এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া একটা কালজয়ী গান আছে…জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প,/যা-কিছু দেখার নাও দেখে নাও,/যা-কিছু বলার যাও বলে যাও,/পাবে না সময় আর হয়তো!
কী যে গভীর এক-একটা শব্দ, যেন গোটা বিশ্বের প্রাণের রহস্য!
আমাদের মধ্যে কার জীবনের গল্প আর কতটুকু বাকি আছে, কেউই জানি না।
অথচ এই জীবন নিয়েই আমাদের ঝুড়ি ঝুড়ি স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা, কত আয়োজন…সবই যে বাকি রয়ে গেল!
কারুর জন্য মায়ায়-গড়া অপেক্ষার পর অপেক্ষা, কারুর জন্য পাতার পর পাতা আবেগ-মাখানো লেখা, যত্ন করে বানানো আম-জলপাই-চালতা'র আচার কাচের বয়ামে ভর্তি করে রাখা,
কারুর জন্য দোলনচাঁপার কলি ফোটার অপেক্ষায়, সাদা রুমালে লাল-সবুজ সুতোয় লেখা সতৃষ্ণ সেই আবেদন…ভুলো না মোরে…
রোজ এককাপে দু-জনার চায়ের নেশা, ফিরে এসে ঠান্ডা চায়ে আবার চুমুক দেওয়া,
গানের লাইনে পুরোনো কোনো স্পর্শে শিউরে ওঠা, রাতের নিস্তব্ধতায় চিরকুটে লেখা, “তুমি আমার প্রিয় সুন্দর অলকা-অন্ধকার।” আর বলা…
“অ্যাই, জানো, এই শব্দটা তোমার জন্য সৃষ্টি করেছি অমলতাস ফোটার বিগত দিনগুলোতে!”
জীবনের সব যুক্তি জেনে-বুঝেও, হঠাৎ কারুর জন্য বুকের ভেতরটা খালি হয়ে যাবার যন্ত্রণা, সেই মানুষটা ঠিক সামনেই বসে, ভেতরে-বাইরে, দেহে, মনে, আত্মায়, প্রাণে কোথাও আমি নেই, এক সেই মানুষটা ছাড়া! হঠাৎ মনে হওয়া…এই মানুষটাই তো একদিন আমার থাকবে না, এই অবুঝ যন্ত্রণার তীব্রতা কী করে বোঝাই…কী করে বোঝাই!
জীবনে সময় দেবে কি না, সময় আর পাবো কি না আমরা কেউই জানি না, কতটা ভালোবাসতে চাই, কতটুকু আরও বলতে চাই, ঠিক বুঝে উঠতে পারি না কেউই,
অথচ, অনেক কিছু বলার থাকলেও যে তখন আর কিছুই বলার থাকে না, এ-ই হলো গিয়ে কষ্টের মহিমা, বুঝলে!
জীবনে কিছু গোপন হাহাকার থাকে…থাকে তো! জীবন যে কখনও নিরেট পূর্ণ হতে পারে না…
পূর্ণ হলে যে সব উপচে পড়ে যেত, এর চেয়ে বরং থাকুক না কিছু শূন্যতা!
তবে বলি কী, নিয়মের বাইরে গিয়ে হলেও সেই মানুষটাকে জড়িয়ে রাখো, প্রিয় ইচ্ছেগুলোকে পূর্ণ করো, পছন্দের খাবারটা এখনই খেয়ে নাও, আদরের বেড়ালটাকে ইচ্ছেমতন আদর করো, শখের বাগানটায় আরও কয়েকটা নীলকমলের বীজ বুনে দাও, খুব প্রিয় মুভিটা সময় পেলেই দেখে নাও।
গল্পটা আর কতটা বাকি কেই-বা জানে…যাদের জন্য এসব কিছু ছেড়ে দিচ্ছ, গল্পটা ফুরিয়ে গেলে তারা কেউই গল্পের শেষলাইনে দাঁড়ি অবধি দেবে না!