বিষাদের শিষ্য

তুমি চলে যাচ্ছ, আমিও চলে যাব।
কাশবন বলে, একটা সমুদ্র কেনো, আর একচিমটে আকাশের নীল; আমি নাহয় এবেলা ধার দেবো!
বুনোঘাস আমোদে-প্রমোদে জেগে ওঠে;
শিরোনামে, একটা সমুদ্র কিনবার আয়োজন!




মনে পড়ে, কতকাল তুমি কথার পড়শি হওনি?
একা একা দিনযাপন…নাহ্, ভালোই তো কেটেছে!
পাখিরা চিঠি দিয়েছে, অরণ্যে চলে যাও…
এমন অরণ্য, যেখানে সবুজ নেই, গহিনে কাঁটাতারে পাখিরাও বসে না, অথচ
একদিন মানুষ পৃথিবীর ছিল!




একদিন, তপ্তরোদে শহর ফেটে চৌচির হতো,
আমি তখনও কৃষ্ণচূড়ার রং খুঁজে ফিরতাম!
কোথায় সোনালু ফুটেছে, শহরের কোন দেয়ালে শিশুরা
খড়ি-কয়লায় ছবি আঁকছে, আমি তখনও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতাম!
কাশবন আজও বলে, একটা সমুদ্র কেনো, আর একচিমটে বাতাসের ঘ্রাণ, আমি নাহয় এবেলা ধার দেবো!




সন্ধের চাঁদ কেমন নেশা ধরায়, কয়েক পা এগুলেই বুঝি বসন্ত ডাকে;
বলে, চৌকাঠে পা রেখো, পথিক,
উঁকি দিয়ো না অন্দরে!




আমি আবার হেসে গড়িয়ে পড়ি, শহরের পথে পথে কৃষ্ণচূড়া খুঁজি।
ভেজা আস্তিনে তবে ঠোঁট রেখেছিলে কেন, হে বালিকা? কথা বলবে না, অবহেলা জাগে খুব, জানি!




শব্দহীন বৃক্ষের মতন দেউলিয়া পুরুষও হয় নিঃস্ব!
মাটি-মানুষ-বৃক্ষ, এই তিনে সুখ আজন্ম বিষাদের শিষ্য।




কিশোরী-জলে তুমি প্রণয়ী, মেয়ে, আমি কথক ঠাকুর
দক্ষিণেশ্বরে, গঙ্গার পাড়ে।
বেমালুম ভুলে গেছি, কেমন ছিল তোমার রাঙা ঠোঁট।
কথা ছিল, এবার বোশেখে কাচপাপড়ে পাতবে বাসর!




একদিন বিকেলে গঙ্গার পাড়ে, পড়ছিলেম রামায়ণ।
মনে হলো, এ কী করছি...ঠাকুরভোগে কাঙালের ভোজন!
সেই থেকেই তো পালানো শুরু…নদী-বৃক্ষ-বন!




থাকতে দেবে পাহাড়, সমুদ্র,
ঢেউয়ের পরে পাতানো ঘর, পাতানো স্বজন!
কাশবন তবুও বলে, একটা সমুদ্র কেনো, একচিমটে সুখের আগুন, আমি নাহয় এবেলা ধারে দেবো!
Content Protection by DMCA.com