বেদের আলোয় অদ্বৈত: ষোলো




২. প্রতিযোগী (Pratiyogī) বা প্রতিপক্ষ (Locus/Substratum): যে স্থানে বা বস্তুতে নিষেধ বা অভাবটি বিদ্যমান বলে মনে করা হচ্ছে, সেটিই হলো 'প্রতিপক্ষ' বা 'প্রতিযোগী'। এটি হলো নেগেশনের আধার বা আশ্রয়স্থল। তাৎপর্য—এটি সেই স্থান বা বস্তু, যেখানে অভাবটি আছে। উদাহরণ: "টেবিলের উপর কলসি নেই।" এই ক্ষেত্রে, টেবিলটি হলো প্রতিপক্ষ (প্রতিযোগী), কারণ টেবিলই কলসির অভাবের আধার।

দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, অভাব বা নিষেধ হলো এমন একটি ধারণা, যা দুটি বস্তুর (অনুযোগী ও প্রতিযোগী) সাপেক্ষে বোঝা যায়: অভাব (Negation) = আনুযায়ী (যার অভাব) + প্রতিযোগী (যেখানে অভাব)। অর্থাৎ, অভাব সবসময় কারও (অনুযোগী) এবং কোথাও (প্রতিযোগী) হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, "খরগোশের শিং নেই" বাক্যে 'শিং'-এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। এখানে 'শিং' হলো আনুযায়ী (যার অভাব), আর এই নিষেধের আশ্রয় হচ্ছে খরগোশ, যে-বস্তুতে 'শিং' প্রত্যক্ষ হয় না। অর্থাৎ, যে-বস্তুর মধ্যে কোনো কিছুর অভাব বা অস্তিত্বহীনতা দেখা যায়, সেই বস্তুটিই হয় নিষেধের আশ্রয়।

একইভাবে, যখন বলা হয় "জীব ও ব্রহ্ম ভিন্ন", এর অর্থ এই নয় যে, ভেদের আশ্রয় অবিদ্যা। অবিদ্যা তো অচেতন, সুতরাং সে কোনো ধারণার আশ্রয় হতে পারে না। বরং, এই ভেদের আশ্রয় হচ্ছে কোথাও-না-কোথাও আত্মা নিজেই। কারণ, অচেতন অবিদ্যা জীব বা ব্রহ্মের মতো সচেতন সত্তা নয়, যা ভেদের ধারণাকে ধারণ করতে পারে।

এ ছাড়া, ভেদকে কোনো প্রযুক্ত সম্বন্ধ (যেমন, সমবায় বা সংযুক্ত সমবায়) হিসেবে ধরা যায় না। এটি কোনো সম্বন্ধিত সত্তা নয়, বরং কেবল ধারণাগত ভেদ-মাত্র। ভেদ কোনো বাস্তব সম্পর্ককে নির্দেশ করে না, এটি কেবল একটি মানসিক প্রক্ষেপণ বা আপাত প্রতীয়মানতা। অদ্বৈত বেদান্তে, এই ভেদকে অনিত্য ও মায়িক বলে গণ্য করা হয়, যার কোনো পারমার্থিক সত্যতা নেই। এটি কেবল ব্যাবহারিক সত্য, যা আত্মজ্ঞানের দ্বারা বিলীন হয়ে যায়।

ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে 'প্রযুক্ত সম্বন্ধ' এবং 'সমবায়': ন্যায়-বৈশেষিক (Nyaya-Vaisheshika) দর্শনে 'প্রযুক্ত সম্বন্ধ' শব্দটি এই প্রেক্ষাপটে দুটি ভিন্ন কিন্তু সম্পর্কিত অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে—সমবায় (Samavāya) এবং সংযুক্ত সমবায় (Saṁyukta Samavāya)।

১. সমবায় (Samavāya) বা নিত্য সম্বন্ধ: সমবায় হলো ন্যায়-বৈশেষিক মতে স্বীকৃত ছয় বা সাতটি পদার্থের (categories) মধ্যে অন্যতম একটি পদার্থ এবং এটি একটি নিত্য (চিরন্তন) ও অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ (Inseparable or Eternal Relation)। সমবায়ের মূল অর্থ ও প্রকৃতি নিম্নরূপ:

অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক: সমবায় হলো এমন দুটি সত্তার মধ্যে সম্পর্ক, যাদের একটিকে অন্যটি থেকে ধ্বংস না করে আলাদা করা যায় না। অর্থাৎ, তারা অযুতসিদ্ধ (Ayutasiddha)।

আধার-আধেয় ভাব (Container-Contained Relation): এই সম্পর্কে একটি বস্তু অপরটির মধ্যে থাকে (যেমন: 'কাপড়ে শুভ্রতা আছে')।

উদাহরণস্বরূপ:
অংশ ও সামগ্রীর মধ্যে: যেমন তন্তু (সুতো) এবং বস্ত্র-এর মধ্যে সম্পর্ক। সুতো ধ্বংস না করে কাপড়কে সুতো থেকে আলাদা করা যায় না।
গুণ ও গুণীর মধ্যে: যেমন বস্তু এবং তার গুণ (যেমন: কাপড়ের শুভ্রতা)। শুভ্রতা গুণটি কাপড় নামক বস্তুটিকে ছেড়ে থাকতে পারে না।
ক্রিয়াকর্ম ও দ্রব্যের মধ্যে: যেমন গতিশীলতা এবং গতিশীল বস্তু-এর মধ্যে সম্পর্ক।
জাতি ও ব্যক্তির মধ্যে: যেমন মনুষ্যত্ব জাতি এবং মানুষ ব্যক্তি-র মধ্যে।

সমবায় হলো সেই গভীর বন্ধন, যা কোনো বস্তুকে তার নিজস্ব গুণ, কর্ম বা অংশ থেকে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত রাখে। এটি বস্তুর অপরিহার্য ধর্ম।

২. প্রযুক্ত সম্বন্ধ বা সংযুক্ত সমবায় (Saṁyukta Samavāya): সংযুক্ত সমবায় প্রত্যক্ষ জ্ঞানের একটি পদ্ধতি। এটি হলো জ্ঞান অর্জনের একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ইন্দ্রিয় একটি বস্তুর গুণকে (quality) প্রত্যক্ষ করে। এটি দুটি ভিন্ন সম্বন্ধের (যোগাযোগের) সমন্বয়ে গঠিত: সংযুক্ত সমবায় = সংযোগ (Samyoga) + সমবায় (Samavaya)

সংযোগ (Samyoga): প্রথমে ইন্দ্রিয় (যেমন চোখ) সরাসরি দ্রব্য বা বস্তুর (যেমন একটি মাটির কলসি) সঙ্গে যুক্ত হয়। এটি একটি বাহ্যিক বা অস্থায়ী সম্পর্ক।

সমবায় (Samavāya): তারপর, যেহেতু বস্তুর গুণ (যেমন কলসির রং) বস্তুর সঙ্গে সমবায় সম্বন্ধে যুক্ত, তাই ইন্দ্রিয় সেই গুণটিকেও জানতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, কলসির রং প্রত্যক্ষ করা: আপনার চোখ (ইন্দ্রিয়) কলসিটির (দ্রব্য) সঙ্গে সংযোগ সম্বন্ধে যুক্ত হলো। কলসির রং (গুণ) কলসিটির সঙ্গে সমবায় সম্বন্ধে যুক্ত। ফলে, আপনার চোখ এই সংযুক্ত সমবায় সম্বন্ধের মাধ্যমে কলসির রংটিকেও প্রত্যক্ষ করতে পারল।

সংযুক্ত সমবায় হলো সেই সম্বন্ধ, যার মাধ্যমে আমরা দ্রব্যের মধ্যে থাকা গুণ বা কর্মকে সরাসরি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুভব বা প্রত্যক্ষ করি। 'সমবায়' বলতে বোঝায় দুটি সত্তার মধ্যে চিরন্তন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। আর 'প্রযুক্ত সম্বন্ধ' বা 'সংযুক্ত সমবায়' বলতে বোঝায় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সেই সম্পর্কযুক্ত গুণকে প্রত্যক্ষ করার প্রক্রিয়া।

অদ্বৈত বেদান্তে, জীব ও ব্রহ্মের ভেদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো নিত্য বা প্রযুক্ত সম্বন্ধ গ্রাহ্য নয়। কারণ, ভেদকে পারমার্থিক সত্য বলে মনে করা হয় না।

অবিদ্যা: জীবের অংশ নয়, বরং উপাধি। অবিদ্যাকে মাঝে মাঝে জীবের অংশ বা গুণ হিসেবে ভাবা হয়। কিন্তু শাস্ত্রীয় মতে, অবিদ্যা জীবের কোনো আভ্যন্তরীণ গুণ নয়, বরং একটি উপাধি (limiting adjunct)—এক ভ্রান্ত আরোপ বা সীমাবদ্ধ অবস্থা। উপাধি হলো এমন একটি শর্ত, যা বস্তুর প্রকৃত স্বরূপকে আবৃত করে রাখে, কিন্তু বস্তুর সত্তার অংশ নয়। যেমন, একটি স্ফটিক লাল দেখায় যখন তার পাশে একটি লাল ফুল রাখা হয়, কিন্তু স্ফটিকের প্রকৃত রঙ লাল নয়। স্ফটিকের মৌলিক বিশুদ্ধতা অক্ষুণ্ণ থাকে, কেবল একটি বাহ্যিক উপাধির কারণে তা অন্যরকম প্রতীয়মান হয়। মেঘ সূর্যকে আড়াল করলেও কখনও সূর্যের অংশ হয় না।

ভামতী শাখা ও অবিদ্যা: ভামতী শাখা যুক্তি দেয়, জীবের অভিজ্ঞতায় "আমি অজ্ঞ" অনুভবের জন্য অবিদ্যা জীবের সত্তাতেই আবিষ্কৃত হয়; কিন্তু এটি আসলে ভ্রান্ত 'আমি-দেহ' ধারণার ফল। অর্থাৎ, জীব যখন নিজেকে দেহ এবং মনের সাথে একাত্ম করে, তখনই অজ্ঞতা তার উপর আরোপিত হয়। এই অজ্ঞতা জীবের মৌলিক স্বরূপ নয়, বরং একটি আরোপিত পরিচয়।

বিবরণ (ভিভরানা) শাখা ও অবিদ্যা: বিবরণ শাখা দর্শন এই ধারণাকে অস্বীকার করে। তাদের মতে, ব্রহ্মন নিজের স্বপ্রকাশিত চেতনাজালেই অবিদ্যা ধারণ করে, এবং ওই এক স্বপ্রকাশ শুদ্ধ চৈতন্যকেই অবিদ্যা অস্থায়ীভাবে ঢেকে রাখে। এই মতে, অবিদ্যা কোনো জীবের উপর সরাসরি আরোপিত নয়, বরং ব্রহ্মের উপরই একটি আরোপিত অবস্থা। অবিদ্যা ব্রহ্মকে প্রভাবিত করে না, কেবল তার প্রকাশকে সাময়িকভাবে আবৃত রাখে।

তাই, অবিদ্যা থেকে মুক্তির অর্থ জীবের প্রকৃত সত্তার কোনো অংশ ছিন্ন করা নয়; বরং ভুল পরিচয় দূর করা। এটি আত্ম-উপলব্ধির মাধ্যমে আত্মার মৌলিক বিশুদ্ধতা আবিষ্কারের প্রক্রিয়া। অবিদ্যা দূর হলে জীবের স্বরূপ যে ব্রহ্ম, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

অদ্বৈত বেদান্তের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মোক্ষ, যা ব্রহ্মের সঙ্গে জীবের ঐক্য উপলব্ধির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই উপলব্ধি তখনি ঘটে, যখন আত্মজ্ঞান (ātmajñāna) অবিদ্যার বিনাশ ঘটায়। অবিদ্যাকে রজ্জু-সর্পের দৃষ্টান্তের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়; যেমন প্রদীপ আনলে সাপের ভ্রম দূর হয়, তেমনই ব্রহ্মজ্ঞান এলে জগতের আপাত সত্যতা বিলীন হয়। দড়িকে সাপ মনে করাটা যেমন দড়ির সত্তাকে পরিবর্তন করে না, তেমনই অবিদ্যা ব্রহ্মের স্বরূপকে পরিবর্তন করে না, কেবল ভ্রান্ত প্রতীতি সৃষ্টি করে।

ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হলে জীবত্ব-ভাবনা (psycho-physical limitation induced by upadhis) সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়, কারণ জীবত্ব হলো আরোপিত এবং আগন্তুক অবস্থা, যা ব্রহ্মের অপরিহার্য প্রকৃতি নয়। অবিদ্যার শক্তিই জীবকে সংসার চক্রে আবদ্ধ রাখে, এবং আত্মজ্ঞান লাভের মাধ্যমেই এই বন্ধন ছিন্ন হয়। অবিদ্যা অনাদি হলেও, আত্মজ্ঞান লাভ হলে তার সমাপ্তি ঘটে, কারণ অবিদ্যা জ্ঞানের দ্বারা দূর হওয়ার বস্তু।

অদ্বৈত বেদান্তে ব্রহ্ম, জীব ও অবিদ্যার মধ্যেকার ভেদ (Bheda) সম্পূর্ণরূপে ব্যাবহারিক (vyavahārika), অবিদ্যাজনিত এবং উপাধি দ্বারা সৃষ্ট একটি ভ্রম। পারমার্থিক স্তরে কোনো ভেদ নেই। ভেদের এই প্রকৃতি প্রমাণ করার জন্য ঘটাকাশ ন্যায় এবং রজ্জু-সর্প ন্যায় ব্যবহৃত হয়। অবিদ্যার একত্ব (Ekatva) সংক্রান্ত বিতর্কটি মূলত লাঘব তর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত, যা ব্রহ্মের অখণ্ড এককত্ব বজায় রাখার একটি দার্শনিক প্রচেষ্টা।

ভারতীয় ন্যায় দর্শন (Nyaya Philosophy)-এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি বা নীতি লঘুত্ব বা সংক্ষেপের নীতি (Principle of Parsimony / Principle of Simplicity)। দেখা যাক, লাঘব তর্ক (Lāghava Tarka) কী?

লাঘব তর্ক হলো একটি দার্শনিক এবং যৌক্তিক নীতি, যা অনুযায়ী কোনো একটি বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্য যখন একাধিক সম্ভাব্য কারণ বা তত্ত্ব উপস্থিত থাকে, তখন সবচেয়ে সরল এবং কম অনুমাননির্ভর কারণটিকে গ্রহণ করা উচিত। 'লাঘব' শব্দের অর্থ হলো হালকা, লঘু, বা সংক্ষিপ্ততা (Simplicity/Lightness/Economy)। 'তর্ক' শব্দের অর্থ হলো যুক্তিসঙ্গত অনুমান বা যুক্তি (Reasoning/Hypothetical Argument)। লাঘব তর্কের মূল কথা হলো: "যেখানে কম দিয়ে কাজ চলে, সেখানে বেশি বা বাহুল্য জিনিসকে গ্রহণ করা উচিত নয়।" এটি পশ্চিমা দর্শনের বিখ্যাত নীতি অকামের রেজর (Occam's Razor: "Entities should not be multiplied unnecessarily")-এর সঙ্গে তুলনীয়।

ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে এবং অন্যান্য ভারতীয় তর্কশাস্ত্রে এই লাঘব তর্ককে প্রায়শই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়ক নীতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ-কার্যের ব্যাখ্যায়, কোনো একটি ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যখন একাধিক কারণের সম্ভাবনা থাকে, তখন নৈয়ায়িকগণ কম শক্তি বা কম সত্তা (less power or fewer entities) অনুমান করে যে-কারণটি, তাকেই লাঘব হিসেবে গ্রহণ করেন। উদাহরণ: জগৎ সৃষ্টির কারণ হিসেবে যদি একজন জটিল বহু-ক্ষমতাসম্পন্ন ঈশ্বর বা একজন একক ও সহজ ঈশ্বর—এই দুটি তত্ত্ব থাকে, তবে লাঘব তর্ক সাধারণত একক, অনাদি, ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ধারণাটিকে (Navya-Nyaya-র প্রেক্ষাপটে) অধিক সরল হিসেবে সমর্থন করে।

অনুমানে সহায়তা—এটি কোনো প্রমাণ (Pramāṇa) নয়, বরং প্রমাণকে সমর্থনকারী একটি সহায়ক যুক্তি। কোনো অনুমান বা সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে, লাঘব তর্ক ব্যবহার করে প্রমাণ করা হয় যে, এর বিপরীত ধারণাটি (অর্থাৎ গৌরব, বা অতিরিক্ত জটিলতা) গ্রহণ করা অযৌক্তিক। অপরদিকে, লাঘবের বিপরীত হলো গৌরব (Gaurava—Heaviness/Complexity), যার অর্থ হলো অপ্রয়োজনীয় জটিলতা, অতিরিক্ত সত্তা বা অতিরিক্ত কারণের কল্পনা করা। যুক্তিতে গৌরব দোষ হিসেবে বিবেচিত। সংক্ষেপে, লাঘব তর্ক হলো সেই যৌক্তিক নীতি যা আমাদের সরলতা, সংক্ষিপ্ততা এবং প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে সত্য নির্ণয়ে সাহায্য করে।

অদ্বৈত বেদান্তের চূড়ান্ত বার্তা হলো: জীব পারমার্থিকভাবে ব্রহ্ম থেকে অভিন্ন (jīvo brahmaiva na aparah)। ভেদের অভিজ্ঞতা স্থায়ী বা নিত্য নয়, বরং আত্মজ্ঞান লাভের পর এটি বিলীন হয়। আচার্য শঙ্করের মতে, এই উপলব্ধিই হলো সেই চূড়ান্ত অবস্থা, যেখানে জীব নিজ স্বরূপকে বিশুদ্ধ চৈতন্য রূপে জানতে পারে—"আমি বিশুদ্ধ চৈতন্য, সর্বদা অ-দ্বৈত।" এই অবস্থায় জীব সমস্ত দ্বৈতভাব অতিক্রম করে ব্রহ্মের সঙ্গে নিজের অভিন্নতা অনুভব করে, এবং এটাই পরম পুরুষার্থ বা মোক্ষ।