বলো তার পর, সবে তো বসন্ত পেরুলো,
বাকি সন্ধেগুলো কাটবে কী করে? ভেবেছ কিছু?
এখনও যে বাকি অজস্র পথ…
আজকাল কোত্থেকে যেন ভয় এসে সব হানা দিয়ে দেয়!
অত ভয় নিয়ে বাঁচা যায় কি?
আজ কি তবে সাহসের ছাইপাঁশ সব পুড়েই গেল বসন্তআগুনে?
না, আর কখনও এ জীবনে সন্ধে নামাব না।
একপশলা বৃষ্টি এলেও জানালার ছিপি দেবো না খুলে,
ভুলেও আজ বৃষ্টির ছাট মাখব না গায়ে।
ওসব করলে কে বলবে তখন…
দেখি, সরো তো দেখি, জানালাটা লাগিয়েই দিই!
ভিজে যাবে যে, পরে আবার কঠিন অসুখ বসবে বাধিয়ে।
কে নেবে টেনে সত্যি অমন জ্বর বাধালে?
বুকের উষ্ণ স্রোতে কে নেবে শুষে জ্বরের ঘোরে?
বলি, তবে আমি মেঘ হয়ে যাই?
মেঘ হয়ে এই বেলাটা সুখের খোঁজে বৃষ্টিদেহে লুটোই নাহয়?
তুমি নেবে না বলো, বৃষ্টির ওই স্নিগ্ধ পরশ গায়ে মেখে?
কোথায় থাক ইদানীং…বৃষ্টি হলে?
আমি তোমার ভালোবাসাটুকু মেঘের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে
একদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাব এই জন্মের মতো!
আমার গুঞ্জনধ্বনি শুনবে না আর,
তখন ওই চোখে আর হারাবে কারে?
আমি টুপ করে তোমার ভালোবাসাটুকু ছোট্ট বাক্সে বন্দি করে
দূরে কোথাও পালিয়ে যাব…সত্যি, দেখো!
কেউ পারবে না আর ধরতে সে-দিন…
একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে গিয়ে কোথাও আমি লুকিয়ে রবো।
তার পর আবার কখনও যদি পাখি হয়ে তোমার জানালার ধারে বসি,
কিচিরমিচির করে তোমায় ডাকতে থাকি,
…চিনবে সে-দিন?
তুমি কি পারবে আমায় চিনতে আদৌ?
একটু ছুঁয়ে দেবে কি ওই দুটো হাত বাড়িয়ে দিয়ে?
তোমার ছোঁয়ার লোভটা তখনও কি থাকবে আমার?
পাখিদের কি প্রয়োজন পড়ে ওসবেরও?
আমি এত অবুঝ কেন, বলতে পার?
তোমার যা কষ্ট আছে, ধরতেই তো জানি না তা,
কখন তুমি কষ্টে থাক, কিছুই যে তার বুঝি না তো,
নিজেকে বোঝাই, পারতাম সবই খুব যে আমি…থাকলে কাছে,
দূরে থাকলে দূর থেকে অত বুঝে নেওয়ার কী-ইবা আছে!
অমন মনখারাপের দিনগুলোতে তোমায় একটু বুঝে নিতে সুযোগ দিয়ো।
ব্যস্ত হলে থমথমে একটুকরো মেঘের স্বরে বলে দিয়ো,
কথা বলবার ইচ্ছে যে নেই…ব্যস্ত ভারি!
বুঝে নেব সেই সুযোগে…কখন তোমার মন চায় না।
আমি যে ভীষণ স্বার্থপর, ভীষণ আমি একরোখাও।
জ্বালিয়ে মারি, আঘাতে পোড়াই…
বলি, বুঝিই-বা আর কতটা তোমায়?
অমন বড্ড অবুঝ আমায়…না জানলে, না বুঝলে,
মানতে কী করে ওই অতটা?
তাই তো আমি বরাবরই ক্ষমায় সহজ!
এক অনুরোধ রাখবে, বলো?
আমার ভাগের ভালোবাসাটুক ভুলেও কাউকে দিয়ো না দিয়ে।
সে-অংশ ছোট কি বড়,
অন্য কোথাও কাউকে দেবার ছিটেফোঁটা যদি নাও বাঁচে,
তবুও আমায় ফেলো না ঠকিয়ে, আমার অংশটুকু আমারই রেখো,
কাউকে আবার দিয়ে দিয়ো না! রাখবে, বলো?
আমার নামে যেটুক সময়, যেটুকু প্রেম রেখেছ প্রিয়,
তার বেলাতে এবার একটু সৎ হয়ে যাও।
দেখি, নিজেই বল, সততা নিয়েই মানুষ বাঁচে শেষ অবধি!
অথচ আমার বেলায় তেমন কথা যায়টা কোথায়?
উত্তপ্ত এই পৃথিবীতে সবখানেতেই জ্বলছে কেবলই আগুন,
প্রতিদিনই হাজার হাজার বেদনার শুধু হাহাকার…
যখন তোমার কাছে একটুকরো ভালোবাসার আবদারটা করেই বসি,
তখন নিজেকে ভীষণ অথর্ব আর অসহায় লাগে।
আচ্ছা, বলো তো আমি এত কিছুর চিন্তা করে করবটা কী?
আমি কি পারব নাকি থামাতে ওসব?
আমার তো সে-আগুনে আলু পুড়িয়ে খাবার ইচ্ছেটুকুও নেই কখনও!
আমি ওসবের বুঝি না কিছুই!
এই কারণেই বলি, এই হদ্দমুদ্দ গাধীটাকে নিয়ো না ওসব ভিড়ভাট্টায়!
তুমি একটু বাঁচো, আমি একটু বাঁচি…
এসো, দুজনেই আমরা একটু বাঁচি।
সত্যি এভাবে হয় না বাঁচা।
তুমি একটু কাঁদো, আমি একটু কাঁদি…
এসো, আমরা দুজনে মিলেমিশে কাঁদি।
হয় না এভাবে কান্না ভাগাভাগি।
আমি একটু জাগি, তুমি এবার একটু ঘুমোও…
এসো, আমরা দুজন রাত ফেলে ভোর…কাছ থেকে দেখি।
হয় না ওভাবে দীর্ঘ সময় জেগে জেগে ঘুম।
যখন তুমি সূর্য হও, আমি তখন চাঁদই হব,
তার পর দুজনের হবে দেখা কোনও ক্রান্তিক্ষণে…
বলি, চাঁদ সূর্য ঘুমোয় কখনও!
অস্পর্শ ভালোবাসায় আমি বিশ্বাস করি না।
কতটা প্রতীক্ষার পর তোমায় পারব ছুঁতে?
যদি অবুঝ হয়ে শিশুর মতো কাঁদি, তবে তুমি করবে আদর একটু করে?
কোনও অধিকার নয়, অর্জনও নয়,
আমি শুধু তোমাকেই চাই…
আমার প্রতিটি অবোধ প্রার্থনায় শুধু তুমিই থাকো।
খুব করে শুধু একটিবারই আমার মাঝে ঘুরতে এসো।
তখন আমি বদলে যাব, তোমায় চুরির চোরই হব!
হঠাৎ করে আরও একবার ভুলেও এলে
চুরি করে নেব তোমার মাঝের সবটা ‘তুমি’!
তোমাকে ইচ্ছেস্বাধীন ভালোবাসার
সব দাবিটুকুর ঊর্ধ্বে উঠে যে অধিকার পেয়েছি কেবল,
সে তো নিরাপত্তার উপরে অনেক…অধিকারেরও বেশি সে যে!
তুমি যখন আমায় শক্ত করে বুকে জড়িয়ে আদর কর,
এই কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে নাও,
এসব কিন্তু পুরোটা আমার, আর কারও নয়, আমার একার।
তুমি যে আমায় আদরমাখা কণ্ঠ নিয়ে কথা বল,
আমার শরীর নিয়ে ইচ্ছেমতো খুশিমতো খেলা কর,
তার সবটাই একলা আমার।
এগুলির ভাগ কাউকে আমি দেবো না কখনও!
আমার ইচ্ছে যেমন, তেমন করেই সোনাপাখি, লক্ষ্মীসোনা…মনে যা আসে,
ডাকব তোমায়। এত কিছু এই সম্পদ আছে, সমস্তটাই একার আমার!
আমায় পাগল বলো, স্বার্থপরও বললে বলো…নিজের ভাগটা
দেবো না আমি কখনও ভুলেও!