বেদের আলোয় অদ্বৈত: এগারো





অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন অনুসারে, মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করা। এই মুক্তি কেবল আত্মজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান (jñāna) দ্বারা সম্ভব। এই জ্ঞান অর্জনের সুসংগঠিত পথটিই হলো জ্ঞানযোগ, যা সাধককে আত্মস্বরূপ উপলব্ধির দিকে ধাবিত করে। জ্ঞানযোগের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য চারটি অপরিহার্য আচরণগত গুণ বা প্রস্তুতি প্রয়োজন, যা সম্মিলিতভাবে সাধন-চতুষ্টয় (বিবেক-বৈরাগ্য-’শমাদি ষট্‌কসম্পত্তি’-মুমুক্ষুত্ব) নামে পরিচিত। এই সাধন-চতুষ্টয় আত্ম-অনুসন্ধানের ভিত্তি স্থাপন করে এবং ব্রহ্মজ্ঞানের জন্য মনকে প্রস্তুত করে।


বিবেক (Nityānitya Vastu Viveka)—নিত্য ও অনিত্য বস্তুর পার্থক্য উপলব্ধির ক্ষমতা: বিবেক হলো সত্য ও মিথ্যা, শাশ্বত ও ক্ষণস্থায়ী, নিত্য ও অনিত্য বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করার সূক্ষ্ম ক্ষমতা। এটি কেবল একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণা নয়, বরং গভীর উপলব্ধির মাধ্যমে জাগতিক সকল বিষয়ের নশ্বরতা এবং আত্মস্বরূপের নিত্যতাকে চিনতে পারার সামর্থ্য। অদ্বৈত বেদান্তে ‘নেতি নেতি’ (এটি নয়, ওটি নয়) পদ্ধতি এই বিবেক বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সাধক যা-কিছু ক্ষণস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং অসৎ, তা থেকে মনকে প্রত্যাহার করে নেয়। জাগতিক সম্পর্ক, সম্পদ, খ্যাতি, এমনকি শারীরিক অস্তিত্বও ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের প্রতি মোহ ত্যাগ করে সাধক আত্মস্বরূপের নিত্যতার দিকে ধাবিত হয়, যা জন্ম-মৃত্যু, সুখ-দুঃখের ঊর্ধ্বে অবস্থিত। বিবেক দ্বারা সাধক বোঝেন যে, শুধুমাত্র ব্রহ্মই নিত্য এবং বাকি সব অনিত্য ও মায়িক। এই উপলব্ধি সাধককে জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে উৎসাহিত করে।


বৈরাগ্য (Ihāmutrārtha Phala Bhoga Virāga)—জাগতিক ও পারলৌকিক সুখের প্রতি অনাসক্তি: বৈরাগ্য মানে কেবল জাগতিক ভোগ থেকে বিরত থাকা নয়, বরং ভোগ বা কর্মফলের প্রতি মানসিক আসক্তি থেকে মুক্তি। এটি জাগতিক সুখ এবং পারলৌকিক ফলাফলের আকাঙ্ক্ষা থেকে নির্লিপ্ততা। সাধক উপলব্ধি করেন যে, পার্থিব সুখ ক্ষণস্থায়ী এবং দুঃখের কারণ। এমনকি স্বর্গের মতো পারলৌকিক সুখও শর্তসাপেক্ষ ও সীমিত সময়ের জন্য। প্রকৃত বৈরাগ্য মনের শান্তি ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করে, যা আত্ম-অনুসন্ধানের জন্য অপরিহার্য। বৈরাগ্য সাধককে বাহ্যিক বস্তুর ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করে এবং অন্তর্মুখী হতে সাহায্য করে। এই অবস্থায় মন জাগতিক আকর্ষণ দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয় না এবং ব্রহ্মচিন্তায় নিবিষ্ট হতে পারে। বৈরাগ্য জ্ঞানযোগের পথে একটি শক্তিশালী স্তম্ভ, যা মনকে অবিদ্যা থেকে মুক্ত করে প্রজ্ঞার পথে চালিত করে।


শমাদি ষট্‌কসম্পত্তি (Śamādi Ṣaṭka Sampatti)—মন ও ইন্দ্রিয়ের ছয়টি নিয়ন্ত্রণ: শমাদি ষট্‌কসম্পত্তি হলো ছয়টি অভ্যন্তরীণ গুণাবলীর সমষ্টি, যা মন ও ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করে আত্ম-অনুসন্ধানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। এগুলো হলো:


শম (Śama)—মনের প্রশান্তি ও আত্ম-অভিমুখিতা: শম হলো মনকে বাহ্যিক বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আত্ম-অভিমুখী করার ক্ষমতা। এটি মনের বিক্ষিপ্ততা দূর করে একাগ্রতা আনে এবং অন্তরের শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। শম সাধককে নিজের ভেতরের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং বহিরাগত কোলাহল থেকে মনকে রক্ষা করে। এটি মানসিক সংযম এবং স্থিরতার প্রতীক।


দম (Dama)—ইন্দ্রিয়-নিয়ন্ত্রণ: দম হলো চোখ, কান, জিহ্বা, ত্বক এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলিকে তাদের বিষয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা। এর অর্থ, ইন্দ্রিয়গুলিকে অহেতুক ভোগ থেকে বিরত রাখা এবং সেগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। দম সাধককে ইন্দ্রিয় সুখের প্রতি আসক্তি থেকে রক্ষা করে এবং মনকে ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে। এটি শারীরিক সংযমের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।


উপরতি (Uparati)—জাগতিক কর্মের প্রতি উদাসীনতা ও মানসিক নির্লিপ্ততা: উপরতি মানে কেবল বাহ্যিক কর্ম বা ইন্দ্রিয় ভোগ থেকে বিরত থাকা নয়, বরং সেগুলোর প্রতি মানসিক নির্লিপ্ততা বা উদাসীনতা। সাধক নিজের কর্তব্য পালন করলেও তার ফলাফলের প্রতি আসক্ত থাকেন না। এটি জাগতিক আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে মানসিক স্বাধীনতা অর্জন। উপরতি সাধককে তার দায়িত্ব পালনে সাহায্য করে, কিন্তু তাকে কর্মফলের জালে আবদ্ধ হতে দেয় না।


তিতিক্ষা (Titikṣā)—সুখ-দুঃখ সহ্য করার ক্ষমতা: তিতিক্ষা হলো জীবনের অনিবার্য দ্বৈততা, যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণা, শীত, উষ্ণতা, সুখ, দুঃখ, সম্মান, অসম্মান ইত্যাদি সহ্য করার ক্ষমতা। এটি মানসিক দৃঢ়তা এবং ধৈর্য শেখায়। সাধক ভালো বা মন্দ যে-কোনো পরিস্থিতিতে অবিচলিত থাকেন এবং তাঁর মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হয় না। তিতিক্ষা সাধককে বাইরের প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের লক্ষ্য স্থির রাখতে সাহায্য করে।


শ্রদ্ধা (Śraddhā)—গুরু ও শাস্ত্রের প্রতি গভীর বিশ্বাস: শ্রদ্ধা হলো বেদান্ত শাস্ত্র, গুরু এবং আত্মজ্ঞানের প্রক্রিয়ার প্রতি গভীর বিশ্বাস ও আস্থা। এই বিশ্বাস সাধককে আত্ম-অনুসন্ধানের পথে টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য শক্তি যোগায়। শ্রদ্ধা ছাড়া জ্ঞানযোগের পথে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব, কারণ এটি সঠিক নির্দেশনায় বিশ্বাস স্থাপন করে সাধককে পথ চলতে সাহায্য করে।


সমাধান (Samādhāna)—মনের একাগ্রতা ও ব্রহ্মচিন্তায় নিবিষ্ট থাকা: সমাধান হলো মনের একাগ্রতা এবং ব্রহ্মচিন্তায় নিবিষ্ট থাকার ক্ষমতা। এটি ধ্যান ও গভীর মননের জন্য অপরিহার্য। সাধক যখন তার মনকে ব্রহ্মের দিকে স্থির করতে পারেন, তখন তিনি গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত হন। সমাধান শম ও দমের সমন্বয়ে অর্জিত একটি উচ্চতর অবস্থা, যেখানে মন কেবল একাগ্র নয়, বরং ব্রহ্মমুখী হয়।


মুমুক্ষুত্ব (Mumukṣutva)—মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা: মুমুক্ষুত্ব হলো জাগতিক বন্ধন এবং জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তির তীব্র, অদম্য ও অবিচল আকাঙ্ক্ষা। এটি কেবল একটি সাধারণ ইচ্ছা নয়, বরং আত্মজ্ঞান লাভের জন্য একটি গভীর তৃষ্ণা, যা সাধককে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে জ্ঞানার্জনের পথে পরিচালিত করে। এই তীব্র আকাঙ্ক্ষাই সাধককে সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে, কঠোর তপস্যা করতে এবং গুরু ও শাস্ত্রের উপদেশ অনুসরণ করতে শক্তি যোগায়। মুমুক্ষুত্ব ছাড়া সাধন-চতুষ্টয়ের জরুরি অন্য গুণগুলো কার্যকরী হতে পারে না, কারণ এটিই হলো মূল চালিকা শক্তি, যা সাধককে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনুপ্রাণিত করে।


এই সাধন-চতুষ্টয় জ্ঞানযোগের ভিত্তি স্থাপন করে এবং সাধককে আত্মজ্ঞানের জন্য প্রস্তুত করে। এই গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে সাধক তার মনকে পরিশুদ্ধ করেন, ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং জাগতিক আসক্তি থেকে মুক্ত হন, যা তাকে ব্রহ্মজ্ঞানের দিকে নিয়ে যায় এবং অবশেষে মোক্ষ লাভে সহায়তা করে।


জ্ঞানযোগের তিনটি অপরিহার্য ধাপ হলো:


শ্রবণ (Śravaṇa): গুরু এবং শাস্ত্র থেকে জ্ঞান শোনা। একজন যোগ্য গুরুর কাছ থেকে শ্রবণ মনের রুদ্ধ পথ খুলে দেয় এবং সত্যকে প্রাথমিকভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। উপনিষদের মহাবাক্যগুলি এই স্তরে গভীরভাবে অধ্যয়ন করা হয়। এটি প্রথম ধাপ, যেখানে তত্ত্বের সাথে প্রাথমিক পরিচয় ঘটে।


মনন (Manana): প্রাপ্ত জ্ঞানের উপর যুক্তি এবং চিন্তার মাধ্যমে সন্দেহ দূর করা। এটি জ্ঞানের গভীরতাকে বিশ্লেষণ করে এবং নিজের মধ্যে কোনো ধারণাকে দৃঢ় করে। শ্রবণ দ্বারা প্রাপ্ত জ্ঞানকে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করে সকল সংশয় দূর করাই মননের উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে সাধক নিশ্চিত হয় যে, শাস্ত্রীয় জ্ঞান যুক্তিসঙ্গত এবং সত্য।


নিদিধ্যাসন (Nididhyāsana): ধ্যান এবং গভীর চিন্তনের মাধ্যমে জ্ঞানকে আত্মস্থ করা এবং উপলব্ধি করা। এটি সেই পর্যায়, যেখানে একজন ব্যক্তি তার দৈনন্দিন জীবনে সত্যকে বাস্তবায়িত করে। এটি জ্ঞানকে কেবল বৌদ্ধিক স্তরে না রেখে, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অংশ করে তোলে। নিদিধ্যাসনের মাধ্যমে সাধক নিজের আত্মস্বরূপের সাথে অভিন্নতা অনুভব করে এবং ব্রহ্মের সাথে একত্ব লাভ করে।


ভামতী ও বিবরণ স্কুলের মধ্যে এই তিনটি ধাপের ভূমিকা নিয়েও মতভেদ রয়েছে, যা তাদের মূল পার্থক্যেরই একটি ফলশ্রুতি। ভামতী স্কুল মনকে উপলব্ধি অর্জনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে দেখে, যেখানে বিবরণ স্কুল মনে করে যে, মহাবাক্য নিজেই সরাসরি উপলব্ধির কারণ। এই ভিন্নতা সত্ত্বেও, উভয় স্কুলই এই ত্রি-স্তরীয় পদ্ধতির গুরুত্বকে স্বীকার করে। এই পদ্ধতিগুলি সাধককে ধাপে ধাপে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোয় নিয়ে যায়, যেখানে ব্রহ্মের সাথে অভিন্নতা উপলব্ধ হয়।


অদ্বৈত বেদান্তের মূল শিক্ষাগুলি প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রগ্রন্থগুলির এক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, যা সম্মিলিতভাবে 'প্রস্থানত্রয়ী' নামে পরিচিত। এই তিনটি গ্রন্থ অদ্বৈত দর্শনের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত, এবং এগুলি ব্রহ্ম, আত্মা এবং জগতের একত্বের গভীর রহস্য উন্মোচন করে। প্রস্থানত্রয়ী জ্ঞান, ভক্তি এবং কর্মের এক অখণ্ড সমন্বয় সাধন করে, যা মানব অস্তিত্বের চরম লক্ষ্য মোক্ষ বা মুক্তি অর্জনের পথ নির্দেশ করে।


উপনিষদ (শ্রুতি প্রস্থান): উপনিষদগুলি হলো 'শ্রুতি' বা প্রত্যাদিষ্ট জ্ঞানের চূড়ান্ত উৎস, যা বৈদিক সাহিত্যের শেষ অংশ। এগুলি বেদান্ত নামেও পরিচিত, যার অর্থ বেদের শেষ বা চূড়ান্ত জ্ঞান। উপনিষদগুলি মূলত ব্রহ্ম (পরম সত্তা) এবং আত্মার (ব্যক্তিগত চেতনা) অভিন্নতা নিয়ে গভীর আলোচনা করে। এই গ্রন্থগুলিতেই অদ্বৈত বেদান্তের মূল বার্তা, যেমন "তত্ত্বমসি" (তুমিই সেই ব্রহ্ম), "অহং ব্রহ্মাস্মি" (আমিই ব্রহ্ম), এবং "অয়মাত্মা ব্রহ্ম" (এই আত্মাই ব্রহ্ম)-এর মতো বিখ্যাত মহাবাক্যগুলি বিধৃত আছে। এই মহাবাক্যগুলি জীবের মূলে থাকা ব্রহ্মের সঙ্গে একত্বের চরম সত্যকে ঘোষণা করে।


গৌড়পাদের 'মাণ্ডুক্য কারিকা' একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যা মাণ্ডুক্য উপনিষদের উপর ভিত্তি করে রচিত। এটি অদ্বৈত বেদান্তের প্রথম পদ্ধতিগত ও সুসংগঠিত গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত, যেখানে মায়া, জাগতিক অস্তিত্বের অনিত্যতা এবং ব্রহ্মের পরম সত্যতার মতো ধারণাগুলি সুবিন্যস্তভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উপনিষদগুলি শুধু অদ্বৈত দর্শনের মূল উৎসই নয়, এগুলি ব্রহ্মবিদ্যা বা ব্রহ্মজ্ঞান লাভের এক অমূল্য ভাণ্ডার, যা আত্ম-উপলব্ধির পথে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। এগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের প্রকৃত সত্তা জাগতিক সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে এক চিরন্তন, আনন্দময় এবং অপরিবর্তনীয় ব্রহ্ম।


ভগবদ্গীতা (স্মৃতি প্রস্থান): ভগবদ্গীতা হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুনের কথোপকথনের আকারে উপস্থাপিত। এটি 'স্মৃতি' বা মানবরচিত শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হলেও, এর শিক্ষাগুলি শ্রুতি বা উপনিষদের জ্ঞানকে সরল ও ব্যাবহারিক উপায়ে প্রকাশ করে। গীতা জ্ঞানযোগ (জ্ঞানের পথ), কর্মযোগ (কর্মের পথ) এবং ভক্তিযোগ (প্রেম ও ভক্তির পথ)-এর এক অপূর্ব সমন্বয় সাধন করে।


ভগবদ্গীতা আত্ম-জ্ঞানের গুরুত্ব এবং অহং বা সীমিত আত্মপরিচয় থেকে বিচ্ছিন্নতার আবশ্যকতা তুলে ধরে, যা চূড়ান্তভাবে মোক্ষ বা মুক্তি অর্জনে সহায়ক হয়। এটি কেবল তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং দৈনন্দিন জীবনে অদ্বৈতের নীতিগুলি কীভাবে প্রয়োগ করা যায় তার একটি বিশদ নির্দেশিকা প্রদান করে। গীতার শিক্ষানুসারে, আসক্তিবিহীন কর্ম এবং ফলের প্রতি নিরপেক্ষতা মোক্ষলাভের এক গুরুত্বপূর্ণ সোপান। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তাঁর কর্তব্য পালনের মাধ্যমে আত্ম-উপলব্ধির পথে অগ্রসর হতে অনুপ্রাণিত করেন, যা কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার এক শক্তিশালী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।