আমার সেই সন্তানটি যদি বেঁচে থাকত, এতদিনে হয়তো একটু একটু করে হাঁটতে শিখে যেত। তুমি যদি আমাকে সামান্য সাহস দিতে, আমি ওকে রেখে দিতাম।
ওকে নিয়ে আমার মধ্যে ভীষণ আবেগ কাজ করে। অ্যাবরশনের পর থেকে আমি প্রায়ই স্বপ্নে দেখি, দুই-তিন বছরের একটা বাচ্চা—হাসছে, খেলছে, দৌড়োচ্ছে। হঠাৎ করে হারিয়ে যায়, আর আমার ঘুম ভেঙে যায়। বুকের ভেতর এক অদ্ভুত মায়া জমে থাকে তখন।
হয়তো লেখালেখিটা চালিয়ে গেলে অনেক কিছু লিখতাম, যা পড়ে তুমি ডুকরে কেঁদে ফেলতে।
ও ছিল একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত, অথচ অলৌকিক এক সন্তান। আমি পিল খেয়েছিলাম, মাসিকও হয়েছিল। তারপরও…! ডাক্তার বলেছিলেন—তোমার বাচ্চাটা বেশ ভালোভাবেই ডেভেলপ করছে, আর হার্টবিট দ্রুত বেড়ে উঠছে।
তুমি যদি আমাকে শুধু এক বার বলতে, আমি সত্যিই ওকে রেখে দিতাম। কীই-বা হতো? সারাজীবন চাকরি করে কি আমরা একটা বাচ্চা মানুষ করতে পারতাম না? অন্তত সেই সামর্থ্য তোমার ছিল। আমি তো আমার নিজের সন্তানকেই খুন করেছি! আমার এই অপরাধবোধ কোনোদিনই যাবে না।
ওর হার্টবিট একেবারে স্পষ্ট ছিল। তিন জন ডাক্তার—কেউই আমাকে নষ্ট করার ওষুধ দিতে চাননি। কারণ রিপোর্ট ছিল একদম ভালো, আর হার্টবিট ছিল খুব ফাস্ট। আমার সাথে এক মহিলা আলট্রাসনো-রুমে ঢুকেছিলেন, যিনি নয় বছর ধরে কনসিভ করার চেষ্টা করেও পারেননি। স্ক্রিনে যখন আমাদের সন্তানকে দেখাল, উনি আফসোসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
আর আমি যখন ওর প্রথম নড়াচড়া দেখলাম, তখন হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছিল। ডাক্তার বলছিলেন—“ওরে মেয়ে, কাঁদছ কেন? মিষ্টি খাও।” পাশের জন বললেন, “কাঁদুক, ম্যাডাম। কাঁদতে দেন। এ কান্না সুখের কান্না।”
মজার ব্যাপার হলো, হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বসেও আমি হুহু করে কেঁদেছি। আবার বাসায় ফিরে মেসের সব মেয়ের জন্য মিষ্টি কিনে খাইয়েছি। ওটা ছিল আমার এ জীবনে প্রথম মা হবার শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। আমি হয়তো জন্ম দিইনি, কিন্তু ওকে প্রথম সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। ওর আগমনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। নারীত্বকে অতটা স্পষ্ট করে আর কখনও অনুভব করতে পারিনি।
নারী আর পুরুষের ভালোবাসা-স্নেহে অনেক পার্থক্য আছে। আমি সেটা খুব ভালোভাবেই টের পেয়েছি। এরপর থেকে আমি অনেক শান্ত হয়ে গেছি—শীতল নদীর মতো।