অদ্বৈত বেদান্ত তার মৌলিক দার্শনিক প্রতিপাদ্যগুলোকে একটি সংক্ষিপ্ত সূত্রে সুচারুভাবে উপস্থাপন করে: "ব্রহ্ম সত্যং, জগৎ মিথ্যা, জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ"। এই সূত্রটি তিনটি মৌলিক নীতির উপর আলোকপাত করে: একমাত্র ব্রহ্মই চূড়ান্ত ও পরম সত্য, এই অনুভূত জগৎ কেবল একটি প্রতিভাস বা মায়া, এবং ব্যক্তিগত জীবসত্তা (আত্মা) ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন নয়, বরং তার সঙ্গে অভিন্ন। এই দর্শনটি তার "অদ্বৈত" বা "অ-দ্বিতীয়" নামকরণের তাৎপর্য বহন করে, কারণ এটি মহাবিশ্বে কেবল একটিই পরম সত্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করে—তা হলো ব্রহ্ম।
ব্রহ্ম সত্যং (Brahman Satyam): ব্রহ্ম (পরম সত্য, চূড়ান্ত বাস্তবতা, ঈশ্বর) একমাত্র সত্য। ব্রহ্ম নিত্য, অপরিবর্তনীয়, এবং চিরন্তন। এটিই সমস্ত অস্তিত্বের মূল ভিত্তি। জগৎ মিথ্যা (Jagat Mithya): এই জগৎ বা দৃশ্যমান বিশ্ব মিথ্যা (বা 'মিথ্যা', অর্থাৎ আপেক্ষিক বা মায়াময়)। 'মিথ্যা' বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে যে, জগৎ নিরঙ্কুশ বা চূড়ান্ত সত্য নয়; এটি পরিবর্তনশীল, অনিত্য, ক্ষণস্থায়ী, এবং ব্রহ্মের মতো চিরন্তন নয়। এটি মায়ার কারণে সৃষ্ট একটি আপাত-বাস্তবতা, যেমন স্বপ্ন বা মরীচিকা। জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ (Jivo Brahmaiva Na Parah): জীব (ব্যক্তিগত আত্মা) ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন নয়। অর্থাৎ, প্রতিটি জীবাত্মা বা ব্যক্তি-সত্তার মূল স্বরূপ হলো সেই পরমাত্মা বা ব্রহ্ম। জীব তার অজ্ঞানতা বা মায়ার কারণে নিজেকে দেহ ও মন দ্বারা সীমিত ও ব্রহ্ম থেকে আলাদা মনে করে, কিন্তু তার প্রকৃত সত্তা হলো ব্রহ্ম। এই উক্তিটি এককথায় বলে যে, ব্রহ্মই একমাত্র চূড়ান্ত সত্য; এই জগৎ আপেক্ষিক ও মায়াময়; এবং জীবাত্মা আসলে ব্রহ্মই, অন্য কিছু নয়। এই উপলব্ধির মাধ্যমেই মুক্তি বা মোক্ষ লাভ হয় বলে অদ্বৈত বেদান্তে বিশ্বাস করা হয়।
এই মৌলিক কাঠামোটি একটি গভীর দার্শনিক প্রশ্ন উত্থাপন করে, যা অদ্বৈতীয় চিন্তাধারার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে—যদি ব্রহ্মকে শুদ্ধ, অসীম এবং স্বয়ং-প্রকাশ চৈতন্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তবে কীভাবে সেই পরম সত্তাই অজ্ঞানতা বা অবিদ্যার আশ্রয়স্থল (locus) হতে পারে? এটি একটি আপাত বিরোধ, কারণ বিশুদ্ধ জ্ঞানস্বরূপ সত্তায় অজ্ঞানের স্থান থাকা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব বলে মনে হয়। এ সম্পর্কিত বিশ্লেষণটি কেবল তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অদ্বৈত দর্শনের বাস্তবসম্মত শিক্ষণ পদ্ধতি এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তিকেও তুলে ধরে। এই প্রশ্নটি আধুনিক মনন ও প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, যেখানে আমরা একদিকে পরম সত্তার বিশুদ্ধতা নিয়ে চিন্তা করি, অন্যদিকে জাগতিক দুঃখ, সীমাবদ্ধতা এবং অজ্ঞানের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করতে পারি না। অদ্বৈত এই উভয় বাস্তবতার মধ্যে একটি সুসংহত সেতু তৈরি করার চেষ্টা করে।
অদ্বৈত বেদান্তের মতে, ব্রহ্ম হলো চূড়ান্ত, অপরিবর্তনীয় বাস্তবতা, যা স্থান, কাল এবং কার্যকারণ সম্পর্কের ঊর্ধ্বে অবস্থিত। ব্রহ্মকে সংজ্ঞাহীন, বর্ণনার অতীত এবং ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধির বাইরে বলে মনে করা হয়। এটিকে “'সৎ', 'চিৎ' ও 'আনন্দ'”-এর সমন্বয়ে 'সচ্চিদানন্দ' (Sat-Chit-Ananda) হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা পরম অস্তিত্ব, বিশুদ্ধ চেতনা এবং পরম সুখের প্রতীক। ব্রহ্মকে সৎ-চিৎ-অনন্ত (অসীম অস্তিত্ব) হিসেবেও বর্ণনা করা হয়, যা কোনো প্রকার সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত। এটি সৎ (পরম অস্তিত্ব), চিৎ (বিশুদ্ধ চেতনা বা জ্ঞান) এবং অনন্ত (অসীমতা) এর সমন্বয়ে সত্যম-জ্ঞানম-অনন্তম হিসেবেও পরিচিত।
অদ্বৈত দর্শন ব্রহ্মের দুটি দিককে স্বীকার করে: নির্গুণ ব্রহ্ম এবং সগুণ ব্রহ্ম।
প্রথমত, নির্গুণ ব্রহ্ম হলেন সেই পরম সত্য, যা সকল গুণ, আকার, বৈশিষ্ট্য এবং দ্বৈততার অতীত। এই ব্রহ্মকে কোনো বিশেষ উপাধি দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তিনি নিরাকার (shapeless), নির্বিশেষ (without specific attributes) এবং মানবীয় বুদ্ধি বা ভাষার সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। উপনিষদে নির্গুণ ব্রহ্মকে 'নেতি নেতি' (এটি নয়, এটি নয়) বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যার অর্থ হলো ব্রহ্মকে কোনো সীমাবদ্ধ বিশেষণ বা পরিচিত ধারণার দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা অসম্ভব। তিনি কোনো বস্তু, গুণ, ক্রিয়া বা সম্পর্কের দ্বারা আবদ্ধ নন। এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে কোনো প্রকার ভেদ বা পার্থক্য নেই—যা সকল প্রকার উপাধি থেকে মুক্ত এবং সম্পূর্ণ অসীম। নির্গুণ ব্রহ্ম হলেন পারমার্থিক সত্য (paramarthika satya), অর্থাৎ চূড়ান্ত ও পরম বাস্তবতা যা অভিজ্ঞতা, সময় বা দেশ দ্বারা প্রভাবিত নয়। এটি সেই অনির্বচনীয় সত্তা, যা অদ্বৈত বেদান্তের মূল ভিত্তি।
দ্বিতীয়ত, যখন এই নির্গুণ ব্রহ্ম তাঁর সৃজনশীল শক্তি মায়ার (Māyā) সাথে যুক্ত হন, তখন তাঁকে সগুণ ব্রহ্ম বা ঈশ্বর (Īśvara) বলা হয়। ঈশ্বর হলেন জগতের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং সংহারকর্তা। তিনি ব্রহ্মেরই একটি প্রকাশ, যা মায়ার মাধ্যমে জগতের সঙ্গে সম্পর্কিত। সগুণ ব্রহ্মের ধারণাটি ব্যাবহারিক স্তরে পরম সত্তাকে বোঝার এবং অনুভব করার পথ তৈরি করে। ঈশ্বর হলেন ব্যক্তিক ব্রহ্ম, যিনি গুণাবলী এবং কার্যাবলীর সঙ্গে যুক্ত। তিনি জগতের শৃঙ্খলা বজায় রাখেন, জীবের কর্মফল নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ভক্তদের ভক্তি ও উপাসনার আশ্রয় হন। ঈশ্বরকে সাধারণত ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের মতো দেবতাদের রূপে পূজা করা হয়, যাঁরা ঈশ্বরের বিভিন্ন কার্যকারিতা প্রকাশ করেন। এই সগুণ ব্রহ্ম হলেন ব্যাবহারিক স্তরে পরম সত্তার প্রকাশ (vyavaharika satya), অর্থাৎ জাগতিক অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে সত্য।
এই দ্বৈত-দৃষ্টিভঙ্গিটি আপাতভাবে ব্রহ্মের একক সত্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হলেও, এটি অদ্বৈতের একটি অপরিহার্য দিক। নির্গুণ ব্রহ্ম হলেন চূড়ান্ত বাস্তবতা, যা সর্বতোভাবে বৈষম্যহীন এবং অপরিবর্তনীয়, যেখানে সগুণ ব্রহ্ম হলেন সেই একই বাস্তবতা, যা মায়ার মাধ্যমে জগৎ এবং তার বৈচিত্র্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দুই দিকের মাধ্যমে অদ্বৈত দর্শন পরম সত্যকে উপলব্ধির পথ তৈরি করে—একদিকে যা অসীম ও অনির্বচনীয়, অন্যদিকে যা গুণাবলী এবং সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের কাছে প্রকাশিত। এটি কেবল একটি দার্শনিক বিভাজন নয়, বরং পরম সত্তার গভীরতর উপলব্ধি এবং আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো প্রদান করে। নির্গুণ ব্রহ্মের জ্ঞান মোক্ষ লাভের জন্য অপরিহার্য, যেখানে সগুণ ব্রহ্মের উপাসনা জীবের জাগতিক কল্যাণ ও মানসিক শান্তির জন্য সহায়ক।
অদ্বৈত বেদান্তের কেন্দ্রীয় ধারণা হলো জীব (ব্যক্তিগত সত্তা) এবং ব্রহ্মের মৌলিক অভিন্নতা। এই অভিন্নতা উপনিষদের চারটি মহাবাক্যে সুষ্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে, যেমন "তত্ত্বমসি" (তুমিই সেই) এবং "অহং ব্রহ্মাস্মি" (আমি ব্রহ্ম)। আত্মা (Ātman) হলো জীবের অভ্যন্তরস্থ অবিনশ্বর সত্তা, যা দেহ-মন-বুদ্ধির জটিলতা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। আত্মা ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন নয়, বরং একই অসীম, অদ্বৈত চৈতন্য। এটিকে ব্রহ্মের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ বা microcosm essence হিসেবে দেখা হয়। এটি দেহ, ব্যক্তিত্ব বা অহং নয়, বরং বিশুদ্ধ ও ঐশ্বরিক চেতনা।
জীব কেন নিজেকে ব্রহ্ম থেকে পৃথক মনে করে? এর মূল কারণ হলো, আত্মা উপাধি (Upādhis) বা আরোপিত সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ থাকে। এই উপাধিগুলি হলো স্থূল দেহ, সূক্ষ্ম মন এবং ইন্দ্রিয়সমূহ, যা আত্মার প্রকৃত স্বরূপকে আড়াল করে রাখে। আত্মা আসলে পরম ব্রহ্মের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, অজ্ঞানতার (Avidya) কারণে নিজেকে এই ক্ষণস্থায়ী উপাধিগুলির সঙ্গে একীভূত করে ফেলে। এই একীভূতকরণই জীবসত্তা হিসেবে পরিচিত। জীবসত্তা হলো সেই আত্মা, যা মায়ার প্রভাবে নিজেকে সীমাবদ্ধ মনে করে।
এই দর্শনটি সাংখ্য দর্শনের পুরুষ (বিশুদ্ধ চেতনা) এবং প্রকৃতি (বস্তু জগৎ) এর দ্বৈতবাদকে একত্বে রূপান্তর করে। সাংখ্য মতে, পুরুষ ও প্রকৃতি দুটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন তত্ত্ব। কিন্তু অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে, এই পরিবর্তনটি নির্দেশ করে যে, চেতনা (ব্রহ্ম) নিজেই ক্ষণস্থায়ী জাগতিক জগতের কারণ ও উৎস। অর্থাৎ, ব্রহ্মই একমাত্র পরম সত্তা, এবং এই জগৎ ব্রহ্মেরই বিবর্ত বা প্রতিভাস। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, জীব কোনো স্বতন্ত্র, বহুবিধ সত্তা নয়, বরং এক অদ্বৈত ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি প্রতিভাস বা সীমাবদ্ধতা। যেমন, একটি রজ্জুতে সর্প ভ্রম হয়, তেমনি ব্রহ্মে জীবের ভ্রম হয়।
এটিই মায়া ও অবিদ্যার গভীরতর আলোচনাকে অপরিহার্য করে তোলে। মায়া হলো ব্রহ্মের সেই অলৌকিক শক্তি, যার দ্বারা ব্রহ্ম এই বহুবিধ জগৎ সৃষ্টি করেন এবং জীবকে মোহিত করেন। অবিদ্যার অর্থ হলো পরমাত্মা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব বা মিথ্যা জ্ঞান। জীব এই মায়া ও অবিদ্যার কারণে নিজের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে না এবং নিজেকে দেহ, মন ও ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে একীভূত মনে করে।
জীবের এই ভ্রমই সংসারচক্রের মূল কারণ। সংসারচক্র হলো জন্ম-মৃত্যু, সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ ইত্যাদির একটি অবিরাম চক্র, যেখানে জীব তার কর্মফল অনুসারে বারবার জন্ম নেয় এবং মৃত্যুবরণ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত জীব তার প্রকৃত আত্মস্বরূপ উপলব্ধি করতে না পারে এবং অজ্ঞানতার আবরণ দূর করতে না পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে এই চক্রে আবদ্ধ থাকে। মোক্ষ বা মুক্তি লাভ তখনই সম্ভব হয়, যখন জীব "আমি ব্রহ্ম" (অহং ব্রহ্মাস্মি) এই তত্ত্বটি উপলব্ধি করে এবং উপাধিগুলির আরোপিত সীমাবদ্ধতা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে। এই উপলব্ধিই জীবকে সংসারচক্র থেকে মুক্তি দিয়ে পরম শান্তি ও আনন্দ প্রদান করে।
মায়া (Māyā) এবং অবিদ্যা (Avidyā) হলো অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের দুটি কেন্দ্রীয় ধারণা, যা ব্রহ্মের অনবদ্য বাস্তবতা থেকে নাম ও রূপের বৈচিত্র্যময় জগতের প্রকাশ এবং জীবের ব্যক্তিগত অজ্ঞানতার ব্যাখ্যা দেয়। এই দুটি ধারণা একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত হলেও তাদের স্বতন্ত্র কার্যকারিতা রয়েছে।
মায়া হলো অদ্বৈত বেদান্তের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা প্রায়শই 'বিভ্রম' বা 'মহাজাগতিক বিভ্রম' হিসেবে অনুবাদ করা হয়। তবে এটি নিছক একটি ভ্রম নয়, বরং ব্রহ্মের একটি সহজাত, অনাদি ও সৃজনশীল শক্তি (Śakti)। এই শক্তি ব্রহ্মকে প্রভাবিত না করেও অনবদ্য ও নির্বিশেষ ব্রহ্ম থেকে নাম (Nāma) ও রূপের (Rūpa) বৈচিত্র্যময় জগতকে প্রকাশ করে। মায়ার নিজস্ব কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই; এটি ব্রহ্মের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল, ঠিক যেমন সূর্যের রশ্মি সূর্য ছাড়া অস্তিত্বহীন। এটি ব্রহ্মের শক্তি হলেও ব্রহ্ম মায়ার দ্বারা আবদ্ধ নন, বরং ব্রহ্ম মায়ার অধিপতি। মায়ার দুটি প্রধান কার্যকারিতা রয়েছে, যা একত্রে জাগতিক অভিজ্ঞতা তৈরি করে:
আবরণ (āvaraṇa): এই কার্যকারিতার মাধ্যমে মায়া ব্রহ্মের প্রকৃত স্বরূপকে আড়াল করে রাখে। ব্রহ্ম যে নির্গুণ, নিরাকার, নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ ও মুক্ত সত্তা, তা জীবের কাছে প্রতিভাত হতে বাধা দেয়। ঠিক যেমন মেঘ চাঁদকে ঢেকে রাখলেও চাঁদের অস্তিত্ব বা প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে না, তেমনি মায়া ব্রহ্মকে আবৃত করে রাখে। এর ফলে জীব ব্রহ্মের সঙ্গে তার অভিন্নতাকে উপলব্ধি করতে পারে না।
বিক্ষেপ (vikṣepa): আবরণ কার্যকারিতার ফলস্বরূপ, বিক্ষেপ শক্তি বৈচিত্র্যময় জগৎকে প্রতিভাত করে। আবৃত ব্রহ্মের উপর মায়া নাম ও রূপের নানা জগৎ, যেমন আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল, পৃথিবী, শরীর, মন ইত্যাদি সৃষ্টি করে। এই কার্যকারিতার মাধ্যমেই এক ব্রহ্ম বহু রূপে প্রতিভাসিত হয় এবং জীব নিজেকে এই বৈচিত্র্যময় জগতের অংশ হিসেবে অনুভব করে। মায়া এমন এক শক্তি, যা সত্যকে আবৃত করে এবং মিথ্যাকে (জগৎ) সত্যের মতো উপস্থাপন করে, যা আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের বাস্তবতা তৈরি করে।