চাকরি পাবার পর

 চাকরিটা অবশেষে পেলাম। আজ কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছে, নিজেকেই!
  
 অভিনন্দন! তুমি এখন বড়ো হয়ে গেছ! হ্যাঁ, অফিশিয়ালি!
  
 এখন থেকে তোমার কষ্ট নেবার সময়ের শুরু, কষ্ট দেবার সময়টা আজ শেষ।
  
 কোথাও গেলে, খরচ নিয়ে আর ভাবতে হবে না। কোথাও খেতে বসলে বিলটা এলে অন্য দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হবে না, কিংবা মোবাইলটা কানে ধরে রেখে মিথ্যে মিথ্যে কথা বলার অভিনয়ে আর পালাতে হবে না। বাসার খরচের অনেকটা ভার তুমিও নিতে পারবে এখন থেকে।
  
 পয়সা বাঁচাতে শেখো। যা লাগবে না, তা কিনো না।...এইসব আর কেউ তোমাকে বলবে না। তবু তুমি ঠিকই বুঝে যাবে, এইসবের অনেক গভীর অর্থ আছে। বেতনের টাকা কত দ্রুত ফুরিয়ে যায়, এখন থেকে তুমি নিজেই টের পাবে। বাবার উপর অভিমানটা আর থাকবে না।
  
 মায়ের হাতে প্রথম মাসের বেতনটা তুলে দিয়ো। মা নিতে চাইবে না কিছুতেই, মাকে তখন এমন কিছু একটা কিনে দিয়ো, যা মায়ের খুব দরকার অনেক দিন ধরেই। খুঁজে দেখো, মায়ের কী দরকার। কখনও তো বোধ হয় খোঁজোনি, তাই না?
  
 মা অনেক খুশি হবে। মায়ের হাসি দেখে তখন মনে হবে, আর কিছু হোক না হোক, এই হাসিটার জন্য হলেও চাকরি একটা লাগেই!
  
 চাকরি পেয়ে গেছ যখন, বাবার কাছে এখন আর পয়সা চাইতে পারবে না। দেখবে, চাইতে খুব লজ্জা লাগবে। পয়সা চাইলে বাবা 'না' করবেন না, কিন্তু তোমার মধ্যে সংকোচ কাজ করবে। কীরকম জানি লাগবে তোমার! তুমি নিজেই জানো না, আজ তুমি সত্যিই বড়ো হয়ে গেছ!
  
 একটা দামি ফোন কেনার জন্য তুমি পয়সা জমাতে শুরু করে দেবে। ছোটো বোনের কিছু লাগলে তুমি নিজ থেকেই বলবে, বাবাকে বলার দরকার নেই, আমাকে বলিস কী লাগবে, আমি কিনে দেবো। তুমি নিজের কানকে বিশ্বাসই করতে পারবে না যে আজ তুমিও এমন বলতে পারো! দাঁড়ানোর জন্য শক্ত এক জোড়া পা তোমারও আছে। সত্যিই ভালো লাগবে।
  
 আজ তুমি বুঝতে পারবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কখনও জাতীয় ছুটি পড়লে লোকের মাথাটা কেন খারাপ হয়! প্রাপ্য ছুটির মানে যখন বাড়তি ছুটি নয়, তখন কী যে বিরক্ত লাগে, এখন তা নিজেই বুঝতে পারবে!
  
 এখন সকালে তোমাকে আর কাউকে ডেকে দিতে হবে না, মায়ের একটা কাজ এখন থেকে কমল। এখন তোমার আর অ্যালার্মও লাগে না। এখন তোমার দায়িত্ব তৈরি হয়েছে, এখন তুমি সময়ের দামটা বোঝো।
  
 হঠাৎ করেই, এই যে চাকরিটা পেলে, এখন একটু ভয় ভয় লাগবে, সুখ সুখ লাগবে, গর্ব গর্ব লাগবে; জীবনটাকেও নতুন নতুন লাগবে। সবারই এরকম হয়। চাকরি ব্যাপারটাই এমন অদ্ভুত!