(এই লেখাটি আমি বিয়ে করার আগে লিখেছিলাম। তাই এ লেখায় আমার ভাবনা সম্পূর্ণই ‘অবিবাহিত আমি’র ভাবনা।)
এখন এটা আমার কাছে প্রমাণিত সত্য, ১বার বিয়ে করার চাইতে ৫বার বিসিএস এ ফার্স্ট হওয়া ঢের সহজ। প্রিলিতে পাস করে ফেললে রিটেনে কিছু গৎবাঁধা টেকনিক ফলো করলে আপনি বিসিএস পরীক্ষায় ১ম ১০জনের মধ্যে থাকতে পারবেনই! বিসিএস পরীক্ষা মূলত রিটেনে ভালো করার পরীক্ষা। আর বিয়েটা যে কীসে ভালো করার পরীক্ষা, সেটা আমার কাছে আজও এক অমীমাংসিত রহস্যই রয়ে গেল! তার উপর আমি বিয়ের কিছু-কিছু ব্যাপারে খুবই সনাতনপন্থী চিন্তাভাবনা করি। প্রেম আর বিয়ে, এই দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। তাই বুঝি শতকরা ৮৫ ভাগ প্রেমই অসফল প্রেম। অসফল এই অর্থে, ওসব প্রেমে বিয়ে হয় না। আমি তো মাঝেমধ্যেই ভাবি, আমার হবু বউটাকে ওর বয়ফ্রেন্ড ঠিকঠাক মতো দেখেশুনে রেখেছে তো? ওর যেন এতটুকুও অযত্ন কিংবা অবহেলা না হয়! মেয়েরা বেড়ালের মতো। শুধু একটু সোহাগ পেলেই বেজায় খুশি। সে সোহাগ মেকিই হোক, আর আসলই হোক। একটু আদর করে বললে গলে যায় না, এমন মেয়ে মেয়েই না! সে মেয়ে তো মহামেয়ে! তাই এই কাজে ছেলেদের হিপোক্রিট হতে হয়। ওরা হয়ই! ওতে যে প্রাপ্তি বিশাল! আমার কাছে অনেকসময়ই প্রেমটেম খুবই বিচ্ছিরি ব্যাপার মনে হয়েছে। ওরকম প্রেমেটেমে পড়ে মাথা খারাপ হওয়া ছাড়া আর কোনও লাভ কার কবে কোথায় হয়েছে, সে খোঁজ আমি কম জানি। সবকিছুকেই এই প্রেমের কাছে আপাতভাবে তুচ্ছ মনে হয়। যে ব্যর্থ-প্রেমে পড়ে, একমাত্র সে-ই জানে, প্রেমে পড়ার চাইতে আজন্ম-ডায়রিয়া হওয়াও ভালো। প্রেমে পড়ার পর মনে হয়, এইতো জীবন! প্রেম ভেঙে গেলে মনে হয়, হায়! ওটাও একটা জীবন ছিল! এ-ই হয়ে আসছে। সামনেও হবে। ‘তোমায় ভালোবাসি’ দিনে চৌদ্দবার বললে এটাই সত্যি হয়ে ওঠে একটাসময়ে। অথচ আসলেই ভালোবেসে ফেললে সেটা মুখ ফুটে বলতে কয়েক যুগ লেগে যাওয়ার কথা! ‘ভালোবাসি’ বলে কাছে আসাটাকে আমার কাছে বরাবরই অসুস্থ ও অরুচিকর বলে মনে হয়েছে! কাছে আসতে ইচ্ছে করলে ‘ভালোবাসি’ বলতেই হবে কেন? মানুষ কখনও-কখনও নিজের ভেতরের আয়নার সামনে ‘পরিশুদ্ধ’ থাকতে মিথ্যেটাকেই আশ্রয় করে সত্যিকারের পৃথিবীতে নিজের খেয়ালখুশিমতো বাঁচে।
আমি এসব লিখতে বসিনি। আমি এই দুইদিন ভেবে দেখলাম, আমি অতি টিপিক্যাল ধরনের পুরুষমানুষ। আমার মধ্যে মহত্বের ছোঁয়াটোয়া তেমন নেই বললেই চলে। যেটা আছে, সেটা হলো নিজের মতো করে ভালোবাসার অসীম ক্ষমতা। বিয়ে করার ক্ষেত্রে আসলে কী ধরনের মেয়ে আমার পছন্দ? সে মেয়ে, যে মেয়েকে আমি অনেকটাই আমার মতো করে পাবো। জানি, অতি নিচু ধরনের স্বার্থপর প্রবৃত্তি; তবুও! মেয়েরা মেয়ে হওয়ার ক্ষেত্রে মোটামুটি একইরকমের হলেও প্রেমিকা এবং বউ হওয়ার বেলায় একেকজন একেকরকমের। যে যেরকমভাবে থাকে, সেটাই তার নিজস্ব স্টাইল। এবং কোনও স্টাইলই ভুল নয়। যে যার মতো করে ঠিক। আমার দর্শন হলো, আমি যার জীবনদর্শন পছন্দ করবো না, তার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসবো। ওর মতো করে বাঁচে, এমন লোকজনকে নিয়ে ও বাঁচুক। ওর একটা নিজস্ব পৃথিবী আছে। সে পৃথিবীর বাসিন্দারা সবাই কমবেশি ওর মতোই। আমি ওর টাইপের না, তাই আমি ওকে ওর মতো থাকতে দিয়ে আমি আমার মতো করে থাকবো। একজন খুনিও তার নিজের সন্তানের কাছে দেবতাতুল্য! বিয়ে করার ব্যাপারটাও অনেকটা ওরকম গ্রহণযোগ্যতার বিচারে ঘটে থাকে। আমি একটা মেয়ের ভাবনা পছন্দ করি না মানে এটা নয় যে, সে মেয়েটি ভুল আর আমি ঠিক। বরং সে আমার জন্য নয়, এবং আমিও ওর জন্য নই। ওকে ওর মতো করে থাকতে দেবে, এমন কাউকে নিয়ে ও থাকুক। আমি যেভাবে ভাবি, সেভাবে করে ভাবে, এমন কাউকে নিয়ে আমি থাকবো। এইতো! তবে এটাও সত্যি, এ পৃথিবীতে দুইজন মানুষের চিন্তাভাবনা কখনওই হুবহু একইরকমের হওয়াটা সম্ভব নয়। তাই শতকরা ৭০ ভাগ ভাবনা মিললেই একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া যায় বলেই আমার মনে হয়। বাকি ৩০ ভাগ মানিয়ে নেয়া যায়। আমার নিজের জীবন থেকেই বলছি, এক মেয়েকে সত্যি সত্যিই খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম, ২ মাসের মতো প্রেমও চলেছিল। আমি বিশ্বাস করি, ও নিজেও আমাকে ভালোবাসতো। আমি নিম্ন আদিম প্রবৃত্তির মানুষ বিধায়, প্রেম ও বিয়ের ক্ষেত্রে ‘প্রথমে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী’ নীতিতে চলি। যার কথা বলছি, সে দেখতে অনেক ভালো ছিল, হাইটও ভালো, মানসিকতাও বেশ ভালো। (দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পড়াশোনায়ও অনেকবেশিই ভালো ছিল।) সবচাইতে বড় কথা, সবদিক দিয়েই ও একজন ভালোমানুষ। আমাদের দেখা হয়েছিল ৩বার। আমরা একই শহরে থাকতাম না, দেখাও হতো না অতো, কিন্তু পরস্পরকে অনেক ভালোবাসতাম। সে ভালোবাসা ছিল মনের, শরীরের নয়। যে ভালোবাসা নিছকই শরীরনির্ভর নয়, সে ভালোবাসায় পরম নির্ভরতা থাকে, বিশ্বাস থাকে। সে ভালোবাসা অনেকটাই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সে ভালোবাসার গাঢ়ত্ব অনুভব করতেও বাড়তি শক্তি লাগে! সবকিছুকে ছাপিয়ে উঠেছিল যে ব্যাপারটা, সেটি হলো, আমরা একে অপরকে অনেক শ্রদ্ধা করতাম। ২ মাস পর আমরা ঠিক করলাম, আমরা বিয়েটা করবো না। আমি ওর টাইপের না, ও আমার টাইপের না। শুধু ভালোমানুষ হয়েই একসাথে থাকা যায় না। অন্তত কিছু-কিছু ব্যাপার মিলতেই হয়। ও বিশ্বাস করতো, Career first! আমি বিশ্বাস করতাম, Life first! এটা কিন্তু অনেক বড় একটা বৈপরীত্য। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, ও যাতে জীবনটাকে ক্যারিয়ারের উপরে রাখে। ও অনেক চেষ্টা করেছে, আমি যাতে ক্যারিয়ারটাকে জীবনের উপরে রাখি। আমরা কেউই ভুল ছিলাম না বলেই মনে হয়। ও ছিল ওর জায়গায় ঠিক, আমি ছিলাম আমার জায়গায় ঠিক। কিন্তু ভাবনা এবং বিশ্বাসের দিক দিয়ে ওরকম দুইমেরুর দুই বাসিন্দা একসাথে কতদিনই বা থাকতে পারবে? জীবনকে ও সাজাবে ক্যারিয়ারের সাথে মিলিয়ে, আর আমি ক্যারিয়ারকে সাজাবো জীবনের সাথে মিলিয়ে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওকে আমার মতো করে পেতে, ও নিজেও অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে ওর মতো করে পেতে। হয়নি! যা হয়েছে, তা হলো শান্তিপূর্ণ বিচ্ছেদ। ও এখন ওর মতো করে ভাবে, এরকম একজনকে বিয়ে করে (আশা করি) বেশ সুখে আছে। আমাদের বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়নি, কিন্তু আমি সবসময়ই ওর ভাবনাকে সম্মান করে যাবো। আমার ধারণা, ও নিজেও ওরকম করে ভাবে। (যদি আদৌ আমার কথা ওর মাথায় থাকে!) এটাই জীবন!
বিয়ের পর আমার স্ত্রী যে কয়েকটি ব্যাপার মাথায় রেখে চললে সংসারটা টিকবে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে, সেগুলিকে আমি মোটামুটিভাবে নিচের মতো করে ভেবেছি:
এক। আমার পরিবারের মানুষগুলিকে একেবারেই নিজের মতো করে ভাবতে হবে। আমিও ওর পরিবারের ক্ষেত্রে ওরকম করেই ভাবতে রাজি আছি।
দুই। আমার এবং আমার (ওর) পরিবারের প্রয়োজনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে সাজিয়ে নিতে হবে। আমার প্রায়ই মনে হয়, একজন মেয়ের ক্যারিয়ারই হলো, ভালো মা, ভালো স্ত্রী এবং ভালো পুত্রবধূ হওয়া। হ্যাঁ, এসব ঠিক রেখে যদি অন্য বিষয়গুলিকেও সাজানো যায়, তবে ওতে কোনও আপত্তি নেই। এটাই বাঙালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। এইজন্যই ‘গৃহবধূ’ শব্দটি বাংলায় থাকলেও ‘গৃহবর’ বলে কিছু নেই। যে স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে পারে না, তাকে অনেকসময়ই ‘ঘরজামাই’ হয়েই থাকতে হয়। শুধু শ্বশুরের টাকায় নয়, যে ছেলে নিজের বাবার টাকায় চলে বিয়ের পরেও, আমার কেন জানি তাকেও ঘরজামাই বলে মনে হয়। কিন্তু ‘ঘরবউ’ বলে ওরকম নিন্দার্হ কিছু শুনেছেন কি কখনও? না, শোনেননি। এর মানেটা কী দাঁড়াল? বাঙালি সমাজে, স্ত্রীর দেখাশোনা করবেন স্বামী। তাহলে মেয়ের অতো পড়াশোনা করে কী হলো? কেন ভাই, মেয়ে যত বেশি যোগ্য হবে তত বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন স্বামী পাবে। এটাই তো হওয়ার কথা! দুইজনই সমানতালে ক্যারিয়ারে এগিয়ে গেলে সংসারের ভারসাম্য রাখাটা অসম্ভব না হলেও কঠিন। পণ্ডিত রবিশঙ্করের স্ত্রী কিন্তু উনার চাইতে কোনও অংশেই কম যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন না। বরং সেতারে অন্নপূর্ণা ছিলেন রবিশঙ্করের চাইতেও অধিক পারঙ্গম। অথচ রবিশঙ্করকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন উনি নিজেই! রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইনের ক্ষেত্রেও তা-ই! (অবশ্য, এ নিয়ে আরও বিভিন্ন মাত্রিক বিশ্লেষণের সুযোগ আছে। অন্যকোনও লেখায় এ নিয়ে লিখবো।)
তিন। আমার বই আর বইয়ের শেলফগুলিকে সহ্য করার অসীম ক্ষমতা থাকতে হবে। আমার পোর্টেবল হার্ডডিস্ককে আছাড় মারতে ইচ্ছে করা পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু সত্যি-সত্যি আছাড় মারা যাবে না। আমি সুরে অবগাহন করার সময়ে ও যেন অসুরে মেতে না ওঠে! কারণ এসবকিছু আমার জীবনে না থাকলে ও আমাকে পেতোই না!
চার। ভালোবাসার যন্ত্রণা আমরা দুইজনই মেনে কিংবা মানিয়ে নেবো। সেটা হতে পারে রাত ৩টায় উঠে চাঁদটা ছুঁয়ে দেখতে-দেখতে ক্যাডবেরি খাওয়া কিংবা হাল্কা রঙের শাড়ি পরে চুলের খোঁপায় কোনও সাদা ফুল গুঁজে চুলের ঘ্রাণের মাদকতায় হারিয়ে যাওয়া। (বিয়ের পরও এসব ভাবনা মাথায় রেখে বাঁচা খুবই টাফ, বস!)
পাঁচ। আমি লিখতে বসলাম আর অমনিই ও বলে বসল, “এতো লিখ কেন? এতো লাইক দিয়ে কী হবে? ওঠো, ওঠো!!” কিংবা, “ওই মেয়ে তোমার ছবিতে ওই কমেন্ট করলো কেন? ওকে ব্লক কর এখুনিই!” সেটা হবে না। আমার প্রায়ই মনে হয়, লাইক না পেলে তো আমি মরেই যাবো! (এটা যদি বদলে যায়, সেটা হবে ওর একক কৃতিত্ব। আমি মন থেকেই চাই, ও আমাকে ফেসবুক থেকে জীবনে সরিয়ে আনুক, যেভাবে করে ‘অপরাজিত’ মুভিতে নায়ক বউয়ের ভালোবাসার নেশায় বিয়ের পর সেই বইটা লিখতে বেমালুম ভুল মেরে বসেছিল!)
ছয়। ওর জন্য আমি প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেবো, তবুও আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড দেবো না। আমিও ওরটা কখনওই চাইবো না। আমি তাকে সব দিতে পারি, তবুও আমার পাসওয়ার্ড দিতে পারি না। যে মেয়ের প্রিয়তম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি চালায়, কিংবা যে ছেলের প্রিয়তমা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি চালায়, দুই ধরনের প্রাণীকেই আমার কাছে ব্যক্তিত্বহীন মনে হয়। আরে বাবা, যাকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারি না, তাকে ভালোবাসারই বা কী দরকার? যাকে বিশ্বাসই করতে পারি না, তাকে ভালোবাসতেই হবে কেন?
সাত। আমি আমার নিজের দেখাশোনা করতে পারি না। এ দায়িত্বটা ওকে নিতে হবে। আমি ঠিক সময়ে খাই না, ঠিক সময়ে স্নান করি না, ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করি না। এই যেমন শীতকাল এল, গায়ে লোশন আর ঠোঁটে লিপজেল দিতে হয়, আমার ওতেও আলসেমি! শেষবার কবে গালে ক্রিম লাগিয়েছি, মনে নেই। আমি চাই, আমি বিয়ের পর এসব নিয়ে একেবারেই ভাববো না।
আট। আমার একটা বাজে অভ্যাস হলো, আমি লোকজনের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি না। পারি না মানে, একেবারেই পারি না। এতে করে আমার বন্ধু অতো থাকে না। আমি বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষী হারানোর অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। আমাকে এই ক্ষেত্রে মানুষ করার দায়িত্বটা ওকেই নিতে হবে।
নয়। আমি সামাজিকতায় অতি দুর্বল। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্করক্ষার ক্ষেত্রে আমার চাইতে অদক্ষ মানুষ আর হয় না। আমি চাই, বিয়ের পর আমি এটা ওর হাতে নিশ্চিন্তে ন্যস্ত করে দেবো। আমি চাই, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও লোকজন আমাকে ভুল না বুঝুক।
দশ। আমি প্রচুর ভুল করি। আর যখন ভুল করি; এই যেমন, কাউকে সরাসরি কথা বলে আহত করি, ভুল পথে হাঁটি, এরকম আরও অনেককিছু। সমস্যা হল, ওরকম করার সময় আমার নিজের কাছে সেটিকেই ঠিক বলে মনে হতে থাকে। আমি চাই, আমার স্ত্রী আমাকে এই ভুলগুলি ধরিয়ে দেবে, প্রয়োজনে শাসন করবে। আমার অভিজ্ঞতায় আমি জানি, ভালোবাসার শাসন অতি তীব্র! আমি তো ভুল করবোই! ভালোবাসার মানুষটির কাছে ভুল করতে না পারলে আমি যাবো কোথায়?
এগারো। আমি দুইহাতে খরচ করতে পছন্দ করি। আমি চাই, আমার স্ত্রী কৃপণ না হোক। তবে কিছু-কিছু ক্ষেত্রে আমাকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করুক।
বার। আমি খেতে ও খাওয়াতে অনেক ভালোবাসি। ভালো চাকুরে স্ত্রীর চাইতে আমার কাছে ভালো রাঁধুনি স্ত্রী-ই বেশি যোগ্য বলে মনে হয়।
তেরো। ……………… (এটা বলা যাবে না। টপ সিক্রেট!)
আরও কী কী জানি আছে! এই মুহূর্তে আর মাথায় আসছে না। আচ্ছা, পড়ে বিরক্ত লাগছে? আমি জানি, আমাকে সহ্য করা সহজ নয়। আমার মা বাদে আর কোনও মেয়ে এই কাজটি কখনও করতে পেরেছে বলে আমার মনে পড়ে না। আমি সেই মেয়েটিই চাই, যে মেয়েটি আমাকে সহ্য করতে পারবে, এবং আমিও যাকে সহ্য করতে পারবো। আমি খুবই সহজ ধরনের মানুষ, তাই সহজ মানুষ ছাড়া আর কারওর সাথে আমি চলতে পারি না, চলিও না। আমি চাই, একজন সহজ মানুষ আমার জীবনে আসুক। আমি যেরকম করে ভাবি, সেটা অকপটে বললাম। আপনি যেমন আপনার মতো, তেমনি আমিও আমার মতো। আপনার জীবনদর্শন নিয়ে যেমন আমার কোনও মাথাব্যথা নেই, তেমনি আমি চাই না আমার জীবনদর্শন নিয়ে আপনার বিন্দুমাত্রও মাথাব্যথা থাকুক। আপনার যেসকল দিক আমার পছন্দ, সেগুলিকে যেমন আমি প্রশংসা করি, তেমনি যেগুলি আমার পছন্দ নয়, সেগুলি নিয়ে চুপ করে থাকি। কারণ আমি জানি, এটাই আপনার জীবনযাপনের ধরন। আপনি তো আর আমাকে খুশি করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দুনিয়াতে আসেননি, তাই না? আপনি যেভাবে করে বাঁচলে ভালো থাকবেন, সেভাবে করেই বাঁচবেন। অন্যরা কে কী বলল, কী বলল না, সেটা মাথায় নিয়ে চললে তো বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে যাবে। ঠিক একইভাবে, আমি যা, তা-ই! ভালো লাগলে, কাছে আসুন, ভালো না লাগলে, দূরে থাকুন। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার কোনওরকম ক্ষতি না করছি, কিংবা আমার অস্তিত্বের জন্য আপনার উপর নির্ভরশীল না হচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার কোনও বাজে মন্তব্য কিংবা কটূক্তি সহ্য করবো না। আমি ঠিক নই, এটা বলার আপনি কে? আপনি এই স্বচ্ছন্দ অধিকারটুকু পেলেন কোত্থেকে? আপনার বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস নিয়ে আমার বিন্দুমাত্রও মাথাব্যথা নেই। আমি আপনার জীবনদর্শনকে সম্মান করি। তাই একইরকমের সম্মানটুকু আমিও আপনার কাছ থেকে আশা করি। যদি ভালোকিছু বলতে না পারেন, তবে চুপ করে থাকুন। নাহলে আমিই আপনাকে চুপ করিয়ে দেবো। অতটুকু শক্তি আমার আছে।
আমি যা লিখলাম, এতে যদি কারওর অনুভূতি আহত হয়ে থাকে, তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী নই। কারণ আমি খুব ভালো করেই জানি, এরকম করে বেশিরভাগ ছেলেই কমবেশি ভাবে। তবে কেউই মুখে বলে না। সেদিন আমার খুব প্রিয় এক বড় ভাই আমাকে বললেন, “সুশান্ত, মেয়েরা বিয়ের পর কিন্তু ‘ঠিক’ হয়ে যায়। তুমি এতকিছু আগে থেকে বলার কোনও দরকার নেই। অমুকের বউ বিয়ের আগে বলেছিল, ও বিয়ের পর ঢাকায় থাকবে। কিন্তু দেখো, বিয়ের পর জামাইয়ের সাথেসাথেই থাকে।” উনার কথা শুনলাম, ভাবলাম। নাহ! আমাকে দিয়ে ওই কপটতা হবে না। সবাই তো আর সবকিছু পারে না। যে আমার জীবনে আসবে, সে সবকিছু জেনেবুঝেই আসুক। পরের তিতার চাইতে আগের তিতাই ভালো।
আমি বিশ্বাস করি, আমি কাউকে পছন্দ করি মানেই এই না যে, তার সবকিছুই আমার পছন্দ হতেই হবে; কিংবা কাউকে অপছন্দ করার মানে এই না যে, তার সবকিছুই আমার অপছন্দ হতেই হবে। যদি বেশি অসহ্য লাগে, তবে কোনও প্রকারের কটু মন্তব্য না করে দয়া করে আমাকে আনফ্রেন্ড/ আনফলো/ ব্লক করে দিন। Live & let live!!