"মানি কান্ট বাই হ্যাপিনেস।”-মার্কা কথাবার্তা মূলত ওরাই বলে, যারা চিকিৎসার অভাবে প্রিয়জনকে মরে যেতে দেখেনি, পরীক্ষার ফি দিতে না পারার কারণে পড়ালেখা বন্ধ হবার ভয়ঙ্কর বিষয়টি দেখেনি, এক কেজি আলু কিংবা একটা ডিমের অভাবে শুধু নুন দিয়ে ভাত খেতে বাধ্য হবার যন্ত্রণাটুকু কখনও পায়নি। টাকার অর্থহীনতা নিয়ে বেশি কথা বলে যারা, ওদের কেউই চোখের সামনে নিজের সন্তানকে অনাহারে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদতে দেখেনি। টাকা দিয়ে সব সুখ কিনে পাঁচতারা হোটেলে বসে মুরগির রান চিবোতে চিবোতে নাক ডেকে ঘুমিয়ে-পড়া মানুষের পক্ষে “মানি কান্ট বাই হ্যাপিনেস।” টাইপের বুলি আওড়ানো খুব একটা কঠিন কিছু নয়। ছোটোমুখে বড়োকথা আনতে নেই, বড়োমুখে ছোটোকথা আসতে নেই। মানি ইজ এভরিথিং, মানি ইজ দ্য সেকেন্ড গড . . . এসব কথা ওরাই বলে, কোটি কোটি টাকা খরচ করেও প্রিয় মানুষটিকে আইসিইউ’র বেড থেকে বাঁচিয়ে আনতে না পারার ব্যর্থতাটুকু যারা কখনও চোখে দেখতে পায়নি; গাড়ি-বাড়ি, জমিজমা সবটুকু থাকার পরও যারা নিজের মা-বাবা কিংবা সন্তানের জন্য একটা দিনও হায়াৎ কিনে আনতে পারেনি। শুনুন, কখনো কখনো টাকা সত্যিই সুখ কিনতে পারে। অবসাদে বা বিষণ্ণতায় লাখ লাখ টাকা হাতে নিয়ে মিয়ামি বিচে ঘুরে আসার সুযোগ ও সামর্থ্য আপনার থাকলে আপনি বুঝবেন, অবশ্যই মানি ক্যান বাই হ্যাপিনেস। একটু মনখারাপে পাঁচতারা হোটেলে ব্যুফে খেয়ে এলে, প্রিয় মানুষটার জন্মদিনে একটা হিরের আংটি কিংবা রোলেক্সের ঘড়ি উপহার দিতে পারলে, মাকে দামি রেডওয়াইন কালারের গাড়িতে চড়িয়ে শপিংমলে গিয়ে শপিং করিয়ে দিয়ে সত্যিই কখনো কখনো সুখ জিনিসটাও কিনতে পারা যায়। কাঁধে ঋণের বস্তা নিয়ে হাঁটলে প্রতিমুহূর্তে কেমন যন্ত্রণা হয়, সেটা ঋণশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করা মানুষটাই ভালো বুঝেছেন। না জেনেবুঝে ফালতু কথা কম বলুন; টাকার অভাব পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম জিনিস। পৃথিবীর নব্বই ভাগ সমস্যাই টাকায় সমাধানযোগ্য। বাকি দশ ভাগের উপর নির্ভর করে তো নিশ্চয়ই বলা যায় না যে, মানি কান্ট বাই হ্যাপিনেস, তাই না? শুনুন মশাই, টাকায় অনেক কিছুই হয়। শত্রুকে বন্ধু বানানো যায় বা শত্রুর মুখ বন্ধ করে দেওয়া যায়, নিপাট ভদ্রলোককেও দাস বানিয়ে পায়ের কাছে দিব্যি রেখে দেওয়া যায়। পৃথিবীর মোটামুটি সব কিছু এবং সবাই-ই টাকায় ক্রয়যোগ্য—এক মৃত্যু ছাড়া। কেবল এই মৃত্যুর কাছেই টাকার পরাজয় ঘটে। অবশ্য, মৃত্যুর কাছে পরাজয় ঘটে না কীসের! টাকাকে অগ্রাহ্য করে, এমন কোনো জায়গা পৃথিবীর কোথাও নেই—কি মন্দিরের দক্ষিণাবাক্স, কি মসজিদের দানবাক্স, আর অন্য জায়গার কথা তো বলাই বাহুল্য! পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার ধর্মের মানুষ থাকলেও টাকার কোনো জাত-কুল-ধর্ম নেই। একমাত্র টাকাই অনায়াসে মন্দির-মসজিদ-গির্জা সবখানেই অকুণ্ঠ প্রবেশাধিকার রাখে। ধর্মস্থানে আদরকদর বেশি পায় কারা, ভেবে দেখুন। মুখে অনেক কিছুই বলা যায়, লোকের বাহবা কুড়োনো যায়, কিন্তু জীবন ঠিকই জায়গামতো চরম ধাক্কাটা দেয়। টাকার জোর না থাকলে কণ্ঠের জোরও থাকে না। পার্থিব জীবনে মানুষ মূলত পকেটের ভার অনুযায়ীই বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়।