ষষ্ঠ স্তর আস্বাদন বা ভোগ (আনন্দ)—যেখানে আত্মা অভিজ্ঞতার আনন্দে নিমগ্ন হয়। এটি সুখ বা দুঃখ, ভালো বা মন্দ—সকল প্রকার জাগতিক অভিজ্ঞতার চরম পরিণতি। এই ভোগই কর্মফলের কারণ, যা আত্মাকে পুনর্জন্মের চক্রে আবদ্ধ করে। এটি জীবনচক্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে চেতনা তার সৃষ্টির সকল রস আস্বাদন করে।
সপ্তম স্তর বিকল্প বা বিভাজন (বিভেদ)—এখানে জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়ের মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়। এই স্তরে আত্মা উপলব্ধি করে যে, সে যা ভোগ করছে, তা তার থেকে ভিন্ন। এই বিভাজনই মুক্তির প্রথম সোপান, যেখানে আত্মা তার প্রকৃত স্বরূপ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়। এটি সেই মুহূর্ত, যখন আত্মা তার বন্ধন উপলব্ধি করে এবং মুক্তির পথ খোঁজে।
অষ্টম স্তর ত্যাগ বা বিরতি (বৈরাগ্য)—এই স্তরে চেতনা সেই আসক্তি ত্যাগ করে ফিরে আসে নিজের উৎসের দিকে। এটি বৈরাগ্যের স্তর, যেখানে আত্মা জাগতিক বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে। এটি অহং-এর বিলীন হওয়ার প্রক্রিয়া, যেখানে আত্মা তার সীমিত পরিচয় ছেড়ে অসীমতার দিকে ধাবিত হয়। এটি একধরনের বিযুক্তি, যেখানে চেতনা তার আসল অবস্থানকে স্মরণ করে।
নবম স্তর সংহার বা বিলয় (লয়)—এখানে সমস্ত দ্বৈততা নিজের মধ্যে লীন হয়। এটি প্রলয়ের স্তর, যেখানে সকল সৃষ্টি তার মূল উৎসে ফিরে যায়। এটি মহাকালী বা ভৈরবী রূপে চেতনার প্রকাশ, যা সকল কিছুকে তার নিজের মধ্যে বিলীন করে দেয়, যা সৃষ্টিকে তার অনন্ত শূন্যতায় ফিরিয়ে আনে। এটি পরম শান্তির এক অবস্থা, যেখানে সকল পার্থক্য ঘুচে যায়।
আর দশম স্তর পরম সামরস্য (পূর্ণতা)—যেখানে চেতনা নিজের শুদ্ধ, অদ্বৈত স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কৈবল্যের স্তর, যেখানে জ্ঞাতা, জ্ঞেয় এবং জ্ঞান এক হয়ে যায়। এটি পরম মুক্তি, যেখানে আত্মা তার আসল ব্রহ্মস্বরূপকে উপলব্ধি করে। এই স্তরে চেতনা তার পূর্ণতায় প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এক অনির্বচনীয় শান্তি ও আনন্দের অবস্থা। এটি সেই অবস্থা, যেখানে সকল কিছু এক হয়ে যায়, যেখানে কোন ভেদ থাকে না, যেখানে শুধু শুদ্ধ অস্তিত্ব বিদ্যমান।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, এই দশ স্তর প্রতিটি এক একটি আদি-রূপ (archetype)—চেতনার দশটি আদি ছাঁচ, যা মানুষের মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের দশ পর্যায় নির্দেশ করে। শাক্ত তন্ত্রে এই দশ আদিরূপীয় শক্তিকেই বলা হয়েছে দশ মহাবিদ্যা। কালী হলেন প্রথম আদি-রূপ (archetype)—অন্ধকার, মৃত্যু ও রূপান্তরের দেবী, যিনি মানুষকে নিজের shadow-এর মুখোমুখি দাঁড় করান। তিনি ভয়কে ভেঙে আত্মজ্ঞান জন্ম দেন। তারাকালী হলেন রক্ষাশক্তি ও অন্তর্দৃষ্টি—অজ্ঞানের সাগর পার করান। ত্রিপুরসুন্দরী সৌন্দর্য ও সমবিত্তির প্রতীক, যেখানে চেতনা নিজের ও জগতের আনন্দকে এক হিসেবে অনুভব করে। ভুবনেশ্বরী অসীম পরিসরের প্রতীক—তিনি সেই চিদাকাশ, যেখানে সমস্ত অভিজ্ঞতা ভেসে ওঠে।
ভৈরবী হলেন তপস্যা ও রূপান্তরের শক্তি—অগ্নির মতো তিনি অজ্ঞান ও আসক্তি দগ্ধ করেন। ছিন্নমস্তা আত্মবিসর্জনের প্রতীক—যেখানে অহং নিজেই নিজেকে ছেদন করে জাগরণে রূপান্তরিত হয়। ধূমাবতী শূন্যতা ও নৈরাশ্যের মধ্যে লুকানো গভীর প্রজ্ঞার দেবী—তিনি শেখান, শূন্যতাই পরিপূর্ণতা। বগলামুখী নিবারণ ও স্থিতির শক্তি—যিনি শব্দ ও ক্রিয়ার প্রবাহ থামিয়ে দেন, যাতে চেতনা স্থির হয়। মাতঙ্গী অন্তর্গত বাক্শক্তি ও সৃজনশীলতার প্রতীক—যিনি জ্ঞানের অনুপ্রেরণাকে শব্দে প্রকাশ করেন। আর কমলা, শেষ মহাবিদ্যা, পূর্ণতা ও আত্মবাস্তবায়নের প্রতীক—যেখানে চেতনা নিজের সৌন্দর্যে স্থিত হয়ে আনন্দময় হয়।
এই দশ আদিম প্রত্নরূপিক মাত্রা (archetypal dimension) আসলে চেতনার পূর্ণ মানচিত্র—কালী থেকে কমলা পর্যন্ত এই যাত্রা হলো আত্মার অন্ধকার থেকে আলোতে, ভয় থেকে প্রেমে, বিভাজন থেকে ঐক্যে, এবং মৃত্যু থেকে অমর জাগরণে উত্তরণ। ইউং বলেছেন, এই আর্কিটাইপগুলো মানবচেতনার “সামূহিক অচেতন” (collective unconscious)-এর জীবন্ত প্রতিমূর্তি; আর শাক্ত ও শৈব দর্শনে এগুলি পরাশক্তির দশ স্পন্দন, চেতনার দশ তরঙ্গ, যা বিশ্ব ও আত্মার মধ্যে সেতু রচনা করে। অদ্বৈত বেদান্ত বলে, এগুলি ব্রহ্মচেতনার আত্মপ্রকাশ—নিরাকার ব্রহ্ম ধীরে ধীরে সগুণ মহিমায় বিকশিত হয়ে আবার নিজ নিরাকার স্বরূপে ফিরে আসে।
দর্শন, তন্ত্র ও মনোবিজ্ঞানের ভাষা ভিন্ন হলেও সত্য এক—চেতনা নিজের গভীর আদি ছাঁচগুলির মধ্য দিয়ে নিজেকে চেনে। এই আদি-রূপীয় মাত্রাগুলি কেবল ধর্মীয় প্রতীক নয়; এগুলি চেতনার মহাজাগতিক মানচিত্র, যা মানুষকে নিজের ছায়া (shadow) থেকে স্ব বা আত্ম (Self)-এর দিকে নিয়ে যায়। এই মহাযাত্রায় কালী থেকে কমলা পর্যন্ত সব দেবী, সব আদি-রূপ (archetype), সব স্তর এক হয়ে যায় এক পরম সত্তায়—যেখানে চেতনা নিজের প্রতিফলনে নিজেকেই চিনে, আর সেই চিনে নেবার আনন্দই হয় মুক্তি।
ত্রিপুরসুন্দরী: ষোড়শী বা ত্রিপুরসুন্দরী বা ললিতাম্বা হলেন চেতনার সৌন্দর্য, আনন্দ ও পূর্ণতার প্রতীক—তিনি সেই দেবী, যাঁর রূপে জগৎ আত্মপরিচয়ের দীপ্তিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তাঁর নামের অর্থই বলে দেয়—ত্রি-পুর-সুন্দরী, অর্থাৎ তিন পুরীর অধিষ্ঠাত্রী সুন্দরী দেবী। এই তিন পুরী হলো চেতনার তিন স্তর—ইচ্ছা (Icchā), জ্ঞান (Jñāna) এবং ক্রিয়া (Kriyā)। ইচ্ছা হলো সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা, জ্ঞান হলো উপলব্ধি, আর ক্রিয়া হলো সেই উপলব্ধ জ্ঞানকে কার্যরূপে প্রকাশ করার শক্তি। যখন এই তিনটি শক্তি একত্রে সামঞ্জস্যে মিলে যায়, তখন উদ্ভাসিত হয় সমবিত্তি—চেতনার সেই একত্ব, যেখানে সৌন্দর্য, বোধ ও ক্রিয়া আর আলাদা থাকে না; তারা পরস্পরের আনন্দে একাকার।
অদ্বৈত বেদান্তে ত্রিপুরসুন্দরী সেই জ্ঞানের প্রতীক, যা উপলব্ধি করে—“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” (ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৩.১৪.১)—অর্থাৎ “এই সমগ্র জগৎই ব্রহ্ম।” তিনি ব্রহ্মজ্ঞান স্বরূপা; তাঁর মধ্যে জ্ঞান ও আনন্দ অবিচ্ছেদ্য। তিনি শেখান, জগৎ কোনো ভিন্ন বস্তু নয়, বরং ব্রহ্মচেতনারই স্বপ্ন—এক ঐক্যময় সৌন্দর্যের অভিব্যক্তি।
কাশ্মীর শৈবদর্শনে ত্রিপুরসুন্দরী চেতনার আনন্দস্বভাব—যেখানে শিব ও শক্তি অবিচ্ছিন্ন, আলোক ও কম্পন এক হয়ে চিরনৃত্যে মগ্ন। তিনি সেই স্তর, যেখানে দ্বৈততার ধারণা বিলীন হয়ে যায়; যেখানে দেখা যায়, “জগৎ শিবময়”—সৃষ্টি ও স্রষ্টা এক অবিচ্ছিন্ন চৈতন্যের তরঙ্গ। অভিনবগুপ্ত ত্রিপুরসুন্দরীকে বলেছেন চিদানন্দলহরী—চেতনা ও আনন্দের তরঙ্গরূপা, যিনি কেবল সৌন্দর্য নয়, বরং আত্মসিদ্ধির প্রকাশ।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, ত্রিপুরসুন্দরী self-acceptance বা নিজের পূর্ণ স্বরূপকে গ্রহণ করার ক্ষমতার প্রতীক। তিনি শেখান, নিজের ভিতরের আলো ও ছায়া, সৌন্দর্য ও ভয়, ব্যর্থতা ও শক্তি—সব কিছুকে এক সঙ্গে গ্রহণ করলেই আত্মা সম্পূর্ণ হয়। ইউং-এর ভাষায় এটি হলো “integration of the psyche”—নিজের সমস্ত দিককে একত্রে মিলিয়ে আত্মজ্ঞান লাভ। এই অবস্থায় ব্যক্তি আর নিজেকে বিচার করে না; বরং নিজের প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে চেতনার একটি পাপড়ি হিসেবে গ্রহণ করে।
ত্রিপুরসুন্দরী একদিকে দার্শনিক ঐক্যের, অন্যদিকে মনস্তাত্ত্বিক সমন্বয়ের প্রতীক। তিনি শিখিয়ে দেন, চেতনার পূর্ণতা কেবল জ্ঞান বা ভক্তিতে নয়, বরং সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে আত্মস্মরণে—যেখানে দেখা যায়, সব কিছুই ব্রহ্ম, সবই সুন্দর, সবই চেতনারই লীলা।
ভুবনেশ্বরী: ইনি হলেন স্থান বা আকাশের দেবী, কিন্তু এই “স্থান” কোনো ভৌগোলিক পরিসর নয়—এটি চেতনার অসীম পরিসর, যাকে তন্ত্রে বলা হয় চিদাকাশ। তাঁর মধ্যে সব কিছু ঘটে, কিন্তু কিছুই তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। যেমন আকাশের ভেতর মেঘ আসে-যায়, বজ্র পড়ে, বৃষ্টি ঝরে, অথচ আকাশ নিজে অচঞ্চল ও অমলিন থাকে—তেমনি ভুবনেশ্বরীর চেতনা অনন্ত সাক্ষীস্বরূপ, যেখানে সব অভিজ্ঞতা ঘটে, কিন্তু কিছুই তাঁকে পরিবর্তন করে না।
অদ্বৈত বেদান্তের ভাষায়, তিনি হলেন সাক্ষীচেতনা—যিনি কেবল প্রত্যক্ষ করেন। শরীর, মন, চিন্তা, আবেগ, সুখ, দুঃখ—সবই তাঁর সামনে উদিত ও লীন হয়; কিন্তু তিনি কেবল প্রত্যক্ষকারী, কখনোই জড়িত হন না। উপনিষদ-ভাষ্যে বলা হয়েছে—“দ্রষ্টা শ্রোতা মনিতা বোধিতা”—অর্থাৎ, তিনিই দেখেন, শোনেন, অনুভব করেন, জানেন, কিন্তু তাঁর নিজস্ব রূপ অদ্বিতীয় ও অক্ষয়। তাই ভুবনেশ্বরী আসলে সেই চেতনাস্থ আকাশ, যেখানে জগতের সমস্ত দৃশ্য কেবল প্রতিফলিত হয়।
কাশ্মীর শৈব দর্শনে ভুবনেশ্বরী হলেন বিশুদ্ধ স্পন্দের ক্ষেত্র, vibration-space—যেখানে চেতনা ও শক্তি মিলে অসীম সম্ভাবনার তরঙ্গ সৃষ্টি করে। তিনি সেই “ক্ষেত্র”, যেখানে প্রতিটি কম্পন উদয় হয়, আবার বিলীন হয়। শিবের প্রকাশ শক্তি হিসেবে তাঁর ভূমিকা হলো, চেতনার মধ্যে স্থান তৈরি করা—যেখানে অভিজ্ঞতার নানাবিধ রূপ আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এই পরিসরই হলো চিদাকাশ (cidākāśa), চেতনার আকাশ, যা কেবল বাহ্যিক স্থান নয়, বরং অন্তর্দৃষ্টির অসীমতা।
মনোবিজ্ঞানের আলোকে, ভুবনেশ্বরী open awareness বা “mindfulness”-এর প্রতীক। যখন মানুষ নিজের চিন্তা, অনুভূতি, স্মৃতি, ভয়, বা ইচ্ছাকে বিচার না করে কেবল পর্যবেক্ষণ করতে শেখে, তখন তার ভেতরে জাগে এই ভুবনেশ্বরী চেতনা—এক মুক্ত, প্রশান্ত, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি। এখানেই মন নিজের গতি থামায় না, কিন্তু আর অস্থিরও হয় না; চিন্তাগুলি আসে-যায়, যেমন মেঘ ভেসে যায় আকাশে। এই সচেতন উপস্থিতি, এই নীরব দেখার ক্ষমতাই ভুবনেশ্বরীর প্রকাশ।
ভুবনেশ্বরী হলেন চেতনার সেই অসীম আকাশ, যেখানে সব কিছু উদ্ভূত হয়, আবার বিলীন হয়; যেখানে আনন্দ ও দুঃখ, সৃষ্টি ও বিলয়, আলো ও ছায়া সমানভাবে স্থান পায়। তিনি শেখান—নিজের ভিতরে এমন এক “পরিসর” গড়ে তুলতে, যেখানে মন ও জগত দুটোই কেবল প্রতিফলিত হবে, কিন্তু কিছুই চেতনার শান্তি নষ্ট করতে পারবে না। এই নিরাসক্ত, উন্মুক্ত চেতনার অবস্থাই হলো ভুবনেশ্বরীর রাজ্য—চিদাকাশ, সীমাহীন চেতনার আকাশ।
ভৈরবী: ইনি হলেন চেতনার অগ্নিরূপ দেবী—ভয়ংকর, কিন্তু একইসাথে মুক্তিদায়িনী। তাঁর উগ্রতা ধ্বংসের নয়, বরং অজ্ঞান, ভয় ও আবদ্ধতার বিরুদ্ধে চেতনার জাগরণ। তিনি হলেন অন্তরের সেই আগুন, যা অন্ধকারকে আলোকিত করে, অশুদ্ধিকে দগ্ধ করে এবং আত্মাকে সত্যের দীপ্তিতে প্রকাশ করে। তাঁর রূপ যেমন ভয়ঙ্কর, তেমনি করুণাময়; কারণ তাঁর উগ্রতা জীবকে মুক্তির দিকে ঠেলে দেয়—মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে চেতনার মূল উৎসে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
অদ্বৈত বেদান্তে ভৈরবী তপস্যার আগুনের প্রতীক, যেখানে আত্মা নিজের সীমা, ভয়, অহং ও আসক্তিকে সত্যের তাপে দগ্ধ করে শুদ্ধ হয়। এই তাপ বা “তপঃ” মানে নিজেকে নিরন্তর আত্ম-সন্ধানে রাখা—যেখানে ভয় ধীরে ধীরে জ্ঞান হয়ে ওঠে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, চতুর্থ অধ্যায় (জ্ঞানকর্মসন্ন্যাস যোগ), ৩৭ নম্বর শ্লোকে পাচ্ছি—“জ্ঞানাগ্নি সর্বকর্মাণি ভস্মসাৎ কুরুতে”—"জ্ঞানরূপ অগ্নি সমস্ত কর্মসমূহকে ভস্মসাৎ করে।" অর্থাৎ, জ্ঞান-অগ্নিই সমস্ত কর্মফল ও অজ্ঞানকে ভস্ম করে দেয়। ভৈরবীর আগুন সেই জ্ঞান-অগ্নিরই রূপ—যা ভয়ের মূলকে দগ্ধ করে, মুক্ত চেতনার পথ উন্মোচন করে।
কাশ্মীর শৈব দর্শনে ভৈরবী হলেন কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণশক্তি—যিনি মেরুদণ্ডের মূল থেকে শিরের সহস্রারে উঠতে উঠতে শিবচেতনার সঙ্গে মিলিত হন। এই উত্থান কোনো শারীরিক প্রক্রিয়া নয়; এটি চেতনার অন্তর্গত উত্তোলন—অচেতন থেকে পরম চেতনায় আরোহন। ভৈরবীর শক্তি সেই প্রবল স্পন্দন, যা ঘুমন্ত চেতনার ভেতর আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং আত্মাকে তার নিজস্ব মহিমায় জাগিয়ে তোলে। তাঁর উগ্রতা মানে অন্তরায় ও ভ্রান্তির অবসান; তাঁর নৃত্য মানে চেতনার পুনর্জন্ম।