পিএটিসি ডায়েরি: ১৬ ফেব্রুয়ারি


ডেটলাইন ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পরীক্ষার দিনের ভোরের লক্ষণ: “আচ্ছা, ডিও লেটারে প্রাপকের নাম লিখতে হয়, না কি পদবি, না কি দুটোই?” “নোটশিটের শুরুর পেজে পেজনম্বর দিলে কি কোনো প্রবলেম আছে?” “কার্যবিবরণীতে ছক না করে লিস্ট আকারে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো লেখা যায় না?” আমরা ‘শর্টপিটি’তে জগিংট্র্যাকে হাঁটছি, সেসময় আশেপাশে এসব কথাবার্তা চলছে, যেগুলোর বেশিরভাগই আমার চুলের উপর দিয়ে যাচ্ছে। ওদের পড়াশোনা ঘরে-বাইরে বিস্তৃত আর আমি ভাবছি, একটু পরেই রুমে গিয়ে ঘুমোতে পারব, আহা! এমনিতে আর দশটা শীতের ভোরের মতোই আজকের ভোরটা, তবে কুয়াশা একটু কম। রাতের ঘন কুয়াশা জড়ো হয়ে ঘোরাফেরা করলে, মনে হতে থাকে, ওগুলো অশরীরী; ওরা এখন নেই, পালিয়ে গেছে অনেক আগেই। আজকের পিটি মাফ, রোল কল করে, একটু হাঁটিয়েই ছুটি। আজ পরীক্ষা। আহা! প্রতিদিন পরীক্ষা হয় না কেন? সোয়া ৬টায় রুমে ফিরেই ঘুম। এই শীতের ভোরে পরীক্ষার ভাবনায় ঘুম নষ্ট করে কোন আহাম্মক! পুরো দেড় ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেওয়া যাবে! আহা! পিএটিসি, তোমায় ভালোবাসি!

পরীক্ষা নিয়ে আমার নিজস্ব প্রিন্সিপল আছে। পরীক্ষার ভাবনা সবারই সহজাত। তাই পরীক্ষা নিয়ে ভাবতেই হবে! কখন ভাবব? যে-মুহূর্তে পরীক্ষা দিচ্ছি, ঠিক সে মুহূর্তে। এর আগেও নয়, পরেও নয়। যদি টুকটাক পড়ে-টড়ে যাবার ইচ্ছে থাকে, তবে কখনো কখনো আগেও ভাবা যেতে পারে। কিন্তু, পরে? নৈব চ নৈব চ! পরীক্ষা শেষ, ওটার সমস্ত ভাবনাও শেষ। কিছুতেই ওটাকে নিয়ে একমুহূর্তও ‘ভাবা যাবে’ (পড়ুন, ‘সময় নষ্ট করা’) না। অনেককেই দেখি, পরীক্ষাশেষে অন্যদের সাথে উত্তর মিলিয়ে নেন। এই কাজটি আমি কখনোই করি না। আমার এখনও মনে আছে, ক্লাস নাইন-টেনে পড়ার সময় পরীক্ষাশেষে অবজেক্টিভের আনসার ক্রসচেক করতাম না। যা গেছে, গেছে। ওটা নিয়ে ভাবলে পরের পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। পরীক্ষার পর উত্তর মেলানোর চাইতে দু-টাকার বাদাম কিনে চিবোনোও ভালো। আজকের পরীক্ষার হলে এসেছি একেবারেই পুঁথিগত বিদ্যাবিহীন মস্তিষ্ক সাথে নিয়ে। মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্টের পরীক্ষা। প্রিপারেশন নেই, কিছু হারানোর ভয়ও নেই, তাই কনফিডেন্স একেবারে ষোলোআনা! প্রশ্ন হাতে পাবো, সামনে খাতা-কলম আছে, এক ঘণ্টা লিখতে হবে, সাদা খাতা ভরিয়ে দিতে হবে। এ-ই তো! এ আর এমন কী?

ঠিক সাড়ে ৮টায় পরীক্ষা শুরু হলো। পড়ে আসিনি, অতএব কোনো প্রশ্নই আমার আনকমন নয়। আমার ডিকশনারিতে ‘পরীক্ষায় আনকমন’ বলে কোনো কিছু নেই। পরীক্ষায় শুধু ৩টি জিনিস আছে: পাশ, ভালোভাবে পাশ আর ফেইল। পরীক্ষায় প্রশ্ন আনকমন এলে কী করতে হয়? লিখতে হয়। সিম্পল! উত্তর জানা না থাকলে বানিয়ে বানিয়ে লিখতে হয়। বানাতে না পারলে কল্পনা করে লিখতে হয়। কল্পনাশক্তিও কাজ না করলে? জোর করে কল্পনা করে লিখতে হয়। যে করেই হোক, লিখে দিয়ে আসতে হবে! আমি যে লিখছি না, সেটা কোনো সমস্যা না। আমার আশেপাশের লোকজন যে লিখছে, সেটাই একমাত্র সমস্যা। পরীক্ষার হলে দুটো অপশন: হয় আশেপাশের লোকজনকে ভয়-টয় দেখিয়ে থামিয়ে দিন, নতুবা লিখুন। পরীক্ষার হলে আনকমন প্রশ্নের আনসার করার শক্তি ভূতে জোগায়! আজকের পরীক্ষায় প্রথম ২০ মিনিট গেল প্রথম পেইজেই! কেন? এক মোটকু আমাকে একজাম দিতে দেয়নি। Terminator 2: Judgment Day যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের সেইরকম অ্যাকশনে বলা সেইরকম বিখ্যাত উক্তিটি: Hasta la vista, baby! মানে, “See you later. Goodbye!” যাঁরা মুভিটি স্প্যানিশ ভার্সনে দেখেছেন, তাঁরা শুনেছেন: "Sayonara, baby!"

এই কথাটি এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, পরবর্তীতে ‘ম্যায় হু না’-সহ আরও অনেক মুভিতেই ব্যবহার করা হয়েছিল। টারমিনেটর সিরিজের প্রথমটি ‘The Terminator-এ আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার লিফট থেকে বেরুনোর সময়ে সারা আর জন কনরকে বলছিল, "I’ll be back." এই লাইনটিই পরবর্তীতে অসংখ্য জায়গায় ঘুরেফিরে এসেছে। কথাটায় কী-একটা যেন শক্তি আছে! পুরোনো সেসব কিছু ফিরে ফিরে আসে: ভালোকিছু, মন্দকিছু। আজও এল। কে এল? আমার কিশোরবেলার আদনান-আশা। সেই কবে গুডবাই বলে চলে গিয়েছিল ফিরে আসবে বলে। এসেছিস, ভালো কথা, আয়। তাই বলে এই সময়ে? লেখা শুরু করব, কোত্থেকে জানি মাথায় এসে বাজতে থাকল, কাভি তো নজর মিলাও...এদিকে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়কে বন্যাপরবর্তী অবস্থা নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত জরুরি সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে কার্যবিবরণী লিখতে হচ্ছে, আর চোখের সামনে ভাসছে গানটির ক্যাটস-আইড মেয়েটি। মহাযন্ত্রণাদায়ক! মাথা থেকে এই মধুর আপদ দূর করতে পুরো ২০ মিনিট লেগেছে।

পরীক্ষার পর আমার একমাত্র কাজ: শিটের গাদা থেকে ওই পরীক্ষার শিটগুলো বের করে সেগুলোকে মহানন্দে দুমড়ে-মুচড়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া। এতে আমি এক ধরনের শান্তি অনুভব করি। যাকে প্রশ্রয় দিতে পারব না, তাকে আশ্রয় না দিতে হবার শান্তি। আমি পাখির মতো করে বাঁচি। যা-কিছু প্রয়োজন নেই, তা পেছনে ছেড়েছুড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। যা আমার ভালো লাগে না, তা আমি চোখের সামনে রাখিও না। তবে ওই শিটগুলোকে পরীক্ষার আগেই ছুড়ে ফেলে দিলে কী হয়? উত্তর একটাই: জানি না। প্রকৃতি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পছন্দ করে না। আজকেরটা-সহ দুটো পরীক্ষা এভাবে করেই দিলাম, এবং ভালোই দিলাম। ভালো মানে, ৯৯ পাবার ভালো না, ৩৩ পাবার ভালো। ফেইল করা অপেক্ষা অসম্মানজনকভাবে পাশ করা উত্তম। যার ভাতেরই গ্যারান্টি নাই, সে পোলাও দিয়ে করবেটা কী? “এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না। মন উড়েছে উড়ুক-না রে...” ভাবছি, এখনই যদি ২৩টা মডিউলের পরীক্ষা পরপর নিয়ে নিত, তবে বেশ হতো। এখনও পড়ব না, পরেও না। পরীক্ষা এখন দিলে যা, পরে দিলেও তা। আর যা-ই হোক, এটা অন্তত নিশ্চিত, পরে দেবার চাইতে এখন দিলে পাশ করতে বরং সুবিধেই হতো।

প্রথম ক্লাসটা কম্পিউটার বেইসিকসের উপর। আমরা কম্পিউটারের অআকখ কতটুকু জানি, তা যাচাই করতে স্যার জিজ্ঞেস করলেন, “১ গিগাবাইটে কত মেগাবাইট?” উত্তর এল, “প্রায় ১০০০ মেগাবাইট, স্যার।” উত্তর শুনে আমি মনে মনে ভাবলাম, “ভাগ্যিস, স্যার ওঁকে ওঁর স্ত্রীর সংখ্যা কত, সেটি জিজ্ঞেস করেননি।”

আজকের ক্লাসে পুরোনো দিনের কিছু কথা মনে পড়ে গেল। চুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হবার আগে আমি কখনোই কম্পিউটারে হাত দিয়েও দেখিনি। আমি এইচএসসি পাস করি ২০০২ সালে। সে সময়টাতে কম্পিউটার অতটা দেখা যেত না। যদি শুনতাম, কারও বাসায় কম্পিউটার আছে, আমরা ধরেই নিতাম ওরা অনেক ‘বড়োলোক’। চুয়েটে ভর্তি হলাম। আমরা কম্পিউটার বেইসিকস পড়েছিলাম পিটার নরটনের Introduction to Computers থেকে। অনেক সহজ করে লেখা চমৎকার একটা বই।

ইন্টার পাশ করার পর আমার ইচ্ছে ছিল, সাহিত্যে পড়ব। চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় ২য় হয়েছিলাম। বাবা-মা আর সাহিত্যে পড়তে দেয়নি। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। জীবনে আর কখনও ফার্স্ট-সেকেন্ড হবার অপরাধে অতটা কষ্ট পাইনি। আমি সিএসই’কে কখনোই মন থেকে নিতে পারিনি। পুরো অনার্স কাটিয়েছি একলাইনও কোডিং না করে, কপি-পেস্ট করে করে। সিএসই থেকে পাশ করে সার্টিফিকেট ছাড়া কোনোদিনও আর কিছুই নিইনি। চুয়েটে প্রথম দিনের ল্যাবে আমাদের বলা হয়েছিল, “তোমাদের প্রত্যেকের সামনে একটা করে কম্পিউটার আছে। তোমরা ওটাকে যা ইচ্ছে, তা-ই করতে পার। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ তোমার সামনের কম্পিউটারটিকে নষ্ট করতে পার, তবে তোমাকে একটা নতুন কম্পিউটার প্রাইজ হিসেবে দেওয়া হবে। তবে তিনটি কাজ করা যাবে না। কম্পিউটারটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া যাবে না, কম্পিউটারটিকে জলে ছুড়ে দেওয়া যাবে না, কম্পিউটারটি তুলে আছাড় মারা যাবে না।” আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আগেও কম্পিউটার ব্যবহার করেছিল। ওরা ইচ্ছেমতো মাউস আর কিবোর্ড চাপতে শুরু করল। সেদিন আমি ভয়ে মাউস-কিবোর্ডে ঠিকমতো হাতই দিইনি। যদি কিছু নষ্ট হয়ে যায়! অত দামি একটা জিনিস!

ভর্তি হবার কিছুদিন পরেই বাবা কম্পিউটার কিনে দেন। ততদিনে মাউসে লেফটক্লিক, রাইটক্লিক, কিবোর্ডে খুব ভালো করে খুঁজে খুঁজে লেটার বের করে প্রেস করা, স্টার্ট বাটনে ক্লিক করে প্রোগ্রামগুলো দেখা, মাই কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন ড্রাইভে যাওয়া, গান শোনা, মুভি দেখা এসব করতে শিখে গেছি। কম্পিউটার কিনে দেবার প্রথম দিনেই ওটাকে বাসায় নিয়ে আসার পর থেকে গুঁতোগুঁতি করতে করতে হাতব্যথা করে ফেলেছিলাম। সারারাত ঘুমাইনি। ওরা হার্ডডিস্কে অনেক ভিডিও সং দিয়ে দিয়েছিল। ওগুলো শুনতে শুনতে সারারাত কেটে গিয়েছিল। ওইসময় খুব সিলি সিলি ব্যাপারেও অত ভারি কেসিংটা নিয়ে ছুটতাম সালতা কম্পিউটার্সে। এই যেমন, উইন্ডোস মিডিয়া প্লেয়ার হারিয়ে ফেলেছি, ডেস্কটপের ব্যাকগ্রাউন্ড পিকচার বদলে গেছে কেন, কিবোর্ডে হ্যাশ সাইনটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, এরকম আরও হাস্যকর সব সমস্যা। তখন সিএনজি ট্যাক্সি ছিল না, রিকশার দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে হলুদ রঙের ট্যাক্সি করে যেতাম (তখন ভাবতাম, রিকশায় গেলে রিকশার জার্কিংয়ে পিসি নষ্ট হয়ে যাবে।) এখন এসব কথা মনে পড়লে খুব হাসি পায়।

আজকের ক্লাসে এসব মনে ভাসছিল। আমাদের ক্লাস অ্যাটেন্ডেন্ট কেসিংটা খুলে মাদারবোর্ডের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট দেখাতে ওটা নিয়ে আমাদের টেবিলে টেবিলে ঘুরছিলেন। ওই কেসিংটাকে দেখাচ্ছিল বাদামের ঝুড়ির মতো। ইসস! ওখানে বাদাম থাকলে দারুণ হতো! আজকের ক্লাসে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেন, “প্রসেসর, মাদারবোর্ড অরিজিনাল কি না চিনব কীভাবে?” স্যার বললেন, “এসব জিনিস সাধারণত নকল হয় না।” স্যারের উত্তর শুনে ফিলিপাইনের এক কবি-গায়ক Lourd de Veyra’র একটা কথা মনে পড়ে গেল: "God created the world, and the rest is made in China." ইনটেল কোম্পানি প্রসেসর বানানো ভুলে গেলেও যেতে পারে, কিন্তু চায়না ইনটেলের নকল প্রসেসর বানানো কখনোই ভুলবে না।

আজকের ক্লাসশেষে কোর্স কো-অর্ডিনেটর স্যার জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের মধ্যে কার কার ইকনমিক্সের উপর এক্সট্রা ক্লাস লাগবে?” কয়েক জন হাত তুললেন, সমস্যা সেটি নয়। সমস্যা হলো, ওঁদের জ্ঞান আহরণের সময় আমাদের সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে। ও মোর জ্বালা! এমনিতে ক্লাসের জ্বালায় বাঁচি না, তার উপরে এক্সট্রা ক্লাস। ইচ্ছে হলো, প্রয়োজনে নিজে ইকনমিক্স পড়ে শিখে নিয়ে ওদেরকে শিখিয়ে দিই, তবুও আর ক্লাস না। মাফ চাই, সাথে দোয়াও চাই। ক্লাসরুম লার্নিং বলে কিছু আছে নাকি? “সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।” চৌধুরী সাহেব, আপনি পিএটিসি’তে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স করেননি, তাই ওরকম একটা ‘ডাহা মিথ্যা’ কথা লিখতে পেরেছিলেন। আমি এখন পর্যন্ত দুই জায়গায় তেমন কিছু শিখতে পারিনি। এক। ক্লাসরুমে। দুই। গ্রুপস্টাডিতে।

পরের ক্লাসটা অডিটোরিয়ামে। সিন্ডিকেট ভবন থেকে বের হয়ে অডিটোরিয়ামের দিকে হেলেদুলে যাচ্ছি। আমি হাঁটি আস্তেধীরে। একটু কেয়ারফ্রি স্টাইলে। নির্ভার মানুষের মতো ভাবনাহীন হেঁটে চলা। আমি হুড়মুড় করে কাজ করতে পারি না। রেসের ঘোড়ার মতো ছুটতে পারি না, কিংবা চাইও না। এতে করে দুটো সমস্যায় পড়তে হয়। এক। অডিটোরিয়ামে সবাই আগে আগে এসে পেছনের সারি থেকে শুরু করে সিটগুলো দখল করে ফেলে। সমস্যা সেটা না। সমস্যা হলো, অনেকেই ওঁর ব্যাগ দিয়ে, খাতা দিয়ে পাশের দু-একটা সিট দখল করে রাখেন। একটা কথা মনে পড়ে গেল। চুয়েট থেকে টাউনে বাসে করে ফেরার সময় পোলাপান খাতা দিয়ে, বই দিয়ে, রুমাল দিয়ে, এমনকী বলপেনের ঢাকনা দিয়ে ফ্রেন্ডদের জন্য জায়গা রেখে দিত। দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যেত। কিন্তু কিছু বলতাম না। ঝামেলা করা এবং না করা, দুটোই অভ্যাসের ব্যাপার। পিএটিসি’তে অডিটোরিয়ামে আমি বেচারা পরে আসার শাস্তি পাই আগে বসে। সামনের সারিতে বসলে ঘুমোনো যায় না ঠিকমতো। দুই। অনেকসময় করিডোরে কিংবা সিঁড়িতে স্যারদের সাথে দেখা হয়ে যায়। এত রিলাক্স মুডে হাঁটি যে, মাঝে মাঝে ওঁদের খেয়ালই করতে পারি না। হঠাৎ করে সামনে পড়ে গেলে ঢোঁক গিলে সালাম দেবার সময় নিজেকে জেরি জেরি মনে হয়।

ব্যাপার না! আমার এই টম অ্যান্ড জেরি খেলাতেই আনন্দ! আমি এভাবেই থাকব। সবাই দৌড়োক। আমি দৌড়োবো না। আমার এই হেরে যাওয়াতেই আনন্দ। জেতার দিব্যি দিয়ে তো কেউ আমাকে এই দুনিয়াতে পাঠায়নি। সবাইকেই জিততে হবে কেন? হাসিমুখে জিততে তো সবাই-ই পারে। হাসিমুখে হারতে পারে কয়জন? I just don’t have to care. It’s my own style. I love my style! আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে এবং কারও প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে বেঁচে থাকার সুখ পেতে চাই। পৃথিবীটা আরও সুন্দর হতো যদি এই জেতাজিতি না থাকত।

আজ অডিটোরিয়ামে আসতে আসতে এক কাহিনি শুনলাম। এক ছেলে এক মেয়েকে পছন্দ করেছেন। মেয়েকে রাজি করানোর দায়িত্ব দিয়েছেন ওঁর এক বন্ধুকে। বন্ধু বিবাহিত, অতএব নিরাপদ। কাহিনি হলো, বন্ধু সে মেয়েকে পটানোর মহান কাজটি করেছেন ঠিকই, তবে নিজের জন্য। চুয়েটের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমাদের এক বন্ধু আমাদেরই আরেক বন্ধুকে দায়িত্ব দিল একটা মেয়েকে ওর জন্য প্রপোজ করার। ওই বন্ধু প্রপোজ করতে গিয়ে ভেবে দেখল, প্রপোজ যদি করতেই হয়, তবে তো নিজের জন্য করাটাই বেটার। সে তা-ই করল। এর ফলাফল কী দাঁড়িয়েছিল? ওই দুই বন্ধু চিরদিনের শত্রু হয়ে গেল। আর মেয়েটি বর্তমানে দ্বিতীয় বন্ধুটির একমাত্র ছেলের মা। অবশ্য প্রথম বন্ধুটিও এখন বিবাহিত এবং ২ সন্তানের জনক। তবে ওদের মধ্যে এখনও কথা বন্ধ। দেখা যাক, আমাদের এখানকার জল কতদূর গড়ায়।

গুরু নচিকেতার গানে শুনেছিলাম, জনতা জনার্দন শুনে হবেন বড় প্রীত, পুরুষমানুষ দু-প্রকার, জীবিত বিবাহিত। পুরুষমানুষ বেঁচে থাকে বিয়ে করার আগে গো...এখন তো দেখছি উলটো ব্যাপার! গানটাকে রিমেক করতে হবে: জনতা জনার্দন শুনে হবেন বড় প্রীত পুরুষমানুষ দু-প্রকার, জীবিত অবিবাহিত। পুরুষমানুষ বেঁচে ওঠে বিয়ে করার পরে গো…

আজ Integrity Concepts’য়ের উপরে যিনি ক্লাস নিতে এলেন, তিনি মূলত একজন বিরামচিহ্নবিহীন মানুষ, মানে উনি কথা বলার সময় দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলন কোনো কিছুই ব্যবহার করেন না। খুব খেয়াল করে না শুনলে ওঁর কথার মর্মোদ্ধার করা সহজ নয়। এমন বসের আন্ডারে কাজ করাও বড্ড মুশকিলের। বসের কথা বুঝতেই না পারলে কথা শুনব কীভাবে? আর বসকে তো বার বার ‘পার্ডন’ বলা যায় না। স্যার কথা বলার সময় গালের ভেতরে জমে-থাকা কথাগুলো অতিদ্রুত বাতাস হয়ে বেরিয়ে আসে। একটা বাক্য বলার সময় যত দ্রুত সম্ভব ফুল স্টপের দিকে চলে যান। মাঝখানের শব্দগুলো হারিয়ে যায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে। হুমায়ূন আহমেদের ‘হোটেল গ্রেভার ইন’-এ পড়েছিলাম, “আমেরিকানদের ইংরেজি বোঝা যায়। ব্রিটিশদেরটা বোঝা যায় না। ব্রিটিশরা অর্ধেক কথা বলে, অর্ধেক পেটে রেখে দেয়। যা বলে, তা-ও বলার আগে মুখে খানিকক্ষণ রেখে গার্গল করে বলে আমার ধারণা।” আজকের মহোদয়ও কুলকুচা করে করে ব্রিটিশ স্টাইলে মুখ থেকে শব্দ ছুড়ে ছুড়ে মারছেন।

আজকের এই ক্লাসের শিরোনাম দেখেই আমার রলিংসের ‘A Mother in Mannville’-এর জেরির কথা মনে পড়ে গেল। জেরির sense of integrity নিয়ে কথা বলেও ২ ঘণ্টার একটা সেশন দিব্যি টেনে নেওয়া যায়। His name was Jerry; he had been at the orphanage since he was four. I could picture him at four, with the same grave gray-blue eyes and the same – independence? No, the word that comes to me is “integrity”. It is bedded on courage, but it is more than brave. It is honest, but it is more than honesty. স্যার ওদিকে গেলেন না। পড়াতে লাগলেন। আজকের ক্লাসের মতো এতটা বিরক্তিকর ক্লাস আমাদের আর হয়েছে বলে মনে পড়ে না।

একজন আমাকে বললেন, “দাদা, আপনার ক্লাসে ঘুমোনোর স্টাইলটা দেখার মতো। সুকান্ত-স্টাইলে গালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। একটুও নাক ডাকেন না।” মুখে “আরে কী যে বলেন!” বললেও মনে মনে খুশি হয়ে একটু পরেই যখন ঘুমিয়ে পড়লাম, ঠিক তখনই ধরাটা খেলাম। আমার নেমব্যাজে নামের বানানটা লেখা এভাবে: SUSHANTA. উচ্চারণ করতে সমস্যার কারণে হোক কিংবা অন্য যে কারণেই হোক, কোনো স্যার সাধারণত ক্লাসে আমার নাম ধরে ডাকেন না। কিন্তু আজকের উনি নাম ধরে ডেকে জাগিয়ে দিলেন আর কিছু উপদেশও ঝাড়লেন। পিএটিসি’তে এই প্রথম বার ঘুমোতে গিয়ে ধরা খেলাম। এরপর শুরু হলো চোখের সামনে রাইফেল ধরে কাউকে ঘুমোতে না দেবার যন্ত্রণা। আমি নিজেও দীর্ঘকাল ধরে অনেক জায়গায় লেকচার দিয়েছি। আমার ধারণা, কোনো স্পিকারের ক্লাসে যখন শ্রোতারা ঘুমিয়ে পড়েন, এর কিছু দায় কিন্তু ওই স্পিকারের ঘাড়েও বর্তায়। হয়, উনি যা পড়াচ্ছেন, সেটি নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়, কিংবা উনি কোনো একটা প্রয়োজনীয় জিনিসকে খুবই বিরক্তিকরভাবে পড়াচ্ছেন। যে-শিক্ষককে স্টুডেন্টদের চোখের সামনে বন্দুক ধরে তাদেরকে জাগিয়ে রাখতে হয়, ওঁর কথা ভাবলেই আমার কেমন জানি অসহায় অসহায় লাগে। আমি মনে করি, “আপনি আমার বস, তার মানে কিছুতেই এই নয় যে, আমি আপনার কাছ থেকে শিখতে বাধ্য।”

আজকের এই স্যারকে স্টুডেন্টরা সবচাইতে কম নাম্বার দিয়েছে। আমি সাধারণত সব স্যারকেই ভালো গ্রেড দিই। এমনিতে ক্লাসে মনোযোগী থাকি না, তার উপরে কম নাম্বার দেয়াটা আমার কাছে ঔদ্ধত্য বলে মনে হয়। হয়তো উনি ভালো পড়িয়েছেন, আমি খেয়াল করতে পারিনি বলে বুঝতে পারিনি। আজকের ক্লাসে আমাকে জাগিয়ে দিয়ে কথা শোনানোর পর জেদ চেপে গিয়েছিল। রাগ করে পরের দেড় ঘণ্টা আর ঘুমাইনি। দেখি, স্যার কী পড়ান! আমি সাধারণত খুব সহজেই ভালো লাগাতে পারলেও আজ অনেক চেষ্টা করেও স্যারের লেকচার ভালো লাগাতে পারিনি। আজকের স্যারকে আমি আমার নিজস্ব নিয়মের বাইরে গিয়ে অ্যাভারেজ কিংবা অ্যাভাব অ্যাভারেজ মার্কস দিয়েছি। দিয়ে ভেবেছি, কম হয় গেল। পরে আশেপাশের সবার সাথে কথা বলে জানলাম, আমিই স্যারকে সবচাইতে ভালো নাম্বার দিয়েছি। গত এক মাসে আজকের এই দুটো ক্লাসে ঘড়ি সবচাইতে স্লো চলেছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, নিজে উঠে গিয়ে ঘড়িটাকে ১০ মিনিট ফাস্ট করে দিই।

আজ স্যারের কিছু কথা শুনে আমার এক ছোটোভাইয়ের একটা কষ্টের অভিজ্ঞতা মনে পড়ে গেল। সে ঘটনাটি এবং সে ঘটনা নিয়ে আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু ভাবনা শেয়ার করছি।

একজন সরকারি কর্মকর্তা সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডিউটি করার পর খুব অসুস্থবোধ করছিলেন। উনি অফিস থেকে বেরিয়ে যাবেন, এমন সময়ে ওঁর বসের ফোন আসল। “তুমি কোথায়?” “স্যার, আমি বাসায় ফিরছি।” “যেয়ো না, থাকো। ১২টার পরে বাসায় যেয়ো।” এটা বলে উনি এমন একটা কাজ ধরিয়ে দিলেন, যে-কাজটি পরের দিন অফিসে এসে করলেও চলবে। “স্যার, আমি কালকে আর্লি আওয়ারে এসেই কাজটা কমপ্লিট করে দিব। আমি প্রায় ১৩ ঘণ্টা ধরে অফিসে। শরীরটাও ভালো লাগছে না। বাসায় মা অসুস্থ। স্যার, আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে।” প্রচণ্ড ধমকের সুরে উত্তর এল, “তুমি গভর্নমেন্ট অফিসার মানে টোয়েন্টিফোর-আওয়ার গভর্নমেন্ট অফিসার। তোমাকে প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টাই অফিস করতে হবে। আমি তো সেদিন ৭০ ঘণ্টা ডিউটি করেছি। এই সময়ে একটা বারের জন্যও টানা ৩০ মিনিটের বেশি ঘুমোতে পারিনি। আমি পারলে তুমি পারবে না কেন?” ওই কর্মকর্তা সেদিন ২টার আগে বাসায় ফিরতে পারলেন না। ওঁর মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পাশের বাসার লোকজন এসে ওঁর শুশ্রূষা করেছিল। আর ওঁর নিজের কথা বলাই বাহুল্য। প্রচণ্ড শারীরিক আর মানসিক কষ্টে মনখারাপ করে অফিসে কাজ করে যাচ্ছিলেন।

ওপরের চিত্রটি অনেক কর্মকর্তার জীবনের সাধারণ চিত্র। “আমি পারলে তুমি পারবে না কেন?” এর চাইতে ফালতু প্রশ্ন আর হয় না। সবাই তো আর সব কিছু পারে না। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোরার্‌জী দেশাই প্রতিদিন ৮ আউন্স পরিমাণ নিজের মূত্রপান করতেন। আমি যদি আপনাকে বলি, স্যার, খান না দুয়েক গ্লাস নিজের প্রস্রাব? কী হবে? খেয়ে ফেলেন। কী আছে আর জীবনে? খান, স্যার, পারবেন। ভারতের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি পারলে আপনি পারবেন না কেন?

আমি মনে করি, সেই ব্যক্তিই সম্মানিত, যাঁকে ওঁর অবস্থানগত ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যের কাছ থেকে জোর করে সম্মান আদায় করতে হয় না। (অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দেখি, জুনিয়ররা তাঁদের ফেইসবুক পোস্টে ঠিকভাবে রিঅ্যাক্ট-কমেন্ট না দিলে মনে মনে ভালোই বিরক্ত হন। তাঁরা ওটা ডিজার্ভ না করলেও রীতিমতো ডিজায়ার করেন! আর কিছু নয়, স্রেফ পদাধিকারবলেই যেন তাঁদের কিছু অ্যাটেনশন প্রাপ্য! অবসরের আগে তাঁদের জীবন কাটে লাইক ছিনতাই করে, আর অবসরের পর কাটে লাইক ভিক্ষা করে। প্যাথেটিক!) যাঁরা ওরকম ভয় দেখিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেন, তাঁদেরকে বলছি, চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে দেখুনই না, আপনাকে রাস্তাঘাটে দেখলে রাস্তার কুত্তাটাও গোনে কি না! এসব লোক রিটায়ারমেন্টে যাবার পর বাসার কাজের বুয়াও জল চাইলে ঝাড়ি মারে। Every man is paid back in his own coin. বেঁচে থাকতে যা করছেন, বেঁচে থাকতেই তার ফল অবশ্যই কড়ায়-গণ্ডায় ফেরত পাবেন।

স্যার, আমরা তো আর কুলিমজুর না যে, চব্বিশ ঘণ্টাই খেটে একদিনেই দেশোদ্ধার করে ফেলব। আমরা কাজ করি মস্তিস্ক দিয়ে। মেধাশ্রমিকদের মেধার পরিচর্যা করার জন্য বিশ্রামের দরকার হয়। ছোটোবেলায় ‘এককথায় প্রকাশ’-এ পড়েছিলাম, বল দেয় যে=বলদ। ৭০ ঘণ্টা ডিউটি করে যে-অফিসার, তাঁকে আমি অফিসার না বলে বলদই বলব। তাঁকে দিয়ে দেশের কী উপকার হবে, সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। ওঁর হয়তো ঘরবাড়ি নেই, পারিবারিক বন্ধন নেই, কিন্তু অন্যদের তো আছে। ওঁর সারাদিন অফিস করতেই ভালো লাগে, উনি ওভাবে জীবনযাপনে অভ্যস্ত, কিন্তু সবাইকেই ওভাবে অভ্যস্ত হতে হবে কেন? উনি একাই দেশ উদ্ধার করে ফেলছেন, বাকিরা কি তাহলে বসে বসে ঘাস চিবোচ্ছে? সবার কাজ করার স্টাইল তো আর একরকম নয়। আপনাকেই ফলো করতে হবে কেন? আপনি এমন কোন বিশাল অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব? সবাই-ই কি আর ভিড়ের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে নাকি? সবার তো আর সব জায়গাতেই একেবারে সেরাটা হতে ইচ্ছে করে না। Sir, you stand alone among the crowd? OK, Sir, let me belong to the crowd, then. You believe, Life for Job. Well Sir, I've my own principle too. It’s Job for Life, and unfortunately, I love my principle, Sir!

আমি দেখেছি, সাধারণত এই ধরনের মানুষের পারিবারিক জীবন বলতে তেমন কিছু থাকে না। আমেরিকার ইতিহাসে এমন কোনো প্রেসিডেন্ট নেই, যিনি ডিভোর্সি। আমার ধারণা, আগামী ৫০ বছরেও এমন কারও প্রেসিডেন্ট হবার সম্ভাবনা নেই, যিনি ডিভোর্সি। যে-ব্যক্তি নিজের পরিবার চালাতে পারেন না, উনি দেশ চালাবেন কী করে? একইভাবে, যে-ব্যক্তির পারিবারিক বন্ধনের ঠিক নেই, সে ব্যক্তি দেশের সেবা করবেন কীভাবে? দেশ তো অনেকগুলো পরিবারেরই সমষ্টি।

আসুন, অন্য আরেকটা কুৎসিত ব্যাপার নিয়ে ভাবা যাক। ওরকম ৬০-৭০ ঘণ্টা ‘বল দেন’ টাইপের ওয়ার্কঅ্যাহোলিক অফিসার আছেন শতকরা কত ভাগ? বড়োজোর ৫%! এদের মধ্যে ৪% আছেন, যাঁরা বসকে তেলবাজিও ঠিকমতো করতে পারেন, আবার কাজও করতে পারেন। বাকি ১% শুধু কাজটিই করে যান, ওসব নোংরা তেলবাজির ধার ধারেন না। সব বস তো আর ভালো না। কিছু কিছু বস আছেন, যাঁরা ভীষণ ভিন্ডিক্টিভ টাইপের। ওঁরা যতটা না কাজ চান, তার চাইতে বেশি প্রচার চান, তেল খেতে চান। এই ভিন্ডিক্টিভ বসরা ওই ১% অফিসারকে ট্র্যাপে ফেলে দেবার চেষ্টা করতে থাকেন। প্রচণ্ড আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ওই ১% অফিসাররা সাধারণত ‘প্রাণ গেলেও মান দেবো না’ নীতিতে বিশ্বাসী। ওরা কখনোই তেলবাজি করতে পারে না। ফলে ওদের ভালো কাজের কোনো মূল্যায়নই হয় না। সবচাইতে বিশ্রী ব্যাপারটি হলো, এই ১% অফিসারকে নানা অজুহাতে পানিশ করে বাকি ৪%’কে প্রমোট করা হয় এবং সবার চোখে ধুলো দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি, অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি এসব সুন্দর সুন্দর পাবলিক-ভোলানো বাজওয়ার্ডের ধুয়ো তোলা হয়।

এসব নিয়ে লিখতে আর ইচ্ছে করছে না। এই লেখাটির মাঝখানে প্রাসঙ্গিকভাবে হুমায়ূন আহমেদের ‘হোটেল গ্রেভার ইন’-এর কিছু লাইন এসেছে। ওই ভ্রমণকাহিনি থেকেই কিছু কথা দিয়ে আজকের ডায়েরি শেষ করছি:

অল্প কিছুদিন আমাদের আয়ু। এই অল্পদিনের জন্যে আমাদের কত আয়োজন—পাশ, ডিগ্রি, চাকরি, প্রমোশন, টাকাপয়সা, ঘরবাড়ি। কোনো মানে হয়? কোনোই মানে হয় না।

লেখকের ‘বৃষ্টি ও মেঘমালা’ পড়েছেন তো? যে প্রিয় মানুষগুলোর জন্য নিজের জীবনটাকে ক্যারিয়ারের কাছে মুখ থুবড়ে পড়তে দিয়ে কিছু সময়ের জন্য থেমে যেতে দিলেন, সে সময়টা পেরুলে পরে জীবনটাকে খুঁজে পাবেন তো? আবার হারিয়ে-টারিয়ে ফেলবেন না তো?
Content Protection by DMCA.com