বেদের আলোয় অদ্বৈত: উনত্রিশ



ঋষি বশিষ্ঠের গভীর ঘোষণা আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মৌলিক প্রকৃতি সম্পর্কে একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। তিনি বলেন, "যেমন এক নির্মল আয়নায় নদীর ধারেকাছের গাছের প্রতিফলন পড়ে, তেমনই সেই নির্মল আয়না-ব্রহ্মণেই প্রতিফলিত হয় এই সমস্ত প্রতীতি-নির্ভর জগৎ।" এই উপমাটি ব্রহ্মকে এক বিশুদ্ধ, নিরাকার সত্তা হিসেবে তুলে ধরে যা সমস্ত অস্তিত্বের ভিত্তি। এটি এমন এক মাধ্যম যেখানে সমস্ত দৃশ্যমান ও অনুভূত জগৎ প্রতিফলিত হয়, ঠিক যেমন একটি পরিষ্কার আয়না তার পারিপার্শ্বিক সবকিছুকে ধারণ করে। এই জগৎ ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন হলেও ব্রহ্মের মৌলিক প্রকৃতি অক্ষুণ্ণ থাকে।

বশিষ্ঠ আরও বলেন, "এই সমস্ত জগৎ ব্রহ্মণের মানস-লীলা।" এই উক্তিটি জগৎকে ব্রহ্মের এক স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি বা অভিব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করে, যেখানে সবকিছু ব্রহ্মের সচেতনতা বা ইচ্ছারই প্রকাশ। এটি কোনো বাহ্যিক শক্তি দ্বারা সৃষ্ট নয়, বরং ব্রহ্মের অন্তর্নিহিত আনন্দেরই এক খেলা। তিনি আরও যোগ করেন, "ব্রহ্ম এক হয়েও জগৎ হয়ে ওঠে, তবু তার ঐক্য-স্বরূপ হারায় না।" এর অর্থ হলো, যদিও ব্রহ্ম বহু রূপে, বহু নামে এবং বহু ঘটনায় প্রকাশ পায়, তবুও তার মূল একত্ব কখনো ব্যাহত হয় না। এই জগৎ আসলে ব্রহ্মের অবিদ্যা দ্বারা উৎপন্ন হয়, যেখানে অবিদ্যা হলো এক ভ্রম যা আত্মাকে এর নিজস্ব বিশুদ্ধ রূপ থেকে ভিন্ন রূপে উপলব্ধি করায়। এই অবিদ্যার বিষয়ও আত্মা, অবলম্বনও আত্মা—অর্থাৎ, আত্মাই এই ভ্রমের কেন্দ্রবিন্দু এবং আত্মাই এর সমাধান।

তবে, এই অদ্বৈতবাদী ধারণার একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে, যা অন্যের ধারণা মেনে সেটিকে চূড়ান্ত পরিণতিতে ঠেলে দেয়। প্রতিপক্ষের যুক্তি হলো, যদি আত্মাকে অবিদ্যার বস্তু ধরা হয়, তাহলে আত্মার অস্তিত্বের কোনো মানবীয় বা ঐশী প্রমাণ (যেমন বেদ) থাকতে পারে না। তাদের মতে, যদি আত্মা অবিদ্যার ফল হয়, তবে তার কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব থাকে না, ঠিক "খরগোশের শিঙের মতো"—যা বাস্তবের বুকে অনুপস্থিত। এর ফলে, বেদ অধ্যয়ন করে আত্মার জ্ঞানলাভের ইচ্ছাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে, কারণ একটি অস্তিত্বহীন বস্তুকে জানার কোনো অর্থই হয় না। ফলস্বরূপ, আত্মার বিষয়ে বেদবাণীর পক্ষে যুক্তির প্রয়োজনও ফুরিয়ে যায়, কারণ বেদও তখন অর্থহীন হয়ে পড়ে। এটিই প্রতিপক্ষের মূল বক্তব্য, যা অদ্বৈতবাদের ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এই প্রতিপক্ষের জবাব দিতে অদ্বৈতপক্ষ দৃঢ় যুক্তি উপস্থাপন করে। তারা ঘোষণা করে, "এইখানে আমরা যুক্তি দিয়ে ঘোষণা করছি সেই সত্যকে—যা বেদের অন্তর্লীন, যা পরম-আনন্দ, যা আত্মা, যা জ্ঞাতা।" অদ্বৈতবাদীরা জোর দিয়ে বলেন যে আত্মা নিজস্ব স্বরূপে স্বতঃসিদ্ধ, অস্তিত্বশীল, চিরন্তন। এটি কোনো অস্তিত্বহীনতা নয়, বরং এটি প্রমাণের ঊর্ধ্বে, কারণ প্রমাণ (প্রমাণ-পদ্ধতি) যেভাবে সম্ভব হয়, তার মূলে যে আছে, সেটিই আত্মা। আত্মা নিজেই সমস্ত প্রমাণের ভিত্তি, তাই তাকে অন্য কোনো কিছুর দ্বারা প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় না। আত্মা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পর্কহীন, সে-ই সত্য, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আবার অসীম। মুক্তি-অবস্থা হলো এই আত্মাকে উপলব্ধি করা, এবং কেবল মুক্তিই একে জানে। এই উপলব্ধিই মানুষের চূড়ান্ত লক্ষ্য, যেখানে আত্মজ্ঞানের মাধ্যমে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ হয়।

অদ্বৈতবাদীরা আরও ব্যাখ্যা করেন যে, "এই ব্রহ্মের একটি ক্ষুদ্রাংশের ক্ষুদ্রাংশই হলো এই সমগ্র জগৎ।" এর অর্থ হলো, জগৎ ব্রহ্মের এক অতি সামান্য অংশ মাত্র, এবং তার অন্তঃসার একমাত্র অন্তরের আলোক, যা পরম কল্যাণময়। প্রতিপক্ষ আত্মাকে অবাস্তব করে দিতে চাইলেও, অদ্বৈত উত্তরে বলে—"আত্মা/ব্রহ্ম অস্তিত্বশীল, স্বতঃসিদ্ধ, প্রমাণের ঊর্ধ্বে, চিরন্তন, এবং একেই জানাই মুক্তি।" এই উক্তিটি অদ্বৈতবাদের মূল কথাকে সংক্ষেপে তুলে ধরে: আত্মাই পরম সত্য, যা স্বয়ংসিদ্ধ এবং অবিনশ্বর, এবং তাকে জানাই মানব জীবনের পরম সার্থকতা।

এখন প্রশ্ন আসে, উপরের যুক্তিতে (তর্ক) কি এটাই বোঝানো হয়েছে যে, আত্মার কোনো প্রমাণ নেই বলে আত্মার অস্তিত্বই অসম্ভব, না কি আত্মার জ্ঞানলাভই অসম্ভব? এর জবাব হলো, প্রথমটি নয়। কারণ আত্মা স্বভাবতই নিত্য, তাই অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নয় (যার থেকে এর উৎপত্তি হতে হবে)। প্রমাণ তো এমন কিছুর উৎপাদক হতে পারে না, যার প্রমাণ এটি দেয়। প্রমাণ কেবল বিদ্যমান বস্তুর অস্তিত্ব নির্দেশ করে, তাকে সৃষ্টি করে না। আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণসাপেক্ষ নয়, কারণ আত্মা নিজেই সমস্ত প্রমাণের উৎস।

দ্বিতীয় বিকল্পের ক্ষেত্রে বলা যায়, যদি আত্মার জন্য কোনো প্রমাণ অনুমান করা হয়ও, তবে সেই প্রথম প্রমাণকে সমর্থন করার জন্য দ্বিতীয় প্রমাণও ধরতে হবে। কারণ, যদি সেই দ্বিতীয় প্রমাণ না থাকে, তবে প্রথম প্রমাণ একেবারেই অনস্তিত্বশীল—'খরগোশের শিং'-এর মতো—এবং কোনো কিছুই এর প্রমাণ হতে পারে না। এই পরিস্থিতি একটি যুক্তিতাত্ত্বিক দোষ সৃষ্টি করে, যাকে "অসীম পশ্চাদগমন" (infinite regress) বলা হয়। অর্থাৎ, একটি প্রমাণকে সমর্থন করতে আরেকটি, তাকে সমর্থন করতে আরও একটি—এভাবে endlessly পিছিয়ে যেতে হবে, যা অসিদ্ধ। তাই এই দ্বিতীয় বিকল্পের অন্তর্নিহিত ধারণা—যে-কোনো বস্তুর অস্তিত্ব কেবলমাত্র (স্বীকৃত) প্রমাণের মাধ্যমেই প্রমাণিত হতে পারে (যেমন প্রত্যক্ষ, অনুমান ইত্যাদি)—এটি নিছক একধরনের সাহসী অনুমানমাত্র। এই অনুমানটি নিজেই প্রমাণসাপেক্ষ, যা এটিকে আরও দুর্বল করে তোলে।

এই পর্যায়ে প্রতিপক্ষ থামিয়ে দিয়ে বলে—প্রমাণ তো আসলে কোনো দ্বিতীয় প্রমাণের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং এটি নিজের অস্তিত্ব এবং যার প্রমাণ দেয়, তারও অস্তিত্ব প্রমাণ করে। তাদের মতে, প্রমাণ স্বভাবতই স্বপ্রকাশমান (self-luminous), তাই নিজেকে ও তার বিষয়কে প্রকাশ করতে অন্য কোনো আলোর প্রয়োজন হয় না—যেমন একটি প্রদীপের আলোকে অন্য কোনো আলো দ্বারা আলোকিত করার প্রয়োজন হয় না। প্রদীপ যেমন নিজে জ্বলে এবং চারপাশের সবকিছুকে আলোকিত করে, তেমনি প্রমাণও নিজেই নিজেকে প্রমাণ করে এবং প্রমেয়কে উদ্ভাসিত করে। এবং, প্রতিপক্ষ আরও বলে, যে সমস্ত কিছুর প্রমাণ/প্রমাণস্বরূপ, তাকেই আবার অন্য কিছুর দ্বারা প্রমাণ করতে হবে—এমন ধারণা যুক্তিসঙ্গত নয়। এই যুক্তিটি প্রমাণ প্রক্রিয়ার স্বকীয়তা এবং আত্ম-নির্ভরশীলতা তুলে ধরে, যা অদ্বৈতবাদের আত্ম-স্বতঃসিদ্ধ ধারণার সাথে একধরনের সমান্তরাল সৃষ্টি করে, যদিও তাদের উপসংহার ভিন্ন।

আমাদের উত্তর—এ এক দুঃখজনক সিদ্ধান্ত!—কারণ এর মুখোমুখি হয়ে কীভাবে বলা যায় যে, আত্মা, যা সমগ্র জানা জগত ও জ্ঞান-উপকরণের প্রমাণস্বরূপ, সেটিকে আবার প্রমাণ দ্বারা প্রমাণ করতে হবে, অথচ সেই প্রমাণকেও আবার আত্মা দ্বারা সমর্থিত হতে হবে? আত্মা তো অবশ্যই যে-কোনো ধরনের প্রমাণের পূর্বেই বিদ্যমান ছিল (না হলে প্রমাণ কখনও প্রমাণ হিসেবে স্বরূপলাভ করতে পারত না, কারণ তখন তো কোনো জ্ঞাতা থাকত না)। আর কীভাবে কোনো প্রমাণ আত্মাকে প্রকাশ করতে পারে, যে-আত্মাই সকল কিছুর জ্ঞাতা? তা হলে তো কর্তা (জ্ঞাতা) ও কর্ম (জ্ঞেয়)—এই ভেদটাই বিলোপ হয়ে যাবে (আত্মা একসঙ্গে জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় হয়ে দাঁড়াবে)। আর আত্মা ব্যতীত অন্য কিছু কখনও জ্ঞাতা হতে পারে না, কারণ সেটি আত্মা নয়।

এবং, এজন্যই শ্রুতি ঘোষণা করেছে—“জ্ঞাতাকে আর কী দ্বারা জানা যায়?” সুতরাং, আত্মা যেহেতু জ্ঞাতা, সে স্বপ্রমাণিত; এবং তার জন্য কোনো প্রমাণের অনুপস্থিতির কারণে তার অনস্তিত্ব কখনোই প্রমাণিত হয় না। আমরা আরও জিজ্ঞেস করি—উপরের মতো করে যে আত্মার অনস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে, সেটি কি কোনো স্বীকৃত প্রমাণের (pramāṇa) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, না কি সেটি স্বভাবতই অজানা, না কি সেটি স্বপ্রমাণিত?

প্রথম বিকল্পের ক্ষেত্রে—কারণ নিয়ম এই যে, যে-কোনো প্রমাণ যদি কোনো অনস্তিত্বকে জানায়, তবে সেই অনস্তিত্বের প্রতিপক্ষ সত্তাকেও জানাতে হবে; সুতরাং যে-প্রমাণ আত্মার অনস্তিত্ব ঘোষণা করে, সেটিকেও আত্মাকে প্রমাণ করতে হবে। অতএব আত্মার অনস্তিত্ব কোনোভাবেই প্রমাণিত হতে পারে না।

দ্বিতীয় বিকল্পও সঠিক নয়, কারণ সম্পূর্ণ অজানা বিষয়ে কোনো প্রকার স্বীকারোক্তি (affirmation) সম্ভব নয়; যে কোনো মানসে প্রবেশই করেনি, তাকে নিশ্চিত করা যায় না।

তৃতীয় বিকল্প গ্রহণ করলে তখন স্বীকার করতেই হয় যে, আত্মাই একমাত্র স্বপ্রমাণিত; আর এটাও মানতে হয় যে, অনস্তিত্ব (যেহেতু তা জড়, জড় পদার্থের মতো, চৈতন্যহীন) স্বপ্রমাণিত হতে পারে না। যদি এটিকে অস্বীকার করা হয় (অর্থাৎ যদি আপনি অনস্তিত্বকে চৈতন্যময় মনে করেন), তবে তার মানে দাঁড়ায়, আপনি আত্মাকেই অন্য নামে ডেকেছেন—‘অনস্তিত্ব’ বলে।

এরপর, প্রশ্ন ওঠে—আত্মার অনস্তিত্ব কি আত্মা দ্বারা জ্ঞাত হয়, না কি অনাত্মা দ্বারা? অনাত্মা দ্বারা নয়, কারণ অনাত্মা জ্ঞাতা নয়। আত্মা দ্বারা তো নয়ই—কারণ এ তো নিজেই বিরোধপূর্ণ কথা। আমাদের বক্তব্য বুঝিয়ে বলি—আত্মা কি তার নিজের অনস্তিত্বকে তখনই জানে, যখন সে নিজে বিদ্যমান, না কি যখন সে অনস্তিত্বশীল?

প্রথম বিকল্পে—যখন আত্মা বিদ্যমান, তখন তার অনস্তিত্বের প্রশ্নই ওঠে না। আরও বলা যায়, তখন আত্মা কীই-বা জানবে, কারণ জানার বস্তু (আত্মার অনস্তিত্ব) তো তখন নেই।

দ্বিতীয় বিকল্পে—যদি আত্মা অনস্তিত্বশীল হয়, তবে সে কিছু জানতেই পারবে না, কারণ তখন তো সে নেই।

যদি বলা হয়—আত্মা যখন বিদ্যমান, তখন সে নিজের ভবিষ্যৎ অনস্তিত্বকে জানে—তাহলে আমরা বলি, এই মতানুযায়ী আত্মা এখন আছে, কিন্তু পরে বিনষ্ট হবে। আর আত্মার এই অনিত্যতার (anitya) ধারণা আমরা ইতোমধ্যেই খণ্ডন করেছি, কারণ এর যুক্তিগত ফল দাঁড়ায় কর্মের পূর্বাপর ফলবত্তা ধ্বংস হবে এবং ব্যক্তির দ্বারা না-করা কর্মেরও ফল ব্যক্তিকে ভোগ করতে হবে—যা অসম্ভব।

অতএব, যে-ব্যক্তি আত্মার অনস্তিত্ব দাবি করে, সে কি নিজের আত্মাকেই অস্বীকার করছে, না কি অন্যের আত্মাকে? প্রথম ক্ষেত্রে—যেহেতু অস্বীকারকারী নিজেই (ধারণা অনুযায়ী) অনস্তিত্বশীল, সুতরাং অন্য যে-আত্মাকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্য ছিল, সেটি অবশিষ্ট থেকে যায় বাস্তবরূপে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে—অস্বীকারকারীকে তো বাস্তব ধরে নিতেই হয়। তাহলে আত্মার অনস্তিত্ব কীভাবে বজায় রাখা সম্ভব? শ্রুতি আমাদের মতকেই সমর্থন করে:—“যে ব্রহ্মকে অনস্তিত্বরূপে জানে, সে নিজেই অনস্তিত্বশীল হয়। আর যে ব্রহ্মকে সত্তারূপে জানে, জ্ঞানীগণ তাকেই সত্তারূপে জানেন।”

আমরা পুনরায় এই মৌলিক প্রশ্নে ফিরে আসি: প্রমাণ কি কেবল সত্তার অস্তিত্ব-জ্ঞাপক, না কি অসত্তার অনস্তিত্ব-প্রকাশকও হতে পারে? এই প্রশ্নটি দর্শনের এক গভীর বিতর্ককে স্পর্শ করে।

সত্ত্ব (Sattva—অস্তিত্ব / Being / সত্য)— শব্দমূল: sat (অস্তিত্ব, থাকা, সত্য) + tva (ভাব/অবস্থা)। এর অর্থ: যে আছে, যার অস্তিত্ব আছে, যা সত্য। দার্শনিকভাবে সত্ত্ব মানে—অস্তিত্বশীল বাস্তবতা (Being, Existence), যা নিত্য, স্বয়ংপ্রকাশ, সত্য। অদ্বৈত বেদান্তে: চূড়ান্ত সত্ত্ব হলো ব্রহ্ম—যা সর্বদা আছে, কখনও নষ্ট হয় না। শরীর, মন, জগৎ—এগুলো পারমার্থিক অর্থে সত্ত্ব নয়, কেবল অবিদ্যা-জাত প্রতীতি। উদাহরণ: আত্মা বা চৈতন্য—চিরন্তন সত্ত্ব।

অসত্ত্ব (Asattva—নাস্তিত্ব / Non-being / মিথ্যা)—শব্দমূল: a (নিষেধ) + sat (অস্তিত্ব) + tva (ভাব)। এর অর্থ: যে নেই, যার কোনো অস্তিত্ব নেই, যা মিথ্যা। দার্শনিকভাবে অসত্ত্ব মানে—অস্তিত্বহীনতা বা নাস্তিত্ব (Non-being, Non-existence), যা সত্য নয়, টেকসই নয়। অদ্বৈত বেদান্তে: অসত্ত্ব হলো মায়া-জাত ভ্রান্ত প্রতীতি—যেমন দড়িকে সাপ দেখা। জগৎও ব্রহ্মজ্ঞানের দৃষ্টিতে অসত্ত্ব, কারণ এটি পরিবর্তনশীল ও নিত্য সত্য নয়। উদাহরণ: মরীচিকার জল—অসত্ত্ব।

যদি আমরা মেনে নিই যে, প্রমাণ অসত্ত্বকেও জ্ঞাপন করতে পারে, তবে এর পরিণতি সুদূরপ্রসারী এবং জটিল। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, প্রমাণ কেবল বিদ্যমান বস্তুর জ্ঞান দেয় না, বরং যা নেই, যা অনস্তিত্বশীল, তার ধারণাকেও প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কিন্তু এই ধারণা একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করে। যেমন, ‘খরগোশের শিং’—এটি এমন একটি দৃষ্টান্ত, যা সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং বাস্তবের কোনো ভিত্তি নেই। খরগোশের শিং-এর অস্তিত্ব নেই, এটি একটি নিছক অনস্তিত্ব। যদি প্রমাণ অসত্ত্বকে জ্ঞাপন করতে পারে, তবে এই ধরনের নিছক অনস্তিত্বগুলোকেও ‘প্রমাণিত’ বলে গণ্য করতে হবে।