ডেটলাইন ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ভোরবেলায় একটা রোবট এসে আপনাকে বিছানা থেকে তুলল, এরপর ফেলে দিল নিচে। একদম ধপাস! এর পরেও ঘুম ভাঙবে না? ভাঙবেই তো! এরপর? রাগ হবে খুউব? রোবটটাকে ধরে মার লাগাতে ইচ্ছে করবে? তো? মেরেই দেখুন না! রোবট ব্যথা পায় নাকি? বরং আপনার হাত ফেটে যাবে, হাতে ব্যথা পাবেন। এই শীতে ঘা শুকোবে? ভেবে দেখুন তো! আর ওরই-বা কী দোষ? আপনি তো ওকে কিনেইছিলেন আপনাকে জাগিয়ে দেবার জন্য। ও তো সারারাত ধরে অপেক্ষায় আছে কখন ৫টা বাজবে, আর তখুনিই আপনাকে দু-হাতে তুলে নিয়ে দুম করে নিচে ফেলে দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দেবে। আপনি মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখেন, অ্যালার্ম ঠিক সময়েই বাজে, আর আপনি অ্যালার্ম কেটে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। এজন্যই তো এই রোবট আপনার জন্য বিশেষভাবে বানানো। ভাবুন তো, এমন কিছু থাকলে কেমন হতো? আজ ভোরবেলা আমার রুমমেট বলছিল এমন একটা ঘুমভাঙানো রোবটের কথা। রোবট নেই, মোবাইল আছে, ও-ই ঘুম ভাঙিয়েছে। জোরে হাঁটতে হাঁটতে শুনলাম, ওই দূরে অন্ধকারের শরীর ভেদ করে হর্নের তীব্র আওয়াজ আসছে। গাড়িগুলোর ঘুম নেই। লাল ঘোরানো-আলো ছুড়তে ছুড়তে কুয়াশার মধ্য দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে রেক্টর স্যারকে আনতে। এই অবরোধে রোগী হওয়াটাই সবচাইতে সেইফ। চত্বরের ওপাশটায় ক্রিসমাস ট্রি মনে করিয়ে দেয়, বড়োদিন চলে গেছে। এই গাছগুলোতে আভিজাত্যের একটা ছোঁয়া আছে। থরে থরে শিল্পীর তুলি ছোঁয়ানো। সুপারি গাছের সারির মাঝখানটায় ট্র্যাক চলে গেছে। আমরা হাঁটছি তালপাতার সেপাই-মার্কা গাছগুলোকে দু-ধারে ফেলে ফেলে। আলো নেই, তাই ওদের ছায়াও নেই। কেউ কেউ মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। আমরা স্মার্ট, আমরা ধূমপান করি না, শুধু ধোঁয়া ছাড়ি। আকাশের গা ফুঁড়ে আলো আসছে। এই আবছা আলোয় মাঝারি গড়নের গাছগুলোর আঁকাবাঁকা সজ্জা মনে করিয়ে দেয়, এলোমেলো মানেই কিন্তু বিশৃঙ্খল নয়। এই এলোমেলোই ওদের শৃঙ্খলা। এই ভেজা মাটিতে দৌড়ে দৌড়ে ওই গাছের গোলকধাঁধায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। আচ্ছা, হারিয়ে গেলে কে খুঁজবে? যাকে খোঁজার কেউই নেই, সে আবার হারায় নাকি? যার অভিমান করার কেউ নেই, সে হারায় কেন? আমি ভাবি, যদি কেউ খুঁজত, তবে হারাতাম না নাকি? পিটি শুরু হয় টেনিস কোর্টে। এই খয়েরি-সবুজ গ্রাউন্ডের চারদিকের ফেন্সিং লোহার পুরু তার দিয়ে দেওয়া। তারের বিন্যাস এঁকেবেঁকে ওপরে উঠে গেছে। (না কি নিচে নেমেছে?) তারের সরু সরু গা বেয়ে জমে-যাওয়া শিশির গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। শিশিরের জল বেয়ে পড়ার এই দৃশ্যটা খুব চমৎকার। একটু করে নেমে, একটা খাঁজের কোলে বিশ্রাম নেয়, ওর আরেক বন্ধু এলে ওকেও বুকে টেনে নেয়, ফোঁটা বড়ো হয়, ভারী শরীর নিয়ে নিজেকে আর আটকে রাখতে না পেরে রাশান ‘আইভান, দ্য ফুল’-এর মতো পড়িমরি করে মাটিতে লুকোয়। এভাবে চলতে থাকে। এই পুরোনো দৌড়ে কেউ যেতে না, এই দৌড়ের শেষ নেই। পিটি শুরু হলো। অসম্ভবকে সম্ভব করতে জানা স্যার এজে’ও (অনন্ত জলিল) কি এই ক্যাডার-নাচন নাচতে পারতেন? কোমর দুলিয়ে, হাত ঘুরিয়ে, পা ছুড়ে ছুড়ে, ঘাড়ের সতত বিস্ফারণে প্লাস্টার অব প্যারিস স্ট্যাচুদের সে কী নাচ! পিটি নৃত্য। শরীরটাকে আড়াআড়ি, তির্যক, অনুভূমিকভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, ছুড়ে ফেলে, হাওয়ায় দুলিয়ে আমাদের সবার উদ্দাম-উচ্ছল নিঃসংকোচ শারীরিক কসরত। একটা ব্যায়াম আছে, যেটাতে পা-দুটোকে ভূমির উপর পুরোপুরি রেখে হাঁটু ভাঁজ করে বসতে হয়। হাত-দুটোকে জড়ো করে কনুই-দুটোকে দুই হাঁটুর মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় রেখে নিচের দিকে চেপে পুরো শরীরটাকে হেলিয়ে দিতে হয়। এই ব্যায়াম কেন করায় কে জানে! ইয়ে মানে, এই ব্যায়াম তো আমাদের সবাইকেই প্রতিদিন এমনিতেই করতে হয়! পিটি শেষে সবাই হাত-দুটোকে একসাথে জড়ো করে মাথার উপরের দিকে আকাশে ছড়িয়ে দিয়ে চারদিক কাঁপিয়ে হাহাহোহো করতে করতে শরীরের উপরের অংশের পুরোটা নিচের দিকে ইচ্ছেমতো ছুড়ে দেয়। এতে নাকি হার্ট ভালো থাকে। হাসতে হাসতে পিটি শেষ করে সেই লাইন ধরে ডরমেটরিতে ফেরা। আচ্ছা, দুটো পাশাপাশি বালতির একটিতে একটু কম ঠান্ডা জল রেখে অন্য বালতি থেকে গায়ে জল ঢেলে এরপর ওটা থেকে ঢালতে আরাম লাগে না? এই সাইকোলজিক্যাল গেমটা খেলে দেখতে পারেন। ভালো কথা, আজকের বাথরুমসংগীত ছিল, ইয়ে দিল দিওয়ানা...সাথে, সখী, ভাবনা কাহারে বলে... আজকের প্রথম দুটো সেশনে মুক্তিযুদ্ধের ক্লাস। রেক্টর স্যার নেবেন। স্যার নিজেই একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজকের ক্লাসে বুঝলাম, একজন মুক্তিযোদ্ধার আসল শক্তি কোথায়। আবেগে। সাথে যদি বুদ্ধিমত্তাও যুক্ত হয়, তবে সেই কম্বিনেশনটা হয় দেখার মতো। কীরকম? আমি প্রায়ই ‘ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স’য়ের কথা বলি। এটা আসলে কী? একটু বুঝিয়ে বলি। ধরা যাক, কোনো কিছু নিয়ে আপনার প্রচণ্ড আবেগ কাজ করে। এই আবেগ দিয়ে মানুষ যা যা করে ফেলতে পারে, তার অনেক কিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আবেগ জিনিসটা সাহস এনে দেয়, শক্তি এনে দেয়, দৃঢ়তা এনে দেয়। এর সাথে যদি আপনার বুদ্ধিমত্তাও থাকে, তবে আপনার পক্ষে মাস্টারপিস লেভেলের কাজ করে ফেলা সম্ভব। আপনার বুদ্ধিমত্তাকে যদি আপনি আপনার আবেগের জায়গাতে একটুও ছড়িয়ে দিতে পারেন, আর সাথে লক্ষ্য ঠিক থাকে, তবে মানুষ করতে পারে, এমন যে-কোনো কিছুই আপনি করতে পারবেন। এখন স্যারের কথায় ফিরে আসি। স্যারের বয়স ৫৮ বৎসর। এই বয়সে ইতিহাস পড়ানো সহজ ব্যাপার নয়। অথচ আমরা দেখলাম, স্যার কোনো স্লাইড ছাড়াই অবিকৃতভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্ইতিহাস থেকে পরবর্তী ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য সব কিছুই বলে গেলেন। সাথে মূল ঘটনার পেছনের ঘটনা, খণ্ড খণ্ড প্যারালাল ইনসাইট। স্যার বিসিএস ’৮৩ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস’য়ে অ্যাপ্লাই করেননি। এর পেছনে ওঁর যুক্তি, “আমি তো যুদ্ধে গিয়েইছিলাম মরতে। মরিনি, এই তো বেশি! আমার এর বেশি আর কীই-বা চাওয়ার থাকতে পারে?” যা-ই হোক, স্যার ক্লাস শুরু করলেন এই বলে, “তোমাদের এই কয়দিনের পারফরমেন্সে আমি খুব খুশি। আমি চাই না, তোমাদের এক জনও শোকজ খাও। শোকজ খেলে কিন্তু টপ থার্টিতে থাকার আর কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।” এটা শুনে আমার খুব ইচ্ছে হলো, একটা শোকজ খাই। চারপাশের মানুষের অহেতুক ভাবনার দায় থেকে মুক্তি চাই। এমনিতেই ওই টপ থার্টিতে থাকতে পারব না। একটা শোকজ খেয়ে ফেললে লোকে অন্তত এটা ভাববে, আমার ওই ৩০ জনের মধ্যে থাকার কথা ছিল, কিন্তু ইচ্ছে করেই আমাকে ওখানে রাখা হয়নি শোকজ খেয়েছি বলে! হা হা হা…মনে হতে লাগল, ট্রেনিংয়ে শোকজ খেতে না পারলে জীবনটাই বৃথা! আজ একটা মজার জিনিস খেয়াল করলাম। বঙ্গবন্ধুকে কিন্তু গ্রামের মানুষেরা ‘মুজিবর’ কিংবা ‘শেখ সাব’ বলেই চেনেন। আপনি যতই বড়ো মানুষ হন না কেন, আপনার কাছের মানুষ কিংবা গ্রামের লোকজন কিন্তু আপনাকে আপনার চেনা-নাম ধরেই ডাকবে। আজ আরও একবার অনুভব করতে পারলাম, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের আবেদন কতটা গভীর আর সুস্পষ্ট ছিল! অনেক মুক্তিযোদ্ধা যতটা না মা-বাবার কথা স্মরণ করতেন, তার চাইতেও বেশি সেই মহান ভাষণের কথাগুলোকে মনে আর রক্তে ধারণ করতেন। শুধু ৭ই মার্চের ভাষণ শুনেই অনেকে আগ-পাছ না ভেবেই সব কিছুকে পেছনে ফেলে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। একজন নেতার এর চাইতে বড়ো আর কী গুণই-বা থাকতে পারে? একটা প্রশ্ন এসেছিল, মুক্তিযোদ্ধা কারা? স্যার একটু ঘুরিয়ে উত্তরটা দিলেন এভাবে, কিছুদিন আগে পেপারে এসেছিল, ২য় বিশ্বযুদ্ধের সর্বশেষ জীবিত সৈনিক মারা গেছেন। অথচ তিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, যুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধে যাবার জন্য ট্রেনিং নিচ্ছিলেন এবং ট্রেনিং শেষ হবার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। আমরা সবাই যা বোঝার বুঝে গেলাম। প্রথিতযশা পণ্ডিত ডক্টর রওনক জাহানের বিখ্যাত বই ‘Pakistan: Failure in National Integration’ থেকে উদ্ধৃত করে স্যার দেখালেন, কীভাবে একটা রাষ্ট্র রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে ভেঙে যেতে পারে। রওনক জাহান বিয়ে করেছেন ৬৫ বছর বয়সে আরেক সুপণ্ডিত রেহমান সোবহানকে। উনি বলেন, “মানুষ যখন বিয়ে করে, তখন আমি করিনি। তাই মানুষ যখন বিয়ে করে না, তখন আমি করেছি।” শ্রুতি আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ওঁর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকালের সেরা স্টুডেন্টের অন্যতম ডক্টর মিজানুর রহমান শেলীর প্রেম ছিল। ওঁরা একই ক্লাসে পড়তেন। রওনক জাহান বুঝে গিয়েছিলেন, একই ক্লাসে পড়লে ওঁর পক্ষে কিছুতেই মিজানুর রহমান শেলীকে ডিঙিয়ে প্রথম হওয়া সম্ভব নয়। এটা বুঝে তিনি এক বছর গ্যাপ দিয়ে পরের বছরের কোর্সে ভর্তি হলেন। রওনক জাহান ওঁর ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছিলেন। এই ঘটনা মিজানুর রহমান শেলীর মনে গভীর রেখাপাত করে এবং উনি এই সিদ্ধান্তে আসেন, “যে-মহিলা তাঁর স্বামীর তাঁর চাইতে যোগ্যতর হওয়াটাকে মেনে নিতে পারেন না, তাঁর সাথে আর যা-ই হোক, একই ছাদের নিচে বসবাস করা অসম্ভব।” কেন জানি না, এই ঘটনা শুনে আমার কবি বিনয় মজুমদার আর পোস্ট-কলোনিয়ালিজম থিওরির সবচাইতে বিখ্যাত পণ্ডিত গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের ‘ব্যর্থ’ প্রেমকাহিনির কথা মনে পড়ে গেল। পিএটিসি’তে ক্লাসরুমে কিংবা ক্লাসরুমের বাইরে করিডোরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিষেধ। এই এক সপ্তাহ সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত মোবাইল ফোন ছাড়া কাটাচ্ছি। সন্ধেয় রুমে ফিরে ‘পিএটিসি ডায়েরি’ লিখতে বসি। রুমে কেউ এলে গল্প করতে হয়, এরই মাঝে কিবোর্ডে আঙুল চলতে থাকে। লেখা শেষ হয়ে গেলে পোস্ট করে মা-বাবা’র সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়ি। পৃথিবীতে সবচাইতে শান্তির কাজ হলো: মোবাইল ছাড়া চলা; এমনভাবে চলা—যেটা সময়ের প্রয়োজনে, যেটাকে কেউই ইচ্ছেকৃত ভেবে ভুল বুঝবে না। আমি ইচ্ছে হলেই আমার মোবাইলটা যতক্ষণ খুশি বন্ধ করে রাখতে পারি—এটা পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর অনুভূতিগুলোর একটি। পিএটিসি’তে দিনের বেশিরভাগ সময়েই মোবাইল বন্ধ রাখতে হয়। এ বড়ো সুখের নিয়ম! মোবাইল-যন্ত্রণা থেকে মুক্তির স্বাদ সত্যিই অপূর্ব! আজ রেক্টর স্যারের ক্লাসে একটা অঘটন ঘটে গেল। একটা মেয়ের মোবাইল বেজে উঠল। অথচ মোবাইল রেখে আসার কথা রুমে। মজার ব্যাপার হলো, মেয়েটি হলো আমাদের ব্যাচের সবচাইতে সিরিয়াস স্টুডেন্টদের মধ্যে একজন। সবাই ভাবছে, ওরই এই ভুলটা হল! এদিকে আমি ভাবছি অন্যকথা। এই জগতে সবসময়ই সবচাইতে সিরিয়াস মানুষদের এই ধরনের সিলি সিলি ভুলগুলো হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এই ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচার সবচাইতে সহজ উপায় হলো, সিরিয়াস নয়, সিনসিয়ার হওয়া। আমি কী করছি, কী করছি না, সেটা খেয়াল রাখা। আমি খেয়াল রাখছি…এটা অন্যরা খেয়াল রাখছে কি না—এটা দেখায় এবং দেখানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে, আমি…যা-কিছুতে ব্যস্ত হতে হবে, সেটাই চোখে দেখি না। ওর শাস্তি আমরা সবাই পেলাম। কী শাস্তি? লাঞ্চের পর ২টা এক্সট্রা সেশন দেওয়া হলো। একজন আমাকে বলছিলেন, “She is really serious. Why did she make such a silly mistake?” আমি উত্তর দিলাম, “Maybe it was a serious call!” ক্লাস শেষে একটা ঝাড়িপ্রদান সেশন হয়ে গেল। সময়ের অভাবে আমরা অনেকেই নাস্তা না করেই পরের ক্লাসে গেলাম। ‘ইয়োজিম্বো’ মুভির নায়কটার কথা মনে আছে? রেক্টর স্যারের ক্লাসের শেষে একদম হুবহু ওরকম চেহারার একজন যুগ্ম সচিব আমাদের ক্লাস নিতে এলেন। রিসার্চের সাতকাহন নিয়ে ক্লাস। ওটা কী, কেন, কীভাবে—সব কিছু! স্যার কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন, রিসার্চ ইজ লাইক কুকিং। এভরিওয়ান ক্যান ডু ইট। ঠিক ওইসময়ে আমার মাথায় ‘র্যাটাটুই’র একটা কনভারসেশন খেলে গেল: Gusteau: What do I always say, Rémy? Anyone can cook. Rémy: Well yeah, anyone can. That doesn't mean that anyone should. দুপুরের ক্লাস শেষ করে ঝকঝকে রোদে করিডোরে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে হাঁটতে হাঁটতে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ভাবতে লাগলাম, ওই লাল কার্পেটের ঘরে সোয়া ২টায় আবার ফিরতে হবে। কিন্তু আমরা সবাই কেন এই শাস্তি পাব? Punishment is what you get, not what you deserve. অগত্যা, কী আর করা যাবে! দেখি, খোলা বাগানের পাশের বিল্ডিংয়ের রোদে-পোড়া ইটগুলো চিকচিক করছে। ক্লাসে প্রশ্ন করা কিংবা মন্তব্য করা নিয়ে আমার কিছু অবজারভেশন হলো: এক। You can judge a person by what he asks. দুই। যাদের অভ্যেস বাড়তি কথা বলা, ওরা বলবেই। কীরকম? একটা গল্প বলি। একজনকে জিজ্ঞেস করা হলো, “নাস্তা করেছেন?” উনি উত্তর দিলেন, “আরে না, ভাই। কাজের বুয়া আসে নাই। বুয়ার ছোটো ছেলেটা গত ১ সপ্তাহ ধরে অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তাররা নাকি কী-একটা আন্দোলন করছেন, তাই ডাক্তার রোগী দেখছেন না। দেশটার যে কী হবে!” তিন। ক্লাসে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। কেউ-না-কেউ সেটা জিজ্ঞেস করবেই। ক্লাসে আপনার মন্তব্যের মাধ্যমে আগ বাড়িয়ে বিরক্তিকর হবার কোনো দরকার নেই। আপনার হয়ে এই কাজটি কেউ-না-কেউ নিষ্ঠার সাথে করে দেবে। কিছু কিছু মন্তব্য শুনলে প্লেটোর একটা কথা মনে পড়ে যায়: Wise men speak because they have something to say; Fools speak because they have to say something. আজকের ডায়েরিটা পোস্ট করতে দেরি হয়ে গেল। খুব যে ব্যস্ত ছিলাম, তা নয়। বরং অন্য অনেক দিনের চাইতে ফ্রি-ই ছিলাম। তবে দেরি হলো কেন? হাতে কোনো কাজ না থাকলে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বেকার মানুষ, বিজি বেশি। আগামীকাল সকাল ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে ঘুরতে যাচ্ছি। আজ আর নয়। শুয়ে পড়ি। শুভরাত্রি।