আপনি আমার সাথে পরিচিত হতে চান। খুবই ভালো কথা। নতুন বন্ধু বানাতে আমার খুব ভালো লাগে। নতুন বন্ধু মানে, আরও একজন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া, যার কিছু ভালো দিককে আমি সম্মান করতে পারব। মানুষকে সম্মান দিতে ভালো লাগে, সত্যিই লাগে। আমি মানুষকে সম্মান করি, তাঁর অবস্থানকে মূল্য দিই। যাঁরা আমার সাথে পরিচিত হয়েছেন, মিশেছেন, তাঁরা একথা মানবেন বলেই আমার বিশ্বাস। ভিন্ন কোনও অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলে, সরাসরি বলছি, কমেন্টে লিখুন, আমি কিছুই মনে করব না। আমি আমার নাম্বার দিয়ে দিই। এ নাম্বারটা অনেক পুরনো। অনেকেই জানে এটা। এটা দিতে আমার কোনও সমস্যা নেই, এর মানে এই নয় যে এটাকে আপনি আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভেবে যথেচ্ছাচার করবেন। আপনার মত আমারও একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। আপনি যেমন কেউ আপনার সাথে বিরক্তিকরভাবে যোগাযোগ করলে বিরক্ত হন, তেমনি আমিও হই। পরিবারের কিংবা বন্ধুদের সবার সাথে বসে ভাত খাওয়ার সময় বিশেষ কোনও প্রয়োজন ছাড়াই কেউ আপনার সাথে ১০ মিনিট কথা বলতে চাইলে আপনি কি বলতে পারতেন? আপনি কি উনাকে অনুরোধ করতেন না পরে ফোন করার জন্য? কারওর প্রতি সেই আচরণটাই করা উচিত, যে আচরণটা আমি ওর কাছ থেকে প্রত্যাশা করি। আমি তো অনেক ঘুরে বেড়াই। কতকত মানুষের সাথে মিশি, ওদের সাথে ঘুরি, ওদের সাথে বসে খাওয়াদাওয়া করি। এতে আমার কোনও অসুবিধে হয় না। আপনি যে-ই হন না কেন, আপনার অবস্থান এবং সম্মান আমার কাছে কিছুতেই কম নয়। আমার মনে পড়ে, আমি যখন রাজশাহীতে গিয়েছিলাম, তখন গাড়িতে করে ঘোরাফেরা করার সময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার এক সিনিয়র বন্ধুর জন্য প্রায় ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলাম যে কিনা নিরক্ষর ছিল, পেশায় দর্জি এবং ভালোভাবে গুছিয়ে কথাও বলতে জানত না। তবে ওর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, ও ভালোবাসতে জানত। ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল ঢাকায় আরেক বন্ধুর মাধ্যমে। তখন থেকেই ও আমাকে প্রায়ই ফোন করে, আমার খবরাখবর নেয়। কেন নেয়, আমি জানি না। ও আমাকে ভালোমানুষ ভাবে, বড়মানুষ ভাবে। বড়ই সাংঘাতিক এই ভাবনা। কেউ আপনাকে বড় ভাবলে এর বিপদ এই যে, আপনি কিছুতেই ওর সামনে ছোটকাজ করতে পারবেন না। ছোটলোক হতে না পারারও যন্ত্রণা আছে। মাঝেমাঝে তো ছোটলোক হতেও ইচ্ছে করে। আমি সবার মতোই ভালোবাসার কাঙাল। কেউ শুধু ভালোবাসা দিলে আমি ওর জন্য জীবনও দিতে পারি। আমি চাই না, কেউ শুধু ওর স্বার্থ হাসিল করার জন্য আমাকে ফোন দিক। ফোন দিলে আমি মানুষটা ভালো আছি কি না, এইটুকু অন্তত জিজ্ঞেস করুক। আমার একটা কথাও যদি ওকে কখনও একটুখানিও সুখের খোঁজ দেয়, ওইটুকু অন্তত বলুক। কারওর একটু উপকার যদি করে থাকি, ওটার জন্য একটা অন্তত শুকনো ধন্যবাদ দিক। ……. ভাবছেন, খুব সস্তা মাহাত্ম্যবর্জিত কথা বলছি, না? আচ্ছা, এরকম সস্তা না কে, বলুন তো? অনেকেই বলে না, মহৎ সাজে; আর আমি বলে দিই, ওসব মহৎটহৎ সাজতে আমার ভালো লাগে না। এইতো! হিপোক্রিসি সহ্য করতে পারি না। মনে যা আছে, বলে দিই। হিপোক্রিটদেরকেও সহ্য করতে পারি না, একটুও না! আমি শয়তান, বদমাশ, হারামজাদা? খুব ভালো কথা। দয়া করে আমাকে ওভাবেই চিনুন, ভিন্নভাবে নয়। আমি অস্বস্তিবোধ থেকে বেঁচে যাবো।
প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫-২০ ঘণ্টা আমাকে কিছু মন-খারাপ-করে-থাকা মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, যাঁরা বিশ্বাস করেন, আমার সাথে কথা বললে উনারা শান্তি পাবেন। কেউ যখন খুব কষ্টে থাকে, মন খারাপ করে থাকে, তখন তাকে দুটো ভালো কথা বলে দেখেছেন কখনও? জানি, বলতে ইচ্ছে হয়নি, কিংবা সময়ই হয়নি, কিংবা এটা ভেবেছেন, ও আমার কে হয় যে ওর জন্য সময় দিতে যাবো? ইনবক্সে আর মেইলে আমাকে প্রায়ই অসংখ্য কথা লিখতে হয় কারওর মন ভালো করে দিতে, ওকে একটু বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে দিতে। ক্যারিয়ার আড্ডাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলি, ফেসবুকে ওদের জন্য লিখি। অনেকেই দেখা করে কথা বলতে চায়, ওদের মনের যন্ত্রণার কথা শেয়ার করতে চায়, আমার কাছ থেকে দুটো ভালো কথা শুনতে চায়। সত্যি বলছি, অনেক কষ্ট হয় এসব করতে। আপনার প্রতিদিনের ব্যস্ত সময়ের কিছুটা কাউকে দিয়ে দিন না একেবারে নিঃস্বার্থভাবে! কেমন লাগে দেখুন তো! আপনার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা ছাড়া আর কোনও হারিয়ে যাওয়া মানুষকে টেনে তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে দেখেছেন কখনও? কতকত লেখাই তো লেখেন। দুলাইন লিখুন না ওদের জন্য! আল্লাহ্ তো আপনাকে অনেক দিয়েছেন। এই উপহারের কিছুটা দিন না বিলিয়ে! আপনার যা প্রাপ্য, এর চাইতে বেশিই তো পেয়েছেন। কেন পেয়েছেন, ভেবে দেখেছেন কখনও? আপনার বেঁচে থাকতে কতটুকুই বা লাগবে? অন্যরাও একটু বাঁচুক না! বেঁচে-থাকার একটু বুদ্ধি শিখিয়ে দিন না ওদেরকে! আমারও অফিস করতে হয়, বাসায় সময় দিতে হয়, বই পড়তে হয়, মুভি দেখতে হয়, গান শুনতে হয়, ঘোরাঘুরি করতে হয়, লিখতে হয়। আপনারই মত আরকি! এর বাইরে ওই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজগুলো করি। কেন করি? আমি যে জানি মন খারাপ করে থাকতে কতটা খারাপ লাগে, পৃথিবীর সব কষ্টরা যখন মাথায় ভর করে, তখন রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটানোটা কত কঠিন! ওরা ধরেই নেয়, আমার কথায় ওরা একটু ভালোলাগার খোঁজ পাবে। আপনিই বলুন, সে মুহূর্তে শরীরে যত ক্লান্তিই থাক, সেটা ভুলে থেকে কথা বলতে হয় না? মন খারাপ করে থাকা মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া যায় নাকি? এরপর আপনার অমার্জিত ব্যবহারে একটু রাগও করতে পারব না? এও কি হয়!
আমার নাম্বার আপনার কাছে আছে। পরিচিত হতে আপনি কল দিলেন। কোথায় কল দিলেন? ভাইবারে; যেখানে কথা বলার সময় কথা আসে থেমে-থেমে, কথা বলতে বিরক্ত লাগে, এবং কথা বলতে কোনও পয়সা লাগে না। এমন নয় যে, মোবাইলে নেটওয়ার্ক প্রবলেম কিংবা আপনি দেশের বাইরে। তবুও আপনি পরিচিত হতে চাচ্ছেন এমন কাউকে প্রথম কলটা দিলেন ভাইবারে। অথবা, দিয়েই বসলেন ইমোতে একটা ভিডিও কল! আপনিই বলেন, এর মানেটা কী? আমি বারবার কেটে দিচ্ছি, এতেও আপনার আক্কেলে কুলাচ্ছে না, এটা বুঝতে যে আমি ব্যস্ত আছি কিংবা মহাবিরক্ত হচ্ছি, আপনি কল দিয়েই যাচ্ছেন, দিয়েই যাচ্ছেন! হোয়াটসঅ্যাপে আপনি প্রথমবারের মত নক করেই পাঠালেন একটা সেলফি কিংবা আমার কেয়ার করার কোনও কারণই নেই কিন্তু আপনি কেয়ার করেন এমন কিছু একটা! আমি কেন ওটা পছন্দ করবই? আমার জায়গায় আপনি হলে আপনি করতেন? ভাই, আপনার লজ্জাও করে না? নাকি, কমনসেন্স একটু কম আছে বলে ওইটুকুও খরচ করে ফেলতে চান না? প্রয়োজন হলে আমাকে টেক্সট পাঠিয়ে বলুন যে আপনি রাস্তার ফকির, মোবাইলে রেগুলার কল করার পয়সা নেই; কথা দিচ্ছি, কলটা আমিই দেবো। দোহাই লাগে, তবুও এভাবে করে বিরক্ত করবেন না। কারওর সাথে পরিচিত হওয়ার একটা কার্টেসি আছে। এটা মেনে চললে আপনার জন্যও সুবিধে, আমার জন্যও সুবিধে। আমি আপনার তালত ভাই, ইয়ারি দোস্ত, কিংবা ন্যাংটাকালের বন্ধু না। আপনি আমাকে ভিডিও কল দেন কোন আক্কেলে? আপনাকে কেউ প্রথম কলটা ভিডিও কল দিলে আপনার মেজাজ খারাপ হতো না? কোনও ছেলেকে মোবাইলের স্ক্রিনে দেখেদেখে নেটওয়ার্কে গল্প করার ব্যাপারে আমি কোনওদিনও বিন্দুমাত্রও আগ্রহবোধ করিনি। কিছুকিছু লোক এত বেয়াক্কেল কেন? কিছুকিছু লোক কেন অপেক্ষা করেই থাকে কখন তাকে ব্লক করে দেয়া হবে? কেউকেউ পরিচিত হওয়ার জন্য প্রথম ফোনটাই করে রাত ১২টার পরে। এর মানে কী? বলি, ভাই, একটু বুদ্ধি খরচ করলে কী হয়? আরও বলে, “ভাই, আপনি তো জেগেই আছেন, কথা বলতে প্রবলেম কী?” খুব বলতে ইচ্ছে করে, “আমার প্রবলেম কী, এর কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে নাকি? আপনি কে? আপনাকে তো চিনিই না! আপনি কেন ভেবে নিলেন যে এই রাত ১২টার পর আপনার সাথে গল্প করতে আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি? তাও আবার প্রথম পরিচয়ের গল্প?” ছেলেতে-ছেলেতে মধ্যরাতের ফোনালাপ আমার আগ্রহের বিষয় নয়। সরি!
অপরিচিত (কিংবা, হয়তো পরিচিত) কেউকেউ আননৌন নাম্বার থেকে ফোন করে, এরপর কিছুই না বলে চুপ করে থাকে। সমস্যাটা কী, ভাই? আপনি যা বলার বলতে পারেন না? সাহস নাই? সাহস না থাকলে ফোন দিলেন কেন? মানুষের কাজ নাই? দরকার হলে গালাগালি করুন; ইচ্ছে হলে, আই লাভ ইউটিউ বলে ফেলুন, কোনও সমস্যা নাই। সত্যি বলছি, কোন সমস্যা নাই। আমারও কি আই লাভ ইউ শুনতে ইচ্ছে করে না? তবুও ফোন করে চুপ করে থাকবেন না। প্লিজ! ভীতুর ডিম টাইপের লোকজনকে আমি দুচোখে দেখতে পারি না। তাছাড়া খুব ব্যস্ত থাকি তো! তাই বিরক্ত লাগে; কত আর নাম্বার ব্লক করা যায়! আর ফ্রি থাকলেও আপনাকে চিনি না জানি না, তবু আপনাকে সময় দেবো কেন? কায়দা করে চিনেচিনে প্রেমে পড়ার বয়স পার করে এসেছি তো! এখন আর সেই কিশোরবয়সের কৌতূহল, সময় কিংবা ধৈর্য কোনওটাই নেই। একেবারে অপরিচিত কোন মানুষের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগ, এমন কোনও বোধই আমার কাজ করে না। বরং কেউ অহেতুক পেইন দিলে যা জন্মে তা হল প্রচণ্ড বিরক্তি! মাঝেমাঝে দেখি, কিছুকিছু মানুষ এখনও মিসড কল দেয়। কলরেট অনেক কমেছে না? এখন কি আর মিনিটে ৭ টাকা কাটে নাকি? নাম্বার চিনি না, এমন নাম্বার থেকে মিসড কল। মেজাজটা কেমন খারাপ হয়, বলুন তো? সমস্যাটা কী, ভাই? আমি গালাগালি করতে পারি না, এইটা?
দুইদিন আগে আমার সিলেটে আসার খবর শুনে অপরিচিত একজন শুভাকাঙ্ক্ষিণী(!) আমাকে একটা টেক্সট পাঠালেন। কী ছিল ওতে? টেক্সটলেখিকা আমাকে সিলেটে আসার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। (কোনওরকমের কুশল জিজ্ঞেস করেননি।) পরের কথাটাই হল, “এবারের ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষা ভয়াবহ বাজে দিয়েছি। আপনি সিলেটে এসেছেন, এতে আমি অনেক খুশি, আপনার কাছ থেকে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার পরামর্শ নেয়া যাবে। আপনি আমাকে ডিটেইলস বলবেন, কীভাবে করে প্রিপারেশন নেবো।” আমি মেসেজ পড়ে অতিবিরক্ত হলাম। কী রে ভাই, আমাকে মানুষ মনে হয় না? শুধুই ক্যাডার মনে হয়? আমি কি আপনাকে হেল্প করতে বাধ্য? নাকি, আপনাকে হেল্প করতেই দৌড়াতে-দৌড়াতে সিলেটে ছুটে এসেছি? এভাবে কেউ হেল্প চায়? আরেক টাইপের পাবলিক ফোন করেই প্রথম কথাটাই বলে, “ভাইয়া, আমাকে অমুক ব্যাপারে ডিসিশন নিতে হেল্প করুন।” আমি ব্যস্ত আছি কি না, ওকে ওই মুহূর্তে দেয়ার মত যথেষ্ট সময় আমার হাতে আছে কি না, আমি ওই সময়ে বন্ধুদের আড্ডার মাঝে আছি কি না, ওর এসব নিয়ে ভাববার দরকার নেই। উল্টো আমি বিনীতভাবে পরে ফোন করতে বললে রাগও দেখায়! অদ্ভুত কিসিমের চিড়িয়া!! অনার্স পাস করেছেন, এখনও ম্যানারস জানেন না! আমি চাই, এরকম বলদমার্কা পোলাপান সিভিল সার্ভিসে না আসুক! এদেরকে দেখে পাবলিক ভাবে, সিভিল সার্ভেন্টমাত্রই ‘খ্যাত্’!
ছোটবেলায় একটা ভুল কথা পড়েছিলাম: গরু আমাদের দুধ দেয়। (আজব! গরু দুধ দিতে যাবে কোন দুঃখে? গরুর কি খেয়েদেয়ে কাজের অভাব পড়েছে?) সত্যিটা হল: আমরা কায়দা করে গরুকে দিয়ে দুধ দেওয়াই।