নিঃশব্দ সন্ধের কোমলমৃদু হাওয়ায়
ঘ্রাণকে আটকে দেয় যে আর্দ্রতার শ্বাস,
তার গভীরে, মাটির ভেতরে সূর্যের ফুল
গোলাপ গাছের উষ্ণতা থেকে প্রাণ ধার করে নিচ্ছিল।
আমার মনে হল যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে,
আমার ভালোবাসা মাপতে গিয়ে পরিমাপের সব
পাল্লা ফেল মেরে বসে আছে! হায়, তোমাকে ভাবতে
এবং স্বচ্ছ চোখে দেখতে শিখে গিয়েছিলাম ততদিনে!
যে সুরের মোহনায় আমি প্রায়ই ভেসে যাই,
তা তোমারই চোখে বোনা যেন! যে ফুল ফোটে
আড়াল হয়ে, ঘাসের শরীরে আলো থেকে
নেমে আসে যে বসন্ত, কিংবা খুব নিভৃতে যে গোপন কথার
ঢেউ ওঠে এখনো, সেসবখানে আমি তোমার আওয়াজ শুনেছি।
যতো ফুটন্ত সুখ এবং কোমল স্পর্শ
আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে জীবনের স্রোতে,
ফুলের মধ্য দিয়ে, হাওয়ায়, জলে, সুরপ্রবাহে, সেখানেও
তোমায় শুনি, তোমায় দেখি, তোমার ছায়ায়
ক্লান্তি মুছি। মনে হয়, আজও ফিরেআসাই সহজ হয়তো!
প্রজাপতিটি বসন্তের খোঁপায় ঝুলে থাকে
এবং সবচাইতে সুন্দর ছবিটি এঁকে ফেলে
দুঃখী চোখের কিছু চিত্রকর, ওরা তোমার
হৃদয় বুঝে মেঘ এঁকে আকাশের মধ্য দিয়ে
যখন তোমার সব ব্যথা দূর করে দেয়,
তখন তুমি কী আশ্চর্য প্রেম বুকে ঘুরে বেড়াও,
দেখতে দারুণ লাগে! ওদের কথা আর কখনো মনেও আসে না!
এক ঈশ্বরপ্রেরিত পুরুষ এসেছিলেন, যিনি
বাগানে পড়েথাকা ফুলগুলিকে সবচাইতে বেশি পছন্দ করতেন।
তিনি জ্বলজ্বলে মশাল নিয়ে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন,
যেখান থেকে আলো উড়ে গিয়ে ধোঁয়ায় প্রস্ফুটিত হয়।
তিনি পৃথিবীর হৃদয়কে আহত হওয়া থেকে বাঁচাতে, এবং
ভূগর্ভস্থ জলের জন্য শেকড়ের আকাঙ্ক্ষা শুনতে চেয়েছিলেন।
তুমি কিংবা আমি, কেউই উনাকে চিনতে পারিনি।
একটি পাথর জলপ্রপাতের কলকল হাসি শুনে
জলের নিরর্থক যাত্রার কথা ভাবে।
সম্ভবত, সে নষ্টই হবে, ধ্বংস হবে---
তারার হৃদয় ছুরিকাহত করে সে পাথর
তূর্য বাজিয়ে সূর্যের সমান উঁচু পর্বতের উপরে দাঁড়িয়েছিল,
আমাদের হাসি কিংবা কান্নার শব্দ সে শুনতে পায়নি,
তাকে তার ছায়ায় একাকী ঘুরে নিজের পাপের খোঁজ করতে হবে,
এবং গোলাপকাঁটায় মোড়া সত্যিই যে কোনো শুকনো ফুল থাকে না,
সেটি মেনে নিতে হবে।……এইসব ভাবতে বড়ো আরাম লাগে।
তোমায় বলছি, শোনো। জানোই তো, সে পাথরের
হৃদয়টি দেখতেই কেবল নক্ষত্রের মতো, আর কিছু নয়। তুমি তার জন্যই
ঘুরে বেড়াচ্ছ, একটা সময় গেছে, যখন রথগুলি, বছরের পর বছর ধরে,
ঘোড়াগুলিকে সহ টানলে, গাইলে, তার হৃদয়ের সৌন্দর্য খোঁজার চেষ্টা করলে,
এবং আকুলমনে খুশি হয়ে নিজের কাছেই লুকিয়ে রইলে এই আশায় যে, অসতর্ক
এক মুহূর্তে তুমি তাকে উপহার হিসেবে পেয়ে যাবে। সে আগেই তোমার সমস্ত কিছুতে
দখল নিয়ে রেখেছিল, কখনো জানতেও পারোনি।
তারচে এসো, স্বপ্ন দেখার সময়টাতেও ভাবতে শিখি,
এবং বিশ্বাস করে ফেলি, আমরা ঝড়ের মধ্য দিয়েও হেঁটে যেতে পারব।
পাখিরা যে গানটা করে, শুনেই দেখো না, সেখানেই ভালোবাসা থাকে!
তখন ওরা যে জীবনটা যাপন করে, সে জীবনে আমরাও বাঁচব।
মাটিতে যখন তারা খসে পড়ে, এবং
অভিমানী তুষারও গলে যায় তোমার তপ্ত ঠোঁটে, তখন,
অথবা একজন সৈনিকের,
যাকে একদিন ফায়ারিং স্কোয়াডে যেতে হয়েছিল, সেখানে
শেষবারের মতো জীবন তার পতাকাটি ফেলেছিল,
কারণ সে দেশকে ভালোবেসেছিল, তার জন্য হলেও……
অন্তত সেই সৈনিকের সাহসের কথা ভেবে
তোমার হৃদয়কে শিলায় সমাহিত করে রেখো না,
সেখানে তো কখনো একটিও বীজ অঙ্কুরিত হয়নি!
এইসব প্রলাপ তুমি শুনছ না, শুধু চলে যাচ্ছ।
আমার বসন্ত, আমার প্রেম, আমার স্মৃতি,
সবকিছুকে পেছনে রেখে তুমি চলে যাচ্ছ।
তোমার খুনি হৃদয়টাকে ধন্যবাদ।
আমাকে খুন করার জন্য ধন্যবাদ।
ভালোবেসে খুন হয়ে যেতে কেমন লাগে
এই জন্মে জানলে না! আফসোস জমিয়ে বেঁচো!
তোমার চুলের ঘ্রাণ এখনো মুছে যায়নি,
তোমার হাতের স্পর্শ এখনো বিস্মৃত হয়নি,
তোমার চোখের আলো এখনো নিভে যায়নি,
তোমার কণ্ঠের স্বরলিপি এখনো বাতিল হয়নি,
তোমার শরীরের উষ্ণতা এখনো ঠিক টের পাই!
তবু……তবু তুমি চলে যাচ্ছ, দূরে সরে যাচ্ছ!