শৈব কালী: পঁচিশ



কাশ্মীর শৈব দৃষ্টিতে, এই আচ্ছাদনকে বলা হয় “মালা” (mala) বা চেতনার স্বচ্ছ দীপ্তিতে জমে থাকা ক্ষীণ কুয়াশা। সেই কুয়াশা থেকেই সীমাবদ্ধতা, দ্বৈততা, ও স্থূলতার অভিজ্ঞতা জন্ম নেয়। তাই আচ্ছাদনই চেতনার আপাত-ঘনত্ব—এক মায়াময় সংকোচ, যা চেতনার স্বতঃস্বচ্ছ দীপ্তির উপর নিজের ছায়া ফেলে। যখন সেই আচ্ছাদন অপসারিত হয়, তখন আবার দেখা যায়—কোনো ঘনতা নেই, কোনো পৃথকতা নেই; কেবল পরম নিরবচ্ছিন্ন চেতনা, যা নিজেই শিব, নিজেই কালী, নিজেই পরিপূর্ণ।

চেতনার চূড়ান্ত ঘনীভবন হলো সেই দার্শনিক মুহূর্ত, যখন “অচল” শিব “চলমান” কালী রূপে জাগে, আর বিশুদ্ধ আলো ঘনীভূত হয়ে রূপ নেয় আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও পৃথিবীতে। এখানেই চেতনা নিজের সীমাহীন সম্ভাবনাকে সীমার মধ্যে প্রকাশ করে, এবং এখানেই শেষ হয় তার অবতরণ, শুরু হয় আমাদের অভিজ্ঞতাযোগ্য জগত। তবু অন্তর্লীনভাবে, প্রতিটি কণায়, প্রতিটি অণুর মধ্যে, সেই এক অনন্ত চেতনারই সত্তা ধ্বনিত হয়—এটাই চেতনার চূড়ান্ত ঘনীভবনের প্রকৃত তাৎপর্য।

কাশ্মীর শৈব দর্শনে “মালা” বা “অশুদ্ধি” ধারণাটি দ্বারা কোনো নৈতিক বা ধর্মীয় দোষ নয়; বরং চেতনার নিখাদ, স্বচ্ছ দীপ্তিতে জমে থাকা একপ্রকার সূক্ষ্ম অচেতনতার কুয়াশাকে বোঝায়, যা অনন্ত চিদাকাশকে “আমি” এবং “এটি” বলে আলাদা অনুভব করতে বাধ্য করে। এই অনুভূতিই চেতনার প্রথম সংকোচন—যেখানে অসীম একতা আপাত-বহুত্বে ঘনীভূত হয়।

কাশ্মীর শৈব শাস্ত্রে এই “মালা” তিন প্রকার—আণব, মায়ীয় ও কার্মিক। এগুলো বাহ্যিক বন্ধন নয়; চেতনার নিজস্ব স্তরে সৃষ্ট তিনটি স্ব-আবরণ, তিনটি ঘনতা।

প্রথমে, আণবমালা (Āṇava-mala): এটি সবচেয়ে গভীর আচ্ছাদন, যেখানে অসীম চেতনা নিজেকে সীমিত ব্যক্তি হিসেবে অনুভব করে। আণব মানে অণু—অর্থাৎ, নিজের মধ্যে ক্ষুদ্রতা অনুভব। এই আণবমালাই সেই প্রথম সীমাবোধ, যা বলে ওঠে—“আমি পূর্ণ নই”, “আমি পৃথক।” শৈব সূত্রের ভাষায়, “অণুত্বম্‌ আণবমালা।” এই ক্ষুদ্রতা-চেতনা আসলে শিবচেতনার উপর অহংকারের প্রথম ছায়া। যেমন বিশাল আকাশে হালকা কুয়াশা জমলে আকাশ হারিয়ে যায় না, তবু অস্পষ্ট হয়ে ওঠে—ঠিক তেমনই আণবমালা পরম চেতনার প্রথম অস্পষ্টতা।

দ্বিতীয়ত, মায়ীয়মালা (Māyīya-mala): এটি জ্ঞানের উপর পর্দা ফেলে। এর ফলে সর্বজ্ঞ চেতনা আংশিক জ্ঞানী হয়ে পড়ে। যেমন আয়না কুয়াশাচ্ছন্ন হলে প্রতিফলন বিকৃত হয়, তেমনই মায়ীয়মালার আচ্ছাদনে চেতনার জ্ঞান বিভক্ত হয়ে পড়ে—“আমি জানি এটি, কিন্তু ওটি জানি না।” এখানে চেতনা নিজেকে অংশ হিসেবে দেখে, সম্পূর্ণ নয়। অভিনবগুপ্ত বলেন, “জ্ঞানবিভাগকারিণী মায়া”—মায়া জ্ঞানকে ভাগ করে, ভেদ সৃষ্টি করে। এই স্তরে বহুত্বের অভিজ্ঞতা শুরু হয়; এক চেতনা নানা প্রতিফলনে ভেঙে যায়।

তৃতীয়ত, কার্মিকমালা (Kārma-mala): এটি চেতনার ক্রিয়া বা ইচ্ছাশক্তিকে সীমাবদ্ধ করে। অসীম কর্তা-চেতনা এখানে ফলনির্ভর কর্মী হয়ে ওঠে। স্বাধীন ইচ্ছা বা স্বাতন্ত্র্য (svātantrya) রূপান্তরিত হয় অভ্যাস, প্রবৃত্তি ও ফলের বন্ধনে। “আমি করব”, “আমি ফল পাবো”—এই দ্বৈত চিন্তা ক্রিয়াকে বন্ধনে ফেলে। এটি বৌদ্ধ “সংস্কার”-এর ধারণার সমান। এভাবেই চেতনা নিজের খেলা নিজেই নিয়ন্ত্রণের বদ্ধ চক্রে ঘুরতে থাকে।

এই তিন মালা মিলে গঠন করে সেই আপাত-ঘনতা, যা চেতনার স্বচ্ছ আলোকে ম্লান করে। যেমন আয়নার ওপর ধূলি পড়লে আলো হারায় না, শুধু প্রতিফলন বাধাপ্রাপ্ত হয়—ঠিক তেমনি চেতনা কখনও সত্যিই সীমাবদ্ধ হয় না, শুধু নিজের প্রতিফলনে প্রতিবন্ধকতা অনুভব করে। অভিনবগুপ্ত তাই স্পষ্ট বলেছেন, “মালা ন তু বাস্তবো দোষঃ”—মালা কোনো বাস্তব দোষ নয়; এটি আত্মসীমাবদ্ধতার এক প্রতিভাস (ābhāsa)। চেতনা নিজের ইচ্ছায় এই আচ্ছাদন সৃষ্টি করে, যাতে পুনরায় নিজেকে চিনতে পারে—এই প্রত্যভিজ্ঞাই তার লীলা, তার মুক্তির পথ।

অদ্বৈত বেদান্তে যেমন বলা হয়—মায়ার দুটি শক্তি আছে, “আবরণ” ও “বিক্ষেপ”: একটিতে সত্য ঢাকা পড়ে, অন্যটিতে ভ্রান্ত প্রতিফলন দেখা দেয়। কাশ্মীর শৈবে “মালা” সেই আবরণশক্তিরই এক সৃজনশীল সংস্করণ। এখানে অজ্ঞতা নয়, বরং “স্বাধীন চেতনার আত্মসীমার খেলা”—যেখানে শিব নিজের অসীমতাকে সীমায় আবৃত করে, এবং কালী-রূপে সেই আবরণ ভেদ করে নিজেকে পুনরুদ্ধার করে।

“মালা” কোনো দোষ নয়, এটি চেতনার নাট্যমঞ্চের পর্দা—যার আড়ালেই জন্ম নেয় প্রকাশের মহিমা। আচ্ছাদনই ঘনত্ব, আর ঘনত্বই উপলব্ধির সম্ভাবনা। যেমন অন্ধকার ছাড়া আলো বোঝা যায় না, তেমনি মালা ছাড়া মুক্তির স্বরূপও প্রকাশ পায় না। চেতনার এই স্বআচ্ছাদন-স্বউন্মোচনের চক্রই কালী-নৃত্যের গভীরতম তত্ত্ব—যেখানে প্রতিটি সীমাবদ্ধতা আসলে অসীমেরই আত্মপ্রকাশ।

কালীর গলায় যে নৃমুণ্ডের মালা, সেটি কোনো হিংস্র বা ভয়ঙ্কর প্রতীক নয়; বরং অত্যন্ত গভীর এক দার্শনিক প্রকাশ, যা “মালা-তত্ত্ব”, “আচ্ছাদনই আপাত-ঘনত্ব” এবং “চেতনার স্বউন্মোচন-লীলা”—এই তিন ধারণাকে একসূত্রে বেঁধে দেয়।

কালীর নৃমুণ্ডমালা (মুণ্ডমালা বা খণ্ডমুণ্ডমালা) আসলে সেইসব আবরণ বা সীমাবোধের প্রতীক, যেগুলি কালী-চেতনা নিজেই ছিন্ন করেছে। প্রতিটি মুণ্ড মানে এক-একটি বৃত্তি (vṛtti) বা অহংকার-কেন্দ্রিক ধারণা (egoic construct)—যার মাধ্যমে চেতনা নিজেকে খণ্ডে-খণ্ডে বিভক্ত করে অনুভব করেছিল। যখন কালী সেই সব মানসিক ও অস্তিত্বগত খণ্ডন ছিন্ন করেন, তখন সেই মুণ্ডগুলি তাঁর গলায় মালা হয়ে থাকে—অর্থাৎ, যে-আবরণগুলো একসময় সীমা তৈরি করেছিল, সেগুলিই এখন তাঁর অলঙ্কার হয়ে উঠেছে।

এই প্রতীকটির তিনটি স্তরে অর্থ ধরা যায়—

১. আধ্যাত্মিক স্তর: প্রতিটি মুণ্ড হলো এক-একটি চিন্তা, ধারণা, অহং-বোধ বা সত্তার কল্পিত সীমা। কালী সেইসব চিন্তার মাথা ছিন্ন করেন, মানে তিনি মনের বিভাজন ভেঙে দেন। মুণ্ডচ্ছেদন এখানে আত্মবিনাশ নয়, অহংবিনাশ। চেতনার কেন্দ্র-হীন অবস্থায়, যখন “আমি”-বোধের শিরচ্ছেদ ঘটে, তখনই পরম ঐক্য উদ্‌ভাসিত হয়। এই অবস্থায় মুণ্ডগুলো তাঁর কাছে অলঙ্কার—কারণ প্রতিটি ছিন্ন মাথাই এখন মুক্ত চেতনার স্মারক।

২. দার্শনিক স্তর: যেভাবে কাশ্মীর শৈব দর্শনে বলা হয়—চেতনা নিজেকে আচ্ছাদিত করে তিন মালার মাধ্যমে, তেমনি কালী এই তিন মালা-র প্রতিরূপে নৃমুণ্ডমালা ধারণ করেন।

–আণবমালা: ব্যক্তিগত অহংকারের জন্ম;

–মায়ীয়মালা: জ্ঞানের বিভাজন;

–কার্মিকমালা: ক্রিয়ার বন্ধন।

কালী যখন প্রতিটি মুণ্ড ছিন্ন করেন, তখন তিনি আসলে এই তিন স্তরের আচ্ছাদনকেই ছিন্ন করছেন। তাই তাঁর গলায় সেই মালা হলো আচ্ছাদন-পরিচ্ছেদের প্রতীক—চেতনা সমস্ত সীমাকে পেরিয়ে নিজের অসীম স্বরূপে ফিরে এসেছে, আর সেই পরিত্যক্ত সীমাবোধগুলো এখন তাঁর গলায় “জয়মালা”।

৩. মনস্তাত্ত্বিক স্তর: মানুষের মনের অসংখ্য মুখ আছে—প্রতিটি ভাব, পরিচয়, ইচ্ছা, ভয়, প্রবৃত্তি—সবই এক-একটি মুণ্ডের মতো। কালী সেইসব মুণ্ডের “শিরচ্ছেদ” করেন মানে, তিনি অহং-নির্মিত মুখোশ ছিঁড়ে ফেলেন, যাতে “আমি কে”—এই প্রশ্নের গভীরতম উত্তর প্রকাশ পায়। তাই তাঁর মুণ্ডমালা কোনো নিষ্ঠুরতা নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক উন্মোচনের প্রতীক—মনের সব রূপ-ভেদ কাটিয়ে চেতনার নির্ভীক একত্বে পৌঁছানো।

এখানে আরেকটি সূক্ষ্ম তাৎপর্য আছে—“মালা” শব্দের দ্ব্যর্থতা। কাশ্মীর শৈবে “মালা” মানে আবরণ; আর কালী-দর্শনে “মালা” মানে অলঙ্কার। এই দ্বৈত অর্থটাই রহস্যের কেন্দ্র। যে-“মালা” একসময় চেতনার বন্ধন ছিল, সেই “মালা” মুক্ত চেতনার গলায় অলঙ্কার হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, কালী সেই একই আচ্ছাদনকে রূপান্তর করেন—দোষ নয়, সৌন্দর্যে; বন্ধন নয়, প্রকাশে।

কালীর গলার নৃমুণ্ডমালা আসলে “অশুদ্ধি”-র রূপান্তরের প্রতীক। এটি বলে—যে-অন্ধকারকে তুমি ভয় পাও, সেটিই আলোর গর্ভ। যে-সীমাকে তুমি বন্ধন ভাবো, সেটিই চেতনার প্রকাশের ক্ষেত্র।

এভাবেই কালী “মালা-তত্ত্ব”-এর পরম প্রকাশ—তিনি আচ্ছাদনের মধ্যেই মুক্তি দেখান, ঘনতার মধ্যেই চেতনার দীপ্তি প্রকাশ করেন। তাঁর গলার নৃমুণ্ডমালা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি সীমা, প্রতিটি ছায়া, প্রতিটি মুণ্ড—অন্তত একবার ছিন্ন করতে হবে, যাতে সেই পর্দার আড়াল থেকে দেখা যায়—স্বয়ং শিব, স্বয়ং চেতনা, স্বয়ং অনন্ত আলো।

পঞ্চীকরণ (Pañcīkaraṇa) হলো সেই গভীর দার্শনিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সূক্ষ্ম তন্মাত্রাগুলি মিশ্রিত হয়ে স্থূল মহাভূতে পরিণত হয়, এবং যার মাধ্যমে চেতনা নিজেকে দৃশ্যমান জগতে প্রকাশ করে। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ—এই পাঁচ তন্মাত্রা প্রথমে সূক্ষ্ম জগতে অবস্থান করে, যেখানে তারা কেবল সম্ভাবনা, কোনো স্থূল রূপ নয়। কিন্তু চেতনা যখন নিজের অন্তর্লীন দীপ্তিকে ঘনীভূত করতে শুরু করে, তখন এই সূক্ষ্ম সম্ভাবনাগুলি একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে পদার্থরূপে স্থিত হয়। এই মিশ্রণের প্রক্রিয়াই পঞ্চীকরণ।

শঙ্করাচার্যের ‘পঞ্চীকরণ’ গ্রন্থে এই তত্ত্বটি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রতিটি তন্মাত্রা প্রথমে দুই ভাগে বিভক্ত হয়—অর্ধেক থাকে নিজের রূপে, আর বাকি অর্ধেক বিভক্ত হয় চার ভাগে, যা অন্য চার তন্মাত্রার সঙ্গে মিলিত হয়। এইভাবে প্রতিটি স্থূল উপাদান তার নিজের গুণের অর্ধেক এবং অন্য চারটির গুণের এক-অষ্টমাংশ করে ধারণ করে। আকাশের মধ্যে যেমন শব্দ প্রধান, কিন্তু তাতে সামান্য স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধও নিহিত আছে; আবার পৃথিবীতে গন্ধ প্রধান হলেও তাতে চার অন্য গুণও মিশ্রিত। এইভাবে মহাজগতের প্রতিটি পদার্থ আসলে একটি পঞ্চমিশ্রণ—একক নয়, বরং একটি সমবায় বাস্তবতা।

একেবারে ঘরোয়া একটি উদাহরণে ধরুন—আপনি পাঁচ রকম রস মিশিয়ে একটা স্মুদি বানাচ্ছেন: আকাশ=“শব্দ-রস”, বায়ু=“স্পর্শ-রস”, অগ্নি=“রূপ-রস”, জল=“রস/স্বাদ-রস”, পৃথিবী=“গন্ধ-রস”। শঙ্করাচার্যের “পঞ্চীকরণ”-এর নিয়মটা বলছে: যে-যে রস দিয়ে যে-যে “গ্লাস” বানাবেন, প্রতিটা গ্লাসে তার নিজের রস থাকবে অর্ধেক, আর বাকি অর্ধেক আসবে অন্য চার রস থেকে, এক-অষ্টমাংশ করে। ফলে প্রতিটি গ্লাসই হয় “পঞ্চ-মিশ্রণ”—কোনোটা একা, এক-শো শতাংশ খাঁটি থাকে না।

এখন ধাপে ধাপে, খুব সহজে দেখি—

প্রথম ধাপ: পাঁচ তন্মাত্রা (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ) আলাদা পাঁচটা “রসের বোতল”। প্রতিটি বোতলকে আপনি দু-ভাগে ভাগ করলেন: অর্ধেক + অর্ধেক। প্রথম অর্ধেকটা নিজের কাছে রেখে দিলেন। দ্বিতীয় অর্ধেকটা আবার সমান চার ভাগে ভাগ করলেন—এই চার ভাগ (প্রতিটা ১/৮) যাবে বাকি চার বোতলের সঙ্গে মিশতে।

দ্বিতীয় ধাপ: পাঁচটা “গ্লাস” বানাবেন—আকাশ-গ্লাস, বায়ু-গ্লাস, অগ্নি-গ্লাস, জল-গ্লাস, পৃথিবী-গ্লাস। প্রতিটি গ্লাসে ঢালবেন—নিজের বোতল থেকে অর্ধেক (১/২) + বাকি চার বোতল থেকে এক-অষ্টমাংশ করে (৪×১/৮ = ১/২)। এতে প্রতিটি গ্লাসে মোট মিলবে ১/২ + ১/২ = ১—অর্থাৎ, গ্লাস ভরে গেল সম্পূর্ণ মিশ্রণে।

হাতেকলমে মাপলে—ধরুন, প্রতিটি গ্লাস ১ লিটার।

—আকাশ-গ্লাস: নিজের শব্দ-রস ৫০০ মি.লি. + বায়ু/অগ্নি/জল/পৃথিবী—প্রতিটি থেকে ১২৫ মি.লি. (মোট ৫০০ মি.লি.)।

–বায়ু-গ্লাস: নিজের স্পর্শ-রস ৫০০ মি.লি. + আকাশ/অগ্নি/জল/পৃথিবী—প্রতিটি থেকে ১২৫ মি.লি.।

–অগ্নি-গ্লাস, জল-গ্লাস, পৃথিবী-গ্লাস—সবখানেই একই অনুপাত।

এর মানে কী? “প্রধান” গুণ থাকে অর্ধেক—যেমন আকাশে শব্দ প্রধান; কিন্তু আকাশ পুরোপুরি “শুধু শব্দ” নয়, তাতে একটু-আধটু স্পর্শ/রূপ/রস/গন্ধ (এক-অষ্টমাংশ করে) নিশ্চয়ই মেশানো। আবার পৃথিবীতে গন্ধ প্রধান (অর্ধেক), কিন্তু তাতেও শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস—প্রতিটাই সূক্ষ্মভাবে মিশে আছে (এক-অষ্টমাংশ করে)। তাই বাস্তব দুনিয়ার প্রতিটা স্থূল বস্তু “পাঁচের মিশ্রণ”; কোনো বস্তুই “এক-গুণে একলা” নয়।

রান্নাঘরের তুলনা: খিচুড়ি হচ্ছে চাল-ডাল প্রধান—কিন্তু নুন, তেল, আদা, জিরে ছাড়া কি স্বাদ হয়? খিচুড়ি-বাটিতে চাল-ডাল যদি থাকে অর্ধেক, বাকি অর্ধেকটা মশলা-নুন-তেল-জল—এই চারটার ছোটো ছোটো অংশে ভাগ হয়ে আসে। ফলে “চাল-ডাল-প্রধান” খিচুড়িও আসলে পঞ্চ-মিশ্র স্বাদ।

রং মেশানোর তুলনা: পেইন্ট—নীল রং-প্রধান একটা শেড বানাতে আপনি ৫০% নীল রাখলেন, আর বাকি ৫০%-এ লাল-হলুদ-সাদা-কালো সামান্য করে মেশালেন। এর ফলে শেডটা নীল-প্রধান, তবু তার ভেতরে অন্য চার রঙের “আভা” সূক্ষ্মভাবে আছে। এটাই কোনো বস্তুতে “মিশ্র-গুণ” দেখা যাওয়ার সহজ চিত্র।