শেষ সময়ে সে আমাকে পুরোদমে এড়িয়ে চলছিল, আমি মেনে নিতে পারছিলাম না, তার কলের অপেক্ষায় আমি সারাদিন বসে থাকতাম। সে আমাকে কোনো টেক্সট বা কল দিত না।
রিলেশনে না থাকা অবস্থায়, দেখা হলে বলত, আমার রান্না-করা তার প্রিয় পাস্তা আর আম্মুর হাতের বিরিয়ানি, যেটা একসময় খুব পছন্দ করত, সে নাকি দুটোর একটাও মিস করে না। এত কষ্ট দিয়েছিল, তার পরেও আমি তার কেয়ার করেছি।
আমার সাথে তার কয়েক মাস ধরে কথা হয় না। যদি আমি হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করি, সে নক দেয়। ব্যাপারটা কেমন না! সে জানে, আমার দিন যায় খুব কষ্টে। জানার পরও যদি বলে, “কেমন আছ?”, তখন আমার তাকে চড় মারতে ইচ্ছে করে।
আমি কিছু জায়গায় নিজেকে স্ট্রং করেছি। সর্বোচ্চ ১২০ দিন বা তারও বেশি তাকে নক না দিয়ে থেকেছি। বাট সে যখন আমার খোঁজ নেয়, আমি তখন তাকে রেগে টেক্সট করি। এ মানুষটার সাথে আমার রিলেশন নেই, সে এখনও আমার ছবিটা ফোনে রেখেছে, আর আমার ফ্রেন্ডের কাছ থেকে আমার ছবি সংগ্রহ করে। আমার খুব ঘৃণা হয় এসব আচরণে। সে রীতিমতো আমার মানসিক শান্তি নষ্ট করার জন্য এমন করছে। অথচ আমি তার জন্য কী করিনি!
আমারও শখ ছিল অ্যাডভোকেট হবার। সেই শখটুকু এখন মরে গেছে। আমার লাইফটা এলোমেলো হয়ে গেছে। আমি এবার বারের একজামও দিইনি।
যখন লাস্ট টাইম দেখা হয়েছে, তার এক্সের বিয়ে হয়ে গেছে। সে এখনও তার জন্য আফসোস করে। ছবি রেখেছে ফোনে আর এক্সের সব কিছু ফলোও করে। আমাকে এসব দেখিয়েছে। আমার এমন কষ্ট লাগছিল, বলে বোঝাতে পারব না! তা বুঝতে পেরে আরও বেশি বেশি করে আমাকে ওসব দেখাচ্ছিল।
আমার ভেতরে কিছু হবার যে-স্পিরিটটা ছিল, সেটা কখন যে মরে গেছে, টেরই পাইনি। এখন শুধু হতাশাই কাজ করে লাইফে। সে আমাকে আবার তার সাথে জড়াতে বলছে। আমি জানি, সে আবার তার স্বার্থের জন্য জড়াতে বলছে। আমি তাকে আর বিশ্বাস করতে পারি না। যদি সে অনেস্টলি চাইত, তবে আমি তার কথায় প্রশান্তি পেতাম। সে এখনও শোধরায়নি।
আমাকে সবসময় বলত, যা বলি চুপ করে শুনবে, কোনো আওয়াজ করতে পারবে না। আমি চাই, আমাদের মধ্যে যা কথাই হোক, সব সমঝোতার মাধ্যমে হোক। আমরা একে অপরকে ফ্রেন্ড ভাবব। একে অপরকে রেসপেক্ট দেবো। তার যে-মানসিকতা, এটা আমার পছন্দ হতো না। সে যদি আমাকে কেবল রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলত, তার জন্য আমার ভালোবাসা আর রেসপেক্ট বহুগুণে বেড়ে যেত।
আমার থেকে দূরে যাবার জন্য আমাকে এড়িয়ে চলেছে। আমার কথা হলো, সে এখনও কেন নক দেয় বা আমার খোঁজখবর নেয়। অথচ এই মানুষটাই আমকে কতই-না এড়িয়ে চলেছে! ব্যাপারটা আমাকে খুব পেরেশানি দিচ্ছে।
সে নাকি লাইফে ঝুঁকি নিয়েছে আমার জন্য এবং তার পরিবারের জন্য, তাই সেই ঝুঁকির জন্য তার লাইফ নাকি রিস্কের মধ্যে। আমাকে দূরে সরানোর জন্য নাকি সে এত কথা বলেছে। তার লাইফ যদি রিস্কে থাকে, তাহলে সে কেন আমার সাথে যোগাযোগ করবে অথবা আবার জড়াতে চাইবে? আর সে যদি কোনো ঝুঁকিও নিয়ে থাকে, সেটা আমার জন্য কখনোই নেবে না, হতে পারে, সেটা তার পরিবারের জন্য।
আমরা একই সাবজেক্ট নিয়ে পড়েছি, একসাথে পড়াশোনা করে বের হয়েছি, আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি অনার্সে-মাস্টার্সে, সে-ও সেইম; তবে পয়েন্ট কিছুটা বেশি। কিন্তু সে আমার কথাকে সবসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। কৌশলে আমার কনফিডেন্স লেভেলটাকে একদম নিচে নামিয়ে দিয়েছে। আমার ভেতরের শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
আমার আব্বু ব্যাবসাতে ১ কোটি টাকা লস খায়। এখনও সেটার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আমাদের সম্পত্তিগুলোও বিক্রি হচ্ছে না। আব্বু এখন অসুস্থ। সব মিলিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি।
তার সাথে যখন সম্পর্ক হয়, সে আমাকে বলে, তার নাকি তাদের গ্রামে ঘর বাঁধতে হবে। আমিও সেজন্য কনট্রিবিউট করে প্রতিমাসেই একই অ্যাকাউন্টে টাকা রাখি।
তার সব কাজই আমাকে দিয়ে করাত। আবার তার কোথাও বের হওয়া লাগলে আমাকে অনেক দূর থেকে যেতে হতো এবং আমার টাকাতেই সব কাজ হতো।
আমি কখনো কখনো তাকে রেগে টেক্সট করে ফেলি, তাতে সে যা যা কথা শুনিয়েছে, আমি সেসব মানতে পারি না এখনও। আমি নিজেকে মুক্ত করতে তাকে এটাও বলেছি: আমি তোমার সব কিছু আমি ভুলে গেছি, ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু আবার আমার অস্থির লাগে, ক্ষমাটা মন থেকে আসে না।
আরও অনেক ঘটনা আছে তার সাথে; আমার মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি আগের জনের সাথে অন্যায় করেছি, তাই আজ আমার এমন হাল। কিন্তু আমি আর কী করতে পারতাম তখন? আমি তো তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, সে আমার কথা রাখেনি তখন।
আসলে, বয়ফ্রেন্ডকে কখনও নিজের অতীত নিয়ে সত্য কথা বলতে নেই। সে আমার আগের সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই খোঁটা দিত। আমার এ বিষয়টা খুব যন্ত্রণাদায়ক মনে হতো। একদিন এটাও বলেছিল, আমি নাকি মেয়াদোত্তীর্ণ মাল! আমি তার কথাগুলো সহ্য করতে পারতাম না, যখন বলতাম, এসব কী বলছ?...সে তখন শব্দ করে হেসে হেসে বলত, মজা করে বলেছি।
আমি সত্যি বলতে তার কাছ থেকে টাকাপয়সা, বাড়ি এসব চাইনি। চেয়েছি একটু বিশ্বাস, সততা, মানুষটা সুন্দর হয়ে শুধু আমার হয়ে থাকুক—এটুকুই। সে যা-ই আয় করত, আমাকে যেমনই রাখত, আমরা অ্যাডজাস্ট করে নিতাম বিয়ের পর।
আমি মাথা থেকে এসব ঝেড়ে পড়াশোনা করতে পারছি না, নিজের যে ব্যক্তিগত কাজ, পারিবারিক চাপ, যে-সব চ্যালেঞ্জ সামনে আছে—ওসব কিছুর জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারছি না। সবসময় একটা হাহাকার কাজ করছে। কষ্ট হচ্ছে খুব। অপমানবোধ করছি খুব। এখন মনে হয়, আমি কি আসলেই পারব নিজেকে দাঁড় করাতে?
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, যদি ফরেন ক্যাডার হই, আমি এদেশে থেকে দূরে চলে যেতে পারব, আবার বিচারক হলে প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ডে পাওয়ার অ্যাপ্লাই করতে পারব। আমার দুইটাই হতে ইচ্ছে করছে, আবার বিসিএস-এর দিকে আলাদা করে মন টানছে।
খুব আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছি, কবে যে সবার সামনে নিজেকে প্রমাণ করতে পারব; আর যাদের এত নির্যাতন সয়েছি, তাদেরকে জবাব দিতে পারব! অনেক হাঁপিয়ে উঠেছি এসব চিন্তায় চিন্তায়।
আমি যখন রেগে তাকে টেক্সট করি, সে অনেক ভালোভাবে সেটা হ্যান্ডেল করে, এমনভাবে কথা বলবে, এমন আচরণ করবে যে, মনে হবে যেন সে কতই-না ভালো!
আমি তাকে অনেক বলেছি, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিতে চাই। তুমি আর আমার খোঁজখবর নিয়ো না। সে আমার সাথে কো-অপারেট করছে না। সে আমাকে উলটো বলছে যে, সে সবসময় সব অবস্থায় আমার খোঁজ নেবে। তাকে আমি বার বার বলেছি, যা হবার হয়েছে, আমি এটা থেকে টোটালি বের হতে চাইছি, তুমিও আমাকে হেল্প করো। সে মানছে না। উলটো আমি যখন বলছি, আমার দিন ভালো যাচ্ছে, সে এটাতেও জেলাস ফিল করছে! তার মতন এমন অদ্ভুত প্রাণী আমি আর দেখিনি।
আমি আমার সিম নষ্ট করে ফেলেছি, আমার ফেইসবুকে মেইন আইডিও ডিঅ্যাক্টিভেট করে রেখেছি। হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো সব ধরনের প্লাটফর্ম অফ রেখেছি। আমার লাইফে কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে, একা থাকাটাই সব থেকে প্রশান্তির।
রিলেশনশিপে একদম প্রথমে সে আমার বিশ্বাস অর্জন করেছিল। আমার আপুর যখন বিয়ে হয়, তখন কাবিন হয়েছিল ৩০ লাখ টাকা। এটা শুনে সে মরিয়া ওঠে। আমাকে বার বার সিরিয়াস হয়ে বলেছিল যে, আমাকে সে এত টাকা দিয়ে বিয়ে করতে পারবে না। একদম কম টাকা দিয়ে বিয়েটা সম্পন্ন করবে, তবে মেয়েপক্ষ থেকে কিছুই নেবে না, খাবেও না। সে নাকি কাবিন নিয়ে তার কোন এক বিজ্ঞ ফ্রেন্ডের সাথে সিরিয়াস হয়ে আলাপও করেছে। মানে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে এতটাই সে আগ্রহ দেখাচ্ছিল। আমি অনেক অবাক হয়েছি আর এটাই ভেবেছি, সে কেন এমন করছে কাবিন নিয়ে? আমি তখনও এ রিলেশনশিপ নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম না। আমার তার এমন বিচলিত হওয়াটাকে অদ্ভুত মনে হয়েছিল। এখন তো বুঝি, ওটাই ছিল তার কৌশল।
আমি নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারিনি, আমি কীভাবে তার কথায় নিজেকে হারিয়েছি! এমন একটা ছেলে, যাকে আমি মন থেকে অপছন্দ করতাম (শুরুর দিকে), আমি যে কিছু-একটা হতে পারব, আমার এই আত্মবিশ্বাসটাই সে নষ্ট করে ফেলছে। তার সাথে কনফ্লিক্ট চলাকালীন আমি বিসিএস পরীক্ষার জন্য ম্যাথের কোচিংয়ে ভর্তি হই। সে এসব জানে না। আমার ব্যাগে খাতা ছিল। রেস্টুরেন্টে যখন বসলাম, আমার ব্যাগটা তখন টেবিলে ছিল। সে ঝাপটা মেরে আমার ব্যাগটা নিয়ে নেয়। আমি যখন হাত বাড়াই খাতাটা নিতে, সে ওটা জোর করে অন্যদিকে সরিয়ে খাতাটা খুলে কোনোমতে এক পেইজ চেক করে দেখে যে, আমি কী লিখেছি, কী শিখেছি; মানে ওভাবে সে আমার আপডেট জানতে চেয়েছিল।
এমনি করে আরও একদিন সে আমার মোবাইল নিয়ে চেক করে। আমার ইউটিউবে ঢুকে ডাউনলোডেড ভিডিয়োগুলো কী নিয়ে, সব দেখে। যখন সে ওখানে দেখল, বিসিএস রিলেটেড ভিডিয়ো, তখন বলে, আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম যে, তুমি এসব করেছ। আমার কেমন জানি তার অমন আচরণ অবাক লেগেছে। আমার খুব খারাপ লেগেছে তখন, যখন দেখি, আমি এগোই, এটা সে চায়ই না। ব্যাপারটা এমন, আমি তার শোকে সাফার করতে করতে যেন মরে যাই।
এই মানুষটা পড়াশোনা করেছে, কিন্তু আগের জন তেমন একটা পড়াশোনা করেনি। তবে আমার কাছে আগের জনকে বিশ্বাসী মনে হয়েছে। আমার কাছে রেসপেক্টও তার জন্য বেশি। একটা কথা খুব ভালো করে বুঝেছি যে, শুধু পড়লে আর ভালো রেজাল্ট করলেই মানুষ, মানুষ হয় না।
আমার পিয়ানো খুব পছন্দ। আমি তাকে বলতাম বায়না করে, সে টাকা আয় করলে আমাকে একটা বড়ো পিয়ানো কিনে দিতে হবে। সে আমার জন্য একটা ছোটো পিয়ানো খুঁজে এনে উপহার দিয়েছে। সেদিন আমার মনটা অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছিল। আমি এখনও ওটা রেখে দিয়েছি যত্ন করে। পরের, মানে এখনকার জনকে ঠিক একই কথা টেস্ট করার জন্য বলেছিলাম। সে আমাকে বলেছে, কিনে দিতে পারব না। অত টাকা নেই।
আমার যে-ফ্রেন্ডের খোঁজখবর সে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করত, সে যখন সম্পর্কে জড়িয়েছে, তখন তার মধ্যে একধরনের পরশ্রীকাতরতা কাজ করেছিল। কেমন জানি তাকে অখুশি দেখাচ্ছিল। ব্যাপারটা আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছিল।
আমি এখনও উত্তর খুঁজে বেড়াই, কীসে আমার কমতি ছিল যে, সে আমাকে এড়িয়ে চলেছে। আমি কি তার অযোগ্য ছিলাম এতটাই! আর আগের জনকে ছাড়ার পেছনে পরিবারের বিষয়টা খুব খেলছিল মাথায়। আর সেকেন্ড রিলেশনের কথা তো আমি বলেছি, কীভাবে এসবে আমি আটকা পড়ে গিয়েছিলাম। রিলেশনশিপ ব্যাপারটা একটা গোলকধাঁধার মতো। সেকেন্ড জন আমাকে সবসময় পাজলের মধ্যে রাখত। সে এমন কাজকর্ম করত যেন তার প্রতি আমার আগ্রহ এবং অস্থিরতা বাড়ে। পুরোপুরি ধরতও না, আবার ছাড়তও না।
আমি অনেক আনাড়ি, সিদ্ধান্ত নেবার বেলায়; একদমই বোকা। আমাকে যেভাবেই হোক, এখান থেকে বেরোতে হবে, শুধু পড়ায় মন দিতে হবে। আমাকে শোধরাতে হবে। আমার মধ্যে এখন একটা পজিটিভ দিক খুব কাজ করছে, সেটা হলো: ভালো কিছু করা, ভালোটা গ্রহণ করা। আমি নিজেকে আপগ্রেড করতে চাই। আমার ভালোগুলো রপ্ত করতে হবে, আর ভালো কিছু গ্রহণ করতেই আমার সবসময় ভালো লাগে। আমি সবসময় শেখার চেষ্টা করি, সেটা ছোটো থেকেই হোক আর বড়ো থেকেই হোক।