বারোটা বেজে চব্বিশ মিনিটের ঝিকিমিকি রৌদ্রে, কিংবা দখিনা হাওয়ার স্নিগ্ধতায় মোড়ানো মায়াভরা বিকেলবেলায়, আমি শুনেছি, তুমি ছাদে এসে দাঁড়াও, গাছগুলোতে জল দাও, কিংবা আকাশের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকো। তোমায় দেখবার সাধ আমার অনেক দিনের! দেখা দেবে? এক বার হলেও? একটা কথা আগেই জানিয়ে রাখছি। শোনো, আমি মানুষটা কিন্তু বড্ড সেকেলে! শুনেছি, তুমি খুব নিখুঁতভাবে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখো। এতই নাকি পরিপাটি তুমি, কাপড়ে ভাঁজ অবধি পড়তে দাও না! আর আমি? মাকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে, আমি মানুষটা কী ভীষণ রকমের অগোছালো! তার চেয়ে আরও বেশি অগোছালো আমার বিবর্ণ জীবনটা। আচ্ছা, ভালো কথা, যা বলতে এসেছিলাম! তোমার মনের রং থেকে আমায় কিছু গাঢ় সবুজ, হালকা গোলাপি আর বেগুনি রং…ধার দেবে? না না, ছবি আঁকতে নয়, ও আমি পারি না! আমার সাদাকালো জীবনটাকে তোমার মনের রংগুলি দিয়ে একটু একটু করে আঁকব। দেবে…ধার? দেবে না কেন, বলো? যার অতটা আছে, সে ওই দু-তিনটে রং নাহয় এক ছটাক করেই দিক! ওতে আর কতটুকুই-বা কমে যায়, বলো? ভাবছ, কেন চাইছি এমন রংভিক্ষে? তবে রইল কিছু কৈফিয়ত… গাঢ় সবুজ দিয়ে আমি নিজেকে হঠাৎ করেই মাটিতে নেমে-পড়া খুব ভোরের কোনও বৃষ্টির মতন করে আঁকব। হ্যাঁ, খুব গাঢ় করেই আঁকব! হালকা গোলাপিতে আঁকব আমার সমস্ত ক্লান্তিতে টইটম্বুর এক-একটা প্রাজ্ঞ দুপুর। আর বেগুনি? বেগুনি পেলে এক এক করে এঁকে ফেলব--- আমার কান্না, মন খারাপ, বিষাদ আর যন্ত্রণার রাতগুলিকে। সব কষ্টকেই রংয়ের ছটায় একেক নামে আড়াল করে ফেলব। আচ্ছা, তুমি ছবি যখন আঁকো, তখন কত রংই তো মিছেমিছি নষ্ট হয়! হয় না, বলো? ওসব নষ্ট-হওয়া রংয়ের চাদর দিয়ে আমি যদি আমার কান্নাগুলি লুকিয়ে ফেলতে পারি, তাতেও কি তোমার খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? আমি তবে তোমার বাড়ির উঠোনে এসে একটু দাঁড়াই, কেমন? তুমি বাড়ির ছাদেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে...দূর থেকে আঁকতে গিয়ে বেঁচে-যাওয়া কয়েক মুঠো রং আমায় ছুড়ে দেবে? …আমি আসছি কিন্তু! দোহাই তোমার, আমায় খালি হাতে ফিরিয়ো না আজ!