মানুষ যেরকম

আজকে দুপুরে খাওয়ার টেবিলে আমার ওপরের লেখাটা পড়ে আমার ছোটভাই কিছু কথা বলল। ওর ফিলসফি আমাকে মুগ্ধ করেছে। ওর কথাগুলো আমি নিজের কথায় শেয়ার করছি।

দাদা, তোর লেখাটা পড়লাম। কিন্তু, তুই এটা এতদিনে বুঝলি? সবাই তো তোকে বেশ বুদ্ধিমান ভাবে। বুদ্ধু একটা! তুই কালকে থেকে ক্যারিয়ার আড্ডা নেয়া বন্ধ করে দে, লেখালেখি বন্ধ করে দে, লোকজনকে হেল্প করা বন্ধ করে দে; বেশি না, স্রেফ পাঁচ বছর পর দেখ তো কে তোকে এসে জিজ্ঞেস করে, “দাদা, কেমন আছেন?” অথচ তুই তো অনেকেরই মন ভাল করে দেয়ার কাজটা করে দিচ্ছিস, স্বপ্ন দেখতে শিখাচ্ছিস, তাই না? অনেকেই তোর কথায় ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। অনেকেই আছে যারা তোর লেখা পড়ার জন্য ফেসবুকে ঢোকে। আমি বলছি না, কেউই মনে রাখবে না। মানুষ বড় বিচিত্র প্রাণী রে, দাদা! এতই বিচিত্র, নিজের কোনও স্বার্থ না থাকলে কারওর এই গুণটা ভাল, ওই গুণটা ভাল, এইটুকু বলার মানসিকতাও নেই কারও-কারও। কেউ-কেউ হয়তো বা ব্যক্তি সুশান্তকেও ভালোবাসে। ওরা মনে রাখবে। এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওয়াটা অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার, দাদা। ভালোবাসা পাওয়াটা পৃথিবীর সবচাইতে বড় উপহার, এটা সরাসরি ঈশ্বরের তরফ থেকে আসে। তুই যখন স্টুডেন্ট পড়াতিস, সেসময় কত স্টুডেন্টকে ফ্রি পড়িয়েছিস, কত মানুষকে টাকাপয়সা দিয়ে হেল্প করেছিস, কে তোকে এখন একটা ফোন করে জিজ্ঞেস করে, “স্যার, কেমন আছেন?” আদিত্য ভাইয়ের ওয়ালে দেখি, উনার কোন কষ্টের কথা শেয়ার করলেও লোকজন কমেন্ট করে পুলিশি পরামর্শ চায়। দেখলে আমার খুব রাগ হয়। “কেন ভাই, উনাকে কি তোমাদের মানুষ মনে হয় না? শুধুই পুলিশ মনে হয়?” তোকেও দেখি, লোকজন ফোন করে জিজ্ঞেসও করে না তুই কেমন আছিস, তোর বাসার সবাই কেমন আছে। এয়ারপোর্টে কী হেল্প লাগবে, কাস্টমসের কী ঝামেলা হল, কার কী মাল পোর্টে আটকে গেল, ভ্যাট নিয়ে কী সমস্যা, কোন ঝামেলার কারণে বন্ডের লাইসেন্স নিতে পারছে না, এসবই বলে। ওরা কে কবে তোর পাশে থেকেছে? তুইই বা কবে ওদের কাছ থেকে কী চেয়েছিস? দাদা, সত্যি বলছি, এসব মানুষ আড়ালে তোর নিন্দে করে। আদিত্য ভাইকে দেখি, হেল্প করে, তুইও করিস। আচ্ছা, তোরা এত বোকা কেন?

কেন এরকম হয়? ভেবে দেখেছিস কখনও? আমি বলছি, এটা তোর প্রাপ্য। তাই পাচ্ছিস, ভবিষ্যতেও পাবি। তুই প্রায়ই একটা কথা বলিস না, What goes around, comes around. Everyman is paid back in his own coin. আমার ধারণা, তুই নিজেই এর মানেটা ঠিক বুঝিস না। এখন তোর অনেক মানুষ আছে পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু একদিন তো কেউই ছিল না। হ্যাঁ, আমরা ছিলাম, আমরা তো থাকবই। পরিবারের বাইরেও কিন্তু তখনও কেউ-কেউ তোর পাশে ছিল। তোর কি ওদের কথা মনে আছে? আচ্ছা, ওরা কেন ছিল? কোন স্বার্থে? তুই কী দিতে পারতিস তাদেরকে? কিছুই না। তোর কী ছিল তখন? ওরা তো শুধু ভেবেছে, ছোটভাইটা কষ্টে আছে, দুটো ভাল কথা বলি, সাহস দিই, একটু পাশে দাঁড়াই। ওইসময়ে আর কে-ই বা তোর সাথে একটু হেসে বলত, “তুইও পারবি!” তোর অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী স্রেফ তোকে পছন্দ করে বলেই তোর পাশে তোর কষ্টের দিনগুলোতে ছিল। প্রতিদানে কিছুই পাবে না জেনেও অকাতরে দিয়ে গেছে। দাদা, এটাকে কী বলে, জানিস? ভালোবাসা বলে। ওরা এই পৃথিবীর কেউ নয়, ওরা অন্য গ্রহের। ওদেরকে তুই তো এখন একটা ফোনও দিস না। আমার ধারণা, ইনবক্সেও হাই হ্যালো করিস না। একটু সামনে গিয়ে কিছু ফুল হাতে সরি বলে দেখ, ওরা সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার বুকে টেনে নেবে। ভালোবাসত যে! কিছু সময় নষ্ট হবে, তোর জনপ্রিয়তার ঘোড়াটা দুদিন ছোটা বন্ধ করে বসে থাকবে। কী এসে যায় তাতে? জনপ্রিয়তার চাইতে ভালোবাসার শক্তি বেশি। কে কে ভালোবাসল, তোর তো মনেও থাকে না। আচ্ছা, তুই এমন কেন? দাদা, কেউ ভালোবাসলে মনে রাখতে হয়; সবকিছু ভুলে যাস, ঠিক আছে, ওইটুকু অন্তত মনে রাখিস। তোকে আরেকটা কথা বলে রাখি। তোকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে যারা, তাদের বেশিরভাগকেই তুই চিনিস না, হয়তো তোর ফ্রেন্ডলিস্টেও নেই, সামনে এসে তোকে তেলায় না, কিন্তু ভালোবাসে, নীরবে নিভৃতে।

Content Protection by DMCA.com