আজ কী যে দারুণ বৃষ্টি এসেছিল! আমি কী মনে করে যেন রবীন্দ্রনাথের নায়িকা সেজেছি, আর অমনিই দেখি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি! ভিজতে ছুটলাম, সব ফেলেই! আমার সিঁদুররাঙা সিঁথি সাদা হয়ে গেল, পায়ের আলতা ধুয়ে গেল জলে, ভেজা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ঠায় বারান্দার গ্রিল ধরে। কী এক খেলা জুড়ে দিল---বৃষ্টি আর…ওই লোকটা মিলে! আচ্ছা, তোমার কীসের অত ব্যস্ততা যে আমায় বৃষ্টিভেজা শরীরে দেখবার লোভটাও শেষ অবধি সামলেই নিলে? আমি আজ স্নানঘরে যাবই না, ভেজা কাপড়েই থাকব। যাক, শরীরটা একটু দেখাই যাক! যাকে দেখাবার এত আয়োজন, সে না দেখলে, কীসের লাভ আমার এসবের? এই ভেজা শরীরটা আরও একটু স্পষ্ট করেই দেখা যাক! সে রাগ করবে জানলে? করুক গে, সে তো পুরোই একটা যাচ্ছেতাই! নিজেকে অতটা আড়ালে রাখবার পরেও সে জেনেই ফেলেছে, আমি একটা কমলা রংয়ের ঘুড়ি, আর সে নিজে ওই ঘুড়িটার নাটাই! মনের কথা তো সব বলেই দিয়েছি! বলো, লজ্জা এবার করবেটা কার? আমার নিশ্চয়ই! তা-ই যদি হয়, সে কেন এমন অপেক্ষা করায় তবে? কী দরকার তার, চটজলদি কাছে না এসে, বৃষ্টিতে, পথের ধারে, এদিক সেদিক শুধু থামবার? আমি আজ নাকছাবিটা পরেছি, আছে বিছাটাও সাথে। ঘুরিয়ে দেবোই দেবো তার মাথাটা আজ! ডুবিয়ে মারব নেশায়, সে ভুলেই যাবে অফিসের যা কাজ! অত সোজা? আমায় ফাঁকি দেবে? কী…পেয়েছেটা কী লোকটা? এই তো ভেজা শাড়িতেই বসলাম গিয়ে সিঁড়ির কোঠায়, আসুক এবার, দুঃখিত’টা এবেলা বলেই দেখুক না, দিয়ে দেবো এক মুখঝামটা! কাচের চুড়ির গোছা অবধি ভেজা এখনও, কী সুন্দরই না দেখাচ্ছে চুড়িগুলোকে! তা অত কাজই যখন করবে, ভালোবাসবে বলতে গেল কেন মানুষটা তবে? আজ আসুক, আমি আর এক ফোঁটাও ভালোবাসতে দেবোই তো না, মুখের উপর বলে দেবো সব...ওই উজবুকটাকে! আহা! দেখো তো, আমার কাজলটাও তো ধুয়েই গেছে, তাকে দেখাবার মতন কিছুই তো আর থাকছে না বাকি! একপশলা বৃষ্টি শেষে আবার গুঁড়িগুঁড়ি নতুন বৃষ্টি শুরু হলো, বাজে লোকটা কেন যে তবু আসছে না এখনও! ও বাবা! কী জোরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে গো, আমার একলা থাকতে ভয় করে না বুঝি? আমাকে ঠকিয়ে কী সুখ তোমার? যন্ত্রণাটা বেশি হবে কার, বলো তো? কে অত চিন্তা করে করে পাগল হবে, যদি এভাবে ভিজে ভিজে বাধিয়েই বসি একটা অসুখ? আমার খোঁপার বেলিফুলের জল চুইয়ে চুইয়ে পিঠের উপর গড়িয়ে পড়ছে, এমন একটা দৃশ্য তুমি দেখছই না! তা-ও নাহয় বাদই দিলাম, পিঠের ওপরের জলটা আমায় মুছে দেবে কে? মানুষটার কি আদৌ সময় আছে? না কি সে ভুলেই গেছে পিঠের ওপরটা মুছে যে দিতে হবে তাকেই, হাত অতটা পৌঁছায় না আমার, জানে না বুঝি সে? ঠোঁটে লিপস্টিকটা পরেছি কাকে দেখাতে? দেখাতে, না ছাই বৃষ্টিজলে ভেজাতে! আমার ভেজা তৃষ্ণার্ত ঠোঁটজোড়া কি তবে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে শুকিয়ে খসখসে হয়ে যাবে? কী ভাবো তুমি? ভেজা ঠোঁটে চুমু খাবার সুযোগটা যদি মিস করে ফেলো, আমার ওই শুকনো দুঠোঁট তোমার ঠোঁটে চুমু খেতে খেতেই একে একে সব নালিশ জানাবে! আমার রুপোর নূপুরজোড়া অবধি জেদ করে আছে…ওরা ভিজতে চায় আরও...আরও! প্রতিদিন তো আমিই খুলি, ওরাও আজ আমার মতন করে চাইছে, ওদের খুলে দেবার দায়টা হোক আজ অন্য কারও! আমার গাছোঁয়া সমস্ত বৃষ্টিজল ভিজিয়ে নিয়ে যাক তাকে, আরও জোরেই বৃষ্টিটা নামুক, ভিজিয়ে তাকেও আমারই মতন ভেজা ভেজা করে দিক! এই যে লোক, কাজ থেকে মনটা একটু সরাও না গো! আমার ভেজা চুলের স্রোতে এবার নাকটা একটু ভাসাও, ভেজা কোমরটা চেপে ধরে দাঁড়াও একটি বার, ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে আমার সবকটা আদর নিয়ে রাখো! অনেক হয়েছে তো কাজ, ফাইল ঘাঁটায় এবেলা ইস্তফা একটু দাও না গো! আমায় ধরো, ছোঁও! তোমার শুষ্ক শরীর আমার ভেজা শরীরের কাছটায় এনে, আমার সব অপেক্ষা, অভিমান, রূপ, জৌলুস তোমার সারাগায়ে মাখো!