অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে উপদেশের উপযোগিতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি একটি সুন্দর উপমার মাধ্যমে বোঝানো হয়—যদিও গুরু চূড়ান্তভাবে পারমার্থিক স্তরে সত্য নন, তথাপি ব্যাবহারিক স্তরে শিক্ষাদান অপরিহার্য। এই দর্শনে গুরুকে একজন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়, যিনি শিষ্যের অজ্ঞানতা দূর করতে সাহায্য করেন। এই উপমার মূল উদ্দেশ্য হলো এটা বোঝানো যে, একটি আপাতদৃষ্টিতে অসত্য সত্তাও কীভাবে সত্য উপলব্ধির পথে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, স্বপ্নে-দেখা একজন চিকিৎসক যদি কোনো রোগ সারিয়ে দেন, তবে সেই স্বপ্নের চিকিৎসক বাস্তব না হলেও, তার কার্যকারিতা স্বপ্নের প্রেক্ষাপটে অনস্বীকার্য। স্বপ্নাবস্থায় রোগমুক্তি ঘটলে তা বাস্তব রোগের মতো না হলেও, স্বপ্নের মধ্যে তার প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না। ঠিক একইভাবে, জাগতিক স্তরে গুরু যদিও পারমার্থিক ব্রহ্ম নন, অর্থাৎ তিনি নিজে পরম সত্য নন, তবুও তিনি শিষ্যের অজ্ঞানতা নিবারণে এক বাস্তব ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, গুরুকে একজন 'ব্যাবহারিক সত্য' হিসেবে গণ্য করা হয়, যার মাধ্যমে শিষ্য পারমার্থিক সত্যের দিকে ধাবিত হয়। গুরুর উপদেশ হলো সেই 'জ্ঞানালোক', যা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে এবং শিষ্যকে তার আত্ম-স্বরূপ উপলব্ধিতে সহায়তা করে। এই প্রক্রিয়াটি মায়ার আবরণ উন্মোচন করে এবং জীবকে ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্নতা উপলব্ধির পথে চালিত করে।
জাগ্রত ও স্বপ্ন অবস্থার সমতুল্যতা (Jāgrat and Svapna Equivalence): অদ্বৈত বেদান্তের অন্যতম মৌলিক এবং বিপ্লবী দার্শনিক যুক্তি হলো জাগ্রত অবস্থা (Jāgrat) ও স্বপ্ন অবস্থার (Svapna) সমতুল্যতা। অদ্বৈতবাদীগণ এই দুটি অবস্থাকে পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে একই রকম মিথ্যা বা অসত্য বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, উভয় অবস্থাই আমাদের বিশুদ্ধ চেতনা (Pure Consciousness)-এর মধ্যে আবির্ভূত হয় এবং বিলীন হয়ে যায়। এই সমতুল্যতা কেবল একটি সাধারণ সাদৃশ্য নয়, বরং একটি গভীর দার্শনিক উপলব্ধি, যা মায়া এবং ব্রহ্মের ধারণাকে আরও সুস্পষ্ট করে তোলে। এই উপলব্ধি বোঝায় যে, আমরা যাকে জাগতিক বাস্তবতা বলে মনে করি, তা স্বপ্নাবস্থার মতোই ক্ষণস্থায়ী এবং আপেক্ষিক। এটি জাগতিক অভিজ্ঞতাকে একটি ব্যাবহারিক স্তরের ভ্রম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
জাগ্রত ও স্বপ্নাবস্থার সমতুল্যতার পিছনে অদ্বৈত বেদান্ত বেশ কিছু শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করে। এই যুক্তিগুলির মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় যে, আমাদের জাগতিক অভিজ্ঞতাও একটি ব্যাবহারিক স্তরের ভ্রম। যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:
১. অস্থায়িত্ব এবং বাধা প্রাপ্তি: জাগ্রত অবস্থার অভিজ্ঞতাকে আমরা সাধারণত স্থায়ী এবং অবিচ্ছিন্ন মনে করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমরা যা দেখছি, শুনছি, এবং অনুভব করছি, তা বাস্তব এবং স্থিতিশীল। কিন্তু অদ্বৈত বেদান্ত দেখায় যে, এই জাগ্রত অবস্থা গভীর সুষুপ্তি (Deep Sleep) দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। ঠিক যেমন স্বপ্ন জাগ্রত অবস্থা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বিলীন হয়ে যায়, তেমনি জাগ্রত অবস্থাও সুষুপ্তির সময় বিলীন হয়। সুষুপ্তির সময় কোনো জাগতিক অভিজ্ঞতার অস্তিত্ব থাকে না; মন, ইন্দ্রিয় এবং জগতের সমস্ত ধারণা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে যে, জাগ্রত অবস্থার অভিজ্ঞতাও শাশ্বত বা চরম সত্য নয়, বরং একটি অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থা। এটি ক্ষণস্থায়ী এবং অস্থিতিশীল।
২. জগতের অভিজ্ঞতার বিলীনতা: জাগ্রত অবস্থায় আমরা জগৎকে বাস্তব মনে করি এবং এর মধ্যে নিজেদের অস্তিত্ব উপলব্ধি করি। কিন্তু সুষুপ্তির সময় এই জাগতিক অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায়। সুষুপ্তির পর যখন আমরা পুনরায় জাগ্রত হই, তখন আবার নতুন করে জগতের অভিজ্ঞতা শুরু হয়। এই উত্থান-পতন, আসা-যাওয়া প্রমাণ করে যে, জগৎ এবং জাগতিক অভিজ্ঞতা পারমার্থিক স্তরে অসত্য। যদি এটি চরম সত্য হতো, তবে তা কোনো অবস্থাতেই বিলীন হতো না। চরম সত্য সব অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে।
৩. তুল্যতার তাৎপর্য: এই তুল্যতা প্রমাণ করে যে, জাগতিক অভিজ্ঞতাও একটি ব্যাবহারিক স্তরের ভ্রম। জাগ্রত ও স্বপ্ন উভয়ই একই রকম অবাস্তব, কারণ উভয় অবস্থাই অবিদ্যার প্রক্ষেপণ। অবিদ্যা হলো অজ্ঞানতা বা মায়া, যা চেতনাকে আচ্ছাদিত করে রাখে এবং একটি আপাত বাস্তবতা তৈরি করে। এই অবিদ্যা ব্রহ্মকে আবৃত করে এবং বহুত্বের সৃষ্টি করে, যা আমরা জগৎরূপে দেখি। স্বপ্নের সময় যেমন মন নিজস্ব কিছু সংস্কার এবং বাসনা থেকে একটি জগৎ সৃষ্টি করে, তেমনি জাগ্রত অবস্থায় অবিদ্যা সমষ্টিগতভাবে একটি বৃহৎ জগৎ সৃষ্টি করে, যা আমরা বাস্তব বলে মনে করি। উভয় ক্ষেত্রেই চেতনা তার নিজস্ব মহিমায় অবস্থান করে, এবং এই জগৎগুলি তার উপর আরোপিত হয়। এই আরোপিত জগৎগুলি চেতনার প্রকৃত স্বরূপকে ঢেকে রাখে।
৪. চেতনার অভিন্নতা: জাগ্রত, স্বপ্ন এবং সুষুপ্তি—এই তিনটি অবস্থাতেই আমাদের চেতনা অপরিবর্তিত থাকে। শুধু অভিজ্ঞতার বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয়। যেমন, একটি সিনেমার পর্দায় বিভিন্ন ছবি আসে এবং যায়, কিন্তু পর্দা সব সময় একই থাকে। তেমনি, চেতনা হলো সেই অপরিবর্তনীয় পর্দা, যার উপর জাগ্রত ও স্বপ্নের জগৎগুলি প্রক্ষিপ্ত হয়। এই উপলব্ধির মাধ্যমেই ব্যক্তি বুঝতে পারে যে, তার প্রকৃত স্বরূপ এই তিন অবস্থার অতীত এবং এটিই অদ্বৈত ব্রহ্মের উপলব্ধি। এই চেতনার অভিন্নতা ব্রহ্মের সঙ্গে আত্মার অভিন্নতার দিকে নির্দেশ করে, যা অদ্বৈত বেদান্তের মূল শিক্ষা।
অন্বয়-ব্যতিরেক পদ্ধতি (Anvaya-Vyatireka Method) হলো কার্যকারণ সম্পর্ক (Causal Relation) নির্ণয়ের একটি যৌক্তিক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এটি ভারতীয় দর্শনে, বিশেষত ন্যায় দর্শনে, এবং আধুনিক পশ্চিমা দর্শনের মিলের আরোহ পদ্ধতি (Mill's Methods of Induction)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পদ্ধতি দুটি নীতির সমন্বয়ে কোনো ঘটনার কারণকে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করে।
কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে এই পদ্ধতি নিম্নলিখিত দুটি নীতির উপর নির্ভর করে:
১. অন্বয় পদ্ধতি (Anvaya / Method of Agreement): 'অন্বয়' শব্দের অর্থ হলো অনুগমন বা সহাবস্থান। এই নীতি অনুসারে, কোনো একটি কার্য (B) উপস্থিত থাকলে তার কারণটিও (A) সর্বদা উপস্থিত থাকে।
নীতি: "কারণ (A) উপস্থিত থাকলে কার্য (B) অবশ্যই উপস্থিত থাকবে।" বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যদি একটি কার্য ঘটতে দেখা যায়, তবে সেই সব পরিস্থিতিতে যে উপাদানটি সাধারণভাবে উপস্থিত থাকে, সেটাই সম্ভাব্য কারণ।
২. ব্যতিরেক পদ্ধতি (Vyatireka / Method of Difference): 'ব্যতিরেক' শব্দের অর্থ হলো অনুপস্থিতি বা পার্থক্য। এটি অন্বয় নীতির বিপরীত। এই নীতি অনুসারে, কোনো একটি কার্য (B) অনুপস্থিত থাকলে তার কারণটিও (A) অনুপস্থিত থাকবে, এবং কারণ (A) অনুপস্থিত থাকলে কার্য (B) অবশ্যই অনুপস্থিত থাকবে। দুটি পরিস্থিতির মধ্যে যদি কেবল একটি উপাদানের পার্থক্য থাকে এবং সেই উপাদানের উপস্থিতিতে কার্যটি ঘটে আর অনুপস্থিতিতে না ঘটে, তবে সেই একমাত্র উপাদানই হলো কার্যটির কারণ।
অন্বয়-ব্যতিরেক পদ্ধতি এই দুটি নীতিকে একত্রে প্রয়োগ করে কার্যকারণ সম্পর্ককে চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠা করে। এটি নিশ্চিত করে যে, অন্য কোনো উপাদান যেন কারণ হিসেবে ভুলভাবে চিহ্নিত না হয়।
উদাহরণ দিই। আগুনের কারণ হিসেবে ধোঁয়া—অন্বয় (Agreement): আমরা যদি দেখি যে, পৃথিবীর যে কোনো স্থানে আগুন (কার্য) লাগুক না কেন, সেখানে ধোঁয়া (A) সবসময় উপস্থিত থাকে, তাহলে ধোঁয়া আগুনের সম্ভাব্য কারণ। ব্যতিরেক (Difference): এখন যদি এমন কোনো পরিস্থিতি কল্পনা করা হয়, যেখানে ধোঁয়া (A) অনুপস্থিত, এবং সেখানে কোনোভাবেই আগুন (কার্য) লাগে না—তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ধোঁয়াই হলো আগুনের কারণ।
অতএব, সিদ্ধান্ত এই: যে একমাত্র ঘটনা (কারণ) যার উপস্থিতিতে কার্যটি উপস্থিত হয় (অন্বয়) এবং অনুপস্থিতিতে কার্যটি অনুপস্থিত হয় (ব্যতিরেক)—সেই ঘটনাটিই কার্যটির নিশ্চিত কারণ। এটি আরোহ (Inductive) পদ্ধতির সবচেয়ে শক্তিশালী রূপগুলির মধ্যে অন্যতম।
অদ্বৈতের দার্শনিক অবস্থানকে স্পষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত প্রধান দৃষ্টান্তগুলির বিশ্লেষণ এবং আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের সাথে তুলনা করে তার খণ্ডন প্রক্রিয়া নিচে বর্ণিত হলো। এই দৃষ্টান্তগুলি অদ্বৈতের জটিল ধারণাগুলিকে সহজভাবে বোঝাতে সাহায্য করে।
রজ্জু-সর্প দৃষ্টান্ত, অদ্বৈতের অধ্যাস (Superimposition) ও বিবর্ত (Appearance without modification) নীতি ব্যাখ্যা করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী। এটি একটি ক্লাসিকাল উদাহরণ, যা ব্রহ্মের অস্পৃষ্টত্ব এবং জগতের মিথ্যাত্বকে তুলে ধরে। অদ্বৈতের মূল দার্শনিক দৃষ্টান্তসমূহ এবং তাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে লিখছি:
দৃষ্টান্ত: রজ্জু-সর্প (Rope-Snake)। উপাদান: দড়ি = ব্রহ্ম (অধিষ্ঠান), সাপ = জগৎ/অধ্যাস। খণ্ডনকৃত আপত্তি: জগৎকে পরম সত্য মনে করার ভ্রম। দার্শনিক উদ্দেশ্য: ব্রহ্মের অস্পৃষ্টত্ব এবং জগতের মিথ্যাত্ব প্রমাণ। দড়িই একমাত্র বাস্তব, সাপ একটি ভ্রম।
দৃষ্টান্ত: অবস্থা-ত্রয় (Three States)। উপাদান: সাক্ষী চৈতন্য (Turiya) বনাম জাগ্রত/স্বপ্ন/সুষুপ্তি। খণ্ডনকৃত আপত্তি: আত্মাকে দেহ-মনের সাথে অভিন্ন মনে করার ভ্রম। দার্শনিক উদ্দেশ্য: অন্বয়-ব্যতিরেক দ্বারা আত্মার নিত্যতা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা। চেতনা সকল অবস্থার সাক্ষী, কিন্তু নিজে কোনো অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত নয়।
খণ্ডন প্রক্রিয়া: ভ্রমকালীন সাপের অস্তিত্ব শর্তসাপেক্ষভাবে বাস্তব (conditionally real)—যা প্রাতিভাসিক সত্য। অর্থাৎ, যতক্ষণ ভ্রম থাকে, ততক্ষণ সাপ বাস্তব মনে হয়। কিন্তু দড়ির অস্তিত্ব নিরঙ্কুশ বাস্তব (Absolutely real), যা ব্রহ্ম। আত্মজ্ঞান (আলো) দ্বারা সাপের ধারণা দূর হলেও দড়ির দড়িত্ব কোনোভাবেই পরিবর্তিত হয় না। এই দৃষ্টান্তের মূল বার্তা হলো: ব্রহ্ম জগৎ সৃষ্টি করলেও জগৎ দ্বারা অস্পৃষ্ট থাকে। ব্রহ্মের স্বরূপে কোনো পরিবর্তন হয় না, যেমন দড়ি সাপের ভ্রম দ্বারা পরিবর্তিত হয় না।
অদ্বৈত দর্শনকে জর্জ বার্কলের 'Esse est percipi' (অস্তিত্ব মানেই উপলব্ধি) নীতির সাথে তুলনা করে সমালোচনা করা হয়। বার্কলের মতে, বস্তুর অস্তিত্ব উপলব্ধির উপর নির্ভরশীল, তাই উপলব্ধি না থাকলে জগৎ বিলীন হওয়া উচিত। এই সমালোচনা অদ্বৈতকে আত্মগত ভাববাদ হিসেবে চিহ্নিত করে, যেখানে বস্তুর স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। তবে, অদ্বৈত বেদান্ত এই আপত্তির বিরুদ্ধে Īśvara-তত্ত্ব ও ব্যাবহারিক বাস্তবতার মাধ্যমে খণ্ডন করে। এটি নিছক ভাববাদ নয়, বরং ব্যাবহারিক স্তরে বস্তুজগতের বাস্তবতা স্বীকার করে, যা বার্কলের মতবাদ থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন।
১. ঈশ্বরের ভূমিকা: বার্কলে তাঁর দর্শনে জগতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ঈশ্বরকে ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, বস্তু কেবল ঈশ্বরের মনে ধারণারূপে বিদ্যমান থাকে। এই অর্থে, ঈশ্বরের উপলব্ধিই বস্তুর অবিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব নিশ্চিত করে, এমনকি যখন কোনো ব্যক্তি তা উপলব্ধি করে না। অদ্বৈতও জগৎকে ঈশ্বরের সৃষ্টি বলে মানে, কিন্তু Īśvara-এর ভূমিকা এখানে আরও গভীর এবং ব্যাপক। অদ্বৈত অনুসারে, Īśvara কেবল ধারণা ধারণকারী নন, বরং জগতের উপাদান কারণ (Material Cause) এবং দক্ষ/যুক্তিগ্রাহ্য কারণ (Efficient Cause)। এর অর্থ হলো, Īśvara নিজেই জগৎ সৃষ্টির মূল উপাদান এবং তিনিই এই জগৎকে সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালনা করেন। Īśvara জগতের স্রষ্টা, পালক এবং সংহারক, যিনি মায়ার মাধ্যমে এই জগৎকে প্রক্ষেপিত করেন। এই অর্থে, জগৎ Īśvara-এর ইচ্ছাশক্তি এবং শক্তির প্রকাশ, যা কেবল একটি মানসিক ধারণা নয়।
২. ব্যাবহারিক বাস্তবতার নিশ্চয়তা: এই পার্থক্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অদ্বৈত জোর দেয় যে, ব্যাবহারিক স্তরে বস্তুজগৎ বিদ্যমান। এটি শুধু ব্যক্তিগত উপলব্ধির উপর নির্ভরশীল নয়। Īśvara-এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মূল-অবিদ্যা (cosmic ignorance) জগৎকে এমনভাবে ধরে রাখে যে, জীব যখন ঘুমায় (সুষুপ্তি), তখনও জগৎ Īśvara-এর সৃষ্টি রূপে ব্রহ্মের অধিষ্ঠান রূপে বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ, বস্তু কেবল ব্যক্তির মনের ধারণা নয়, বরং তার একটি বাস্তব (যদিও ব্রহ্মের উপর নির্ভরশীল) অস্তিত্ব আছে। তাই একজন ব্যক্তি ঘুমিয়ে গেলেও জগৎ অদৃশ্য হয়ে যায় না। জগৎ তার নিজস্ব নিয়মে চলতে থাকে, কারণ Īśvara-এর সৃষ্টি হিসাবে এর একটি বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা রয়েছে।