ভাবনা: ছয়শো তিয়াত্তর
………………………………………………………
এক। এতো দুর্ব্যবহার করে, অবহেলা করে, তবু ছেড়ে যাও না কেন?
কারণ, আমি জানি, আমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউই ওকে সহ্য করতে পারবে না। আমি চলে গেলে ওর অনেক কষ্ট হবে। ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবি না, তবে মাঝেমাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে। সমস্যা হল, বিয়ের পর একটা সন্তান হয়ে গেলে মরাও যায় না।
কতদিন হল তোমাদের কথা হয় না?
পাঁচমাস সাতাশ দিন।
কোনো কথাই হয় না?
ও ছেলের সাথে কথা বলে, সরাসরি আমার সাথে বলে না।
তোমাদের মধ্যে না প্রেম ছিল?
হ্যাঁ, ছিল। ছয় বছরের প্রেম। তুমুল প্রেম! জানেন, এমনও হয়েছে, অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে আর ও আমার হলের সামনে সারারাত দাঁড়িয়ে আছে! ভিজছে আর আমাকে টানা ফোন করে যাচ্ছে, আমি ধরছি না।
কেন?
আমার রাগ ভাঙাতে। ঝগড়া হলে ও আমার জন্য পাগল হয়ে যেত! ও মেয়েদের মতো কাঁদতে পারতো!
আর সেই মানুষটাই এতো বদলে গেল!
হ্যাঁ। এটাই আমার নিয়তি। তবু আমি ওকেই ভালোবাসি।
সে বাসে?
বাসে হয়তো, জেদ থেকে দেখায় না, যদি হেরে যায়, সে ভয়ে! আমিও দেখতে চাই না।
কীভাবে জানলে যে বাসে?
ভালোবাসি তো, তাই বুঝতে পারি।
যদি তোমার বোঝাটা মিথ্যে হয়?
হলে হোক! কাউকে ভালোবাসলে অনেক শান্তি লাগে, নিজেকে অনেক হাল্কা লাগে। সে স্বর্গীয় অনুভূতি আমি প্রতি মুহূর্তেই পাই। ও পাচ্ছে না, সেটা ওর ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি।
বিরক্ত লাগছে তোমার কথা শুনে।
কাউকে কখনো নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছেন?
মনে পড়ছে না। না, মনে হয়।
তাহলে আপনার সাথে এটা নিয়ে গল্প করে লাভ নেই, আপনি বুঝবেন না। আসুন, আমরা অন্য গল্প করি। বাজারে ইলিশের দাম আবারো তো বেড়ে গেল।
দুই। কোনো সুন্দরীর ভালোবাসা পাওয়ার আত্মবিশ্বাস তো সেদিনই উঠে গিয়েছিল, যেদিন জাঁদরেল গোঁফওয়ালা মেয়েটি বলেছিল: ভালোবাসি!
(পুজো দেখতে বেরিয়েছি। এখনো পর্যন্ত গুনেগুনে ছয়টা গোঁফওয়ালা মেয়ে দেখলাম।)
পুনশ্চ। আমার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে চরিত্রবানরা ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
তিন। অমর হতে চাই না, নশ্বর থাকতে চাই।
অমরত্বের পথে অনুসারী পাওয়া যায়, সাথী পাওয়া যায় না। সেই অনুসারীদের কেউই অমরত্বের পথের পথিক নয়, সকলেই দর্শকমাত্র।
চার। যেসকল পুজোয় দেবী দুর্গার মুখদর্শন করতে গায়ে অসুরের শক্তি লাগে, ধাক্কাধাক্কি না করে ভদ্রলোকের মতো পূজাদেখা অসম্ভব, সেসকল পুজোমণ্ডপের ত্রিসীমানায় নিজেকে নিষিদ্ধ ও অযোগ্য ঘোষণা করেছি বহুবছর আগে। পর্যাপ্ত জায়গা নেই, নিরাপত্তা নেই, ফুটানি আছে। ঘেন্না লাগে!
উৎসব হোক মার্জিত, শ্লীল, রুচিসম্মত। আনন্দ হোক, নাচ হোক, গান হোক—সীমার মধ্যে, শালীন। যেসকল পুজো ভদ্র উপায়ে দেখা যায় না, সেগুলি নিয়ে গতকাল দুই লাইন লিখেছিলাম:
বিলাসিতায় পুজো,
একাগ্রতায় কুঁজো।
আদর্শ পুজোর আবহ বলতে আমি কী বুঝি? চট্টগ্রামে রামকৃষ্ণ মিশন, চট্টেশ্বরী মন্দির, দেওয়ানজী পুকুরপাড়, জে এম সেন হল-সহ আরো কিছু মণ্ডপের যে আবহ, সেটি। ভেবে দেখুন, রামকৃষ্ণ মিশন সাত্ত্বিক দুর্গাপূজার যে মডেল দাঁড় করিয়েছে আমাদের মনে ও বিশ্বাসে, তা অন্য কোনো মণ্ডপ পেরেছে? কেন পারেনি? মিশনে অষ্টমীর বা দশমীর অঞ্জলি—এটা রীতিমতো ধর্মাচরণের অংশ হয়ে গেছে। এটা কি আপনাআপনিই হয়েছে?
পাঁচ। ওরা কারা, যারা দুগ্গাদুগ্গা বলে কোনো সরকারি চাকুরের গলায় ঝুলে পড়ার জন্যই মন দিয়ে পড়াশোনা করে? বলি, বেসরকারি চাকুরে-গিন্নিদের কি ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে হয় নাকি?
(বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া এক মেয়েকে দেখেছি, যে কিনা মন দিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, যাতে কোনো বিসিএস ক্যাডারকে বিয়ে করতে পারে!!! শুনে কী পরিমাণ যে বিরক্ত হয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না। মানসিকতার কী ছিরি!! আজকালকার মেয়েরা এমন খ্যাত্-মার্কা হয়ে যাচ্ছে কেন? একটা মেয়ের জীবনের লক্ষ্যই একজন বিসিএস ক্যাডারকে বিয়ে করা! ভাভারেভাভাভাভাযায়এগ্লা!!)
ছয়। যখন তোমার নিজেরই বিরিয়ানি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আছে, তখন তোমাকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর মানুষ অনেকই তো পাবে….. তাদের নিয়ে নাচছো!….আরে ভাই, সেই মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে রাখো, যখন তোমার ভাতও কিনে খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না, তখন নিজের থালা থেকে এক টুকরো রুটি যে তোমায় খেতে দিয়েছিল, হাসিমুখে নিজে আধপেটা খেয়েছিল। আফসোস, এমন মানুষ ওই টুকরোটা দিয়েই কোথায় যেন হারিয়ে যায়, পরে অনেক খুঁজেও তাকে আর পাওয়া যায় না! অথচ যারা সেই সময় তোমাকে অনাহারে মরতে দেখে আড়ালে হেসেছে কিংবা নিজেদের আহার নিয়েই ব্যস্ত ছিল, তারাই আজ তোমার চারপাশে ঘুরঘুর করে।
সাত। দুই ধরনের মানুষকে কখনোই ত্যাগ করা যাবে না, প্রাণ গেলেও না, এমন-কী তারা শত ভুল, অন্যায় কিংবা আঘাত করলেও হাসিমুখে ক্ষমা করে দিতে হবে:
এক। বাবা-মা
দুই। সেই বন্ধুটি/বন্ধুরা এবং এমন কেউ, যারা আমার বিপদের সময়, যখন পুরো পৃথিবী আমার পাশ থেকে সরে গিয়েছিল এবং আমার অস্তিত্বই হয়ে উঠেছিল বিপন্ন, তখনও বিন্দুমাত্র কোনো ধরনের স্বার্থ, যুক্তি বা কারণ ছাড়াই আমার পাশে ছিল
তাদের জন্য ভালোবাসা হোক অবারিত, নিঃশর্ত, অযৌক্তিক। শরীরের রক্তপ্রবাহের মতো ধ্রুব, কখনোবা বেহায়ার মতো—একতরফা। বিশ্বাস করুন, এর বাইরে যাদের আমরা চিনি কিংবা চিনি না, তাদের কেউই আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য নয়, ওরা আমাদের সুখের ভাগ নেবে, দুঃখের বোঝা বহন করবে না।
আট। You knew you couldn’t be here.
I imagined I would be here.
That’s why, I’m here, you aren’t.
নয়। সবারই কিছু কথা থাকে, তবে কথা শোনার মানুষ সবার থাকে না। যদি থাকেওবা, হয়তো সে এমন কেউ, যার কাছে ওসব কথার কোনো দাম নেই, যাকে ওসব কথা বললে বরং মনখারাপ হয়।
দশ। পরের বউ আর নিজের সন্তান, এই দুইয়ের প্রতি পুরুষমানুষের টান অসীম!
(কমেন্ট পাঠকগোষ্ঠীকে এই পোস্টের কমেন্টেথ্রেডে স্বাগতম! মাঝেমধ্যে এমন স্ট্যাটাস দিলে বুঝতে পারি, এই চরিত্রহীন অমানুষটাকে কতকত চরিত্রবান মানুষ ফলো করে!)
এগারো। যার মাথায় মাল আছে, তাকে ঔদ্ধত্যেও মানায়, বিনয়েও মানায়। যার মাথায় মল আছে, তাকে বিনয়েও মানায় না। এই যেমন, সাকিবকে দেখেন। এই ছেলেটা অ্যারোগ্যান্ট কথাবার্তা বললেও ওকে দেখতে কত্ত ছো ছুইট লাগে। আর অন্যরা মডেস্টিতে গদগদ হয়ে গেলেও ওদের দেখতে পুরাই ছাগলের মতো লাগে। He is a Bangladeshi player. It’s a matter of our pride. Arrogance suits a genius! No one salutes a donkey even if it is modest.
(আপনাদের কাছ থেকে অহংকার পতনের মূল টাইপের কমেন্ট আশা করছি। কমেন্ট করুন, সান্ত্বনালাভ করুন।)
বারো। আমার এক বন্ধুর স্ত্রী। পেশায় গৃহিণী। রান্নাবান্না, ঘরের টুকিটাকি কাজকর্ম, ১১ মাস বয়সী সন্তানের দেখাশোনা, স্টার জলসায় শ্রীময়ীর সংসার দেখা। বৌদির চাকরি ঘরের ভেতরেই। যাবতীয় শপিং ও হাতখরচের পর্যাপ্ত টাকা বন্ধুই দেয়। নিঃসন্দেহে খুবই ঝামেলায় থাকতে হয় উনাকে, বিশেষ করে বাচ্চাকে লালনপালন করতে গিয়ে। অফিসে যাওয়ার আগে ও অফিস থেকে ফিরে বন্ধুকে বৌয়ের কাছ থেকে যে পরিমাণ দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয়, তাতে মনে হয়, বৌদি যদি চাকরি করে বন্ধুকে খাওয়াতেন, পরাতেন, তবে নির্ঘাৎ প্রতিদিন নিয়ম করে দুইবেলা জামাই পেটাতেন। বন্ধুটি অফিস থেকে দেরি করে বাসায় ফিরে, ইচ্ছে করেই। বৌয়ের চাইতে অফিসের বসও ভাল। বৌয়ের সাথে যতটা ভয়েভয়ে ও মন যুগিয়ে চলতে হয়, বসের সাথেও ততটা চলতে হয় না। খেয়াল করে দেখলাম, বন্ধু এবং বন্ধুর স্ত্রী উভয়েই ব্যস্ত, ক্লান্ত। সেক্ষেত্রে বৌদি যদি এমন (প্রায়ই) অকারণে দুর্ব্যবহার না করতেন, তবে ওদের সম্পর্কটা আরো চমৎকার হতে পারত। যে ছেলেটা সংসার চালায়, সে একটু ভাল ব্যবহার ছাড়া আর তেমন কিছুই চায় না পরিবারের কাছ থেকে। একটা মেয়ে এইটুকুও বোঝে না? নাকি মেয়েরা বিয়ের পর নানান কারণে খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়? আপনাদের অভিজ্ঞতা কী বলে?
ভাবনা: ছয়শো চুয়াত্তর
………………………………………………………
এক। ফার্স্ট-বয়: পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রজাতির প্রাণী।
ভাল স্টুডেন্টরা ওকে ঈর্ষা করে।
খারাপ স্টুডেন্টরা ওকে ঘৃণা করে।
মাঝারি মানের স্টুডেন্টরা ওকে পাত্তাই দেয় না।
অন্যরা মানুষ খুন করে ফেললেও কিচ্ছু হয় না, ফার্স্ট-বয় মানুষ খুন করার কথা মনে আনলেও তার ফাঁসির আদেশ হয়ে যায়। ফার্স্ট-বয়কে সহ্য করা খুবই কঠিন কাজ। তাই ফার্স্ট-বয়ের বন্ধু নেই বললেই চলে। ফার্স্ট হওয়ার চাইতে বড়ো দুর্ভাগ্য আর হয় না। জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাইলে কখনোই ফার্স্ট হওয়া যাবে না।
দুই। Stop disturbing others. Start disturbing yourself. Remember, there is nothing ready-made. Everything you want to achieve was made ready.
Goods things are never ready-made. Goods things are always made ready.
তিন। : What do you do? Job? Business? Or………
: My husband is rich & powerful.
: Wow! You do the greatest job on earth!
(Blessed are 4 women: A rich man’s wife, a rich man’s daughter, a rich man’s daughter-in-law……….a rich man’s girlfriend or mistress. But, a rich man is the poorest soul as he can’t enjoy his own wealth.)
চার। সবাই ক্রিটিক হতে পারে না, ক্রিটিক হতে মাথায় ঘিলু থাকা লাগে। সাথে লাগে ম্যাচুরিটি। বেশিরভাগ লোকই ক্রিটিক হতে গিয়ে হেটার হয়ে বসে থাকে। হেটার হতে ঘিলু লাগে না, কিছু ঈর্ষা থাকলেই চলে। ক্রিটিক আর হেটার, এই দুইয়ের মূল পার্থক্য কোথায়, জানেন? আপনার ক্রিটিক আপনার কাজ নিয়ে কথা বলবে, আপনার হেটার ব্যক্তি আপনাকে নিয়ে কথা বলবে।
(সময় করে এটা নিয়ে লিখব।)
পাঁচ। থাক ভুঁড়ি, থাক টাক, বয়সটা হোক হাফ,
চেহারায় থাক পাঁচ, টাকা বলে, সবই মাফ!
ছয়। Beauty is good even when it has got some impurities. Pure and beautiful—it’s a rare combination!
সাত। আমার সাথে উনার পার্থক্য এক জায়গায়: আমি আমার পুরনো অপমানগুলি কাউকে ফেরত দিই না।
যাঁদের ধারণা, আমি এবং আমার মতো আরও অনেকে রাতারাতি হাওয়া থেকেই, আমাদের যে অবস্থানে দেখছেন, সে অবস্থানে এসেছি, তাঁরা ভুল ভাবেন। আমাদের হাসতে দেখেছেন, কাঁদতে কখনো দেখেননি। ভয়াবহ কষ্ট, অপমান, কান্না—এটাই আমাদের অতীত! হয়তো সে কষ্টের তুলনায় আপনার কষ্টটা কিছুই না। তাই ওরকম মনে হয়। আমি সংক্ষেপে যা বুঝি, তা হল: জীবন কঠিন এবং নিষ্ঠুর। এটাকে মেনে নিন, বাঁচতে সুবিধা হবে।
আট। সলিল চৌধুরী বাসা বদল করেছেন। পেডার রোডে। সাজানো ফ্ল্যাট। একদিন খুব সকালসকাল কিশোরকুমার এসে হাজির তাঁর বাসায়। সলিলই তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ‘অন্নদাতা’ ছবির গানে সুর দিয়েছেন। কিশোরকুমারকে শোনাবেন। মুখ গম্ভীর করে সলিলের পাশের সোফায় বসলেন কিশোরকুমার। যে গানটা তাঁকে গাইতে হবে, সেটার সুর খুব মন দিয়ে শুনতেন তিনি।
সোফায় বসে সলিল হারমোনিয়াম বাজিয়ে শোনাচ্ছেন পরবর্তীকালে বিখ্যাত-হওয়া সেই গান:
গুজর গয়ে দিন দিন দিন কি
হর পল গিন গিন গিন
কিসিকি হায় ইয়াদোঁ মে।
শেষ লাইনটি শুনেই ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লেন কিশোরকুমার!
‘‘কী হল, কী হল?’’ বিস্মিত সলিল চিৎকার করে উঠলেন! তখনও মাটিতে থেবড়ে বসে কিশোরকুমার। মুখ নিচু। মাথা তুলে হাতজোড় করে বললেন, ‘‘আমাকে মাফ করুন, সলিলদা, আপনার সমান উচ্চতায় বসে আমি এ গান শিখতে পারব না। কী সুর করেছেন!’’
এর পর বাকি সময়টা মাটিতে বসেই গান শিখেছিলেন কিশোরকুমার!
দেখুন, এক জিনিয়াস আরেক জিনিয়াসের কাছ থেকে শিখছেন তাঁর পায়ের কাছে বসে! ভাবা যায়! গুরুর কাছে শিখতে হয় গুরুর পায়ের কাছে বসে। নিজেকে ধুলোয় নামিয়ে আনতে না জানলে চূড়ায় চড়া অসম্ভব! উপরে উঠতে চাইলে তো আগে নিচে নামতে হবে, যে উপরে ওঠার আগেই উপরে উঠে বসে আছে, সে আবার উপরে উঠবে কীকরে? নিজের সমস্ত ইগো বিসর্জন দিয়ে শিখতে হয়। এই বিনয়, শেখার ইচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকে না। এখানেই আমাদের সাথে বড়ো মানুষদের পার্থক্য।
নয়। If you can afford and accommodate the luxury of being precious, why are you letting yourself remain so cheap? Be careful of your thoughts, words, actions.
People who are cheap, are cheap because they tried to be precious, but failed. Or they are too blind to see the price of things. Remember, even if you are the king of the blind, you yourself are blind, anyway. The blind always make another blind man their king. When you see a king, first see the kingdom he rules. You can readily understand if that king deserves your respect or not.
Being and staying cheap is easy. It costs almost no effort. It sounds pleasant. Sometimes it is even popular. Cheap people get more attention as they have more friends. Precious people are lonely and unpopular. Cheap people hate precious people. They fear the price, so they hate the people who can pay the price. If you are extraordinary, ordinary people hate you simply because they can never reach your level. Do not give attention to how they react to your existence. Make them feel neglected, unnoticed. Surely this makes them feel uncomfortable, resented.
You will suffer if you are precious. Still be precious. Be simple but do not be ordinary. Do anything that requires to keep yourself beyond what is ordinary. In countries where education means certificates, most of the ordinary people are cheap. Do not accept what is easily available. You can never get a precious thing without any effort. Doubt what gives you easy comfort. Almost all the precious things are the things not comfortable to the common people. Trust me, the people and things that look attractive to us, are mostly the cheap ones, because the definition of what it means to be attractive we received, came from some cheap people we know. Most of prescious people are the people whom we hardly happen to know or recognise.
Only one life to live. Only one life to examine. Only one life to use. Live it in a way others do not. Examine it in a way others dare not. Use it in a way others cannot.
ভাবনা: ছয়শো পঁচাত্তর
………………………………………………………
এক। যদি মনে হয়, কারো কাছ থেকে আপনার কিছু শেখার আছে, তবে তাঁর কাছে যান, শিখতে চান। মাথা নত করে। উনি আপনাকে সাদরে গ্রহণ করলে তো ভাল, যদি না করেন, তবে রাগ কিংবা অভিমান করবেন না। উনি আপনাকে সময় দিতে চাইবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? উনার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখুন। উনার চোখে আপনি এমন কে যে আপনার কথা উনি ভাববেন? কিন্তু আপনি তো জানেন যে উনাকে আপনার কাজে লাগবে। যাঁরা আমাদের কাছে অনেক কিছু, আমরা কিন্তু তাঁদের কাছে কিছুই না, সে আমরা যা কিছুই হই না কেন! নিজেদের রায়ে আমরা সাগরের সমান হতে পারি, কিন্তু তাঁরা যতো বড়ো, সে বিচারে আমরা হয়তো একটা বালির কণার সমানও নই। পরাজিতদের চোখে জয়ী হয়ে লাভ নেই, জয়ীদের চোখে জয়ী হওয়াই আসল চ্যালেঞ্জ।
মনে রাখবেন, ভাল জিনিস সবসময়ই লিমিটেড এডিশন, তাই দাম বেশি। অ্যাভারেজ আর রদ্দিমার্কা জিনিস আনলিমিটেড, দামটাও তাই কম। সস্তা জিনিস সস্তায় পাওয়া যায়, দামি জিনিস দামে। কম দামে বেশি দামের জিনিস পাওয়া যায় না। দাম দিতে শিখুন। দাম দিতে জানাটা মস্ত বড়ো একটা আর্ট, সবাই তা পারে না।
যাঁর কাছ থেকে শেখার আছে, তাঁর কাছে শিখতে যান। আপনার রাগ আর ইগোর যা দাম, তা কেবলই আপনার নিজের কাছে। এইসব ঝেড়ে ফেলে শেখার চেষ্টা করুন। উনি যা শিখেছেন, তা অনেক দাম দিয়েই শিখেছেন, আপনি তা ফ্রি আশা করছেনই-বা কেন? আবার ভেবে বসবেন না যেন দাম মেটানো মানেই টাকা দিয়ে কেনা! এ পৃথিবীতে যা কিছু টাকা দিয়ে কেনা যায় না, তার দাম সবচাইতে বেশি। টাকা হলেই যা কেনা যায়, তা কেনা দুঃসাধ্য বটে, তবে অসাধ্য নয়। অসাধ্য সাধন করতে যারা জানেন, তারাই সবচাইতে এগিয়ে থাকেন।
জীবনে ইগোর চাইতে শিক্ষার মূল্য বেশি। যদি উনার কাছ থেকে পাত্তা না পান, তবে দূর থেকে শিখুন। কাছ থেকে শিখতে হলে এমন কিছু করুন, যা দেখলে উনি আপনাকে সময় দেবেন। প্রতিটি মানুষের কোনো না কোনো চাহিদা থাকেই। সেটা আবিষ্কার করুন। নিজ থেকেই সেটা পূরণ করার চেষ্টা করুন। দেখবেন, আপনার কাজ হয়ে গেছে। আপনার নিজের চাহিদা মেটানো আপনার দরকার, তাঁর চাহিদা মেটানোও আপনার দরকার। যদি তাঁর কোনো চাহিদা না-ই থাকে, তবে এমন কিছু তাঁর সামনে তুলে ধরুন, যা দেখলে তাঁর দরকারি মনে হবে। এটাকে বলে চাহিদা তৈরি করা।
এদেশে একসময় টিস্যুপেপার ছিল না। টিস্যুপেপার এলো। কিন্তু লোকে তা কেন কিনবে? অগত্যা টিস্যুপেপারের চাহিদা তৈরি করা হল। লোকজনকে বোঝানো হল, এ জিনিস জীবনকে সহজ করে দেবে। লোকে বুঝল, কিনল, অভ্যস্ত হয়ে পড়ল। এদেশের লোক খুব সহজেই বুঝে ফেলে—আপনার প্রয়োজনমাফিক! লোকের টিস্যুর দরকার ছিল না, কিন্তু লোকের টিস্যুর দরকার হোক, এটা যারা টিস্যু এনেছে, তাদের দরকার ছিল। টিস্যু বিক্রির দিকে মন না দিয়ে টিস্যুর অপরিহার্যতা বিক্রির দিকে ওরা মন দিলো। ব্যস্! টিস্যু টিকে গেলো!
আপনার দরকারটা কেবল আপনার কাছেই দরকারি। ওটা নিয়ে যা আবেগ, আপনার বিবেচনায় তা যতোই দামি হোক না কেন, অন্যের কাছে তার দাম শুন্য। আপনি জরুরি নন, আপনি কেন জরুরি, সেটা জরুরি। ওটা নিয়ে ভাবুন, কাজ করুন, আপনার কাজ হয়ে যাবে!
দুই। একটা মানুষ। নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে বাঁচে। অল্পে বাঁচে, কিন্তু ভালই বাঁচে, প্রকৃতি মানুষটাকে অল্প নিয়ে বাঁচতে শিখিয়ে দিয়েছে। একদিন। কেউ এসে মানুষটাকে একটু বেশি নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখাল। মানুষটার মধ্যে প্রত্যাশার জন্ম হল। সে ধরেই নিল, বাড়তি ওইটুকু না পেলে বাঁচা অসম্ভব। জীবনের বাড়তিতে সে অগাধ বিশ্বাস তৈরি করে বসল। সেই একটু বেশি সে কিছুতেই পেল না কিংবা যোগাড় করতে পারল না। নিজের পুরনো অল্প নিয়ে সে আর বাঁচতে পারল না, যা তাকে এতকাল বাঁচিয়ে রেখেছিল। প্রকৃতি অহেতুক প্রত্যাশা সহ্য করে না। নতুন ভ্রান্ত প্রত্যাশা মানুষের জীবনীশক্তি নষ্ট করে। Expectation kills! কারো উপর প্রত্যাশা তৈরি করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে সে ব্যক্তি আপনার প্রত্যাশাকে আপনার জায়গায় বসে বিবেচনা করতে জানে আর বিবেচনা করার আন্তরিক ইচ্ছে রাখে।
তিন। Wild nights – Wild nights!
Were I with thee
Wild nights should be
Our luxury!
বুনো রাত – কী বুনো রাত!
থাকতেম যদি তোমার সাথে এমন রাতে
এই ঝড়ো রাত
জমিয়ে দিতেম দুজন মিলে দেহের ভাঁজে!
Futile – the winds –
To a Heart in port –
Done with the Compass –
Done with the Chart!
দমকা হাওয়া – হার মেনে যায় –
যে হৃদয়ে বাঁচে ভালোবাসা-প্রেম –
সে হৃদয় হাঁটে ঠিক পথে ঠিক –
তার যে কোনো দিক লাগে না, সে কখনো খোঁজ সাধে না!
Rowing in Eden –
Ah – the Sea!
Might I but moor – tonight –
In thee!
প্রভুর যে বসতবাড়ি –
সেখানে আহা – ঘুরেছি কত!
আজকের রাতে – বেঁধেছি কেবলই –
তোমার মাঝে আমায় শত!
____________________________________
ওয়াইল্ড নাইটস। এমিলি ডিকিনসনের কবিতা।
প্রথম স্তবক পড়লে কত ভালে লাগে……আহা, উদ্দাম রাত, শরীরের প্রেম, নিবিড় স্পর্শ, যেন স্বর্গে ভাসা!
পরের স্তবক। সে হৃদয়ের কথা বলে যে হৃদয় খুব সুখে বাঁচে ভালোবাসায়, নিরাপত্তায়, ঠিক ঠিকানায়।
শেষ স্তবক সব কাম আর প্রেম ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে বলে……… এসো তবে ঈশ্বরমাঝে পরম মিলনে—চিবিয়ে মুড়ি!
………………………………………………………………………………
দেহমন এমন করে কামেপ্রেমে জাগিয়ে তুলে কেউ যদি বলে, এবার হাল্কা মুতে শুয়ে পড়ো, কেমনটা লাগে!
এই কবিতার উপর চরম মেজাজ খারাপ হইসে!!
ভাবনা: ছয়শো ছিয়াত্তর
………………………………………………………
এক। বহুদিন পর আজ এত রাত অবধি অফিস করতে হচ্ছে। নয়টা থেকে এখনো। আমি, আমার সুপারিনটেনডেন্ট, ইনস্পেক্টররা, স্টাফরা। কাল আবার আটটার মধ্যে অফিসে থাকতে হবে। বেকারত্বের সুখ খুব মিস করছি। আহা চাকরি……থাকলেও জ্বালা, না থাকলেও জ্বালা!
দুই। এদেশে, প্রায়ই, ক্ষমতাশালী কাউকে ভালোবাসতে কিংবা পছন্দ করতে না পারাটা বড়ো ধরনের অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। হায়, প্রায়ই, ক্ষমতাশালীরা যেমন হন, তাতে ওঁদের পছন্দ করা কিংবা ভালোবাসা খুবই কঠিন, মন থেকে সায় আসে না। যারা ওদের ভালোবাসা দেখায়, সে ভালোবাসা প্রায়ই আন্তরিক নয়, বরং স্বার্থচালিত, তা ক্ষমতাশালীরা যে বুঝতে পারেন না, তা নয়, তবু না বোঝার ভান করে থাকেন, কেননা তা না করলে পুরো জীবনটাই ভালোবাসাহীনতায় কাটাতে হয় যে!! ভালোবাসা পাওয়ার অভিনয় করে বাঁচা যে কী যন্ত্রণার, তা ক্ষমতাশালীদের কাছ থেকে দেখলে অনুভব করা যায়।
তিন। এ জগতে কতকত অসাধারণ ফিল্ম আছে, হায়, এক জীবনে তার সামান্যতম অংশও দেখে শেষ করা যায় না; তাই বেছেবেছে ফিল্ম দেখাই আনন্দে বেঁচে থাকার চমৎকার উপায়, দুইএকটা বাজে অপ্রয়োজনীয় ফিল্ম বাদ দিলে কিছুই এসে যায় না, বরং ভালভাবে বাঁচবার জন্য তা-ই করা ভাল, সময় তো কম!
এ জগতে কতকত অসাধারণ বই আছে, হায়, এক জীবনে তার সামান্যতম অংশও পড়ে শেষ করা যায় না; তাই বেছেবেছে বই পড়াই আনন্দে বেঁচে থাকার চমৎকার উপায়, দুইএকটা বাজে অপ্রয়োজনীয় বই বাদ দিলে কিছুই এসে যায় না, বরং ভালভাবে বাঁচবার জন্য তা-ই করা ভাল, সময় তো কম!
এ জগতে কতকত অসাধারণ জায়গা আছে, হায়, এক জীবনে তার সামান্যতম অংশও ঘুরে শেষ করা যায় না; তাই বেছেবেছে ঘোরাই আনন্দে বেঁচে থাকার চমৎকার উপায়, দুইএকটা বাজে অপ্রয়োজনীয় জায়গা বাদ দিলে কিছুই এসে যায় না, বরং ভালভাবে বাঁচবার জন্য তা-ই করা ভাল, সময় তো কম!
এ জগতে কতকত অসাধারণ মিউজিক আছে, হায়, এক জীবনে তার সামান্যতম অংশও শুনে শেষ করা যায় না; তাই বেছেবেছে মিউজিক শোনাই আনন্দে বেঁচে থাকার চমৎকার উপায়, দুইএকটা বাজে অপ্রয়োজনীয় নোবেল-মার্কা রদ্দি মাল বাদ দিলে কিছুই এসে যায় না, বরং ভালভাবে বাঁচবার জন্য তা-ই করা ভাল, সময় তো কম!
বাঁচতে যখন হচ্ছেই, ভাল কিছু নিয়ে বাঁচাই সুন্দর। হাতের কাছেই কত অপূর্ব সব আর্ট, সস্তা জিনিস নিয়ে সময় নষ্ট করার সময় কই? যাকে নিয়ে অনেকেই তালি দেয়, ওসব অনেকের ক্লাস দেখুন, আপনার সাথে যায় কি না, দেখুন, তাকে নিয়ে আপনাকেও ওদের দেখাদেখি নাচানাচি করতেই হবে কেন?
রিয়েলিটি শো আর রেসলিং, এই দুইয়ের মধ্যে সবচাইতে বড় মিলটা কোথায়, জানেন? দুটোতেই অভিনয় চলে, দর্শকদের বোকা বানানো হয়। দুটোই বিশ্বাস-করতে-ইচ্ছে-হওয়া নাটকের দুই রূপ। রেসলিং-এ ভাল মার্কস-পাওয়া পারফর্মার যেমনি বলবান নাও হতে পারেন, তেমনি রিয়েলিটি শো-তে ভাল মার্কস-পাওয়া পারফর্মার আর্টিস্ট নাও হতে পারেন।
অল্প বয়সে জনপ্রিয়তার ধাক্কা সামলানো খুব কঠিন, আর জনপ্রিয় ব্যক্তিটি যদি মূর্খ হন, তবে তো তা রীতিমতো অসম্ভব! আসুন, মূর্খদের কাছ থেকে দূরে থাকি, নিজেকে সস্তা হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাই।
চার। আহা, একটা চাকরির অভাবে কত প্রেম মধুর পরিণতি পায় না! কার চাকরির অভাবে? ছেলেটার। অথচ সেই মেয়েটা আর মেয়ের বাবা-মা নারী-পুরুষের সমঅধিকারে বিশ্বাস করে বাঁচে। কী মিষ্টি মিষ্টি ইউটোপিয়ান কনসেপ্টে ভর করে একটা কিউট জাতি তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে! Height of hypocrisy!!
যা শুনতে ভাল লাগে, আমরা তা বলি। যা ভাবতে ভাল লাগে, আমরা তা ভাবি। বলা, ভাবা, করা—এই তিনের দেখা আর হয় না, অবস্থা তাই বদলায় না। এ সংকটই আমাদের সংস্কৃতি।
মেয়েটা কথা দিয়েছিল, সারাজীবন পাশে থাকবে। ছেলেটা শুনেছে।
বিধি হেসে বলেছিল, শর্ত প্রযোজ্য। কেউ শুনতে পায়নি।
বেশিরভাগ ভালোবাসার গল্পে বিয়ে থাকে না, বেশিরভাগ বিয়ের গল্পে ভালোবাসা থাকে না।
ব্যতিক্রম নেই? নিশ্চয়ই আছে। চকচকে টেকো মাথায়ও তো খুঁজেটুজে দুইএকটা চুল পাওয়া যায়। ওতে কি আর টাক ঢাকে?
পাঁচ। Ordinary people sit for BCS exam,
Extraordinary people sit for BCS cadres.
ছয়। কিছু মানুষ সম্পদশালী, বাকিরা চরিত্রবান কিংবা নিরুপায়।
সাত। If someone has left you for another person, it’s a big question who is lucky. Don’t let your troubled mind make a conclusion. Wait. Time will say everything. To you, to them. Good luck or bad luck rests with the future, not with the present. You’ll get the answer. Surely. Wait to get it.
আট। যার মানের দায় কখনো প্রাণের দায়ের কাছে হার মানেনি, সে এখনো জীবনকে চিনতে শেখেনি।
নয়। নিজের কাছে নিজে ঠিক থাকলে পৃথিবীর কারো কথায় কিচ্ছু এসে যায় না।
দশ। মেয়েরা দুঃখের সাথে নিজেকে যতটা মানিয়ে নিতে পারে, সুখের সাথে ততটা পারে না। দেখা যায়, দুঃখী মেয়েদের চাইতে সুখী মেয়েদের দুঃখ বেশি। সে দুঃখ বিত্ততেও ঘোচে না। সচ্ছল মেয়ের কষ্ট বড়ো কষ্ট।
এগারো। দুই ধরনের পণ্ডিতের তেমন কোনো কদর নেই:
এক। যে পণ্ডিত দরিদ্র।
দুই। যে পণ্ডিত সৃষ্টিশীল নন।
বারো। মিথ্যা বলতে জানার আত্মবিশ্বাস যতটা সুখ দেয়, সত্য বলতে না পারার অসহায়ত্ব তার চাইতে বেশি কষ্ট দেয়।
তেরো। গুজবে কানদেয়া অশিক্ষিত লোক আর কানকথায় কানদেয়া শিক্ষিত মানুষ, দুইই সমান মূর্খ।
ভাবনা: ছয়শো সাতাত্তর
………………………………………………………
এক। চুয়েটে পড়ার সময় মহুয়াকে খুব ভাল লাগত। আমার অন্যতম ক্রাশ। টানাটানা চোখ, খাড়া নাক, লম্বাটে মুখ, ছিমছাম গড়নের। অনেক লম্বা, প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট। শ্যামলা রঙের। কখনো তেমন একটা কথা বলিনি, শুধু আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখতাম। ওকে দেখলে এক ধরনের আনন্দ হতো। সে আনন্দের দাম লক্ষ টাকা। অপরূপা বলতে যা বোঝায়, সে ছিল তা-ই।
আমরা তখন থার্ড ইয়ারে। তো একদিন এক জুনিয়র ব্যাচের নবীনবরণে মহুয়া উপস্থাপনা করছিল। আমি ছিলাম সহ-উপস্থাপক। সেদিন সে এসেছিল শাড়ি পরে। কালো চেকশাড়ি। ওর দিকে বারবারই লাজুক চাহনিতে তাকাচ্ছিলাম। এত সুন্দর লাগছিল ওকে! এমন মেয়ের কাছে এক সেকেন্ড থাকার পাপ একযুগ পুণ্যের চাইতেও সুখের।
হঠাৎ একটা ব্যাপার খেয়াল করে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। দেখলাম, ওর নাভির চারপাশে অনেক কালোকালো দাগ। আড়াআড়ি। মোটা মানুষ শুকিয়ে গেলে শরীরে যেমন ফাটাফাটা দাগ পড়ে, দাগগুলি তেমন।
কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। মহুয়ার শরীরে দাগ থাকবে কেন? আশ্চর্য!
অথচ ওটাই ছিল বাস্তবতা। একজন সুন্দর মানুষের শরীরে দাগ থাকতেই পারে। অদৃশ্য। ওটা সম্পর্কে জানার পর আমি তা মেনে নিতে পারি না পারি, সেটা আমার সমস্যা, তার নয়। যে সুন্দর, সে দাগসহই সুন্দর। যে সুন্দর নয়, সে দাগ ছাড়াও সুন্দর নয়। সুন্দরকে গ্রহণ করতে হলে দাগসহই গ্রহণ করতে হবে। এটাই নিয়ম।
আমরা কাউকে অনেক পছন্দ করতে পারি, জীবনের আদর্শ মানুষ হিসেবে মানতে পারি। এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, এতে তার কিছু এসে যায় না। তার অনেক রকমের দাগ থাকতে পারে। অদৃশ্য। কখনো সেসব চোখে পড়লে সেসব মেনে নিয়েই তাকে তার মতো করে গ্রহণ করতে হবে। নতুবা তাকে বিরক্ত না করে তাকে তার মতো থাকতে দিতে হবে।
কাউকে, সে যেমন, তেমন করে মেনে নিতে পারার নামই ম্যাচুরিটি।
(ভাল কথা, মহুয়ার নাম মহুয়া নয়।)
দুই। যে কাজটা নিজের জন্য, সে কাজটা মেয়েরা নিজ যোগ্যতাতেই করতে ভালোবাসে। যে কাজটা করতে ওর অন্ততঃ এক সপ্তাহ খাটতে হবে, সে কাজটা হয়তো ওর হাজব্যান্ডের একটা ফোনকলেই কয়েক সেকেন্ডে হয়ে যাবে, তবু মেয়েটা সে কাজটা করে দেয়ার জন্য ওর হাজব্যান্ডকে কখনোই রিকোয়েস্ট করবে না। এ এক অদ্ভুত মেয়েমানুষি ইগো! পৃথিবীসুদ্ধ লোকের কাছে ধর্ণা দেবে দরকার হলে, অথচ ওর হাজব্যান্ড কাজটা সম্পর্কে জানতেই পারবে না। মেয়েদের কাছে নিজের সামর্থ্যে একটা চুলের কাঁটা কেনাও হাজব্যান্ডের সামর্থ্যে আস্ত গাড়ি কেনার চাইতে অধিক তৃপ্তির।
এমন সংসার অনেক আছে। এমন সংসার প্রায়ই অসুখী সংসার।
তিন। চাকরিতে সম্পাদনের চাইতে প্রদর্শনের কদর বেশি।
চার। ইনবক্সে গল্প করার সময় কী কী বিষয় নিয়ে কথা বলতে আপনি ঘৃণা ও বিরক্তি অনুভব করেন?
আমার উত্তরটা দিচ্ছি:
রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা, ক্যারিয়ার, আমার চাকরি, আমার পরিবার, অন্যের গীবত, বিসিএস প্রস্তুতি ইত্যাদি।
পাঁচ। যারা এইচএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করেছ, তাদের বলছি, মন খারাপ কোরো না। কত লোককেই তো দেখলাম পরীক্ষায় পাস করে আর জীবনে ফেল করে। পরীক্ষায় পাস কি ফেল যা খুশি করো, তবে জীবনে পাস কোরো, ওটাই আসল। কে কেবল পরীক্ষায় পাস করল, আর কে জীবনেও পাস করল, তা বুঝতে পারবে আরো বছর দশেক পর। এখনো কিছু বলার সময় আসেনি। পরীক্ষায় পাস, জীবনে ফেল, এমন লোকের কোনো দাম নেই। বরং পরীক্ষায় ফেল, কিন্তু জীবনে পাস, এমন লোকেরই জয়জয়কার।
যে নিজের কাছে হেরে যায় না, তাকে পুরো পৃথিবী মিলেও হারাতে পারে না।
ছয়। আপনি যা খুঁজছেন, তা আপনার সামনে নাও পড়তে পারে। তবে আপনার জন্য যা ভাল, তা আপনার সামনে পড়বেই পড়বে! সেটা গ্রহণ করা না করা, আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সবাই সময়ের জিনিস সময়ে গ্রহণ করতে জানে না, পরে কখনো বলে বসে, আমার ভাগ্যে ছিল না, তাই হয়নি। যা খুঁজলাম, কিন্তু পেলাম না, তা আমাদের মনে থাকে, ফলে তা আমাদের আফসোসে ডোবায়। যা পেলাম, কিন্তু নিলাম না, তা আমাদের খুব একটা মনে থাকে না, ফলে তা আমাদের দুর্ভাগ্যে ডোবায়।
কীভাবে এমন হয়, এর কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। আমি এমন হতে অনেক দেখেছি, তাই বললাম। আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
সাত। এ পৃথিবীতে ছোটো হয়ে বাঁচাই ভালো, তাহলে নিজেকে কখনও আশ্রয়হীন মনে হয় না। পৃথিবীর সবখানেই ছোটো জিনিসের জায়গা আছে, কিন্তু বড়ো জিনিসের জায়গা নেই।
আট। সোনার মুকুট সোনার মুকুটই। যারা মুকুটটা পরতে পারলো না, তারা যতই বলুক না কেন সে মুকুটের সোনা খাদমেশানো কিংবা অন্যকিছু, মুকুটধারীকে রাজা মানতেই হয়। Rule or be ruled! যে যোগ্য, সে সব সময় মুকুট না-ও পরতে পারে, তবে যে মুকুট পরে, সে সব সময়ই যোগ্য। এটাই বাস্তবতা, অতএব, এটাই জীবন।
ক্রিকেট খেলা যে কত অবিশ্বাস্য আর উপভোগ্য হতে পারে, আজকের ম্যাচ তা বুঝিয়ে দিলো।
ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের মতো এত ভদ্র দুইটি দল ফাইনাল খেললো, এটা ক্রিকেটের জন্য পরম পাওয়া।
নয়। খেলাটা খেলেই জিততে হয়, বলে নয়। বিজয়ীরা খেলে, বাকিরা বলে!
অবিশ্বাস্য একটা ম্যাচ!! এমন ম্যাচ জীবনে প্রথম দেখলাম!
সবচাইতে যোগ্য দল হিসেবেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতলো। আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে আজকের ম্যাচ থেকে।
দশ। বিপদে পড়লে তবেই বোঝা যায়, পৃথিবীতে তেমন কেউই আমাদের জীবনে অপরিহার্য নয়।
বিপদে দুই ধরনের মানুষই বেশি পাবেন। যারা চুপচাপ দেখে যায়। যারা বিপদ আরো বাড়িয়ে দেয়। (এ দুর্ভাগা দেশে বিপদ বাড়িয়ে দেয়ার কাজটাই বেশি জনপ্রিয়।)
বিপদ কেটে গেলেও দুই ধরনের মানুষই বেশি পাবেন। যারা দাবি করবে তারা আপনার জন্য চেষ্টা করেছিল। যারা বলবে সত্যের জয় হয়েছে। (আপনার বিপদ না কাটলেও তারা একই কথাই বলত।)
আপনার বিপদের দিনে যারা কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক, সে বিচার করতে বসে, তারা আর যা-ই হোক, কিছুতেই বন্ধু নয়। ওদের চিনে রাখুন, ক্ষমা করে দিন, তবে ভুলে যাবেন না।
ভাবনা: ছয়শো আটাত্তর
………………………………………………………
এক। যে কাজে আমার ভালোবাসা, আগ্রহ, কিংবা স্বার্থ নেই, সে কাজে আমি সময় দেবো না। এর নামই ব্যস্ত থাকা।
দুই। দুর্বল সবলকে হারতে দেখে সুখ পায়।
তিন। বিপদে পড়ার সবচাইতে বড় লাভ হল এই, সবার আসল চেহারা চেনা হয়ে যায়।
চার। আপনার পড়া সেরা কথাটি শেয়ার করুন।
আমারটা করছি:
শুধু বেঁচে থাকতে পারলে, কোনওরকমে কেবলমাত্র বেঁচে থাকতে পারলেও জীবনে কত কী যে হয়!
লেখক: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
উপন্যাস: সাঁতারু ও জলকন্যা
(কথাটি আমার জীবনের সাথে অবিকল মিলে যায়, তাই খুব ভাল লাগে।)
পাঁচ। On a different note, এই যে আফগানিস্তান একটা ম্যাচও জিততে পারল না, ওরা বিশ্বকাপে কেন গেছে? খেলতে? নাকি লেবু-চা বেচতে? যারা পারফর্ম করতে পারে না, ওরাও কেন মাঠে নামে? লেবু-চা বেচতে?
ছয়। মানুষের জীবনে সবচাইতে অসহায় মুহূর্ত হল তখন, যে বয়সে তাকে অশ্রু মানায় না, সে বয়সেও যখন তাকে কাঁদতে হয়। সে সময় তার অস্তিত্ব সবচেয়ে নিরাপদ থাকে স্বপ্নে। যে জীবনকেই সে সহাবস্থানের প্রস্তাব দেয়, সে জীবনই তার কাছে অচেনা হয়ে যায়। সে তখন আর কিছুই খুঁজে পায় না। যা কিছুই শুরু করে, তা আর শেষ করতে পারে না। খুব কষ্ট, খুউব!
সাত। বেকার ও পরনির্ভরশীল যুবকদের প্রায়ই নিজের কাছে এবং অন্যের কাছে নানান ক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজয় স্বীকার করে নিতেই হয়, সে পরাজয় প্রাপ্যই হোক, কিংবা অপ্রাপ্যই হোক।
আট। অন্যের হাঁড়িতে চাল চড়লে তবেই আমার কপালে ভাত জুটবে, এমন আশা যার, তার অনাহারেই দিন কাটে।
নয়। দুইটি বিষয়ের প্রতি বেশিরভাগ পুরুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা কাজ করে:
সেক্স
সন্তান
অথচ, এই দুই আনন্দেরই যন্ত্রণা বহন করতে হয় নারীকে।
দশ। অনেকের ঘোরার সময় আছে, টাকা নাই।
অনেকের ঘোরার টাকা আছে, সময় নাই।
অনেকের ঘোরার টাকাও আছে, সময়ও আছে, কিন্তু ঘোরার মন নাই।
কারো কারো ঘোরার টাকাও নাই, সময়ও নাই, তাদের ঘোরার দরকারই নাই।
আপনি কোন দলে পড়েন?
এগারো। কিছুকিছু বড় কষ্ট ছোট কষ্টকে গিলে ফেলে, আর কিছুকিছু ছোট কষ্ট মানুষটাকেই গিলে ফেলে।
বারো। সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি ওজন রে………..
তেরো। সফল হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন ব্যক্তিরাই পরবর্তীতে সমালোচক হয়ে ওঠেন।
চৌদ্দ। যেখানে সীমানা পিলারই নেই, সেখানে ‘সীমানা পিলার থেকে ২০ ফুট সামনে বা পেছনে’ এমন কোনো কথা অর্থহীন।
যেখানে সম্পর্কই নেই, সেখানে ‘সম্পর্কের উন্নতি বা অবনতি’ এমন কিছু একই রকমের অর্থহীন।
দেখছি, কত সম্পর্কই সম্পর্কহীন অবস্থায় ‘টিকে’ আছে! যারা রিলেশনশিপে আছে, তারা যে আসলে কীসের মধ্যে আছে, তা নিয়ে ভাববার সময়ই তাদের নেই। ‘রিলেশন’ করতেকরতেই সবটুকু সময় শেষ হয়ে যায়! আহা, কী আনন্দ আকাশেবাতাসে! ওরা চোখে যতটা দেখে, মনে ততটা দেখে না।
নেই প্রেম, নিজেকে সম্পর্কে ভোলায়,
নেই টাকা, গাধায় মানিব্যাগ দোলায়!
উড়ছে সবাই! উড়ুক না! ঠিক ঘুড়ি ঠিকই ঠিক ঠিকানায় যায়। ব্যাপার নাহ্!!
পনেরো। The gift you bring with you defines you to the host. Have a rich heart, have a richer moneybag.
ষোলো। যার উপর আস্থা রাখা যায় না, সে আর যা-ই হোক, কিছুতেই ম্যাচুউরড না। এ ধরনের কারো সাথে মিশলে পস্তাতে হয়।
সতেরো। তুমি ব্যক্তিটি এখনো কেউ নাও হতে পারো, কিন্তু তা-ই বলে ব্যক্তিত্বহীন হয়ো না।
আঠারো। যাদেরকে সময় দেন, তাদের কাছ থেকে শেখেন। যার কাছ থেকে শেখার কিছু নাই, তাকে সময় দেয়ার কী আছে? আপনার জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটা আপনি কাউকে দিতে পারেন, সেটা হচ্ছে সময়। কারো কাছ থেকে কোনো কারণ ছাড়া সময় আশা করে বেকুবরা। যে আপনাকে তার সময়টা কোনো কারণ ছাড়াই দিতে পারে, সাধারণত তার সময়টা পেয়ে আপনার তেমন কোনো লাভ নাই।
উনিশ। A 6-crore life is sexier than a 6-pack life!!!
বিশ। ওদের খোঁজখবর রাখি, রাখতে ইচ্ছে করে।
ওরা কেউই ওদের ব্যাকগ্রাউন্ড অনুযায়ী তেমন কিছু করতে পারেনি। আমি বিশ্বাস করি, করতে পারবেও না।
…………….প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। অবশ্যই নেয়।
একুশ। তীব্র কষ্ট পেতে আমরা কতটা ভালোবাসি, ভালোবাসা তা প্রমাণ করে দেয়…….
কোনও বাঁধনেই যেন ভালোবাসাদের বেঁধে রাখা যায় না।
নিখুঁত ভালোবাসার নিরেট আবরণ একেবারে ঝাঁঝরা করে দিয়ে ক্ষুদ্র কোনও বিন্দুপথে ভালোবাসারা মিলিয়ে যায়।
এমনই প্রচণ্ড কষ্ট দিতে ভালোবাসারা একদিন মর্ত্যে আসে। আর অজস্র প্রাণ………প্রাণভরে তাদের ভালোবাসে।
খুব মন কাঁদলেও
কোনও বরষায়ই আর
তাদের কাছে যাওয়া যায় না।
ভালোবাসাদের………আসলে কেবল একটি জন্মদিনই থাকে। তারপর তারা চিরদিন থেকে যায়—হৃদয়মাঝে। ঘন লোনা জলে, ভালোবাসায়, জলজ হয়ে বেঁচে থাকে।
চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে………
প্রিয় হুমায়ূন, যে মানুষটা স্মরণেই থাকে, তাকে আবার কেমন করে মন স্মরণ করে?
বাইশ। আমি লিখতে চাই না, কিন্তু লেখারা মনে, মস্তিষ্কে যন্ত্রণা করে। লেখা কিংবা নিজের সাথে কথাবলা, যেটাই বলি, এ এক অদ্ভুত ব্যাপার! নিজের সাথে কথা বলে ফেলা বা না বলা—দুইই কষ্ট দেয়ার প্রচণ্ড ক্ষমতা রাখে!
এই দুই কষ্টের, ঠিক কোন কষ্টটা মন অবলীলায় গ্রহণ করতে পারবে, সেটা সবসময় ঠিক বুঝা যায় না।
লিখে ফেলা মানে—কোনও আনন্দ, কষ্ট কিংবা কিছু বুঝতে পারা না পারা-টাকে প্রমাণ করে দেয়া বা প্রমাণ রেখে দেয়া। এরপর, নিজেরই কাছে নিজে ধরা পরে যাওয়া।
মনের ভেতরের অসংখ্য যে অনুভূতি, তা প্রকাশ করে, একবার লিখে ফেললে, তা আর অস্বীকার করা যায় না। কোনও এক দুঃখকে, লিখে প্রকাশ করে ফেললে, পরবর্তীতে, জীবনের প্রয়োজনেই, সেই দুঃখকে সুখ বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও তা আর করা যায় না। লেখারা এই প্রমাণ নিয়ে বসে থাকে যে তা আসলে দুঃখই ছিল, কোনও সুখ নয়। অথচ মন, কখনও কখনও ঠিকই চায়—তা অস্বীকার করতে, নিজের সাথে নিজেই ছলনা করতে। কিন্তু সত্যিই কি তা পারা যায়? এই যে অসংখ্য বিন্দু হয়ে, প্রায় প্রতিদিনই সুখকে স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখে যাওয়া, এটা ভেতরের অনুভূতির যন্ত্রণাকে প্রমাণ করে দেয়। কখনওবা যদি কষ্টে, অভিমানে বা রাগে মন বলতেও চায়—মানুষটার প্রতি আমার কোনও অনুভূতি নেই, তবে সেটা কিন্তু আর বলা যায় না।
প্রচণ্ড……………(এই মুহূর্তেই রাত ৩টার উপরে বাজে। জানালায় একটা চোর এসে পর্দা সরাল! রুমে আমি একা, বেশ ভয় পেলাম! একটা কাঠের মোড়া নিয়ে জানালায় বিকট শব্দে বাড়ি দিয়ে, চোর চোর বলে চেঁচাতেই চার তলা থেকে সানসেট বেয়ে চোর দ্রুত নেমে গেল। আর এই চোর তাড়াতে গিয়ে, আমি একেবারেই ভুলে গেলাম কী লিখছিলাম! থাক, বাকিটা পরে লিখব।)
তেইশ। কেউ ভোগে তুমিহীনতায়, কেউ ভোগে পাত্তাহীনতায়। এভাবেই লেখা হয় প্রেম ও দ্রোহের ইতিহাস।
ভাবনা: ছয়শো উনআশি
………………………………………………………
এক। কিছু গান আছে, কিছু সুর আছে, যেগুলি আমাদের একদম অন্য কোথাও নিয়ে ছেড়ে দেয়। সেখানেই থেকে যাই। সেখানে থেকে যেতে বড়ো ভাল লাগে। ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না। মনে হয়, এখানেই থেকে যেতে পারলে জীবনটা কাটাতে অনেক ভাল লাগত। গানের কথা ও সুর, এই দুই নিয়ে থাকতে খুব আরাম লাগে। গানের মধ্যে যে দর্শন আছে, জীবনের যে গল্পটা আছে, তা নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে, নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখতে ক্লান্তি আসে না এতটুকও।
‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ মুভিতে এমন দুটো গান আছে। একটি সখি হাম মোহন অভিসারে জাউঁ, আরেকটি ক্যায়সি আজিব দাওয়াত হ্যায় ইয়ে। এই দুইটি গান শুনতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে হয়। এমনও তো হতে পারত, এই দুইটি গানের জন্মের আগেই আমি মরে গেছি! বেঁচে থাকলে কিছু সুন্দর সুর, কিছু সুন্দর কথা প্রাণে ছোঁয়ানো যায়। সেগুলিকে চোখে ও মনে ছুঁইয়ে দিতে খুব দারুণ লাগে, এক ধরনের সুখ অনুভব করা যায়। কখনও টুক্ করে কোনও এক ঘিঞ্জি ঘুপচিতে মটকা মেরে পড়ে থাকা—বেঁচেথাকার মানেই তো এটা! সত্যিই, কিছু জিনিয়াস মানুষের জন্যই আমাদের বেঁচেথাকাটা আরও সুন্দর হয়েছে, দিনযাপনের কিছু বিষাদ আর আফসোস থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও সহজ মুক্তি মিলেছে। ঋতুপর্ণের প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা।
যে দুইটি গানের কথা বলেছি, সেগুলির মধ্যে দ্বিতীয়টিকে নিজের মতো করে অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম। এ গানের কথাগুলি ভাবলে রীতিমতো তব্দা খেয়ে বসে থাকি! একেক দিন রাত্রে ঘুম ভেঙে এ গানটা শুনি। তখন বাঁচতে বড়ো আরাম লাগে। মনে হতে থাকে, এ গান আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমি পালকের মতো হাল্কা শরীরে ভেসে যাচ্ছি। ভেসে যাচ্ছি এমন কোথাও, যেখানে আমি কখনও যাইনি, যেখানে যাওয়া যায় না। সেখানে গেছে, এমন কারুর সাথে আমার কখনও দেখা হয়নি। জায়গাটা একান্তই ব্যক্তিগত ও নির্জন। এমন আন্তরিক পর্যটনে সঙ্গী হয়ে ওঠে সুর, তার সাথে থাকে গানের সহজিয়া প্যাথোস।
পড়ুন, ভাবুন। ভুল হলে মার্জনা করবেন।
…………………………………………………………………………………………
এ কেমন আশ্চর্য নিমন্ত্রণ!
কেউ আমাকে আসতে বলেনি।
এসে দেখি, কেউ নেই এখানে।
ঘর খালি, ঘরের মালিক অন্য কোথাও।
এ কেমন আশ্চর্য নিমন্ত্রণ………
এ নিমন্ত্রণ সত্যি আশ্চর্য!
কার অপেক্ষাটা কে করে আছে!
যে ঘরের অতিথি ছিলাম,
সে ঘরটাই দেখি কাঁধের উপর!
এ নিমন্ত্রণ সত্যি আশ্চর্য………
ভোজটা বুঝি শেষ হয়ে গেছে;
দেখি, ঘরে ফিরছে সবাই……
আমিই একা দাঁড়িয়ে আছি, অনাহূত হয়ে।
আহা, ফিরে আসত যদি ঘরের মালিক!
দুই। মানুষ দুইটা সময়ে সবচাইতে বেশি সম্মান পায়। এক। সে যেদিন বিয়ে করে। দুই। সে যেদিন মারা যায়।……….বিয়ে তো আমরা সবাইকেই করতে দেখি না। তবে মৃত্যুর পর মৃতদেহের প্রতি সম্মান সবাইকে পেতে দেখি। সব ধর্মেই মৃত ব্যক্তিকে সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে। আমরা যখন বেঁচে আছি, তখন আমরা দেখতে পাই, কে আমাদের সম্মান করছে, কে করছে না। অনেকেই আমাদের সম্মান করে আমাদের দেখাতে কিংবা খুশি করতে। মৃত্যুর পর আন্তরিক সম্মান কয়জনই বা করে? কিংবা আদৌ করে কি কেউ? আমরা তো তখন দেখতে পাই না, বুঝতে পারি না কে সম্মান করছে, কে করছে না। পুরো পৃথিবী আমাদের অনুভূতি থেকে মুক্ত। বেঁচেথাকার সময় কত কায়দা করে রং মেখে নিজের নানান ইচ্ছেপূরণ করে বাঁচি। আর মৃত্যুর পর? কেউ আমাদের নাম ধরেও ডাকবে না। মৃতদের সবার নাম একটাই: লাশ কিংবা শব। তখন আমরা সাজলাম কি সাজলাম না, পরিচ্ছন্ন কি অপরিচ্ছন্ন, শেষযাত্রার জন্য প্রস্তুত কি অপ্রস্তুত, এইসব কিছুর তোয়াক্কা কে-ইবা করে? জাপানি মুভি ওকুরিবিটো (ইংরেজি তর্জমায় ডিপারচারস) মৃতদের তোয়াক্কা করতে শেখায়।
ডাইগো অর্কেস্ট্রাতে চেলো বাজায়। চাকরি চলে গেলে সে আরেকটা চাকরি নেয়। এনকফিনারের চাকরি—অন্যের মৃত্যুর উপর ভর করে টিকে থাকার চাকরি। মৃতদেহ পরিচ্ছন্ন করে যথাযোগ্য রীতিতে সাজিয়ে সম্মানের সাথে কফিনে রেখে দেয়ার কাজ। কাজটি খুব যত্নের সাথে করতে হয় ভালোবাসা ও মর্যাদা দিয়ে। সে সময় মৃত ব্যক্তির পরিবার ও পরিজন আশেপাশে থাকেন, তাঁরা বিভিন্ন আচার পালন করেন। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা মানুষকে জীবিতদেরই সময় দিতে দেয় না, সেখানে মৃতদের এতটা সময় দিয়ে মুছে, পরিচ্ছন্ন করে, নানা উপচার দিয়ে সাজিয়ে সৎকারের জন্য প্রস্তুত করার কথা কারো মাথায় আসার কথা নয়। এনকফিনাররা সেই কাজটাই করে। সব ধর্মের, সব গোত্রের, সব পেশার মানুষেরই মৃত্যুর পর তাঁদের কাছের লোকজন এ সেবা পেতে পারেন। জীবিতদের সাথে জীবিতদের যে সম্পর্ক, জীবিতদের সাথে মৃতদের সম্পর্ক কিন্তু ভিন্ন রকমের। একজন মানুষ যেদিন মারা যান, সেদিন থেকে তাঁর সাথে আমাদের নতুন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। নতুন সম্পর্কের শুরুটা করে দেয় এনকফিনাররা। তাদের হতে হয় নিখুঁত, পেশাদার। যে মৃতদেহটি সমাজসুদ্ধ লোকে অবজ্ঞার চোখে দেখে, সেটিকেই পরম যত্নে সৎকারের জন্য তৈরি করা—নিঃসন্দেহে খুবই সম্মানজনক কাজ।
প্রথম দিকে ডাইগো চাকরিটাকে সহজভাবে নেয়নি। একসময় সে কাজটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী যেদিন এ চাকরি সম্পর্কে জানতে পারে, সেদিনই ডাইগোকে বলে চাকরিটা ছেড়ে দিতে। ততদিনে মৃতদের প্রতি ডাইগোর এক ধরনের কমিটমেন্ট তৈরি হয়ে গেছে। কাজটাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। সে তার স্ত্রীর কথা রাখতে পারে না। সময়ের সাথেসাথে স্ত্রীও ডাইগোর চাকরিটাকে মেনে নেয়। ডাইগোর বাবার মৃত্যুর পর ডাইগোর স্ত্রীই তাকে অনুরোধ করে যাতে সে বাবাকে শেষযাত্রার জন্য তৈরি করে দেয়। ডাইগো তার বাবাকে সহ্য করতে পারত না, কারণ বাবা তার ছোটবেলায় তার মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সেই বাবার মৃতদেহটিকে কফিনে ওঠানোর আগে প্রস্তুত করার সময় ডাইগোর চোখ গড়িয়ে জল পড়ছিল। কাছের কাউকে স্পর্শ মানুষকে প্রবল মমত্ববোধে আক্রান্ত করে দিতে পারে। মৃত ব্যক্তির উপর কারো কোনো রাগ থাকে না। আর যদি ঘৃণিত মৃত ব্যক্তিটি হন বাবা, তবে ঘৃণার আগুন ভালোবাসার অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে।
এ মুভির একটা ডায়লগ মনে গেঁথে গেছে: তোমার জীবনের শেষ কেনাকাটাটি অন্যরা করে দেয়।………..কফিনকেনা নিয়ে এই কথাটি বলা হয়েছে। এ মুভি যতই সামনের দিকে এগোয়, ততই মনে হতে থাকে, মৃত্যুর আগেই যতটা বেঁচে নেয়া যায়, বেঁচে নাও! মৃত্যুর পর তোমার ছায়াটাও তো সাথে আর থাকবে না। বেঁচেথাকাই আনন্দ। মুভির গল্পটা মূলত মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের গল্প। এমন কোনো উপায়ে বাঁচাটা অপরিহার্য নয়, যেমন করে বাঁচলে মৃত্যুর সময় কারো অভিশাপ নিয়ে মরতে হয়। মুভির প্রোটাগনিস্ট ডাইগো খুব কাছ থেকে অনেক মানুষের মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করে। যতই মৃত্যুকে দেখে, ততই সে জীবনকে চিনতে পারে। যখন ডাইগোর চেলোতে অমর সুর বেজে ওঠে, তখন যে সে সুর জীবন ও মৃত্যুকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে আমাদের মনে হাজারো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। এ মুভির প্রসঙ্গ জীবন ও মৃত্যু। বারবার মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েও সিনেমাটি আমাদের এক ধরনের নিরুত্তাপ, নিরাবেগ, নাটকীয়তা বর্জিত পরিবেশেই রেখে দেয় শেষ পর্যন্ত।
মুভিতে বলে, অতীতে যখন বর্ণমালা আবিষ্কৃত হয়নি, তখন মানুষ পাথর-চিঠির মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করত। পাথরের ওজন এবং গঠনবিন্যাস পাথরদাতার মনের খোঁজ দিত। যেমন, মসৃণ গঠনের পাথর দাতার শান্তিপূর্ণ মনের খোঁজ দিত, আবার অমসৃণ গঠনের পাথর বলে দিত, কারো কথা ভেবে দাতার মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে। ‘ডিপারচারস’ আমাদের হাতে কিছু পাথর-চিঠি ধরিয়ে দেয়। পাথরগুলির মধ্যে কিছু মসৃণ, কিছু অমসৃণ, আবার কিছু এমন, যা মসৃণও নয়, অমসৃণও নয়।
তিন। অনেক দূরে চলে গেছে, এমন কাউকে মনের মধ্যে যত্নে রেখে দিয়ে, প্রতিদিনই প্রেমে আর প্রার্থনায় বেঁধে বাঁচতে খুব শান্তি লাগে। যাকে রাখছি, সে কখনও জানতেই পারবে না যে রাখছি, এটা ভেবে এক ধরনের স্বস্তি হয়। আমি মরে গেলে সে ফেসবুকের কল্যাণে জানবে হয়তো, তবু জানবে না, এই মানুষটি আমাকে ভালোবেসে তার জীবনটা কাটিয়ে দিল! এই নিভৃত ভালোবাসা অমূল্য! ধরা পড়ছি না, অথচ সেই কবে থেকেই ধরা খেয়ে আছি—এমন স্নিগ্ধ অনুভূতি চোখের ভেতরে আটকে থাকে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফোটে, চোখের সত্যবদ্ধ অনুভূতি ঠোঁটও বলে দেয়। মানুষটার কথা মনে এলেই হৃদয় নেচে ওঠে, খুব কষ্টের মধ্যেও মানুষটা সঙ্গ দেয়; বলে, কাঁদছ কেন? আমি আছি তো!……….একাকিত্ব এসে গ্রাস করে না আর। প্রায়ই, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠি: তোমাকে পাইনি বলেই তো এতটা পেলাম! ধন্যবাদ, প্রিয়তমা!
চার। পৃথিবীর শয়তান মানুষগুলি বেশি ভালোবাসা পায়। যেমন, আপনি।
পৃথিবীর ভাল মানুষগুলি অল্প ভালোবাসা পায়। যেমন, আমি।
পৃথিবীর বাকি মানুষগুলির এই স্ট্যাটাস পড়ার সময় নেই, ওরা ভালোবাসাবাসি করছে আর আমাদের কথা ভেবে হাসছে।
যারা পারে, করে। যারা পারে না, স্ট্যাটাস দেয় আর পড়ে।