পাশাপাশি একই বিছানায় শুয়ে থেকেও দু-জন মানুষ পৃথিবীর বিপরীত দু-প্রান্তে বসত করতে পারে। পাশাপাশি বসে থেকেও দু-জন মানুষের মাঝে যে মানসিক দূরত্ব থেকে যায়, সেই দূরত্বের কাছে সাগরের দু-পাড়ের মাঝখানের দূরত্ব কিছুই নয়। কিছু মানুষের সাথে আপনার স্রেফ প্রয়োজনে যোগাযোগই থাকবে। প্রেম, ভালোবাসা কিংবা স্নেহ বলতে তেমন কিছু সেখানে থাকে না। সাপের খোলসের মতো সম্পর্ক নামে চামড়াটাই শুধু থাকে। অথচ সেই কবেই কোনো মধ্যদুপুরে কড়কড়া তপ্তরোদের আলোয় চামড়া ফেলে সাপ পালিয়েছে, সেটা টেরই পাওয়া যায় না। টের পাবেন কখন জানেন? যখন দেখবেন, আপনার খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেখেয়ালিপনাগুলোও পাশের মানুষটার চোখে দোষ হয়ে ধরা পড়ছে, আপনার উপস্থিতি কিংবা স্পর্শ তার কাছে তেমন গুরুত্বই বহন করছে না। মানুষের সিক্সথ সেন্স অনেক কিছুই বলে দেয়। কে আপনাকে কেবলই ব্যবহার করে যাচ্ছে, কে আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে, আপনি সব বুঝতে পারেন। বুঝে সরে যাচ্ছেন কি থেকে যাচ্ছেন, সেটা ভিন্ন কথা, কিন্তু বুঝতে ঠিকই পারেন। মুখে মুখে খুব চলে…মানুষ মরে গেলে পচে গলে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। … না বাপু, মানুষ বেঁচে থাকতেও মরে যাবার চেয়েও বেশি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়…কত দেখলাম! পাশাপাশি থেকেও যখন কারও কাছাকাছি থাকেন না, চোখের ভাষা, বুকের বিষণ্ণতা কিংবা অনিশ্চিয়তার ভয় মানুষটিকে শব্দ দিয়েও যখন বোঝানো যায় না, আপনার উপস্থিতি যখন আপনার পাশের জনের কাছে মূল্যবান নয়, এমনি করেই দু-জন মানুষের মাঝখানে যে দেয়াল একদিন একদিন করে উঠে আকাশ ছুঁয়ে যায়, এই শক্ত দেয়াল একসময় আর ভাঙা যায় না। উঁহু, মানুষ এই দেয়াল ভাঙে না মূলত ইচ্ছে করেই। তারপর…তারপর একদিন বহুদিন পর দেখা হবার পর আবিষ্কার করবেন, আপনারা দু-জন দু-জনের পরিচিতই কেবল, আপন কিংবা প্রিয় আর নেই। তার শব্দ, হাসি, স্পর্শ কোনোটাই একদিন আপনাদের দু-জনের কাউকে আর ছোঁয় না। বিদায়বেলায় পেছন ফিরে মুচকি হেসে "ভালো থেকো"টুকুও বলা হয় না। আফসোস, পৃথিবীতে গ্রহ থেকে গ্রহের দূরত্ব মাপার জন্য যন্ত্র থাকলেও, মাত্র এক ইঞ্চির দূরত্বে বসে থাকা দু-জন মানুষের মাঝে কত কোটি আলোকবর্ষ দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে, তা মাপার কোনো যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। কখনো কখনো ছেড়ে যেতে দূরে যেতে হয় না, পাশাপাশি বসে থেকেও নক্ষত্রসীমার অনন্ত দূরত্বে চলে যাওয়া যায়।