আরও একটা দিন পেরোল, তুমি এলে না।
তোমরা আস না কখনও, তোমরা আসোওনি কখনও।
তোমরা মরীচিকা সেজে লুকোচুরি খেলতে ভালোবাস।
এ বসন্ত কেটে যাচ্ছে, পুরনো শীতার্ত রাতগুলো
আর কিছু দিন পর শেষ হয়ে যাবে।
তার পর আরও বসন্ত আসবে, তবু কেউ আসবে না।
তুমি আসবে না, জানি।
অবশ্য, আমি আর চাইছিও না তুমি আস।
আমি ক্লান্ত, আমি আজ চিরপরিচিত প্রতীক্ষার খিলটি এঁটে দিয়েছি।
কাউকে আসতে হবে না আর আমার কাছে। কেউ এসো না।
প্রতিদিন একটু একটু করে, একঘর একঘর করে
যে আশার, যে মায়ার জাল বুনেছিলাম...
ভেবেছিলাম, তুমি এলে তোমায় দেখাব
কতটা প্রহর প্রতীক্ষা করে আছি!
...আজ সেসব অর্থহীন।
চিঠিগুলো সব পুড়িয়ে ফেলেছি, সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ডায়েরিতে আর কোনও পাতা নেই, সব শূন্য।
আজ আমার রক্ত জমাট বেঁধেছে, এদিক ওদিক ছোটে না আর।
ভালোবাসার উষ্ণতায় সে কোথাও বয়ে যাবে না আর কোনও দিনই।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পেরোল তখন,
তবুও তো ছিলাম তোমার প্রতীক্ষায়। তুমি বোঝোনি।
আমি বুঝিনি আমি ভুল করছি।
একে নিষ্ঠা বলে না, একে ভালোবাসা বলে না।
এসব কেবলই গোঁয়ার্তুমি!
এবার সময় এসেছে ওসব ঝেড়ে-ছুড়ে মানুষ হবার।
ওসব জ্যান্ত আবেগের আদিখ্যেতা সব ধুয়ে মুছে বিদেয় করব আজ।
নিজেকে হয়তো দেবীর আসনেই বসিয়ে রেখেছিলাম আমি!
ভেবেছিলাম বোধহয়, একেবারে নির্ভেজাল, সরল, সৎ হয়ে থাকলেই তবে
তোমাদের ভালোবাসা পাওয়া যায়! এখন বুঝতে পারছি,
আত্ম-শৃঙ্খলে আর যা-ই হোক, ভালোবাসাটা ঠিক হয় না।
আমি কারও দ্বারে কড়া নাড়ব না আর।
আমি ভুল ছিলাম। ভ্রান্ত বোধে কেটেছে সময়। আজ জানি,
ভালোবাসা বলেই না একে। স্বেচ্ছায় দাসত্ববরণ ভালোবাসা তো নয়।
ওভাবে নিজেকে বিপন্ন করে, গায়ে গ্লানি মেখে
আমি কোন সে ভালোবাসা খুঁজেছি এত এত দিন!
এক নিজের কাছে ছাড়া অন্য সবার কাছে আজ থেকে আমি মৃত।
ওসব আবেগগুলোকে আমি গলাচেপে মেরে ফেলব!
তার পর মধুবিষ শরীরে মেখে নিজেই এক প্রহেলিকা হয়ে খেলায় মাতব।
ভালোবাসা নামের পাপড়ি আছে যত,
সেসব একটা একটা করে ছিড়েখুঁড়ে ফেলে দেবো।
ওদের শরীরের অচ্ছেদ্য জ্বালা হয়ে যাব,
দূর থেকে পুড়িয়ে শেষ করে ফেলব ঠিকই।
আমি কোনও নিয়ম মানি না,
আমি লোকালয় কি কোলাহল কিচ্ছু মানি না।
আমি আঁধারের গায়ে নক্ষত্র হয়ে নিজেকে পুড়িয়ে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকব ওই দূরের তারাদের মতো।
আমার ঘরে ভোর আসবে না আর কোনও দিনই।
...রাত-ভোর কিচ্ছু নেই আজ আমার জীবনে!
আমি নিজ-নিয়মের কারিগর, আমি ভালোবাসার রীতি।
আজ থেকে প্রতিমুহূর্তে নিজেকে পুড়িয়ে
ভালোবাসাকে নিজের চাইতেও বিপন্ন করে দেবো!
আমি কান্না ভুলে যাব, আমি হাসি ভুলে যাব,
আমি বেদনা ভুলে যাব... ভাবতে থাকব,
সুখ--সে আবার কীসের কী! স্বস্তিকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেবো একতুড়িতেই!
আমি এক প্রাচীন অশ্বত্থ হয়ে মাথা উঁচু করে
একজায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে নীরব দর্শক হব।
আমি নির্বোধ, আমি নির্বাক,
আমি নির্ভার, আমি সদাজাগ্রত এক আত্মা।
আমি পথের ধারে বসে-থাকা
চির-অপেক্ষমাণ প্রহরীদের ঘুম পাড়িয়ে দেবো।
আমি--ভালোবাসি ভালোবাসি করে...
মরে যাব, জ্বলে যাব, হলে হব পুড়ে ছাই--
তবু আর কখনও সুবাধ্য জল হব না।