নাট্যশিরোনাম: নিঃশব্দ পিছুডাক
ধরন: একাঙ্কিকা, নাট্যকাব্য
চরিত্র:
"সে" – (নারী, আবেগপ্রবণ, আত্মমগ্ন, গভীর প্রেমে নিবিষ্ট)
"প্রহর" – (একজন অনাহুত আগন্তুক, যেন এক আত্মা বা হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি)
[দৃশ্য ১ – রাত, শহরের একটি বহুতলের ছাদ, সময়: রাত ৩টা]
ছাদের চারপাশে হালকা কুয়াশা, দূরে শহরের নিঃশব্দ আলো। আটতলার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে "সে"।
সে (ধীর গলায়, নিজের মনেই):
আটতলার ছাদের উঁচু রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি... খুব অসাবধানে।
শীতল বাতাসে মনে হচ্ছে, তুই যেন আমায় ছুঁয়ে যাচ্ছিস...
হঠাৎ... তোর ঘ্রাণ পেলাম।
আমি কি তবে গভীর কল্পনায় আছি?
তোর গায়ের গন্ধে মাথা ঘুরছে...
তুই তো আমার সত্য—সবচেয়ে সত্য।
(এক পা রেলিংয়ের উপর তোলে, ফোনে কিছু লেখে)
এই শেষইচ্ছেটা যদি তোকে পাঠানো যেত...
[আচমকা একজন আগন্তুকের কণ্ঠ শোনা যায়—"প্রহর"]
প্রহর (শান্ত গলায়):
তুমি কি মৃত্যুকে কাছে ডাকতে চাইছ?
সে:
উঁহু। ভালোবাসার মানুষটিকে অনুভব করতে চাইছি।
প্রহর:
চলে এসো ওখান থেকে... দেখো, ঠিক লাগছে না তোমাকে।
তোমার কষ্ট বেড়েছে—তা বুঝি।
তবু এমন করে কী লাভ?
সে কি তবে তোমার জীবনের চেয়েও বড়ো?
সে (হেসে, বিদ্রুপে):
হা হা হা! কে আপনি, ভাই? এত জ্ঞান দেবেন না।
আমি জানি, কী করতে হবে।
বাড়তি বিরক্তি করবেন না।
প্রহর (শান্তই):
ওর আর তোমার টাইমলুপ আলাদা হলেও—
বন্ধুত্বটা ছিল অনন্য।
বয়সের পার্থক্য থাকলেও আত্মার দূরত্ব ছিল না।
প্রথম দিন থেকেই একে অপরকে বুঝতে পারতে।
সে (নরম হয়ে আসে):
হ্যাঁ...
তবু আপনি কেন শুনছেন?
আপনি তো বাইরের একজন!
আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
প্রহর:
আপনার জীবনের সার্থকতা কী?
সে (একচিলতে হাসি নিয়ে):
এই মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকা।
[দৃশ্য ২ – আলো কিছুটা ঘোলাটে, সময় গড়িয়েছে, বাতাস বেড়েছে]
সে (ক্ষোভে):
আপনি অনেক কথা বলেন।
রাত তিনটায় এসে বিরক্ত করছেন!
প্রহর:
আপনি খুব মায়াবী। সুন্দর।
সে (চমকে):
এই কথাটাই আমার খুব কাছের একজন বলেছিল...
ও ছিল আমার সবচেয়ে আপন।
আমার মন আজও তাকেই খুঁজে বেড়ায়।
ও থাকলে এত কষ্ট হতো না।
প্রহর:
আজ নেই কেন সে?
শেষচেষ্টা করেও ফিরে পাবেন না?
সে:
আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না।
ভালোবাসা কখনও বন্ধনে বাঁধা পড়ে না।
আমি যে তাকে ভালোবাসি—ও জানে।
ওর দূরে থাকা আমাকে কষ্ট দেয়, তবুও শান্তিও দেয়।
[হঠাৎ নিস্তব্ধতা, "সে" চুপ করে যায়। বাতাস থেমে যায় যেন।]
প্রহর (চোখে জল, মৃদুস্বরে):
কথা বলছেন না কেন?
এই যে...!
সে (মন্থর স্বরে, অস্পষ্ট হয়ে আসে):
কিছু কথা কে যেন বলছে...
আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না আর।
চোখ বন্ধ করলেও... চোখের জলে তুই আছিস।
(একটু থেমে)
তোকে একবার জড়িয়ে ধরতে চাই।
তুই কি আসবি? একটু ছুঁয়ে দেখবি আমায়?
জানি, শান্তি পাবি না...
শুনেছি, মৃত মানুষেরা অনুভূতির বাইরে থাকে।
আমি অনেক রক্তাক্ত...
তুই সাহস করে আরেকবার আমায় জড়িয়ে ধর!
‘পাগলি, শোন’—এই ডাকটা কি আর শুনতে পাবো না?
[আলো কমে আসছে। হালকা ইনস্ট্রুমেন্টাল বাজতে থাকে - "Where Do I Begin"]
সে (চোখ বন্ধ করে, ক্লান্ত গলায়):
এই গানটা তোরও ভীষণ পছন্দের ছিল…
মিউজিক আমাদের দূরত্ব কমিয়ে দিত।
এখন আর কিছু ভাবতে পারছি না রে।
চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে।
তোর জন্য সাদা গোলাপ এনেছিলাম…
কেউ-না-কেউ তোকে পৌঁছে দেবে।
ওখানে খুঁজে নিস—
আমাদের লুকিয়ে-রাখা কিছু মুহূর্ত…
আমার শেষস্পর্শ ওতে রয়ে গেছে।
[শেষ দৃশ্য – ধীরে ধীরে ফেইড আউট, ক্যামেরা ধীরে ধীরে ছাদ থেকে আকাশের দিকে উঠে যায়। বাতাসে গোলাপের পাপড়ি উড়ছে...]
[পটভূমিতে মৃদু ভয়েসওভার – প্রহরের কণ্ঠে]
“ভালোবাসা কখনও হারায় না, শুধু রূপ বদলায়…”
(শেষ)