে এরকম: সেই চেনা মানুষের কাছ থেকে সে উপকৃত হয় বলেই ক্ষতি করার চেষ্টা করেই করে!
 নিজের মনের মতো করে উপকার পায় না যার কাছ থেকে, মানুষ তার উপরেই রেগে যায়। আর যার কাছ থেকে একপয়সারও উপকার পাওয়া যায় না, তার উপর মানুষের কোনও রাগ নেই। মানুষ তাকে চেনে না বলেই সে নিরাপদ। লোকে শেষমেশ উপকারীর পেছনেই লাগে; লোকে উপকার বা সেবা পায় না যার কাছ থেকে, তার কিছুই হয় না, সে লোকের সমস্ত ক্রোধ, ঈর্ষা ও আক্রোশ, এবং এই তিন থেকে সৃষ্ট সমস্ত ক্ষতি, আঘাত ও বিপদ থেকে মুক্ত।
  
 আমরা বড়োই অদ্ভুত! যে গরু দুধ দেয়, আমরা সে গরুকেই লাথি মারি, এমনকী কখনও কখনও, সুযোগ পেলে জবাইও করি! আর যে গরু দুধ দেয় না, কিংবা দিলেও আমাদের দেয় না, সে গরুকে আমরা চিনি না বিধায় সে গরু আমাদের সকল আক্রোশ-আক্রমণের ভয় থেকে পুরোপুরিই মুক্ত। যে গরুর কাছ থেকে আমরা দুধ পাই না, সে গরুকে আমরা কিছুই বলি না; চিনিই তো না, বলব কী! আর যে গরুর কাছ থেকে আমরা দুধ পাই, সে গরুর কলার চেপে ধরে বলি, 'ভাই, সাদা দুধ তো অনেক দিলে, এবার একটু হালকা পেঁপে কালারের দুধ দাও! দুধে কিছুটা জ্যামাইকার নীল পর্বতের ঢালুতে জন্মানো কফির ফ্লেভার থাকলে ভালো হয়!' যদি দিতে না পারে, তবে বেচারার গলাটা আমাদের ছুরির নিচেই পড়ে! উপকারীকে খুন করতেই আমাদের যত আনন্দ! নিজে খুন না করলেও নীরবে তার হত্যাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে আমাদের ভালো লাগে। আসলে আমরা শুধুই অকৃতজ্ঞ ও কৃতঘ্ন নই, তদুপরি বেআক্কেল!
  
 ব্যবসায় 'পেশাদারিত্ব' বলে খুব জরুরি একটা শব্দ আছে। কিছু ব্যবসায়ী এই শব্দটা কেবলই জানে, তেমন একটা বোঝে না! ওদের গ্রাহক হবার মানে, নির্ধারিত টাকার বিনিময়েও প্রাপ্য পণ্য বা সেবাটি এমনভাবে পাওয়া, যাতে মনে হয়, ওরা ওদের দায়িত্বটা পালন করে আমাদের বড্ড উপকার করে ফেলেছে!
  
 ভাবনা: আটশো চুয়াল্লিশ
 ………………………………………………………
 এক। জানতে চাইলে মানতে হয়। কীরকম?
  
 আমরা যা-কিছু মানি না, তা-কিছু নিয়ে জানার আগ্রহটাই আমাদের মধ্যে তৈরি হয় না। মানার মানে হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ ভাবা। যে যাকে মানে, সে তাকে নিয়ে জানতে চায়। যে যা মানে, সে তা নিয়ে জানতে চায়। যে বিষয়কে আমরা গুরুত্বই দিই না, সে বিষয় নিয়ে আমরা সাধারণত ভাবিই না। যে লোকটা চাকরি করে, সে লোকটা চাকরি নিয়েই ভাবে, কেননা সে চাকরিকেই মানে। তাকে ব্যবসা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বলবে, আমি তো ভাই ব্যবসা নিয়ে জানি না! সে জানে না, কেননা সে মানে না।
  
 মা যদি ছেলেকে নিজের ছেলে না মানত, তবে কি তাকে নিয়ে জানত? আমি যদি বাবাকে নিজের বাবা না মানতাম, তবে কি তাঁকে নিয়ে জানতাম? ধরুন, অর্থনীতি নিয়ে আপনার আগ্রহ নেই। তখন আপনি কি অর্থনীতি নিয়ে জানতে চাইবেন? না, চাইবেন না, স্বাভাবিক। জ্ঞান তো অসীম, আপনার আগ্রহের বিষয় নিয়ে জেনেই তো কূলকিনারা পাবেন না, অনাগ্রহের দিকে আপনি সময় দেবেন কী করে? আপনি অর্থনীতিকে মানেন না বলেই আপনি অর্থনীতি নিয়ে জানেন না। আপনি হয়তো রাজনীতি নিয়ে অনেক ভাবেন, আর ভাবেন বলেই তা নিয়ে জানেনও। আমি রাজনীতি নিয়ে তেমন ভাবি না বলেই জানি না। এই ভাবার ব্যাপারটা আসে মানা থেকেই। তাই জানার প্রথম ধাপই হচ্ছে মানা।
  
 আপনি অর্থনীতি নিয়ে আগ্রহী নন, আমি আগ্রহী।
 আমি রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী নই, আপনি আগ্রহী।
 আপনি বললেন, বাঁচতে চাইলে রাজনীতি আপনাকে জানতেই হবে!
 আমি বললাম, বাঁচতে চাইলে অর্থনীতি আপনাকে জানতেই হবে!
 ...এভাবে হয় না। যে যা মানে না, সে তা জানে না। আবারও মনে করিয়ে দিই, মানার মানে আমলে নেওয়া। জোর করে আমলে নেওয়ানো যায় না।
  
 পৃথিবীতে কত কত সংস্কৃতির মানুষ আছে, কত কত জাতি ও ধর্মের মানুষ আছে! সবার সম্পর্কে কি জানা সম্ভব একজীবনে? যদি আমরা না-ও জানি, তবু কি আমাদের অজানা সভ্যতা বা সমাজের অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়ে? কখনওই নয়! আমরা যা ধারণ করি না, আমরা যা মানি না, আমরা যা জানি না, তা-ও সুন্দর, কেননা তা-ও মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। এ নিয়ে যে-কোনও গোঁয়ার্তুমি নিঃসন্দেহে মূর্খতারই নামান্তর। আমরা যতটা মানি, অতএব জানি, ততটার বাইরের জগতটাই বরং বড়ো, এবং সে জগতের সবকিছুই সেখানকার মানুষগুলির জীবনে সত্য, ফলে সুন্দর। চোখের সামনের সত্যটি আমার জন্য একমাত্র সত্য হতে পারে, তবে সেটি সবার জন্যই একমাত্র সত্য কিছুতেই নয়! জীবন ভেদে সত্য ভিন্ন হয়।
  
 আমরা যা পেতে চাই, কিংবা জানতে চাই, তা প্রথমেই মানতে হবে, তার প্রতি একধরনের মায়ামমত্ব নিজের মধ্যে জন্মাতে হবে, কেবল তখনই তা পাবার ও জানার রাস্তাটা খোঁজার ইচ্ছেটা আমরা তীব্রভাবে টের পাবো। মানুষ যা কিংবা যাকে মানে, তা কিংবা তাকে টানে। আর টানতে টানতেই একসময় জানে। এভাবেই জানতে হয়। মনের মধ্যে ওই টানটা না এলে জানার রাস্তায় হেঁটেও কোনও কাজ হয় না। দেখতে চাইলে আগে অন্ধ হতে হয়। মনের মধ্যে মায়ার এই অন্ধত্ব না এলে আলোর খোঁজটা সহজে পাওয়া যায় না।
  
 কেউ যখন ধরেই নেয়, সে জানে, তখন জানার পথে হাঁটার ইচ্ছেই-বা তার কোথায়? যা দেখতেই পাচ্ছি, তা আর দেখারই-বা কী আছে? নিঃশ্বাস নিতে চাইলে শুরুতে ধরে নিতে হবে, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না! দেখতে চাইলে শুরুতে ধরে নিতে হবে, আমি দেখতে পাচ্ছি না! জানতে চাইলে শুরুতে ধরে নিতে হবে, আমি জানি না! এর নামই অন্ধত্ব, এর নামই শূন্যতা। পূর্ণ হতে চাইলে শূন্য হতে হয়। মনের মধ্যে অহেতুকই পূর্ণতার অহংকার থাকলে শূন্য হওয়া যায় না, ফলে পূর্ণ হওয়াও যায় না। যতটা দেখেছি, সেখান থেকে বলি, মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাইলে শুরুতেই মাথাটা নিচু করতে হয়, নিজেকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে হয়। চারপাশে তাকালে দেখবেন, অসংখ্য শূন্য মানুষ মিথ্যে পূর্ণতার অহংকার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই মিথ্যে পূর্ণতাই ওদের নিয়ত, অতএব নিয়তিও তা-ই!
  
 জানতে হলে মানতে হয়।
 মানতে হলে টানতে হয়।
 টানতে হলে শানতে হয়।
  
 এই জানা-মানা-টানা-শানা সবারই জন্ম শূন্য থেকে, পূর্ণ থেকে নয়।
  
 দুই। লোকে যা বলে বলুক, থেমে যেয়ো না, দরকার পড়লে শুধু একটু বিরতি নিয়ে নিজেকে শুধরে নিয়ো। ওরা চাইবেই তোমাকে থামিয়ে দিতে। তুমি থেমে গেলেই ওরা জিতে যাবে। ওদের জিতিয়ে দিয়ো না, শুধু সময়ে সময়ে ভুলগুলি শুধরে নিলেই চলবে। ওরা কাউকে শোধরাতে চায় না, থামিয়ে দিতে চায়। ওদের উপযুক্ত জবাব দিতে চাইলে থেমে যাওয়া যাবে না, ধীরপায়ে হলেও চলতে হবে নিজেকে শুধরে শুধরে। কেউ নিজে এগিয়ে সুখ পায়, কেউবা সুখ পেতে অন্যকে এগোতে দেয় না। ওরা নিজেরা চলতে পারে না, চলতে চায়ও না বোধ হয়; অন্যের পথ রোধ করাতেই ওদের যত আনন্দ। ওদের বলতে দিয়ো, আনন্দটা পেতে দিয়ো; একইসঙ্গে নিজেকে চালিয়ে নিয়ো, মনে করে শুধরে নিয়ো। ওতেই হবে!
  
 তিন। অনেকেই বছরে মাত্র দুই দিন মদ খায়। যেদিন বৃষ্টি হয়, আর যেদিন বৃষ্টি হয় না। সারাবছরে মাত্র দুই দিন মদ্যপান করলে কিছু হয় না!!
  
 আমরা বাঙালিরা মাত্র দুই সময়ে...
  
 বাক্যে বেশি বেশি বিশেষণ ব্যবহার করি,
 শব্দে বাড়তি ও-কার দিয়ে দিই,
 মন চাইলেই কর্মবাচ্যে বাক্য লিখি,
 বইতে ও নেটে যা বানান-প্রয়োগ দেখি, তা-ই ঠিক ধরে নিই।
  
 স্মার্ট কেনো হবো না?
  
 ভাগ্যিস, উপরের বাক্যে আরও ও-কার বসানোর জায়গা নেই! থাকলে নিশ্চয়ই বসিয়ে দিতেন সম্মানিত অ্যাডওয়ালারা!!
  
 কেন (why)...কেন এলে? (Why did you come?)
 কেনো (buy)...এত কেনো কেন? (Why do you buy this much?)
  
 'হব' এসেছে 'হইব' থেকে। এখানে ও-কার যোগ করার কোনও কারণ নেই। যদি 'হব' শব্দের অন্য অর্থও থাকত, তা-ও একটা কথা ছিল, যে কারণে আমরা হল, হত ইত্যাদি শব্দ ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহৃত হলে হলো, হতো লিখি। (এসব নিয়ে আমার তিনটি লেখা আছে, চাইলে দেখা যেতে পারে।)
  
 তবু আমরা না বুঝেই যেখানে-সেখানে ও-কার যোগ করি। কেন করি? ইয়েন এক্কান খুশি এরি!
 ও আচ্ছা, কোন দুই সময়ে, সেটা বলছি!
  
 যখন আমরা বুঝি না, আর যখন আমরা বেশি বুঝি।
  
 ভাবনা: আটশো পঁয়তাল্লিশ
 ………………………………………………………
 এক। (কয়েক কোটি বছর ধরে অনুবাদ না করতে না করতে যাঁদের দক্ষতা শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাচ্ছে, তাঁদের এ মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য...)
  
 : amaka bolo babo ke hoyasa.amaka boltae hoba tumar.kano mon karap kora takba?ata tek na.mon karap hola pora sorer o karap hoya jay.sorer karap hola abar gum koma jay.gum koma gala moke oruce asa.oruce asla pem korta kub karap laga.ata hota dio na plz.tome to jano ame tomaka koto luv kore.ato luv bijnes eo kaw korta para na,bojla?jaw pake,mon karap kora tako na,jaw.ame bdo kol dabo?
 : motao na.
 : kan,amar cahra dakla na aga tumar mon balo hoya jato?akon hotat ki holo?
 : tumar cahra akon r balo laga na,amr akon koddos ka basi balo laga r motalab kaw aktu aktu balo laga.
 : ke bolla tome?kalkaw na bolla tome sodo amar.ar ajkae tome koddus ar motalab r hoya gala?odar ka amon aca ja amar nae?
 : koddos ar masin basi balo,or babar masin o balo.
 : or babar o!ke bolso asob tome?ce,ce,ce.
 : koddos ar raismel ar kota bolasi.
 : o acca,acca.tome oe calar dukandar kae balobasla sasa?ar motalab?or ke aca?
 : motalab ar sata amar motar mel hoy,tumar sata hoy na.
 : motalab ke nare?
 : ta kano hoba?o amar pemikporos.
 : nare ar porosar motar mel ke kora hoy?
 : osobbo tome.agae jantam,tumar mon cutu.tome cutulok.ame amar balobasa kunu cutulok ka deta pare na.
 : acca,koddos ke motalabar kajin hoy?
 : ha.kano?
 : koddos ar bare kilket,ar motalab ar noyapaltan?
 : ha,tome etokecu ke kora jano?
 : odar sata noton bondoto hoyasa.
 : tome amaka folo koro tar mana.ame kotae jae,ke kore,sob koj rako.tae na?
 : na,na pake.oraw to amar sata kolekata harbal e jay.okanae daka hoyasa.
 : ata abar ke?
 : oeja salman kan ar bodefola postar dako nae?ak masa akte fail e jotasto.
 : tomra ten jon e...amon karapar karap!tomar sata ar rilason rakbo na,jaw.
  
 দুই। কিছু মানুষের ব্রেইন মাথায় থাকে না; এদের ব্রেইন থাকে পেটে, আর মাথাভর্তি থাকে গ্যাস। যখন অ্যাসিডিটি বেড়ে যায়, তখন এরা পাগলামি করে, এবং মাথায় যা আসে তা-ই করে।
  
 তিন। ব্যবসা হচ্ছে নিজের সন্তানের মতন। নিজের সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ শুরুতে এক বাবা-মা বাদে আর তেমন কেউ দেখতে পায় না। ব্যবসার ক্ষেত্রেও তা-ই, শুরুতে এক নিজে বাদে বাকিরা এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতেই পায় না এবং সুযোগ পেলেই নানান উপায়ে বিরোধিতা করে। তবে সন্তান বড়ো হয়ে যাবার পর বাবা-মা'র পাশাপাশি অন্যরাও যেমনি তার কাছ থেকে সেবাটা পায়; তেমনি ব্যবসা বড়ো হয়ে গেলেও তার সুফলটা তারাও ভোগ করে, যারা ব্যবসার শুরুতে নানান আজেবাজে মন্তব্য করেছিল।
  
 চার। অনেকেই কোনও লাভ বা স্বার্থ ছাড়াই বিনা কারণে অভ্যস্ততাবশত মিথ্যা কথা বলে। মিথ্যা না বললে ওদের পেটের ভাতই হজম হয় না যেন! ওরা যখন এরকম একটার পর আরেকটা মিথ্যা বলেই যায়, তখন ওদের সামনে থাকলে কী যে বিরক্ত লাগে! ওরা যে মানুষ হিসেবে খারাপ, তা কিন্তু নয়। অহেতুক মিথ্যা বলাটা ওদের একধরনের মানসিক রোগ।
  
 পাঁচ। কিছু মানুষ এতটাই মূর্খ, এতটাই নির্বোধ যে ওদের এক সার্টিফিকেট বাদে আর কিছুই নেই।
  
 অবশ্য এ দলে কিছু নেই-সার্টিফিকেট মানুষও আছে। ওদের দেখি আর ভাবি, মূর্খতার জন্য সার্টিফিকেট অপরিহার্য নয়, সার্টিফিকেট ছাড়াও মূর্খ হ‌ওয়া যায়, এর জন্য মূর্খ হবার সদিচ্ছা ও মানসিকতাই যথেষ্ট।
  
 ছয়। প্রিয় অস্ট্রেলিয়া, শুধু মাঠে-ঘাটে বড়ো বড়ো কথা বলে বেড়ালে তো হয় না, কিছু করে দেখাতে জানতে হয়!
  
 এই জায়গায় তোমাদের ও আমার হেইটারদের মধ্যে তেমন কোনও পার্থক্য তো দেখি না! দুইটাই তো দেখি জিনিস একই, খালি চাপার জোরটাই আছে, আসল জায়গায় মাল নাই! ভাবে সপ্তমী, কর্মে শূন্য! সমস্যাটা আসলে কোথায়?
  
 (চান্সে ভাব নিয়ে নিলাম! হারলে লোকের ভাব সহ্য করতে হয়! 
 অভিনন্দন, বাঘের দল!)
  
 সাত। যে যাকে ভালোবাসে, সে তাকে বিয়ে করলেই সবচাইতে ভালো। এর কারণ, ওরা দু-জন দু-জনকে সহ্য করতে শিখে নিয়েছে ইতোমধ্যে। নতুন কাউকে বিয়ে করলে নতুন মানুষটি তাকে সহ্য করতে পারবে কি পারবে না, তা নিয়ে বিরাট একটা ঝুঁকি থেকেই যায়!
  
 যারা প্রেম করে, তারা যতটা সহজে পরস্পরের হাত চাইলেই ছেড়ে দিতে পারে, বিয়ের পর দু-জন মানুষ ততটা সহজে পরস্পরের হাত হাজার চাইলেও ছেড়ে দিতে পারে না। প্রেমে সামাজিক ও পারিবারিক কোনও শেকল নেই, যেটা বিয়েতে আছে। আর বিয়ের পর সন্তান হয়ে গেলে তো মরতে মরতে হলেও মানুষ অনুভূতিশূন্য মন নিয়ে পাশাপাশি থেকে যেতে রীতিমতো বাধ্য হয়! এই বাধ্যতার চাইতে বড়ো যন্ত্রণা পৃথিবীতে আর কী আছে!
  
 তাই প্রেমের সম্পর্কে থাকা দু-জন মানুষ যদি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেটা খুবই চমৎকার, কেননা ওরা পরস্পরকে দীর্ঘদিন ধরে জেনে-বুঝেই এই সিদ্ধান্তটা নিচ্ছে, যে সুযোগটা প্রেমের সম্পর্কহীন বিয়ের ক্ষেত্রে একদমই নেই। বিয়ের পর দু-জনকে দু-জনের কোন কোন দিক সহ্য করতে হবে, তা বিয়ের আগেই জানা থাকলে খুবই ভালো!
  
 যাদের মধ্যে প্রেম, বিয়েটাও তাদের মধ্যে হলে সেই দু-জন মানুষের সুখী হবার সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি। আর বিয়ে যদি হয় অন্য কারও সঙ্গে, তবে সেক্ষেত্রে অসুখী হবার সমূহ আশঙ্কা থেকে যায় স্বামী-স্ত্রী দু-জনেরই, এবং একইসাথে ওদের দু-জনের পরিবারেরও!
  
 প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে বিয়ে হলে ওরা দু-জন নানান সীমাবদ্ধতা ও দ্বন্দ্ব নিজেদের মধ্যে যতটা মেনে ও মানিয়ে নিতে পারে, অপরিচিত বা অল্প-পরিচিত দু-জনের মধ্যে বিয়ে হলে মেনে ও মানিয়ে নেবার ব্যাপারগুলি ততটা থাকে না। ভালো ও খারাপ মিলিয়েই তো একজন মানুষ! তাই এই দুইটি দিকই জানার ও বোঝার সময়-সুযোগ নেই যেখানে, সেখানে দুঃখ পাবার আশঙ্কা একেবারে প্রতি পদে পদেই!
  
 আমরা তো সবাই জানিই, চেনা রাস্তা ঘোরানো হলেও ভালো, অচেনা রাস্তা সোজা হলেও ভালো না! অচেনা রাস্তায় একবার বিশ্রীভাবে হারিয়ে গেলে মাঝে মাঝে গন্তব্যে পৌঁছোনোর ইচ্ছেটা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়!
  
 এই বিষয়ে অভিভাবকদের সর্বোচ্চ পরিমাণে আন্তরিক হতে হবে। সন্তানের জীবনের এমন অতিজরুরি সিদ্ধান্তটা নেবার সময় গোঁয়ার্তুমির ফলাফল হতে পারে চরম ভয়াবহ! হয়তোবা আপনার গোঁয়ার্তুমির শাস্তি হিসেবে আপনি আমৃত্যুই নিজের সন্তানের ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকবেন। বাবা-মা'য়ের মূল দায়িত্ব সন্তানকে মানুষ করা, বিয়ে দেওয়া নয়।
  
 নিজের বুদ্ধিতে ভুল করলে মানুষ যত সহজে মেনে নেয়, অন্যের বুদ্ধিতে ভুল করলে মানুষ তত সহজে মেনে নিতে পারে না। কী দরকার সারাজীবনই আরেকটা মানুষের দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়ানোর?
 অপ্রেমের বিয়ের কাচ্চি-বিরিয়ানির চাইতে প্রেমের বিয়ের পোড়া-রুটিও হাজারগুণ বেশি সুস্বাদু!
  
 ভাবনা: আটশো ছেচল্লিশ
 ………………………………………………………
 এক। যে মানুষটা তোমায় রোজ রোজ কারণে-অকারণে মনে করত, সে তোমায় সত্যিই ভীষণ মিস করত।
  
 যে মানুষটা শুধু তোমায় ভালোবেসে বেসে নিজের বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে, সে সত্যিই নিজের কথা না তোমার কথাই ভাবত বেশি।
  
 যে মানুষটা তুমি ফোন দাও না কেন, তুমি মেসেজ দেখো না কেন, তুমি দেখা করো না কেন…এই সমস্ত বিষয় নিয়ে তোমায় প্রশ্ন করে করে অশান্তিতে রাখেনি কখনও, সে-ই কিন্তু সত্যি সত্যি তোমার শান্তির বিষয়টা মনে ও মাথায় রেখে তোমায় ভালোবেসেছে।
  
 তোমায় পাবে না জেনেও যে শুধুই তোমায় ভালোবেসেছে, সে-ই সত্যিকারের ভালোটা বেসেছে।
 কখনও তোমার মুখের উপর যে কড়াভাষায় জবাব দেয়নি, আসলে সে-ই তোমায় সম্মান করতে শিখেছে।
  
 তুমি হাজারো বার ব্যথা দেবার পরও যে তোমার কাছেই ফিরে এসেছে, সে আসলে মনের দিক থেকে দুর্বল নয়। তার ভালোবাসাটা ভীষণ তীব্র, যা কিনা তোমার দেওয়া আঘাতেও তাকে পিছিয়ে দিতে পারেনি!
  
 একদিন আমি দূরে সরে গেলে জানি ভীষণ শান্তি পাবে। আমার পাঠানো রোজকার মেসেজের ভিড়ে খুঁজতে বসেও এই আমায় সেদিন আর পাবে না ফিরে।
 তখন শত মিস করলেও কেউ তোমায় আর জ্বালাবে না আগের মতো, আর তুমি মনের খুশিতে সেদিন আমায় ভুলে যাবে ঠিকই!
  
 দুই। সিরিজ জয়,
 কীসের ভয়?
  
 ফসকে গেল,...গেলে যাক!
 অতিথি মানুষ,...খুশি থাক!
  
 হারি কি জিতি, পরোয়া নাই!
 এমন খেলাই দেখতে চাই!
  
 হারিও যদি, লড়াই থাকুক!
 টুপিটা ওরা খুলেই রাখুক!
  
 বাঘের দল,
 চল রে চল!
  
 তিন। The people who hate the same person flock together much more than the people who like the same person. Haters are more united than lovers.
  
 চার। মানুষ নিজেই নিজের মনের মতো হতে পারে না, অথচ আশা করে বসে থাকে, অন্য কেউ তার মনের মতো হবে।
  
 পাঁচ। When your success says it all, what's the use of your post? Success talks the loudest!
 Congratulations, Tigers!! Such a well-deserved win!! Even my heart missed some beats!!    
  
 ছয়। আজ আমি মৃত্যু চাই, নতুন করে ফুটে উঠতে আর চাই না। আজ আমি চাই, তিল তিল করে মেরে ফেলা আমার সব যন্ত্রণা আমাকে একবারেই গিলে খেয়ে নিক। প্রতিদিন একটু একটু করে খাওয়ার চেয়ে, একেবারেই শেষ করে ফেলুক।
  
 আমি আমার আমিত্বটাকে খুইয়েছি। প্রতিটি দিনই হাত-মুখ ধুয়ে, আয়নার সামনে ছুটে গিয়ে দাঁড়িয়ে যে আমাকে আমি দেখি, সে আমি কিছুতেই এই আমি'টা নই! সে অন্য কেউ। আমার আগের আমি'টার ভীষণ রাগ ছিল, অভিমান ছিল, সাধ-আহ্লাদ, খিলখিল করে লুটিয়ে পড়া হাসি আর হাউমাউ করে কাঁদবার সাহস ছিল। তবে এখন আয়নায় যাকে দেখতে পাচ্ছি, সে কে? কে এই মানুষ, যার সাধ-আহ্লাদ, মান-অভিমান নেই? এমনকী সে দুঃখ পেলে নিজেকে এলোমেলো করে দিয়ে কাঁদতেও আর পারে না। এই যে আমি আমার ভেতরকার আমি'টাকে হারিয়ে একটু একটু করে অন্য কেউ হয়ে যাচ্ছি, এই দায়টা কে নেবে?
  
 আমি আবারও জিজ্ঞেস করছি, শুনতে পাচ্ছ? কে নেবে এই দায়টা? আমি তো আর এমনি এমনি বদলে যাইনি। একটা জিন্দালাশের মতন বেঁচে থাকাকে আমি আর জীবন বলতে চাইছি না। সবার সঙ্গে ভণ্ডামি করা গেলেও, নিজের সঙ্গে করা যায় না। আরে, অন্যের আয়নার সামনে গিয়ে না দাঁড়ালেও, নিজের আয়নাকে তো আর ফাঁকি দেওয়া যায় না!
  
 আমার অনেক সাহস। আমি সজোরে বলতে চাই, আমার আমি'র মৃত্যু ঘটেছে। এখন আমি কেবলই আত্মাহীন একটা শরীর মাত্র। আমার ভেতরে কোনও আলো প্রবেশ করতে পারে না, এমনকী আমার ভেতরকার যে আলো আমাকে এতদিন আলোকিত করে রেখেছিল, সেই আলোও আজ নিভে গেছে!
 শোনো, মানুষ এভাবে বাঁচতে পারে না। এমন একটা টেনে-হিঁচড়ে বয়ে নিয়ে চলা জীবনকে আমি ধিক্কার দিই। যে জীবনে মনের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরে না, ক্ষতস্থানটা ক্ষত অনুভব‌ই করাতে পারে না, সে নিশ্চয়ই মৃত। আমার মতন মৃতের ক্ষত সইতে সইতে ক্ষতগুলোই একটাসময় নিজগুণে মলমে পরিণত হয়! অর্থাৎ সেই ক্ষতটাই হয়ে যায় ব্যথাহীনতার নিয়ামক। ক্ষতকে মলমে পরিণত করতে হলে, ছোটো ছোটো ক্ষতগুলো বুকের ভেতরে দীর্ঘদিন পেলেপুষে বড়ো করতে জানতে হয়। ক্ষত জমিয়ে ক্ষতবিক্ষত করলে কতটা কষ্ট হয়, তার স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ নিতে জানতে হয়। আমি জানতাম একসময়, এখন আর জানি না। আমাকে আমার আমি'টা ফেরত দাও। আমার আত্মা, আমার অনুভূতি ফেরত দাও।
  
 অ্যাই, তোমাকে, হ্যাঁ, তোমাদের সবাইকে বলছি, আমার আমি'কে ফেরত দাও। দাও বলছি! আমার আমিসত্তাটি তোমরা কে চুরি করেছ? কেন চুরি করলে? আমাকে বলতে হবে। এত সহজে পার পাবে না।
  
 আচ্ছা, কে চুরি করেছ, ঠিক করে বলো তো? আমার সামনে এসে বসো। আমরা চা খেতে খেতে গল্প করব, কোনও সমস্যা নেই। কেউ জানতে পারবে না যে, তুমি চোর। শুধু আমার সত্তাকে ফেরত দাও। আমি তোমাকে কোন‌ও শাস্তি দেবো না, বিশ্বাস করো, মা-কালীর দিব্যি খেয়ে বলছি, দেখা দাও। কে চুরি করেছ? কে? তুমি, না কি ও, না কি সে? বলবে না? না কি তোমরা আমার সত্তাকে সত্যিই মেরে...না...আর ভাবতে পারছি না আমি!
 হা হা হা হা হা হা...! উফফ্ হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে গেল। আচ্ছা, তোমরা যে আমার আত্মাটাকে মেরে ফেললে, তা তোমাদের আত্মার কী খবর? শব্দ করছ না কেন? বলো? তোমাদের সত্তারও মৃত্যু হয়েছে, তাই না? হা হা হা হা! আমি সব জানি, সব জানি। তোমাদের আত্মাও পচে গলে গেছে। আয়না আছে তো বাসায়, হুঁ? কী, আয়নায় কাকে দেখা যায়? আদৌ কি কাউকে দেখা যায়!?
  
 ভাবনা: আটশো সাতচল্লিশ
 ………………………………………………………
 এক। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করেই ভুল করুন। তাহলে বুঝতে পারবেন, কারা আপনার ভুল সহ্য করতে পারে না। যারা আপনার ভুল নিতে পারে না, প্রকাশ্যে নিন্দা করতে একদৌড়ে ছুটে আসে, এবং যখন আপনি ভুল করেন না, তখন‌ও একটা হাততালিও দিতে পারে না, তারা কিছুতেই আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। আপনি যত নির্ভুল থাকেন, তাদের শরীর তত‌ই জ্বলে, নিজেকে এই জ্বালাপোড়া থেকে বাঁচাতে প্রায়ই তারা থেকে যায় শীতনিদ্রায়। আর আপনি যখন‌ই ভুল করবেন, তখনই ওদের চেতনার সবকটি দণ্ড একসাথে খাড়া হয়ে যায়, আর ঊর্ধ্বশ্বাসে ঝাঁপিয়ে পড়ে আপনার আদ্যশ্রাদ্ধটা অতিদ্রুত সেরে ফেলতে!
 ভুল হলো, উপরের কথাগুলোতে 'শুভাকাঙ্ক্ষী নয়' শব্দগুলো ঠিক মানাচ্ছে না, ওখানে হবে 'হেইটার'। হেইটার চিনতে কখনও কখনও টোপ ফেলুন। ওদের মাথায় ঘিলু কম; দেখবেন, টোপটা দেখামাত্রই গিলে ফেলবে। আপনি ঠিক কিছু করলেও ওরা আপনার পেছনে লাগবে, ভুল কিছু করলেও ওরা আপনার পেছনে লাগবে। প্রথম ক্ষেত্রে ওরা ভীষণ নীরব অস্বস্তিতে ভোগে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্বস্তিতে স্বস্তিতে ওদের রীতিমতো সরব স্বর্গলাভ হয়! এ ধরনের মানসিক নপুংসকেরা সারাজীবনই পেছনে লাগে, পেছনেই থাকে। হ্যাঁ, 'ওরা আজীবনই পেছনে থাকে'। এই কথাটি কোথাও লিখে রাখুন, মাঝে মাঝে মিলিয়ে নেবেন। আমি গত দশ বছর ধরে মেলাচ্ছি, মিলেও যাচ্ছে!
  
 একমিনিট, একমিনিট! ভুল ভাববেন না, ওরা সমালোচক নয় কিন্তু! ওরা সোজা বাংলায়...নিন্দুক। লোকের পেছনে লেগে থাকা বাদে ওদের জীবনে বলার মতন আর তেমন কোনও অর্জন নেই, থাকবেও না। সমালোচকেরা কর্ম নিয়ে কথা বলে, কর্মী নিয়ে নয়। অন্য দিকে নিন্দুকেরা কর্মী নিয়ে কথা বলে, কর্ম নিয়ে নয়। কর্ম নিয়ে কথা বলতে চাইলে মস্তিষ্কের জোর লাগে, কর্মী নিয়ে কথা বলতে চাইলে শুধু চাপার জোরই যথেষ্ট।
  
 দুই। বুকের ভেতরে এত অস্থিরতা কেন, জানি না। শুধু মনে হচ্ছে, তোমাকে দেখতে পেলে মন শান্ত হয়ে যেত। জানো, মাঝে মাঝে মনে হয়, কখনও ভুল করে যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি, বেঁচে থাকার জন্য আমার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।‌
  
 আমার সত্যিই ভয় হয়, সত্যিই। আমি চোখ বন্ধ করলেই অনুভব করি, তুমি আমার ঠোঁটে চুমু আঁকছ। প্রায়ই অনুভব করি এমন। করতে ভালো লাগে।
  
 আমি মাঝে মাঝে ভাবি, তুমি আমার খুব খুব কাছে শুয়ে আছ, আর আমি ছুঁয়ে আছি তোমাকে। আমি তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই, তোমায় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হয়, ইচ্ছে করে তোমার সমস্ত শরীর চুমুতে ভরিয়ে দিতে। আমার সত্যিই তখন তোমাকে পেতে ইচ্ছে করে। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় আমি আদরহীন হয়ে ঘুমিয়ে যাই।
  
 তোমার ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শব্দ করেই বলি, এই ছেলেটাকে আমার পক্ষ হয়ে বকে দাও। সে অনেক দিন আমাকে আদর করেনি। তাকে বলো, আমি রাগ করেছি অনেক। তবে তাকে এ-ও বলে রেখো, দেখা হলে আমি তাকে অনেক আদর করব।
  
 তোমার ছবিতে এক-শো’টার চাইতেও বেশি চুমু খেয়েছি; এত বেশি খেয়েছি যে, টিস্যু দিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনটা মুছতে হয়েছে! এখন আমার ভীষণ ঘুসি মারতে ইচ্ছে করছে তোমাকে। এর কারণ জিজ্ঞেস করবে না। কারণ জিজ্ঞেস করলে তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে।
  
 একদিন তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসব, তারপর হাত-পা বেঁধে পিটাব। যতক্ষণ না তোমার টান আসবে আমার প্রতি, ততক্ষণ পিটাব।
  
 আমাকে কষ্ট দেওয়া সহজ কিন্তু! আমি অনেক বেশি সংবেদনশীল মনের মানুষ। আমি সবকিছু তোমাকে লিখি না, সব দুঃখ শেয়ার করি না। অনেক কিছুই আমি সবসময় এড়িয়ে চলি, কারণ আমি আমার সীমাবদ্ধতা জানি। এই যে আমার ভেতরের মেয়েটি…সে তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য কখনও কিছুই করবে না, ভালোবাসার জন্যই করবে শুধু।
  
 তুমি যখন কখনও বলো, তোমার কষ্ট লেগেছে, তখন তোমাকে না বুঝে কষ্ট দেবার কষ্টে আমার ঘুম আসে না। তখন তোমার জন্য অস্থির লাগে। ওদিকে তুমি ওসব বলে-টলে চলে যাও। আর এদিকে আমি ভাবতে থাকি, তুমি কোথায় গিয়েছ? কোথায় গিয়েছ? কেন নেই আজকে? তুমি কি ব্যস্ত? ঘুমিয়ে গিয়েছ? আজ তোমার এত তাড়াতাড়ি ঘুম এসেছে কেন? কেন এসেছে?
  
 এমন অনেক দিনই, রোজকার ডায়েরির অর্ধেকটা লিখি তোমাকে বকা দিয়ে দিয়ে।
  
 আমাদের চারপাশের প্রায় কিছুই আমাদের পারস্পরিক আচরণের উপর নির্ভর করে। আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলবার ভয় করি। এক উদ্দেশ্যবিহীন যাত্রা তোমার দিকে…এটা তোমাকে হারাতে পথরোধ করবে। আমি আছি। থাকব। আমাকে আমার মতো করে বাড়তে দিয়ো, তুমি তোমার মতো করে বেড়ো। তোমাকে বাড়তে দেখলে আমার শান্তি লাগে, আনন্দ হয়।
 আমার সঙ্গে কথা বলবার সময় ওরকম রোবটের মতো কথা বলবে না। বললে তোমাকে আমার ঘুসি মেরে দিতে ইচ্ছে করে। আমার সঙ্গে সবসময়ই মায়া মায়া নিয়ে কথা বলবে, প্রেম প্রেম নিয়ে কথা বলবে।
  
 ইদানীং শুধুই মনে হচ্ছে, তোমাকে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরলে মন শান্ত হবে। এইভাবে দীর্ঘসময় তোমাকে না দেখে থাকলে আমার প্রচণ্ড কষ্ট হয়, প্রায়ই হচ্ছে। তুমি খুব খুব নিষ্ঠুর! তোমাকে ভাবা ছাড়া আর কিছু করছি না আমি। ভাবছি, তোমাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে না রাখার ইচ্ছে কীভাবে তৈরি করা যায়, কীভাবে তোমাকে ভুলে থাকা যায়, আর আমার কাজগুলো কখন আমাকে আগের মতো করে ফিরে পাবে!
  
 তোমাকে দেখা ছাড়া, তোমাকে পড়া ছাড়া আমি কি আর কোনও কাজ করব না? আজব তো! তোমার কবিতার দোষ নেই, সব দোষ শুধুই তোমার। আচ্ছা, আমার অনুভূতিতে কি তোমার জন্য শুধু অভিযোগই থাকে? আমি অনেক বেশি অভিযোগ করি, এমন কিছু? আমাকে আসলে তুমি বাদে আর কেউ ঠিক হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারছে না, কেউ আমার পাশে থেকে যাবে না শেষ পর্যন্ত, এরকম নানান ভাবনা ঘুরে-ফিরে মাথায় আসে।
  
 এই যে তোমার জন্য এত এত মায়া পুষে রাখি বুকের মধ্যে, যদি কখনও জানতে, কত যে মানুষের চোখে আমি এক মায়াহীন মানুষ!