শৈব কালী: এক-শো তেরো



কাশ্মীর শৈব দর্শনের ভাষায়, এটাই লয় নয়, বরং অতিক্রম (transcendence)। কারণ এখানে মৃত্যু নেই, বরং রূপান্তর আছে—চেতনা নিজের সীমাবদ্ধ রূপ থেকে নিজস্ব অসীম সম্ভাবনায় ফিরে যায়। কালী-তত্ত্বে বলা হয়, “লয়” মানে বিলোপ নয়, বরং চিরন্তন পুনরাবর্তন—যেখানে চেতনা নিজেই নিজের মধ্যে বিলীন হয়, আবার সেখান থেকেই নতুনভাবে সৃষ্টির সম্ভাবনা জেগে ওঠে। কালী সেই লয়েরই প্রতীক—তিনি ধ্বংস করেন না, বরং সীমাকে দ্রবীভূত করে অসীমের প্রকাশ ঘটান।

আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান (neuroscience) ও মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা কাশ্মীর শৈব দর্শনের এই তিন স্তর—’স্থিতি, উত্থান ও বিলয়’-কে বিশ্লেষণ করি, তবে স্পষ্ট হয় যে, এগুলো আসলে চেতনার তিনটি নিউরো-ডাইনামিক অবস্থা, যা মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন নেটওয়ার্কের ক্রিয়ার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

প্রথম স্তর স্থিতি (Sthiti) হলো চেতনার ভিত্তিশীল সচেতনতা বা baseline awareness। এই অবস্থায় মানুষ বাহ্য উদ্দীপনার প্রতি সক্রিয় প্রতিক্রিয়া জানায় না, কিন্তু সম্পূর্ণ অচেতনও নয়। মস্তিষ্কের “default mode network (DMN)” এই সময় তুলনামূলকভাবে সক্রিয় থাকে—এটি সেই স্নায়ুতন্ত্রীয় জাল, যা আত্ম-চেতনা (self-referential thinking), আত্মস্মৃতি এবং অন্তর্মুখী মনন-এর সঙ্গে সম্পর্কিত।

ধ্যানের প্রাথমিক স্তরে বা গভীর স্থিত মনোযোগের সময় DMN-এর কার্যকলাপ কমে আসে, আর মস্তিষ্কে একধরনের খোলা নজরদারির মনোযোগ বা open monitoring awareness সৃষ্টি হয়—কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর উপর মনোযোগকে আবদ্ধ না রেখে বরং মনের অভিজ্ঞতার সামগ্রিক ক্ষেত্রটিকে (field of experience) মনোযোগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়; যেখানে আপনি কেবল উপস্থিত, কিছু বিচার করছেন না, কেবল পর্যবেক্ষণ করছেন। এটাই কাশ্মীর শৈব দর্শনের “চিত্‌” অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ—যেখানে চেতনা নিস্তরঙ্গ হলেও জাগ্রত, নীরব হলেও দীপ্ত।

দ্বিতীয় স্তর উত্থান (Uththāna) হলো চেতনার গতিশীল প্রবাহ—যা আধুনিক মনোবিজ্ঞানে “flow state” নামে পরিচিত। এই অবস্থায় মস্তিষ্কে prefrontal cortex-এর কার্যকলাপ সাময়িকভাবে কমে আসে (এটিকে বলে transient hypofrontality), এটি মস্তিষ্কের 'সেন্সর' বা 'এডিটর' (prefrontal cortex বা PFC)-কে কিছুক্ষণের জন্য নীরব করে দেয়, যাতে অন্য ধরনের মানসিক প্রক্রিয়াগুলি (যেমন স্বতঃস্ফূর্ততা বা সচেতনতা) আরও সহজে প্রকাশিত হতে পারে। ফলে আত্ম-পর্যবেক্ষণমূলক চিন্তা নিস্তব্ধ হয়, আর ক্রিয়া ও চেতনা একত্রে প্রবাহিত হতে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন সংগীতশিল্পী যখন সুরের ভেতর সম্পূর্ণ নিমগ্ন হয়ে যান, তখন তিনি সময়, শরীর, এমনকি নিজের অস্তিত্বের বোধও হারিয়ে ফেলেন; কেবল সুর ও সত্তা একাকার হয়ে যায়। নিউরোসায়েন্টিস্ট অ্যান্ড্রু নিউবার্গ এবং মনোবিজ্ঞানী মিহাই চিকসেন্টমিহাই দেখিয়েছেন, এই ফ্লো-অবস্থায় ডোপামিন (dopamine) ও এন্ডোক্যানাবিনয়েড (endocannabinoid)-এর মতো নিউরোট্রান্সমিটার (মস্তিষ্কের রাসায়নিক বার্তাবাহক) সক্রিয় হয়, যা আনন্দ, মনোসংযোগ ও সৃজনশীলতার তীব্র অনুভূতি সৃষ্টি করে। কাশ্মীর শৈব তত্ত্বের ভাষায়, এটি “স্পন্দ”—চেতনার জীবন্ত কম্পন, যেখানে শিব (নিঃস্তব্ধ চিত্‌) নিজেরই রূপে নৃত্য করে, শক্তির মাধ্যমে আনন্দের তরঙ্গ সৃষ্টি করে।

ডোপামিন সাধারণত পুরস্কার (Reward) এবং অনুপ্রেরণা (Motivation) এর সাথে যুক্ত। ফ্লো-অবস্থায় এটি মনোসংযোগকে তীব্র ও সুনির্দিষ্ট করে তোলে এবং কাজটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহ তৈরি করে। এর ফলেই কাজটি করতে আনন্দ পাওয়া যায়। এন্ডোক্যানাবিনয়েড একধরনের প্রাকৃতিক রাসায়নিক, যা শরীর নিজেই তৈরি করে। এটি ব্যথা হ্রাস ও আরামের (Relaxation) সাথে যুক্ত। ফ্লো-অবস্থায় এটি কাজের সময়কার উদ্বেগ বা ভয়কে কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে মানসিক বাধা দূর হয় এবংসৃজনশীলতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ পায়।

তৃতীয় স্তর, বিলয় (Vilaya), মানে হলো চেতনার এমন এক অবস্থা, যেখানে “আমি” বা ব্যক্তিগত সত্তার ধারণা সাময়িকভাবে গলে যায়—যাকে আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞান বলে অহং-অতিক্রম (self-transcendence)। সাধারণভাবে আমরা সব সময় ভাবি—“আমি ভাবছি”, “আমি দেখছি”, “আমি করছি”—এই “আমি”-বোধই আমাদের অহং বা ego। কিন্তু বিলয় অবস্থায় সেই “আমি”-বোধ আর আলাদা থাকে না; দেখা, চিন্তা, অনুভূতি—সব এক নিরবচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতার স্রোতে মিশে যায়।

এ অবস্থায় মস্তিষ্কে ঘটে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন। আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা আছে—default mode network (DMN)। এটি মস্তিষ্কের এমন একটি স্নায়বিক নেটওয়ার্ক, যা আমাদের নিজের চিন্তা, আত্মপরিচয়, স্মৃতি এবং “আমি কে”—এইসব আত্মকেন্দ্রিক ভাবনার সঙ্গে সম্পর্কিত। যখন আমরা দিবাস্বপ্ন দেখি, অতীত ভাবি বা ভবিষ্যৎ কল্পনা করি, তখন এই নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকে। কিন্তু গভীর ধ্যান, গভীর প্রার্থনা, সাইকেডেলিক (psychedelic) অভিজ্ঞতা বা মৃত্যুর নিকট অবস্থায় দেখা যায়, এই DMN-এর কার্যকলাপ হঠাৎ নিস্তব্ধ (suppressed) হয়ে যায়। এর মানে, মস্তিষ্কের সেই অংশটি, যা “আমি”-কে আলাদা করে রাখে, সাময়িকভাবে নীরব হয়ে পড়ে।

এই অবস্থায় মানুষ অনুভব করে এক গভীর সীমাহীনতা (oceanic boundlessness)—যেন নিজের ও বিশ্বের মাঝের প্রাচীর ভেঙে গেছে। শরীর-মন-পরিবেশ—সব মিলেমিশে এক তরল চেতনা হয়ে গেছে। একে বলা হয় ego dissolution, অর্থাৎ অহং-এর দ্রবীভবন। তখন এমন কোনো চিন্তা নেই যে—“আমি আলাদা”, “আমি কর্তা”, বা “আমি অভিজ্ঞতা করছি”—বরং এইসব বোধ মুছে গিয়ে যা থাকে তা হলো বিশুদ্ধ উপস্থিতি—এক অনির্বচনীয়, শান্ত ও বিস্তৃত অনুভূতি।

নিউরোসায়েন্টিস্ট জুডসন ব্রুয়ার (Judson Brewer) ও রবিন কারহার্ট-হ্যারিস (Robin Carhart-Harris) তাঁদের গবেষণায় এই প্রক্রিয়াকে স্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, যখন DMN শান্ত হয়, তখন মস্তিষ্কের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়—যাকে বলা হয় global synchrony বা সামগ্রিক স্নায়বিক সমন্বয়। এর ফলে চেতনা এক নতুন রূপে সংগঠিত হয়—যেখানে মস্তিষ্ক আর টুকরো টুকরো অংশ হিসেবে কাজ করে না, বরং এক সমন্বিত, সামগ্রিক সুরে বাজে। এই অবস্থায় মানুষ অনুভব করে গভীর শান্তি, অবারিত বিস্তার এবং একধরনের অসীম আনন্দ, যা কোনো কারণ ছাড়াই উপস্থিত থাকে—যেন চেতনা নিজেকে চিনে নিয়েছে, নিজের মধ্যেই বিশ্রাম নিচ্ছে।

কাশ্মীর শৈব দর্শনে এই বিলয় অবস্থাকে বলা হয় “সংকুচিত শিব” বা “নিমগ্ন চিত্‌”। অর্থাৎ, চেতনা তখন নিজের উৎসে প্রত্যাবর্তন করে—নিজের মধ্যেই লীন, কিন্তু নিঃশেষ নয়। শৈব তত্ত্বে বলা হয়, এটি ধ্বংস নয়, বরং অতিক্রম (transcendence)—যেখানে সীমা ভেঙে অসীম প্রকাশিত হয়। যেমন কালী সমস্ত সীমাকে গিলে নেন, কিন্তু সেই গিলেই নিঃশেষ করেন না; বরং সীমার ভিতর থেকে অসীমের দীপ্তি উন্মোচন করেন।

বিলয় মানে মৃত্যু নয়, বরং চেতনার পুনর্জন্ম নিজের আসল রূপে। বিজ্ঞান এটিকে দেখে মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কের পুনর্গঠন হিসেবে, আর শৈব দর্শন দেখে তা পরম চেতনার বিশ্রাম ও পূর্ণতায় প্রত্যাবর্তন হিসেবে। দুই ক্ষেত্রেই ফল এক—অহং বিলীন হলে থেকে যায় এক স্বচ্ছ, সীমানাহীন, দীপ্ত উপস্থিতি—যেখানে “আমি” ও “বিশ্ব” এক হয়ে যায় এক চিরন্তন নীরব আলোয়।

এই তিনটি স্তর—স্থিতি, উত্থান, বিলয়—আসলে চেতনার শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো এক অবিচ্ছিন্ন চক্র। স্থিতি হলো নিঃশ্বাসের বিরতি—এক গভীর নীরব উপস্থিতি; উত্থান হলো নিশ্বাসের প্রবাহ—সৃষ্টিশীল প্রকাশ; আর বিলয় হলো প্রশ্বাসের মুক্তি—নিজস্ব সীমা অতিক্রম। মস্তিষ্কে তিন মৌলিক অবস্থার অনুরণন গভীর স্নায়বিক স্তরে ঘটে, যা আলফা, থিটা এবং গামা তরঙ্গের পরিবর্তনে সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এই তরঙ্গগুলি মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যকলাপের সূচক হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের চেতনার বিভিন্ন স্তরকে প্রতিফলিত করে।

স্থিতাবস্থা ও আলফা তরঙ্গ: যখন আমরা শান্ত ও আরামদায়ক অবস্থায় থাকি, যেমন ধ্যান বা হালকা তন্দ্রাচ্ছন্নতা, তখন মস্তিষ্কে আলফা তরঙ্গের আধিক্য দেখা যায়। এই তরঙ্গগুলি সাধারণত ৮ থেকে ১৩ হার্টজের মধ্যে থাকে এবং মানসিক স্থিরতা, শিথিলতা এবং মননশীলতার সঙ্গে যুক্ত। আলফা তরঙ্গ মস্তিষ্কের উভয় গোলার্ধের মধ্যে সমন্বয় সাধনে সাহায্য করে এবং সৃজনশীলতা ও অন্তর্দৃষ্টির জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে। এটি বাইরের উদ্দীপনা থেকে মনকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন করে আত্ম-পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়।

উত্থান ও গামা তরঙ্গের বিস্তার: যখন মস্তিষ্ক উচ্চ স্তরের জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াকরণে নিযুক্ত থাকে, যেমন গভীর মনোযোগ, সমস্যা সমাধান, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ বা নতুন কিছু শেখার সময়, তখন গামা তরঙ্গের বিস্তার ঘটে। এই তরঙ্গগুলি সাধারণত ৩০ থেকে ১০০ হার্টজের বেশি ফ্রিকোয়েন্সিতে থাকে এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানে সাহায্য করে। গামা তরঙ্গের উপস্থিতি চেতনা, উপলব্ধি এবং উচ্চতর মানসিক কার্যকারিতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন নিউরাল নেটওয়ার্ককে একত্রিত করে একটি সমন্বিত অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যা জটিল ধারণাকে বুঝতে এবং কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে অপরিহার্য।

বিলয় ও থিটা তরঙ্গের গভীরতা: ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিশেষ করে REM ঘুম (Rapid Eye Movement) এবং গভীর ধ্যানের সময় থিটা তরঙ্গের গভীরতা লক্ষ্য করা যায়। ৪ থেকে ৭ হার্টজের এই তরঙ্গগুলি গভীর শিথিলতা, স্বপ্ন দেখা, সৃজনশীলতা এবং স্মৃতি একত্রীকরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। থিটা অবস্থা সাবকনসিয়াস মাইন্ডের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে গভীর আবেগ, স্মৃতি এবং অবদমিত চিন্তাভাবনা প্রক্রিয়াজাত হয়। এই অবস্থায় মস্তিষ্ক দিনব্যাপী অর্জিত তথ্যকে সংগঠিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। থিটা তরঙ্গ মনকে অন্তর্মুখী করে তোলে এবং আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ও গভীর ধ্যানের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে।

REM ঘুম (Rapid Eye Movement sleep) হলো ঘুমের এমন একটি পর্যায়, যেখানে চোখ দ্রুত নড়াচড়া করে (এই কারণেই নাম “Rapid Eye Movement”), মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে, কিন্তু শরীর প্রায় সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকে। এই পর্যায়েই সাধারণত স্বপ্ন দেখা হয়। মস্তিষ্কের কার্যকলাপ তখন জাগ্রত অবস্থার মতোই তীব্র, কিন্তু পেশীগুলো সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় (muscle paralysis) থাকে—যাতে স্বপ্নে দেখা কাজগুলো শরীরে বাস্তবভাবে না ঘটে। REM ঘুম মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্মৃতি গঠন, শেখার ক্ষমতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সৃজনশীল চিন্তা উন্নত করতে সাহায্য করে। সাধারণভাবে, এক রাতে মোট ঘুমের প্রায় ২০-২৫% সময় REM পর্যায়ে কাটে।

এই তিনটি তরঙ্গের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কের গতিশীলতাকে নির্দেশ করে এবং আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, শেখার প্রক্রিয়া এবং চেতনার স্তরগুলিকে প্রভাবিত করে। মস্তিষ্কের এই তরঙ্গগুলির পরিবর্তনশীলতা মানব মস্তিষ্কের অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতা এবং তার জটিল কার্যকরী প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে।

আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান যেখানে চেতনার ওঠানামাকে নিউরো-ডাইনামিক পরিবর্তন হিসেবে দেখে, কাশ্মীর শৈব দর্শন সেখানে এই একই ঘটনাকে দেখে চেতনার স্ব-লীলারূপে। আধুনিক মস্তিষ্কের চোখে এটি এক বৈদ্যুতিন ছন্দ, আর শৈব তত্ত্বের দৃষ্টিতে এটি এক দিব্য স্পন্দ—যেখানে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় এক চিরন্তন চেতনা-নৃত্যে একাকার।

এই তিন অবস্থাই আসলে এক চেতনার বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য—যেখানে কালী হচ্ছেন সেই মৌলিক শক্তি, যিনি এই তিন অবস্থাকে এক চিরন্তন শ্বাসে ধারণ করেন। তিনি স্থিতিতে শিব-রূপে শান্ত, উত্থানে স্পন্দ-রূপে নৃত্যশীলা, বিলয়ে পুনরায় নিজেরই অন্তঃপ্রভায় বিলীন।

আধুনিক কগনিটিভ সায়েন্স আর কাশ্মীর শৈবের ক্রমপন্থা (Krama)—দুটোকে মুখোমুখি দাঁড় করালে দেখা যায়, তারা আলাদা ভাষায় একই সত্য বলছে: চেতনা নিষ্ক্রিয় দর্শক নয়; চেতনা নিজেই অভিজ্ঞতাকে গঠন করে।