বেদের আলোয় অদ্বৈত: পঁচিশ




“বিশ্বের অস্তিত্ব জ্ঞানের সঙ্গে সমকালীন”—এর অর্থ কী? এতে কি বোঝানো হচ্ছে—অস্তিত্ব মানে কেবলই প্রতীতি (esse = to be—অস্তিত্ব থাকা, percipi = to be perceived—প্রত্যক্ষ/অনুভূত হওয়া) এবং আর কিছু নয়? না কি জগতের এমনও এক স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, যা জ্ঞান থেকে আলাদা? যখন বলা হয়, জগতের অস্তিত্ব জ্ঞানের সঙ্গে সমকালীন, তখন এর দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে। প্রথমত, এটি জর্জ বার্কলের মতের মতো ভাববাদী দর্শনের কাছাকাছি যেতে পারে, যেখানে বলা হয়, “to exist is to be perceived”, অর্থাৎ “অস্তিত্বশীল হওয়া মানেই উপলব্ধ হওয়া”। এই মতে, উপলব্ধির বাইরে কোনো অস্তিত্ব নেই। অদ্বৈত বেদান্ত এই ব্যাখ্যাটিকে সমর্থন করে, কারণ এটি বেদান্তের ‘জ্ঞান-অস্তিত্বের অভেদ’ ধারণার সঙ্গে মিলে যায়। দ্বিতীয়ত, এটি এমন একটি ধারণা দিতে পারে যে, জগতের নিজস্ব স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, যা জ্ঞান থেকে পৃথক, কিন্তু কোনোভাবে জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি অদ্বৈত দর্শনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি দ্বৈতবাদকে উৎসাহিত করে। অদ্বৈত বেদান্তের লক্ষ্য হলো ব্রহ্মের একত্ব প্রমাণ করা এবং জগতের দ্বৈততা বা বহুত্বকে আপেক্ষিক বা মিথ্যা প্রমাণ করা।

যদি দ্বিতীয় অর্থ ধরা হয়, অর্থাৎ জ্ঞানের বাইরে জগতের স্বাধীন অস্তিত্ব রয়েছে, তাহলে এই দাবি প্রমাণসাপেক্ষ। প্রশ্ন আসে, এর সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে কি? যদি থাকে, তা কী ধরনের প্রমাণ—প্রত্যক্ষ জ্ঞান (perception), অনুমান (inference), বেদ (scriptural testimony), না কি কোনো ধরনের অনুমানভিত্তিক প্রমাণ, যেমন অর্থাপত্তি (postulation based on implication)? এগুলি বিশেষভাবে দ্বিতীয় অর্থের অর্থাৎ জ্ঞানের বাইরে জগতের স্বাধীন অস্তিত্বের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং এর সপক্ষে কোনো শক্তিশালী প্রমাণের অভাব তুলে ধরে।

ভারতীয় দর্শনে জ্ঞানের উপায় (প্রমাণ, pramāṇa) হিসেবে যেসব প্রধান পদ্ধতি স্বীকৃত, তার মধ্যে আছে—প্রত্যক্ষ, অনুমান, অর্থাপত্তি, আর শাস্ত্র/বেদবাক্য। এগুলো একে একে ব্যাখ্যা করছি—

১. প্রত্যক্ষ জ্ঞান (Perception, pratyakṣa) অর্থ: ইন্দ্রিয় দ্বারা সরাসরি জ্ঞান লাভ। উদাহরণ: চোখে ফুল দেখা → “এটি লাল গোলাপ।” কানে শব্দ শোনা → “কেউ ডাকছে।” এটি সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও অবিলম্ব অভিজ্ঞতা।

২. অনুমান (Inference, anumāna) অর্থ: কোনো পরিচিত লক্ষণ (hetu) থেকে অদেখা বিষয়ের জ্ঞান লাভ—সূত্র: যেখানে ধোঁয়া, সেখানে আগুন। উদাহরণ: পাহাড়ে ধোঁয়া দেখা → বোঝা যায়, সেখানে আগুন আছে। শিশুর কান্না → বোঝা যায়, সে ক্ষুধার্ত বা অস্বস্তিতে।

৩. বেদ / শাস্ত্রবাক্য (Śabda-pramāṇa, Scriptural testimony) অর্থ: যে-সব সত্য সাধারণ ইন্দ্রিয় বা অনুমানে পাওয়া যায় না, তা শাস্ত্র/বেদ/বিশ্বাসযোগ্য আধ্যাত্মিক কর্তৃপক্ষের বাণীর মাধ্যমে জানা যায়। উদাহরণ: “আত্মা অমর” → এটা প্রত্যক্ষ বা অনুমান দিয়ে প্রমাণ করা যায় না, শাস্ত্রবাক্যই এর প্রধান প্রমাণ। “ব্রহ্ম এক, অদ্বিতীয়”—এই জ্ঞানও বেদবাক্য দ্বারা জানা যায়।

৪. অর্থাপত্তি (Postulation / presumption, arthāpatti) অর্থ: যখন সরাসরি বা অনুমান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, তখন প্রসঙ্গ ও যুক্তি থেকে একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করানো। উদাহরণ: দেবদত্ত দিনে খায় না, কিন্তু মোটাসোটা। → অর্থাপত্তি: সে রাতে খায়। জানালার ভেতরে আলো দেখা যাচ্ছে, বাইরে কেউ নেই। → অর্থাপত্তি: ভেতরে কেউ প্রদীপ জ্বালিয়েছে।

প্রত্যক্ষ (Perception): সরাসরি ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা। অনুমান (Inference): কোনো চিহ্ন/লক্ষণ থেকে অদেখা বিষয়ের সিদ্ধান্ত। শাস্ত্রবাক্য (Scriptural testimony): অতীন্দ্রিয় সত্য জানার উপায়। অর্থাপত্তি (Postulation): অমিল মেটাতে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাঁড় করানো।

যদি কেউ দাবি করেন যে, জগৎ তার জ্ঞান থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন, তবে তাকে সেই স্বাধীনতার সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। এই প্রমাণ ছাড়া কেবল দাবি অর্থহীন। অদ্বৈত বেদান্তীরা ভারতীয় দর্শনে প্রচলিত বিভিন্ন প্রমাণ-পদ্ধতিগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রত্যক্ষ (সরাসরি দেখা বা অনুভব করা), অনুমান (যুক্তি ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া), শব্দ বা আগম (শাস্ত্রীয় বচন বা প্রামাণ্য গ্রন্থাদির জ্ঞান), উপমান (সাদৃশ্যের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ), অর্থাপত্তি (যখন কোনো ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি অনুমানের প্রয়োজন হয়), এবং অনুপলব্ধি (অভাবের জ্ঞান, অনুপস্থিতি থেকে জানা)।

উপমান (Upamāna) অর্থ: সাদৃশ্য বা তুলনার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন। প্রথমে অজানা বস্তুকে পরিচিত কিছুর সঙ্গে তুলনা করে বোঝানো হয়। পরে সেই তুলনার ভিত্তিতে যখন দেখা হয়, তখন বস্তুকে চেনা যায়। উদাহরণ: কেউ আগে কখনও গণ্ডার দেখেনি। তাকে বলা হলো—“এটি গাভীর মতো, তবে কপালে একটি শিং আছে।” পরে বাস্তবে গণ্ডার দেখে, সেই তুলনা মনে করে চিনতে পারা—এটাই উপমান।

অনুপলব্ধি (Anupalabdhi) অর্থ: কোনো কিছুর অনুপস্থিতি বা অভাব থেকে জ্ঞান অর্জন। অর্থাৎ, কোনো বস্তুর অস্তিত্ব নেই—এই জ্ঞান পাওয়া যায় সরাসরি সেই অনুপস্থিতি থেকে। উদাহরণ: টেবিলের দিকে তাকিয়ে বোঝা গেল—“এখানে কোনো ঘড়া নেই।” এই “না-থাকা” সম্পর্কিত জ্ঞানই অনুপলব্ধি।

অদ্বৈত বেদান্তীদের মূল যুক্তি হলো, এই প্রমাণ-পদ্ধতিগুলোর কোনোটিই জ্ঞানের বাইরে জগতের একটি স্বাধীন অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে না। তাদের মতে, প্রত্যক্ষ জ্ঞান কেবল বিষয়কে আমাদের চেতনার মাধ্যমে জানতে পারে, কিন্তু সেই বিষয়ের জ্ঞান-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে না। অনুমানও আমাদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত জ্ঞানের সীমার বাইরে যেতে পারে না। শব্দ বা বেদান্তের শিক্ষাও মূলত আত্মজ্ঞান ও ব্রহ্মের একত্ব নিয়ে কাজ করে, যা জগতের স্বাধীন অস্তিত্বের ধারণাকে সমর্থন করে না। একইভাবে, উপমান, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি—এই সবই আমাদের জ্ঞান ও অনুভূতির জগৎকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় এবং কোনোভাবেই জ্ঞান-নিরপেক্ষ একটি সত্তার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে অক্ষম। তাই, অদ্বৈত বেদান্তীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, জগতের স্বাধীন অস্তিত্বের ধারণাটি কেবল একটি কল্পনা, যার কোনো বাস্তবিক প্রমাণ নেই। জগৎ আমাদের জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল এবং জ্ঞান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এর কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই।

ধরুন, আপনি বলেন প্রত্যক্ষই প্রমাণ। তাহলে আমরা জিজ্ঞেস করি—“এই প্রত্যক্ষ উপলব্ধি—‘এটা একটা মাটির হাঁড়ি’—কি হাঁড়ি আর হাঁড়ির জ্ঞান এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য জানায়? না কি অন্য কোনো আলাদা প্রত্যক্ষ এই পার্থক্য জানায়?” যদি বলেন যে, একই প্রত্যক্ষ এই পার্থক্য ধরে ফেলে, তবে প্রশ্ন হবে—এই প্রত্যক্ষ নিজে নিজেই কি জানা যায়, না কি অন্য কোনো জ্ঞানের দ্বারা জানা যায়? এখানে অদ্বৈত বেদান্ত প্রত্যক্ষ প্রমাণের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে। যখন আমরা একটি মাটির হাঁড়ি দেখি, তখন আমাদের মনে ‘এটা একটা মাটির হাঁড়ি’, এই জ্ঞান উৎপন্ন হয়। এই প্রত্যক্ষ কি প্রমাণ করে যে, হাঁড়ি এবং হাঁড়ি সম্পর্কে আমার জ্ঞান দুটি ভিন্ন সত্তা? অদ্বৈতী প্রশ্ন করেন, এই প্রত্যক্ষ কি সরাসরি তাদের পার্থক্য নির্দেশ করে, না কি এই পার্থক্য জানার জন্য অন্য কোনো প্রত্যক্ষের প্রয়োজন হয়? যদি বলা হয় যে, একই প্রত্যক্ষ এই পার্থক্য নির্দেশ করে, তবে পরের প্রশ্নটি আরও গভীর হয়: এই প্রত্যক্ষ নিজেই কি নিজেকে জানে (স্বয়ংপ্রকাশ), না কি অন্য কোনো জ্ঞান দ্বারা একে জানতে হয়? এই প্রশ্নটি জ্ঞানের স্বয়ংপ্রকাশতা বা পরপ্রকাশতা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়।

স্বয়ংপ্রকাশতা (svayam-prakāśatva) অর্থ: জ্ঞান নিজে থেকেই প্রকাশিত হয়। যখন কোনো জ্ঞান জন্ম নেয়, তখন সেটি নিজের অস্তিত্ব ও তার বিষয় (object) উভয়কেই প্রকাশ করে। নতুন কোনো আলাদা প্রমাণের দরকার নেই। অদ্বৈত বেদান্ত ও যোগাচার বৌদ্ধরা মনে করেন—জ্ঞান স্বয়ংপ্রকাশমান। উদাহরণ: ‘আমি জানি’—“আমি জানি যে, আমি দেখছি।” এই জানার জন্য আলাদা কোনো আলো বা প্রমাণ দরকার নেই। জ্ঞান নিজেই নিজের ও বস্তুর উপস্থিতি প্রকাশ করে।

পরপ্রকাশতা (para-prakāśatva) অর্থ: জ্ঞান অন্য কিছুর দ্বারা প্রকাশিত হয়। জ্ঞান নিজে নিজে জানা যায় না; সেটি বোঝার জন্য অন্য একটি প্রমাণ বা জ্ঞান দরকার। নব্যন্যায় (Navya-Nyāya) মতে, জ্ঞান নিজে প্রকাশক নয়, বরং তা অন্য দ্বারা (যেমন স্মৃতি, অনুমান বা আত্মার প্রতীতি) প্রকাশিত হয়। উদাহরণ: আমি কিছু দেখলাম, কিন্তু পরে স্মরণ করে বুঝলাম—“আমি তখন দেখেছিলাম।” অর্থাৎ জ্ঞানকে জ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত করা হলো আরেকটি জ্ঞানের মাধ্যমে।

এই অনুচ্ছেদটি মূলত অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বৈতবাদীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তির দুর্বলতা বা ‘আত্মাশ্রয় দোষ’ (fallacy of self-dependence) বিশ্লেষণ করে। দ্বৈতবাদীরা যখন প্রত্যক্ষ জ্ঞানকে স্বয়ংপ্রকাশিত (self-known) এবং জগৎ ও জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যকে প্রত্যক্ষের একটি বিশেষণ হিসেবে দেখেন, তখন তাদের যুক্তি কীভাবে একটি যৌক্তিক ত্রুটির দিকে ধাবিত হয়, তা এখানে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

দ্বৈতবাদী দর্শনে প্রায়শই এই ধারণাটি প্রচলিত যে, প্রত্যক্ষ জ্ঞান তার নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য অন্য কোনো প্রমাণের উপর নির্ভরশীল নয়; এটি নিজেই নিজেকে প্রকাশ করে (Self-known Perception)। এই স্বয়ংপ্রকাশিত হওয়ার ধারণাটিকে ভিত্তি করে বলা হয়, যখন আমরা কোনো বস্তু দেখি, যেমন একটি হাঁড়ি, তখন হাঁড়ি এবং হাঁড়ি দেখার জ্ঞান—এই দুটির মধ্যে যে পার্থক্য, সেটিও প্রত্যক্ষের মাধ্যমেই ধরা পড়ে। এই পার্থক্য জ্ঞানকে তখন হাঁড়ির একটি ‘বিশেষণ’ বা গুণ হিসেবে দেখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন বলা হয় 'এটি একটি হাঁড়ি', তখন 'হাঁড়ি', এই জ্ঞানটি হাঁড়ি নামক বস্তুর একটি নির্ণায়ক গুণকে প্রকাশ করে। এই ধরনের জ্ঞানকেই ‘নির্ণায়ক জ্ঞান’ (vishishtajñāna বা judgment) বলা হয়। এটি আসলে বস্তুর একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা বিশেষণকে নির্দেশ করে এবং এর মাধ্যমে বস্তুর স্বরূপকে উপলব্ধি করা হয়।

যদি হাঁড়ি এবং হাঁড়ির জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যকে হাঁড়ির একটি বিশেষণ হিসেবে ধরা হয়, তবে এর অর্থ দাঁড়ায় যে, প্রত্যক্ষ নিজেই নিজের পার্থক্যকে প্রকাশ করছে। অর্থাৎ, আমাদের প্রত্যক্ষ জ্ঞান শুধু হাঁড়িকেই জানে না, বরং হাঁড়ির জ্ঞান থেকে হাঁড়ির বস্তুগত ভিন্নতাকেও জানে, এবং এই ভিন্নতাকেই হাঁড়ির একটি বিশেষ গুণ হিসেবে দেখে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে-জ্ঞান উৎপন্ন হয়, তাকেই নির্ণায়ক জ্ঞান বলা হচ্ছে। এর মানে হলো, জ্ঞানটি নিজেই নিজের সীমানা নির্ধারণ করছে এবং নিজেই নিজের গুণাবলী বর্ণনা করছে।

তবে, এই যুক্তিতে একটি গুরুতর দার্শনিক ত্রুটি নিহিত আছে, যাকে ‘আত্মাশ্রয় দোষ’ বা স্ব-নির্ভরশীলতার ত্রুটি (Fallacy of Self-dependence) বলা হয়। আত্মাশ্রয় দোষ তখনই ঘটে, যখন কোনো প্রমাণ বা যুক্তি নিজেই নিজের অস্তিত্ব বা বৈধতা প্রমাণের জন্য নিজের উপর নির্ভর করে। এখানে বলা হচ্ছে, প্রত্যক্ষ নিজেই নিজের পার্থক্য প্রমাণ করছে এবং সেই পার্থক্যকে নিজেরই একটি বিশেষণ হিসেবে গণ্য করছে, যার ফলে উৎপন্ন জ্ঞানকে নির্ণায়ক জ্ঞান বলা হচ্ছে। এর মূল সমস্যাটি হলো:

প্রমাণের নিরপেক্ষতার অভাব: একটি বিষয়কে যখন প্রমাণ করা হয়, তখন সেই প্রমাণটি একটি নিরপেক্ষ ভিত্তি থেকে আসা উচিত। যদি প্রমাণটি নিজেই নিজেকে প্রমাণ করে, তবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এটি অনেকটা এমন যে, একজন বিচারক নিজেই নিজের মামলায় রায় দিচ্ছেন।

চক্রাকার যুক্তি (Circular Reasoning): এই যুক্তি শেষ পর্যন্ত একটি চক্রাকার যুক্তিতে পর্যবসিত হয়। প্রত্যক্ষ জ্ঞান বলছে যে, এটি নিজেই নিজেকে জানে এবং এটিই হাঁড়ি ও তার জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যকে একটি বিশেষণ হিসেবে জানে। কিন্তু এই পার্থক্য জ্ঞানের বৈধতা কিসের উপর নির্ভরশীল? প্রত্যক্ষের নিজের উপরই। অর্থাৎ, 'ক' যদি 'খ' কে প্রমাণ করে এবং 'খ' যদি 'ক' কে প্রমাণ করে, তবে এই চক্রের কোনো স্বাধীন শুরু বা শেষ থাকে না, যা একটি দুর্বল যুক্তির জন্ম দেয়।